অবশেষে প্রকাশ্য চুম্বন হয়নি।
যারা এই ইভেন্ট খুলেছিলেন তারা কেউ আসেননি।
এই লেখা যখন লিখছি তখন রাত। এই মূহুর্তে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে কি হচ্ছে বলতে পারছিনা। তবে তা নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই কারো। রাতের অন্ধকারে যা কিছুই হোক অসুবিধা নেই। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে রাতে যারা আসেন তাদের ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা লাগেনা। তাদের কার্যক্রমে ধর্ম ও সংস্কৃতির বিশেষ ক্ষতিবৃদ্ধি হয়না। তারা আলোহীন রাতে খোলা আকাশের নীচে ভালবাসাহীন চুম্বন করে যায় পুলিশকে ম্যানেজ করে।
একটি নিউজপোর্টালে দেখলাম একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন “ বাংলাদেশের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো অনুষ্ঠান বা কোনো ধরনের তৎপরতা যদি কেউ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। গ্রেফতার করব।”
তিনি আরো বলেছেন, আমরা স্থানটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। পুলিশ সাদা পোশাক ছাড়াও সরকারি পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে। তারা সব রকম ঘটনার দিকে চোখ রাখছে .....।
চুমু ঠেকাতে পুলিশের এই তৎপরতা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশের শতভাগ সাফল্য বলে যদি কিছু থাকে আমার মনে হয় ২০১৬ সালের এই ‘চুম্বন প্রতিরোধ’ এর কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একটা রোল মডেল হয়ে থাকবে।
অনন্য আজাদের মত একজন অনুল্লেখ্য লেখক ও ব্লগার এর ডাক দিয়েছিলেন। তাকে চিনতাম হুমায়ুন আজাদের পুত্র হিসেবে। শাম্মী হককেও চিনতাম না। বাংলাদেশের নির্বেোধ মৌলবাদীদের কল্যাণে তাকেও চিনলাম।
জার্মানীতে বসে সোহরাওয়ার্দীতে কি করে প্রকাশ্য চুম্বন করবে সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়েই গত কদিন ধরে ফেসবুকাররা নিরন্তর লিখেই গেল। মাঝখান থেকে বলা হলো ব্লগাররা নাকি ১৪ই ফেব্রুয়ারী প্রকাশ্যে চুমু খাবে। অতীতেও এরকম বলা হয়েছিল ব্লগার মাত্রেই নাস্তিক। এবার বলা হল ব্লগার মাত্রেই প্রকাশ্যে চুম্বনকারী। এই হল লাভ।
সংস্কৃতি বদলায়। জীবনাচরণ বদলায়। এককালে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা শিক্ষকদের পিছে পিছে ক্লাসে আসতো। ক্লাশ শেষে আবার কমনরুম। প্রকাশ্যে ছেলে মেয়ে কথা বলছে এমন দৃশ্যই ছিল বিরল। আমাদের দাদাদাদীরা দিনের বেলায় পরিবারের সবার সামনে কথা বলতনা। সামনেও নাকি আসতনা। এখন এগুলো ভাবা যায়? আজ প্রকাশ্য চুম্বন একটি অচ্ছুত বিষয়, কাল সেটা নাও হতে পারে।
আমাদের সমাজে অনেক বড় বড় সমস্যা রয়ে গেছে। এদেশের অনেক মানুষ এখনো পশুর জীবন যাপন করে। রাস্তায় প্রায়ই নগ্ন বক্ষা ভিখারী দেখি। এতে আমাদের বিকার হয়না,অশ্লীল লাগেনা। আমাদের সমাজ আকন্ঠ দূর্নীিতিতে নিমজ্জিত। রাস্তায় প্রকাশ্যে গাড়ি আটকে ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ খায়, আমরা প্রতিবাদ করিনা। ঘুষ খাওয়া আমাদের সমাজে রীতিমত যোগ্যতা বলে বিবেচিত। এতে ধর্ম ও সংস্কৃতির কিছুই হয়না। কেবল চুম্বনেই যত আপত্তি। নচিকেতা তো একগানে বলেই ফেলেছেন “প্রকাশ্যে চুম্বন অপরাধ এই দেশে, প্রকাশ্যে ঘুষ খাওয়া নয়।”
এই লেখার পর আমি নিশ্চিত কেউ ফট করে বলেই বসবেন যে, আপনি তাহলে প্রকাশ্য রাস্তায় আপনার বউকে নিয়ে চুমু খাচ্ছেন না কেন? কথা সত্য আমি সেটা পারবনা। আমি সেটা চাইও না। আমি চাইনা কারণ আমি এটাতে অভ্যস্ত না। ব্যাস আর কোন কারণ নেই।
আমি বিশ্বাস করি সংস্কৃতি প্রবাহমান একটি বিষয়। এটা একটা কোর্স অব টাইম এবং হিস্ট্রির উপর ভিত্তি করে প্রবাহিত হয়। এটা আরোপ করার বিষয় না। ইভেন্ট ডেকে সংস্কৃতি বা অভ্যাস বদলানো যাবেনা। সেটা জরুরীও না। বরং হাস্যকর।
অনন্য আজাদরা এই সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করেনি কোনদিন।অথবা পারেনি। ক্ষুধা, দারিদ্র, দূর্নীতি, অশিক্ষা নামের যে রোগ বাসা বেধে আছে এই সমাজের অলিন্দ নিলয়ে, প্রকাশ্য চুম্বন তার সমাধান না। এমনকি প্রতিবাদের প্রতীকও না। এটা স্রেফ উস্কানি। ক্ষতের উপর চুলকানির মত। হতে পারে, যে রক্ষণশীল সমাজ এদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছে প্রকাশ্য চুম্বনের ডাক দিয়ে তারা তাকেই বিব্রত করতে চেয়েছে। হতে পারে এটা তাদের এক প্রকারের অক্ষম প্রতিশোধ।
অনন্য-শাম্মীরা তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চায় এই চুম্বন বিপ্লব দিয়ে। আমাদের রক্ষণশীলরাও তাদের সাংস্কৃতিক ও নৈতিক দেউলিয়াপনা আড়াল করতে চায় চুম্বন প্রতিরোধ করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৬