মেয়েটার বয়স কত হবে আর, এই তো, ৭/৮। মায়ের হাত ধরে গ্রামের এক আত্নীয়ের বাড়িতে গিয়েছে।
বেড়ার ঘরের দেয়ালে ঝুলে থাকা ফ্রেমে বাঁধানো লেখাটার দিকে দৃষ্টি চলে গেল শিশুটির। তখন কেবল নতুন বাংলা পড়তে শিখছে, তাই কৌতূহল ছিল তুংগে। ফ্রেমে বাঁধানো লেখাটা বহু কষ্টে পড়ল মেয়েটি-
"প্রথম যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে,
কেঁদেছিলে তুমি আর হেসেছিল সবে।
এমন জীবন হবে করিতে গঠন
মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন।"
অনেক কথাই শিশু মেয়েটির মাথার উপর দিয়ে গেল, তাই মায়ের কাছে নানা প্রশ্ন তাঁর। মাও সুন্দর ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন, মূল্যবান চারটি পংক্তির মর্মার্থ।
কোমল মনে গেঁথে যায় কথাগুলি। মেয়েটি তখনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, কেমন জীবন যাপন করতে হবে তাকে।
এর পর অনেক দিন চলে যায়। সেই বাড়িতে আরও অনেকবার যাওয়া হয়েছে মেয়েটির, দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ঐ লেখাটা প্রতিবারই পড়া হতো।
এক সময় সেই বুড়ো আত্নীয়ের ছেলেরা নতুন ঘর করে তাতে উঠে, পুরনো ঘরের ভেংগে পড়া দেয়ালে কি লেখা ছিল, কারও আর মনে থাকেনা।
এক যুগ পেরিয়ে গেল। মেয়েটার সেদিন কুড়িতম জন্মদিন। অনেক শুভেচ্ছা এস এম এস, ইমেইল, কার্ড, ফুল, আরও কত কি আসতে থাকে একের পর এক। হঠাত এক আপুর এস এম এস চমকে দেয় মেয়েটিকে। সেই এক যুগ আগের পড়া পংক্তি, দেয়াল থেকে উঠে এল মোবাইলের পর্দায়।
এই পংক্তি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য জন্মদিনের চেয়ে আর কোন দিন উত্তম হতে পারে?
প্রতিবার জন্মদিনে- নিজের কিংবা অন্যের- মেয়েটি এই পংক্তি মনে করে কিংবা করিয়ে দেয়। আর জীবন থেকে আরও একটি বছর খসে পড়ায় ভাবতে বসে, তাঁর ছোটবেলার সিদ্ধান্তে সে কতটা অবিচল থাকতে পেরেছে, কতটা অর্জন করতে পেরেছে।
................
কিছু দূর তো যাওয়া হলো, কিন্তু ভূবন কাঁদানো যে অনেক অনেক দূরের ব্যাপার। আজকের এই দিনে যখন জীবন থেকে আরো একটি বছর খসে পড়তে দেখি, ভীষন রকম বিষন্নতায় মন ছেয়ে যায়। মনে হয়, অনেক অনেক টুকু পথ তো সামনে পড়ে আছে।
"মাইলস টু গো বিফোর আই স্লীপ"। স্লীপ এর আগে কি সব মাইলস কভার করতে পারব?
না জানি আরও কতদূর। এখন ও তো কেবল অজানা অচেনাই রয়ে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:০১