এ ব্যাপারে লিখার আগে কিছু প্রারম্ভের অবতারণা দরকার।শুরু করি H.Sc দিয়ে।এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর হল থেকে বের হয়ে omeca,sunrise,primate..... হেনতেন বহু বহু লিফলেট নিয়ে বাসায় যেতাম।কিন্তু সবগুলাই কেমন যেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর মত লাগতো।আর ঠিক করতেও পারছিলামনা কি করবো।ইঞ্জিনিয়ারিং নাকি মেডিকেল??
আমার মা অবশ্য দুই রকম বিষয়ের দুই কোচিং সেন্টারেই ভর্তি করায় দেন।কিন্তু পরীক্ষা শেষে আমি দুই জায়গায় দুইদিন যেয়ে সালাম দিয়ে চলে আসলাম।কেন যেন কিছুই মাথায় ঢুকছিলোনা।কিছুই পড়িনি H.Sc ফলাফলের আগ পর্যন্ত।
যাই হোক, ফলাফল একসময় হাতে পেলাম।সর্বোচ্চ গ্রেড নিয়েই পাশ করলাম।কিন্তু তারপরেও সামনের দিনের ভর্তি পরীক্ষাগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারছিলামনা।তবুও বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট এর জন্য চেষ্টা করবো বলে ঠিক করলাম এবং ১৫-২০ দিনের ফাকিঁবাজী পড়াশোনায় যা হয় তাই হলো।টিকতে না পেরে তখন হাতে বি.আই.টি.,আই.ইউ.টি,এম.আই.এস.টি আর ঢাকা ভার্সিটি ছিল(মেডিকেল ভয় লাগতো)।আমার তখন মনে হচ্ছিলো কোথাও হবেনা।আমার বাকি তিন-চারজন বন্ধুর একজন শুধু বুয়েটে হলো।বাকিরা সবাই তখন বুঝতে পারলাম পড়াশোনা না করার ফল কি!সবাই আমরা বিমর্ষ ভগ্ন হৃ্দয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভর্তির প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম।হ্যা,এইবার আমি বাছাধন পড়াশোনা শুরু করলাম।খুয়েট,রুয়েট,এম.আই.এস.টি পরীক্ষা দিলাম বেশ প্রস্তুতি নিয়েই,যদিও সেটা খুব একটা ভাল কখনোই বলা যাবেনা।বি.আই.টি গুলোতে পরীক্ষা দেয়ার পর মনে হচ্ছিলো এখানেও বোধহয় হবেনা।আত্মবিশ্বাস শূণ্যের কোঠায় থাকলে যা হয় আর কি!
যাই হোক আল্লাহ তা'লার অশেষ রহমতে দুই বি.আই.টি তেই হলো এবং খুব ভালোভাবে।তখন মনে হলো,বাহ! এত সহজে চান্স পেয়ে গেলাম।বেশ ভাল লাগছিলো এবং ওই অনুভূতি বুঝিয়ে বলা যাবেনা।অন্ততঃ কোথাও তো ভর্তি হতে পারবো।
এরপর আসল কথায় ফিরে আসি।এম.আই.এস.টি তে প্রথম যেদিন যাওয়া হয় আমি অবাক হয়ে এর অসাধারণ ক্যাম্পাস দেখছিলাম।দুইপাশে গাছের সারি,মাঝপথে ছোট্ট একটা হৃদ আর হৃদের উপর একটা সরু সেতু,আমি তখন মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছিলাম যেন এখানে চান্স পেয়ে যাই।পরে আমার বন্ধুর কাছে শুনলাম মাত্র ১০০ জনের মত ভর্তি নেয়া হবে এবং আমি অবশ্যই এত উন্নত ক্যাটাগরীর ছাত্র নই যে তার মধ্যে স্থান পাবো।যাই হোক গ্রেড ছিল তাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে অন্তত চান্স পেলাম।পরীক্ষা দিলাম এবং এর কিছুদিন পর খুয়েটের ফলাফল দিলো।আগেই ভেবেছিলাম এম.আই.এস.টি তে পাবোনা তাই খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এবং ভর্তি হয়ে আসলাম।এখানে একটি ব্যাপারে না বললেই নয়।খুয়েট জায়গাটা প্রকৃ্তির বড় কাছের,বড় আপন।বিশাল সবুজ মাঠ,খুলনার সহজ-সরল মানুষ আমার বেশ লেগেছিল।
ঢাকা আসার কিছুদিন পর জানলাম এম.আই.এস.টি তে চান্স পাইছি,যদিও একটু পেছনের দিকে।হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।এরপর বহু বিজ্ঞজনের কাছে বহু পরামর্শ পেলাম কি করবো,কি না করবো।আমার এই দুঃসময়ের সাথী যে বন্ধুটি ছিলো তার সাথে পরামর্শ করলাম এ ব্যাপারে।সবশেষে ঠিক হলো,আর নয় ভাবনা,ঢাকা ছেড়ে যাবোনা।পরে ঢাকা ভার্সিটিতে বিশেষ কারনে পরীক্ষা পিছিয়ে যায় এবং আমি এম.আই.এস.টি তে ভর্তি হয়ে গেলাম।মনে পড়ে ঢাকা ভার্সিটিতে মার্চ মাসে পরীক্ষা হয়েছিল এবং আমি তখন এম.আই.এস.টি তে ক্লাস করছি এক মাস ধরে।তবুও ফর্ম কিনেছিলাম বলে পরীক্ষাও দিলাম।সংগত কারণেই আশানুরূপ দিতে পারিনি তবুও সি.এস.ই পেয়েছিলাম।তাই এম.আই.এস.টি ত্যাগ করার প্রশ্নই আসেনি।
এম.আই.এস.টি তে আমাদের মূল সমস্যা কি তা আমরা যারা এখানে পড়ছি তারা সবাই জানি।সমস্যাটা হলো "নাম"......আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একেবারেই নতুন।আমি তড়িৎ প্রকৌশলে মাত্র তৃতীয় ব্যাচ।ভর্তি হওয়ার পর মানুষকে এম.আই.এস.টি কি??সরকারী না বেসরকারী??এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে অনেক খারাপ লাগত এবং এখনো বিশেষতঃ যারা অনেকদিন দেশের বাহিরে আছেন তারা এই সরকারী প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে ঠিকমতো জানেন না।অনেকবার অনেক অপ্রস্তুত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে।মনে হতো তখন,এত ভাল ফলাফল নিয়ে আমরা এইখানে পড়ছি অথচ......আমার মনে হ্য় এর জন্য আমাদের প্রশাসন অনেকাংশে দায়ী।মিলিটারি নিয়ম অনুযায়ী আমরা কখনো প্রচারমূলক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারবোনা(এখনো মনে পড়ে এক ভাইয়াকে হেডস্যার বেশ ঝাড়ি দিছিলেন বৈশাখ উৎসব নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন লিখার জন্য)।Job Fair,IT Fair ছাড়া আমরা খুব কমই উৎসব আমেজ পেয়েছি।মোটকথা হলো আমরা বেশ বন্দি জীবন যাপন করে এম.আই.এস.টি তে পড়াশোনা করি,যেখানে প্রথম কথা হলো নিয়ম এবং শৃ্ঙখলা।দেশের অন্য পাবলিক ভার্সিটিগুলো যেভাবে স্বাধীনতা ভোগ করে আমরা তার কিছুই পাইনা।এই কঠিন বি.এস.সি জীবন মাত্র কয়েকদিন হলো শেষ হয়েছে।কত কত স্মৃতি মনে পড়ছে।আস্তে আস্তে লিখতে চাই...।তবে আজ এই পর্যন্তই।
[আমি লেখক নই।লিখার অসাধারণ গুণের কিছুই আমার নাই।
