somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন ট্যূরঃনেটওয়ার্কের বাহিরে তিন রাত দুই দিন

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিন গোয়েন্দার ভীষণ অরণ্য আর অথৈ সাগর পড়েছেন নিশ্চয়।চরম দুটি এডভ্যাঞ্চার গল্প।একটাতে আমাজনের গহীন বনে হারিয়ে যাবার গল্প অন্যটায় প্রশান্ত মহাসাগরের অথৈ পানিতে ভেসে বেড়ানোর গল্প।দুটি গল্পের প্লট ই আমাদের দেশ থেকে যোজন যোজন মাইল দুরের কাহিনী।বাংলাদেশে বসে আপনারও হয়ত সেইসময় আফসোস করতে হয়েছে। আহা! আমি যদি পারতাম!!এভাবে হারিয়ে যেতে!!যেখানে জঙ্গল আর পানি!!!আফসোস বাদ দেন।সুন্দরবন ঘুরতে চলে যান।জঙ্গল আর সাগর,গল্প দুটির স্বাদ পাবেন গ্যারান্টি।



আমার যাওয়ার প্রথমে ইচ্ছা ছিলনা মোটেও।কারন তিনটি।১. প্রথম বর্ষে পড়ার সময় একবার গিয়েছি।২.হাতের অবস্থা খুব একটা ভালো না।৩.ছাত্রের সামনে পরীক্ষা।বাট শিমুল আর অদীশের জোরাজুরিতে সব কিছু ম্যানেজ করা লাগলো।সব কিছু ঠিক করে আল্লাহর নাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।যাচ্ছে আমাদের ডিপার্টমেন্টের দুইটা ব্যাচ।ফাস্ট ইয়ার আর থার্ড ইয়ার।১২০ জনের মত।বন বিভাগ আবার নতুন নিয়ম জারি করছে এক লঞ্চে ৭৫ জনের বেশি থাকতে পারবে না।তাই লঞ্চ নিতে হয়েছে দুইটা।আগের বার যখন যাই তখন এক সমস্যাটা ছিল না।ঠিক করা হলো ফাস্ট ইয়ার যাবে বড় লঞ্চটায় আর আমরা ছোটটায়।যাইহোক লঞ্চ ছাড়লো রাত দশটার দিকে।দুইটা লঞ্চ পাশাপাশি চলবে এমনটাই কথা ছিলো।খাবার দাবারের ব্যাবস্থা সব বড় লঞ্চে।রাতে আর কোন কাজ নেই।ঘুমিয়ে পড়লাম।আমাদের প্রথম স্পট কটকা।





সকাল সাতটার দিকে ঘুম ভাংলো।কেবিনের জানালা খুলে বাহিরে তাকালাম।লঞ্চ তখন সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে চলছে।মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে জানতে পারলাম বড় লঞ্চের কোন খবর ই নাই।ঘন্টা খানেক স্লো চলার পরে হরিণডাংগায় আমরা নোংগর করলাম।সবার মোটামুটি ক্ষিদে লেগে গেছে।আর ওই লঞ্চ খাবার দাবার সহ উধাও!১১টা বাজার পরেও যখন ওদের কোন খোজ পাওয়া গেলো না তখন সবারই মোটামুটি ভয় করতে লাগলো।সুন্দরবনে জালের মত অসংখ্য নদী আর খাল ছড়িয়ে আছে।পথ ভুল করলে সর্বনাশ!এছাড়া খালের মধ্যে ট্রলার নিয়ে জলদস্যুরাও নাকি ওত পেতে থাকে। যোগাযোগ করার কোন উপায়ও নেই।মনে হচ্ছিলো সভ্য জগত থেকে অনেক দূরে চলে আসছি।ততক্ষনে ক্ষিদের জালায় সবাই কাহিল।অবশেষে সাড়ে বারটায় খোজ পাওয়া গেলো।কোন চরে যেন ২ ঘন্টা আটকা পরে ছিলো ওরা! দুপুর ১টার পর সকালের নাস্তা করে যে যার মত রওনা দিলাম কটকার উদ্দেশ্যে।



কটকা/জামতলাঃ




কটকায় পৌছালাম বিকেল ৪ টার দিকে।স্পটে নামার পর বনের মধ্য দিয়ে প্রায় আধা ঘন্টার হাটার পর দেখা মিলবে কটকা সী বিচের।এখানে ওয়াচ টাওয়ার আছে।এর উপরে উঠে বনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।বাট এর অবস্থা বেশী একটা ভালো না।ওঠার পর দুলতে থাকে!৮ জনের বেশী ওঠা নিষেধ।বীচে নামার আগে একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়বে "কটকা একটি বিপদজনক সমুদ্রসৈকত।সমুদ্রের পানিতে না নামার জন্য অনুরোধ করা হলো।"
এখানে বাঘের উৎপাত নাকি অনেক বেশি।গার্ডের কাছ থেকে শুনলাম যে এখানে ২ দিন আগে নাকি বাঘ একটা হরিণ মেরে জাস্ট এক কামড় মাংস নিয়ে গেছে।পরে লোকজন এসে হরিণটার চামড়া ও শিং নিয়ে যায়।

টাইগার পয়েন্টঃ


এরপর গেলাম কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্র বা টাইগার পয়েন্ট।এটা কটকার ঠিক বিপরীত পাশে।এখানে নিশ্চিত হরিণের দেখা মিলবে।ওদেরকে পাতা খাওয়াতে পারবেন,ছবি তুলতে পারবেন।তবে বিরক্ত করা যাবে না।বন বিভাগের কড়া নিষেধ আছে।


সেদিনের মত এখানেই শেষ।পরের গন্তব্যস্থল দুবলার চর।

দুবলার চরঃ





পরের দিন সকাল বেলা বেড়িয়ে পরলাম দুবলার চরের উদ্দেশ্যে।আমার দেখা সবচেয়ে বেস্ট স্পট এটি।
নামার পর কাচা মাছ আর শুটকির গন্ধে প্রথমে অবাকই লাগলো।এ কোথায় আসলাম!!একটু ভিতরে যাবার পর বুঝতে পারলাম আমি সুন্দরবনের সেরা জায়গাটি তে এসেছি।




এখানে আপনি কি দেখবেন?দেখবেন বাংলার সবচেয়ে সহজ সরল জীবনযাপন।দেখবেন মাছ ধরে শুটকী বাননোর পুরো প্রক্রিয়া।একপাশে সারি সারি বাশের ফ্রেম,তাতে ঝুলছে নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ, অন্যপাশে নৌকা নিয়ে চলছে মাছ ধরা,মাথার উপরে উড়ছে শয়ে শয়ে সাদা গাংচিল।একটু পর পর চড়ের তীরে বাড়ি খাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ।
এখানে চড়ের উপর ছোট্ট একটি গ্রাম আছে।নাম জেলে পল্লী।আছে ছোট কিছু দোকান পাট,সব বাড়িতেই সৌর বিদুৎ।আছে টেলিটকের নেটওয়ার্ক।অন্য অপারেটর এখানে অচল!!






এই স্পটটি একটু ভিতরের দিকে হও্য়ায় অনেকে এর সম্পর্কে জানেন না।বা আসতে চান না।না আসলে পস্তাবেন এতুটুকু বলতে পারি।

হীরণ পয়েন্টঃ



এটা সুন্দরবনের একটা কমন জায়গা।সবাই মোটামুটি আসে।এখানেও ওয়াচ টাওয়ার আছে।অবস্থা কটকার মতই।খোলা মাঠ আছে,পুকুর আছে,সুন্দরী,গরান,গেওয়া গাছ আছে,রেস্ট হাউজ আছে।বন্য শূকর ও হরিণের দেখা পাবেন ।আমরা বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছি।রাতের বেলা নাকি এখান দিয়ে হাটাহাটি করে।




এখানে ছবি তুলতে তুলতে একটু বেশী ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলাম।তখন বিকেল প্রায় শেষের দিকে।গার্ডের চিল্লাচিল্লিতে বের হয়ে আসলাম।পরে জানতে পারলাম জায়গাটা খুব একটা ভালো না।বাঘের কাচা পায়ের ছাপ তাই প্রমান করে।একপর আর সাহসে কুলায় নাই।পায়ের ছাপের যে ছবি তুলবো সেটাও বেমালুম ভুলে গেলাম!




আর কি? এবার ফেরার পালা।ভারাক্রান্ত মনে ছবি দেখতে দেখতে রওনা দিলাম খুলনার উদ্দেশ্যে।মনে মনে বললাম ব্যাপার না!আবার আসবো!

কয়েকটি কথাঃ এখানে কোন কোন জায়গায় টেলিটক এর নেটওয়ার্ক আছে।সাথে টেলিটক সিম থাকলে ভালো।দলছুট হবেন না ভুলেও।গার্ডের বা গান ম্যানের পারমিশন ছাড়া বেশী দূরে যাবেন না।খালে নামা বিপদজনক।আর ক্যাটক্যাটে রঙের কিছু না পরাই ভালো।হৈ-হুল্লোড় করলে বন্যপ্রানী দেখাটা বেশ কঠিন হয়ে পরবে আপনার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও আমার ভাবনা

লিখেছেন মেহেদী তারেক, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪০

অবশেষে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হলো
আমি সবসময়ই প্রজ্ঞাপন দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী এখনো দলটিকে সমর্থন করে। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর মতামত কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিষিদ্ধ নয়, শুধু নড়াচড়া বন্ধ: আওয়ামী লীগ, ‘কার্যক্রম’ ও বিরোধীদের বিভ্রান্তির রাজনীতি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫২


“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে”—এই লাইনটি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে, চায়ের কাপে তুফান এনেছে, এবং কিছু বিরোধী রাজনীতিকের মুখে সাময়িক হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু একটু থামুন ! খেয়াল করুন: বলা হয়েছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁচলে বাঁধা সংসার

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০



আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×