কোন এক শুক্রবারে আমার জন্ম, তাই বোধ করি শুক্রবারে নামাজ পড়তে যাবার ব্যাপারে আমার সব সময় অনীহা, কারন হচ্ছে এই দিন আমি যেন কোন কিছুই ঠিক মিলাতে পারি না। সবাই বলে শনিবার দিন খারাপ, কিন্তু আমার তো জন্মদিনটাই খারাপ। হয়ত আমার পিতা দায়ী। কারন উনি আমার জন্মদাতা।
আমার বাবা রাগী, উনি নিজে যা ভালো বোঝেন তাই করেন। কখনো দেখিনি আমার পড়ালেখার ব্যাপারে খবর নিতে,কখনো দেখিনি আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে, কখনো তার পিঠে চড়তে পারিনি। কোন খেলনা পাইনি ছোটবেলায়, আর সবাইকে দেখতাম ৫ টাকার খেলনা হলেও হাতে থাকতো। স্কুলের গন্ডি পেরুতেই আমার মাঝে ক্রমশ পরিবর্তন আসলো, আমি আর উনাকে তোয়াক্কা করলাম না, তখন আমার মাকে সবচাইতে বেশি ভালবাসতাম, মা ছিলেন আমার সব। বাবাকে ক্রমশ দুরে ঠেলে দিচ্ছি এটা উনি বুঝতেই পারতেন না। আমি ও অতো মাথা ঘামাইনি। অস্টম শ্রেণীতে এসে একবার স্কুল পালিয়ে বাসায় চলে এসেছিলাম, ধরা খাওয়ার পর মাস্টার বললো তোমার অভিভাবকের বন্ড সই লাগবে(কারন সেটাই ছিল আমার শেষ সুযোগ ছাড়া পাবার)। বল্লাম আমার মাকে আনলে হবে, উনি বললেন না। পরে বল্লাম যদি কারো বাবা মৃত হন, তবে? আমার ক্লাসের বন্ধুরা সবাই থ হয়ে গিয়েছিল।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। মা খুবই টেনশনে আছেন। আমি বল্লাম আমি ভাল পরীক্ষা দেব, তুমি চিন্তা করো না। পরীক্ষা হলে গিয়ে দেখলাম সবার বাবা রা এসে সবাই কে সাহস দিচ্ছে, আর আমার বাবা তখন কোথাও কোন দেশে হয়ত পড়ে আছেন, হয়ত কোন ক্লায়েন্ট কে বোঝাচ্ছে কোম্পানীর পণ্যর গুণাবলী। পরীক্ষা দিলাম। ভাল পাশ ও করলাম। একদিন মায়ের মুখে শুনলাম আমার বাবা নাকি আমার এই পাশে খুশি হয়ে আমাকে ১০০০০ টাকা দিয়েছেন। থিক্কার এমন টাকায়। বাবার মমতা পাইনি পাশ করার পর টাকা দিয়ে কি হবে।
কলেজের গন্ডিতে আসলাম। নতুন সব কিছু নতুন বন্ধু। গাড়ী করে কলেজে যাবার জন্য মা সব সময় চাপ দিত, কিন্তু আমি কখনোই তা ব্যবহার করি নি। সেই বন্ধুদের সাথে রিক্সায় করে ভাড়া শেয়ার করে গিয়েছি। গাড়ী ব্যবহার না করাতে বাবা খুবই রাগ হলেন। মাকে যা ইচ্ছে তা বল্লেন। রাগে দু:খে ঘর ছাড়লাম। অনেকদিন যাইনি, বাবাও আমাকে খোজেন নি। আমার মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে আবার ফিরে এলাম। কলেজ শেষ আমি যেন আস্তে আস্তে নিজের পরিধিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি।
কখনো খাবার টেবিলে এক সাথ হয়নি। কখনো তার সাথে বাইরে যাইনি। তাকে বাবা বলে কবে ডেকেছি ভুলে গেছি। অনেকটা সময় পার করেছি এখনো পড়ালেখা করছি, তবু তার সাথের আগের সর্ম্পকটা রয়ে গেছে।
মাকে প্রচন্ড ভালবাসি। তাকে আমার সকল দু:খ রাগ, অভিমান, সুখ সবি বলি, আমার মা আমাকে লুকিয়েও বাবার সাথে আমার মিল রাখতে চায়, ফোন করলেই বলে এই তো সেদিন তোর বাবা তোর কথা বলছিল। আমি মনে মনে বলি আহারে পাগলি, তোমার ছোট্ট ছেলেটা অনেক বড় হয়েছে এখন সে তোমার মন ভোলানো কথার সবই বুঝে।
চলছে এমনি। বাবার দীত্বিয় সংসারের খবর জানলাম কিছুদিন আগে। তেমন কোন অবাক হইনি। যে ভয়টা অনেক বছর ধরে ছিল তাই সত্যতে প্রকাশ পেয়েছে। আমার মা মেনে নিয়েছে, বাবাকে বেশি ভালবাসে তো তাই মেনে নিয়েছে সকল অন্যায়। আমিও তেমন কষ্ট পাইনি। শুধুই বলতে চেয়েছিলাম এমন কাপুরুষ কেন বাবা তুমি? সত্যটুকু আরো অগেই বলতে, তা হলে দু:খটা বোধ করি এতদিনে সয়ে যেত।
তাই তো মাকে ভালবাসি, বাবাকে ভালবাসা নয় ধিক্কার দিতেও ইচ্ছে হয়না....
১. ২৮ শে জুন, ২০০৭ দুপুর ২:৩৯ ০
আল্লাহ আপনাকে আরো ধৈর্য্য দিন এবং ভাল রাখুন।