পৃথিবীতে কতসংখ্যক ভাষা আছে তা অনুমান করা খুবই কষ্টসাধ্য।তবে ধারণা করা হয় এর সংখ্যা প্রায় ৩০০০ থেকে ৮০০০ হবে।ঈথনোলোগ(Ethnologue)নামের ভাষার বিশ্বকোষ ২০০৯ প্রকাশিত ১৬ তম প্রকাশনী এর হিসেব অনুসারে প্রায় ৬৯০৯ জীবিত ভাষা রেজিষ্ট্রেশন করেছে।৬৯০৯ ভাষা হলো জনসংখ্যার বা ব্যাবহারকারীর সংখ্যার ভিত্তিতে।উপরোক্ত ভাষার বিভিন্ন আঙ্গিকে সংখ্যা ভিত্তিক পরিসংখান নিম্নরূপ।এর ৫২% ব্যবহৃত হয় মাত্র ১০,০০০ লোকসংখ্যার নীচের মানুষের ব্যাবহারকারীদের মাঝে । ২৮% ভাষা আছে যাদের ব্যাবহারকারীরা ১০০০ জনের নীচে।৮৩% শুধুমাত্র একটি দেশে ব্যাবহার হয় এমন। নীচে ১০ টি ভাষার উল্লেখ করা হলো যা সাজানো হয়েছে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ব্যাবহারকারীদের শতকরা হিসেবের উপর।
১।চীনা (ম্যান্ডারিন)ঃ ব্যাবহারকারী প্রায় ১২১৩ মিলিয়ন বা ১২১ কোটি ৩০ লক্ষ লোক।
২।স্পানীসঃ ব্যাবহারকারী প্রায় ৩২৯ মিলিয়ন ৩২ কোটি ৯০ লক্ষ লোক।
৩।ইংরেজীঃ ব্যাবহারকারী প্রায় ৩২৮ মিলিয়ন ৩২ কোটি ৮০ লক্ষ লোক।
৪।আরবীঃব্যাবহারকারী প্রায় ২২১ মিলিয়ন ২২ কোটি ১০ লক্ষ লোক।
৫।হিন্দীঃব্যাবহারকারী প্রায় ১৮২ মিলিয়ন ১৮ কোটি ২০ লক্ষ লোক।
৬।বাংলাঃব্যাবহারকারী প্রায় ১৮১ মিলিয়ন ১৮কোটি ১০ লক্ষ লোক।
৭।পর্তূগীজঃব্যাবহারকারী প্রায় ১৭৮ মিলিয়ন ১৭ কোটি ৮০ লক্ষ লোক।
৮।রাশিয়ানঃব্যাবহারকারী প্রায় ১৪৪ মিলিয়ন ১৪ কোটি ৪০ লক্ষ লোক।
৯।জাপানীজঃব্যাবহারকারী প্রায় ১২২ মিলিয়ন ১২ কোটি ২০ লক্ষ লোক।
১০।জার্মানঃব্যাবহারকারী প্রায় ৯০.৩ মিলিয়ন ৯ কোটি ৩ লক্ষ লোক।
এবার দেখি এই ভাষাগুলো মোট কত দেশে ব্যাবহৃত হয়ঃ
চীনা ভাষা-৩১ দেশে
স্পানীস ভাষা-৪৪টি দেশে
আরবী ভাষা-৫৭টি দেশে
হিন্দী ভাষা-২০টি দেশে
বাংলা ভাষা-১০ টি দেশে
পর্তূগীজ ভাষা-৩৭টি দেশে
রাশিয়ান ভাষা-৩৩ টি দেশে
জাপানীজ ভাষা-২৫ টি দেশে
জার্মান ভাষা- ৪৩ দেশে।
বাংলা দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বপ্রান্তের একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে।
খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাদের শেষ প্রান্তে এসে মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকে যে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলোর উদ্ভব ঘটে, তাদের মধ্যে বাংলা একটি । কোন কোন ভাষাবিদ তারও অনেক আগে, ৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে, বাংলার জন্ম হয় বলে মত পোষণ করেন। তবে এ ভাষাটি তখন পর্যন্ত কোন সুস্থির রূপ ধারণ করেনি; সে সময় এর বিভিন্ন লিখিত ও ঔপভাষিক রূপ পাশাপাশি বিদ্যমান ছিল। যেমন, ধারণা করা হয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর দিকে মাগধি অপভ্রংশ থেকে মাগধি উদ্ভব ঘটে। মাগধি ও বাংলা কিছু সময় ধরে সহাবস্থান করছিল।
বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়:
১।প্রাচীন বাংলা (৯০০/১০০০ খ্রিস্টাব্দ – ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ) — লিখিত নিদর্শনের মধ্যে আছে চর্যাপদ, ভক্তিমূলক গান; আমি, তুমি, ইত্যাদি সর্বনামের আবির্ভাব; ক্রিয়াবিভক্তি -ইলা, -ইবা, ইত্যাদি। ওড়িয়া ও অসমীয়া এই পর্বে বাংলা থেকে আলাদা হয়ে যায়।
২।মধ্য বাংলা (১৪০০–১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) — এ সময়কার গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন; শব্দের শেষে “অ” ধ্বনির বিলোপ; যৌগিক ক্রিয়ার প্রচলন; ফার্সি
৩।আধুনিক বাংলা (১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে) — ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপন (যেমন তাহার → তার; করিয়াছিল → করেছিল)।
বাংলা দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বে অবস্থিত বঙ্গ বা বাংলা নামক অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা। এ অঞ্চলটি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে গঠিত। এছাড়াও মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও বাংলা ভাষাতে কথা বলে।
ইউনেস্কো ও জাতিসংঘ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী নিজ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং রাষ্ট্র ভাষা বাংলা করার অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাভাষিদের অকাতরে অকুতভয়ে প্রানদান যা বিশ্বে বিরল এর প্রতি সম্মান জানিয়ে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” পালনের সিদ্ধান্ত নেয় যা ২১ শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ সন থেকে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে।
তাই সালাম,রফিক,জব্বার অন্যান্য যারা আমাদের ভাষার জন্য প্রাণদান করেছেন তাদের প্রতি রইল সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা এবং সম্মান।