আমি ছুডুবেলা থিকাই জানি কিমুন কিমুন আছিলাম। মাইনষে কইত ব্রুস লি ভালা আমি কইতাম জ্যাকি চান। মাইনষে কইত টারজান ভালা আমি কইতাম র্যাম্বো। সবাই টম এন্ড জেরির ভক্ত হইলে ও আমি ছিলাম উডিউড পেকারের ভক্ত। এমনই বিদ্রোহী ছিলাম আমি সেইসময়।




যাই হউক আমার সেই উত্তাল দিন গুলায় আমি মুখোমুখি হইলাম এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার। বাংলাদেশের সব মাইয়াগুলাই এক পোলার উপর ক্রাশ খাইছে - সেইডা দেইখা ফেলাইলাম এক্কেবারেই ছুডবেলায়ই। আর সেই পোলাডা কেডা জানেন? সে হইল সালমান শাহ




(এই সেই সালমান। )
যাই হোক সানির মত একটা চাদর নিয়া তারপর চাদর দুইপাশে ছড়াইয়া নিজের শার্ট (সানির মত বক্ষ প্রদর্শনে আমি অবশ্য লজ্জা পেতুম


















যাই হোক গল্পে গল্পে বেলা গড়ি যায় এইবার আসেন আসল কথায়। হঠাৎ একদিন সালমান মারা গেল আর এই খবর আমিই আমার বলদা কাজিন দুইডারে দিলাম। দুই বলদিই বিশ্বাস করলনা। হাসিয়াই উড়াইয়া দিল যেন ইহা আমার ষড়যন্ত্র। কি আর করা পরবর্তীতে কনফার্ম হইয়া দুইজনেরই চোক্ষে বান নামিল






তবে খেইল শুরু হইল দুইদিন পর। সবাই প্রথমে সালমান শাহর মারে দোষারোপ করা শুরু করল। তাদের কথা তার মার অত্যাচারেই নাকি সালমান সুইসাইড খাইছে। আশ্চর্য আমি তার মার কোন দোষই দেখলামনা। কি জানি কি হইল হঠাৎ শোনা গেল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কথা। আমি পত্রিকায় তার ছবি দেখিয়া বলিলাম, " দিস জেন্টলম্যান লুকস ফার স্মার্টার দ্যান সুলেমান শা"। আর যায় কই আমার উপর তুফান নামিয়া আসিল। আমাকে পচানোর ব্যার্থ চেষ্টা করা হইল। কিন্তু আমি "কত নামাজি দুই পায়ের তলায় ভষ্ম হইয়া গেল আর আমি বেনামাজি খারাইয়াই রইলাম" প্রবাদখানি সত্য প্রমাণ করিয়া তাহাদের বানের জলে ভাসাইয়া নকআউট করিয়া দিলাম




যাইহোক আমি তখন বালক আর বালকরা কখনো দমেনা। এক এক করিয়া নিউজ আসিতেছে তখন তরুণী হত্যার খবর। আমি শিউর ছিলাম আমাদের পাড়ায় কেউ কেউ না কেউ ঘ্যাচাং করিবে। যাউকগা আমার এক সহপাঠি (সে তার হস্ত কাটিয়া সালমান লিখিয়াছিল) ছাড়া কেহই আমার আশংকা সত্য প্রমাণ করিতে উদ্গ্রীব হইলনা। সব যে নকল প্রেমিকা আমি বুঝিতে পারিলাম


ওহ এই আযাব আমি দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত তাহাদের উপর চালু রাখিয়াছিলাম। তাহারা মাঝোমাঝে দাত কিড়মিড় করিতে করিতে বলিয়া উঠিত "হিংসা হয় তোর, হিংসা হয়"। আবার কখনো কাদিত ও। তবে একসময় আমি ক্ষ্যামা দিয়াছিলাম।
যাহা হোক এতক্ষণ ঘর বর্ণনা করিলাম এখন বাহির বর্ণনা করি। আমাদের স্কুলে একসময় মেয়ে ছেলে একসাথে অধ্যায়ন করিত। কিন্তু নানা চারিত্রিক স্খলনের কারণে এবং মেয়েদের উপুর্যুপরি অভিযোগে ত্যাক্তবিরক্ত হইয়া স্যাররা অভিভাবকদের সাথে ষড়যন্ত্র করিয়া আমাদের ক্ল্যাশ ভাগ করিয়া দিলেন। সালমান শা যখন মারা যায় তখন আমরা সেপারেট কিন্তু ঠিকই যোগাযোগ হইত। শুনিতাম উহারা আমাদের বড়ই মিস করে। কিন্তু আমরা পুরুষ জাতি খুব একটা পাত্তা দিতামনা




আমরা ছিলাম খুবই ফ্রি। আমরা উহাদের গিমা (পাঠক গণ গিমা শব্দটির বর্ণ গুলি একটু উল্টাইয়া লন তাহা হইলে ইহার আসল মিনিং জানিতে পারিবেন) বলিতাম কিন্তু উহারা কোন প্রতিবাদ করিতনা। উল্টা আমাদের বলিত ব্যাডা এবং পরে আরো অপদস্থ করিত মর্দা বলিত। কতটা নির্লজ্জ ছিল উহারা একবার চিন্তা করেন!!! যাহা হউক উহা আলাদা বিষয়। প্রসঙ্গান্তরে আসিয়া পড়িয়াছে। আমরা এইবার আবার সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়া যাই। আমাকে সালমান বিষয় লইয়া একদিন এক গিমা টিজ করিতে প্রবৃত্ত হইলে আমি বলিলাম, "এইরকম বাল্যপ্রেম ভালো না। পড়াশুনা কর। পরে অবৈধ প্রেমের কারণে একদিন আসল প্রেম মানে তোমারা নিকা করার সৌভাগ্য অর্জণে তুমি ব্যার্থ হইতে পার।"
আর যায় কোথায়!! যেন আস্ত মৌচাক আমার মাথায় ভাঙ্গিয়া পড়িল। একে একে অনেক গিমা আমায় ঘিরিয়া ধরিল। তাহার আমায় বলিল," হিংসা হয়? তোর হিংসা হয়? সব মেয়েরা সালমান শাহকে পছন্দ করে বলে তোর কি হিংসা হয়?"
ঘরে বাইরে এই অপবাদ শুনিতে শুনিতে আমার মাথায় তখন বজ্রপাত ঘটিল। আমি বুঝিতে পারিলামনা এই ঢাকা শহরের আলো বাতাসে বড় হইয়া ডিশ কালচারে বাড়িয়া উঠা ঢাকা শহরের সবচেয়ে স্মার্ট গিমাগুলা (সেইসময় ইংলিশ মিডিয়ামের এত জয়জয়কার ছিলনা) এইরকম খ্যাত কেমনে হইল? আমি তাই পাল্টা আঘাত ছুড়িলাম, খোমা দেখিয়াছিস কি তোদের?
উহারা পাল্টা কহিল, তোর খোমা আগে দেখিয়া আয়!
আমি বলিলাম, আমি কি বলিয়াছিলাম যে তোরা আমার উপর ক্র্যাশ খাইয়াছিস? তোরা অপবাদ দিয়াছিস তাই তোরা আগে যা খোমা দেখিতে।
জাবাবে উহারা বলিল উহাদের একুইজেশন নাকি সঠিক। আমি তাহাদিগকে পছন্দ করি আর উহারা সালমানকে পছন্দ করে বলিয়া আমি নাকি সালমানকে হিংসা করি। আমি অবাক হইয়া গেলাম ভালোবাসায় অন্ধ হইলে নারীরা কতটা হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হইতে পারে ইহা দেখিয়া।
আমার আর সহ্য হইলনা। ধাম করিয়া বলিয়া দিলাম, আমার মত এক গোবেচারা বালক কিভাবে তোদের মত এতগুলো কদাকার গিমাকে লাইক করিতে পারে?
ব্যাস এইবার ক্যাও ক্যাও শুরু হইয়া গেল ভয়াবহভাবে। এই কাউ কাউ শুনিয়া আমার বন্ধুদিগরাও না আসিয়া পারিলনা (উাহারা পাশেই ছিল অবশ্য


আর যায় কই সিনথি আল্লাদি ফুপিয়া ফুপিয়া কাদিয়া উঠিল। কে তাহারে স্বান্তনা দিবে কে তাহারে ভরসা দিবে? আছে কি এমন কোন জন? না সেইরকম কেউ তখনো জন্মায়নাই। যা হওয়ার তাই হল অবশেষে। গিমাডা নালিশ করিয়া দিল।



কিন্তু ব্যাক্কল নালিশ করবি ভালো কথা কোন স্যাররে কর!!
















আমার কথা:
আমাদের যুগে ছেলেদের মধ্যে সালমান নিয়ে লাফালাফি খুব বেশী ছিলনা। যা লাফালাফি তা মেয়েদের মধ্যেই বেশী ছিল। তবে সবাই একমত পোষণ করত যে বাংলা সিনেমা তার সর্বশ্রেষ্ঠ তারকাটিকে হারিয়েছে। কৈশোরের চপলতায় আমি হ্য়ত সালমানের মৃত্যুতে খুব আমোদ করেছি বলে মনে হতে পারে কিন্তু সত্যি হল আমি ভিতরে ভিতরে খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম। সালমানের কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্নেহ, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, বিক্ষোভ, দেনমোহর, এই ঘর এই সংসার এই সিনেমা গুলোর সবগুলো সম্ভবত আমি হলে গিয়ে দেখেছিলাম (আরো বেশী হতে পারে কারণ তখন অনেক সিনেমা দেখতাম)। তখন গুলশান একের জ্যোতি সিনেমা হলে আমরা ছবি দেখতাম সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় (টাকা চাইলে ছুইলা ফেলাইতাম না নগদে!!!! এলাকার দাপট আছেনা একটা


আজকে দিন পাল্টে গেছে। যারাই বাংলা সিনেমা নিয়ে চিন্তা করে তারাই সালমানকে ফিল করে। সালমানকে নিয়ে ভালো একটা পোস্ট দিয়ে যে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবো সে সামর্থ্য আমার নেই। আমার মত সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় শুদ্ধ ভাষায় যথাযথ বিশেষণ প্রয়োগে কিংবদন্তী সালমানকে যথার্থরূপে চিত্রিত করা। তাই আমার জীবনের সালমান স্মৃতি নিয়ে সাজালাম সালমান শ্রদ্ধান্জলী। সালমান যে মেয়েদের কাছে কতটুকু জনপ্রিয় ছিল - আমার বলা কাহিনীগুলোই তার প্রমাণ বহণ করে। এই কাহিনীগুলোতে হয়ত দূর্যোধনের প্রভাব থাকতে পারে কিন্তু প্রতিটি কাহিনীই বাস্তব। আমি জাফর ইকবালের পিক টাইমে তাকে দেখিনি তবে সালমানকে দেখেছি তার তারকাবেলার পুরোটা জুড়ে। আমার জীবদ্দশায় এত জনপ্রিয় নায়ক বাংলাদেশে যে আর একটিও দেখিনি এই সত্যটুকু স্বীকার না করলে বিবেকের কাছে দোষী থেকে যাব সারাটা জীবন। আমি নিজে বিশ্বাস করি সালমানকে খুন করা হয়েছে। সামিরা, ডন এবং আজিজ মোহাম্মাদ ভাইকে কষে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। পরিশেষে বলতে চাই সবার মত আমিও সালমানের হত্যার বিচার চাই।