১.
জটলা থেকে একই শব্দ বারবার শুনতে পাচ্ছে লোকটা।অনেকদিন ধরেই তার রোগটা বিরক্ত করে যাচ্ছে।কত যে চিকিৎসার আশ্রয় নিয়েছে,তার কোনো ঠিক নেই।মোড়ের ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খায়,ডাক্তার দেখানোর মত পয়সা তার নেই, এই জটলার ক্যানভাসারটা কি তার রোগ সারাতে পারবে? বিশ্বাসে মিলায় বস্ত,তর্কে বহুদূর-আজীবন শুনে আসা বাক্যকে সম্বল করে লোকটাও দাড়িয়ে গেলো জটলার মাঝে।
''........ রানের চিপায় চাপায়...আঙুলের ফাকে গোটাগাটি ঘা !! আহারে চুলকানী !! খালি চুলকাইতে মনে চায় !! চুলাকাইয়া চুলকাইয়া প্যান্টের পকেট ফুটা কৈরা ফালাইছেন.....পকেট থিকা পয়সা-টাকা পইড়া যায় !! মরার চুলকানী !! এতই চুলকাইতে ভালা লাগে !!......''
লোকটা ভাবলো,আরে সত্যি তো!! ক্যানভাসার তার মনের কথা বলে দিয়েছে!!এসব তো ঘটছেই হরহামেশা
''......আদরের বাচ্চাকে কোলে নিতে পারেন না, কান থিকা গন্ধ পুঁজ বাইর হৈতে থাকে.....আহহারে !! খালি কান্দে আর কান্দে ...''!!
হুম..... বাচ্চাটাকে নিয়েও সমস্যা পড়তে হয় ।ক্যানভাসার ব্যাটাই তো দেখছি চিকিৎসার আসল লোক!!
'''...... হাজার টাকার ঔষধ খাইছেন,হাজার টাকার মলম মাখছেন..... কিন্তু কোনো লাভ হয়নাই ..... !!.... রাইতে বেলায় বৌ কাছে আসতে দ্যায়না , মরার ঘা !! শান্তিমত বৌরে একটু জড়াইয়া ধরবেন,কিন্তু পারেন না !!আরেক হাত রানের চিপা চুলকাইতে থাকে !!! শান্তি দিলিনা রে চুলকানী !কাইট্টা ফালান !!কাইট্টা ফালান !! মনে চায় ঠ্যাংডা কাইট্টা ফালাই রে !!..... ''
মন্ত্রমুগ্ধের মত লোকটা ক্যানভাসারের দিকে তাকিয়ে থাকে।
''..... যখন হাজার টাকার ঔষধ দিয়া কাম হয়নাই, তখন আমি চ্যালেন্জ কৈরা বলতেছি.... আমার এই বিচ্ছু মলম মাখেন !! ইমরান কেমিক্যালস এর তৈরী এই বিচ্ছু মলম কান পাকা, রানের চিপা-চাপার খাউজানী সাথে সাথে দূর কৈরা দিবো !!রাইতে চুলকানীর জায়গায় লাগাইবেন, সকালে উইঠা মনে করতে পারবেন না কোন জায়গায় খাউজাইছেন আর কোন জায়গায় মলম লাগাইছেন!! ..........কান পাকা রোগ নিমেষেই শুকনা চাউল-ভাজার মত হৈয়া যাইবো !! দাম মাত্র ২০ ট্যাকা ২০ ট্যাকা !! ২০ ট্যাকা !!......... ''
লোকটা সারাদিনের খেটে পাওয়া টাকা থেকে ২০ টি টাকা বের করে এগিয়ে দেয়,চুলকানীর অভিশাপ হতে চিরমুক্তি পেতে।
২.
সারাদিন ঠেলা চালিয়ে জসিমের বাসায় ফিরলে জসিমের দুইটাই বিনোদন লাভের উপায়।একটা হলো পেট ভরে ভাত খাওয়া,আরেকটি হলো নতুন বিয়ে করা বৌটাকে আচ্ছাসে পুরুষত্ব দেখানো।কিন্তু সমস্যা হলো নতুন বৌটাকে ঠিকমত শায়েস্তা করতে পারা নিয়ে।মহল্লায় বন্ধুদের সাথে ভিসিআরে দেখা বিদেশী মেয়েগুলা কত ''গরম'' থাকে,পুরুষ গুলোও যেনো এক একটা ষাঁড় !! কিন্তু জসিমের ভয় হয়,সে নিজে কি ঐ পুরুষগুলোর মত.......পারে ?? বন্ধুরা বলে রাস্তার মোড়ের ঔষধ নিলে নাকি উল্টো খারাপ হয়, কিন্তু জসিমের তার নতুন বৌকে শায়েস্তা করা চাইই চাই !! সেও এগিয়ে গেলো জটলার দিকে ...........
''.......এই দেখেন আপ্নেরা !!এই দেখেন কেমন কামনার্ত নারী !! দেখেন আপনেরা কেমনে কামনায় পুইড়া যাইতাছে এই নারী !! এমন কোনো ভাই আছে এই নারীকে শান্ত করতে পারে ??....''
লোভাতুর দৃষ্টিতে ক্যানভাসারের হাতে ধরা ম্যাগাজিনের বিবসনা নারীর দিকে তাকিয়ে থাকে জসিম ।
''...... এমন নারীকে শান্ত করার জন্য কয়ডা বাপের ব্যাডা আছে ?? দশ সেকেন্ডেই ল্যাটকাইয়া পড়েনা,কেউ বুকে হাত দিয়া কৈতে পারবেন ?? পারবেন না .....''.....বলতে থাকে ক্যনাভাসার....... ''......কামরুপ কামাখ্যায় এই সকল নারীরা বিচরন করে,আপনের ঘরের নারীরাও আপনার চেয়ে বেশি শক্তিশালী কিন্তু আপনে না !!আপনার ঘরের নারীর ২০ মিনিটের উত্তেজনা আপনি নিভাইতে পারেন না !! এই যে দেখেন জোঁক !!.....''
আর বাকি সবার মতই জসিমও হা করে দেখে জোঁকটাকে, কেমন বড় হয়,ছোট হয় !!
''......এই জোক যেমন লম্বা হয়,ছোট হয়,তেমনই আপনার গোপন অঙ্গও !! আর ছোট অঙ্গ এইভাবে বড় করার জন্যই এই জোঁকের তেল লাগে!!......'' !!
সবার লোলুপ দৃষ্টির মাঝেই অভিজ্ঞ ক্যানভাসার বলে যেতে থাকে...... '' ....... শুধু জোঁকের তেল মাখলেই কি পুরুষত্ব ফলাইতে পারবেন ?? পারবেন আপনার স্ত্রীর ২০ মিনিটের আগুন ঠান্ডা করতে ?? আমি এইবার আপনাদের দেখাইতাছি এক অব্যর্থ মহৌষধ !! দুনিয়ার কোন নারী নাই যে এই ঔষধের কাছে নতি স্বীকার করে নাই !!
সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ক্যানভাসারের হাতে ধরা বোতলের দিকে ।
''......এ আমি কিভাবে পাইলাম ??.... কামরুপ কামাখ্যায় ধ্যান করার সময় স্বপ্নে দেখলাম উর্বশী আমারে বলতেছে,আমাকে তৃপ্তি দিয়াছো,তাই তোমাকে পুরুষত্ব দীর্ঘ করার উপায় বলিবো.....''
একটু গলা খাকাঁড়ি দিয়ে আবার শুরু করে ক্যানভাসার,'' ....প্রথমেই এক কুমারী মেয়ের প্রথম জরায়ুনিসৃত রক্ত দরকার...সোনা আর রুপার ধুলার সাথে মিশাইতে হৈবো দুধ ।তারপর জোড়া বাংলা সালের শ্রাবন মাসের প্রথম অমাবশ্যার রাতে সম্পূর্ন নগ্ন হৈয়া এমন একটা মাঠে যাইতে হৈবো,যার পাশে থাকবো এক দীঘি,আরেক পাশে থাকবো বটগাছ।সেই বটগাছের নিচে ঘোড়ার শিশ্নের টুকরার সাথে এই জিনিসগুলা মিশাইয়া ১৯ হাত মাটির নিচে বোতলসহপুততে হৈবো!! তার পর নগ্ন অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়া ফিরা যাইবেন দিঘীর পারে।গোসল কৈরা হইবেন পবিত্র!! ঠিক ৭ অমাবস্যার পর ঐ বোতলের নির্যাস তুইলা আইনা খাইবেন .......... দুনিয়ার কোন নারী, কোন রানী,কেউই আপনার সাথে পারবোনা!! সবাই হৈবো আপানর পুরুষত্বের দাস !! ...........আপনি এত কষ্ট করতে পারবেন না বৈলা আমি নিজেই এগুলা তৈয়ার কৈরা রাখছি !! প্রতি বোতল দাম মাত্র ৯০ ট্যাকা ৯০ ট্যাকা !!!......'' !!
আর কয়েকজনের মত জসিমও আশা নিয়ে,আগ্রহ নিয়ে টাকা বাড়িয়ে দেয় .............
বি.দ্র.উপরের দুটি ঘটনা কল্পনাপ্রসুত নয়।এগুলো আমাদের আশেপাশেই ঘটে চলেছে।ক্যানভাসারদের মিথ্যা কথার ফুলঝুড়িতে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের আশায় আমরা যেমন টাকা বাড়িয়ে দেই,অন্যদিকে আমরা রাজনীতিবিদদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে কি ভোট বাড়িয়ে দেই নি ?? প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরও আমাদের রমজানে বাজার করতে নাভিঃশ্বাস উঠছেনা?? বিদ্যুত নিয়ে কম ভুগছি??আইন শৃংখলার অবনতি হবার পরও কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাগাড়ম্বর কমেছে??বানিজ্যমন্ত্রী একজন সীমিত আয়ের মানুষ কিভাবে সংসার চালাচ্ছে,তার খেয়াল রাখেন??যানজটে প্রতিদিন নাকাল হচ্ছিনা ??
উপরের প্রতারিত নাম না জানা লোক আর জসিমের সাথে বাংলাদেশের জনগনের কোনরুপ মিল পাওয়া গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৮:০০