ব্যস্ততার মাঝে অনেকেই দিন গুজার করিয়া অন্য কোন কাজ করিবার সময়ক্ষেপন করিতে পারেন না, তবে আমি কিন্চিৎ আলস্যের মাঝে দিন গুজার করিতেছিলাম।জনৈক সন্জয় লীলা বনসালি নাকি একখানা চলচ্চিত্র নির্মান করিয়াছেন,নাম দিয়াছেন ''গুজারিশ'' , হিন্দ ভাষা তেমন একটা আয়ত্বে না থাকায় ভাবিলাম ভদ্রলোকও আলস্যের মাঝে দিন গুজার করিতেছেন,তাই চলচ্চিত্রখানার নাম এরুপ !! মহামহোৎসাহে ডিভিডিখানা কিনিয়া আনিলাম,নিজের সাথেই গুজুর গুজুর করিতে করিতে দেখা শুরু করিলাম ''গুজারিশ '' !!
হা হতোস্মি !! ভুল ডিভিডি কি প্রবেশ করাইলাম !! চলচ্চি্ত্রের সকল চরিত্র দেখি কামানের গোলার মত আংরেজী ভাষায় বান বিনিময় করিতেছে !! ( তবে কেউই -উই আর লুকিং ফর শত্রুজ জাতীয় আংরেজী না বলায় কিন্চিৎ হতাশ হইলাম ) ,অনেককাল সংবাদপত্রের সাথে যোগাযোগ নাই,তাই আংরেজী কি ভারতের জাতীয় ভাষা হইয়া গেল কিনা,এই দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হইয়া গ্যাট মারিয়া ছবি দেখিতে থাকিলাম ।।
কাহিনি হইল এই - বিশিষ্ট জাদুকর ইথান মাসকারেনহাস ( হৃত্তিক রোশন ) জাদুর কারিকুরি দেখাইতে গিয়াছিলেন ,যেইখানে তিনি শুন্যে ভাসিয়া দর্শককে আশ্চর্যান্বিত করেন,কিন্তু তিনি যে তারের সাথে ঝুলিয়া জাদুবিদ্যা প্রদর্শন করেন ,তাহা কেউ না ধরিতে পারিলেও তাহার জিগরী দোস্ত প্রতিদ্বন্দী ইয়াসের সিদ্দিকি তাহা ধরিয়া ফেলেন, শুন্যে ভাসিয়া কারিকুরি দেখাইবার সময় তিনি হৃত্তিকের দড়িখানি কাটিয়া দেন, ফলাফল ???? পপাতঃ ধরনীতল (চোরের দশদিন আর সাধুর ...... তবে এই রকম আজব হাস্যকর জাদু দেখাইয়া কিভাবে যে উনি এক নম্বর জাদুকর হইলেন তাহা বোধগম্য হইলোনা !!! ) মানইজ্ঝত খুইবার পাশাপাশি বোনাস হিসাবে প্যারালাইজড হইয়া প্যাভিলিয়ন গমন করিলেন ।
১৪ বছর উনি বিছানায় পড়িয়া অতিকষ্টে দিনাতিপাত করিতেছেন আর বিশালাকায় প্রাসাদ তুল্য গৃহে তাহাকে বিশেষ সেবা প্রদান করিতে একখানা সেবিকা মওজুদ রহিয়াছেন , উনি হইলেন জেনেলিয়া ডি সুজা থুক্কু সুফিয়া খাতুন ডাবল থুক্কু সোফিয়া ডি-সুজা (ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ) ।জুতা সেলাই হইতে চন্ডিপাঠ,হেন সেবা নাই যে উনি প্রদান করেন না , তবে একজন সেবিকার পরিধানের পোষাক যদি রানী ভিক্টোরিয়া আমলের অথবা য়ুরোপদেশীয় সাদৃশ্যপুর্ন হয়,তবে কস্টিউম ডিজাইনারের কান্ডজ্ঞান নিয়া চিন্তার অবকাশ আছে !! লুল জাতীয়দের জন্য মহা-সুখবর হইল,সেবিকা হইলেও তিনি সেবা কার্যের চেয়ে বক্ষদেশের সৌন্দর্য্য প্রকাশে যথেষ্ট উদারতা দেখাইয়াছেন ..... আজকাল প্রায়ই তিনি ভুলিয়া যান কোনটা সেবিকার পোষাক আর কোনটা পাশ্চত্যদেশীয় ফটো-সেশনের উপযুক্ত কাটের পোষাক !! তবে পুর্বেই বলিয়াছিলাম, অস্তগামী যৌবনের নারীদের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে না তাকাইয়া সমবেদনা জ্ঞাপন করিতে ......নইলে গুনাহ হইবে !!
জাদুকর সাহেবের খায়েশ হইল,তিনি ''এই জেবন আর রাখপেন না '' !! মার্সি কিলিং/ ইউথানেশিয়া !! এই হইলো তার গুজারিশ( ব্যাটা দূর্যোধন,এই হিন্দ ভাষার ভান্ডার নিয়া রিভিউ লিখিতে বসিয়াছো !! গুজারিশ মানে খায়েশ...দিন গুজার না !! ) ,তিনি এখন প্যারালাইজড হইয়া আবার একখানা রেডিওস্টেশন খুলিয়া বসিয়াছেন ( সুসংবাদ হইলো তিনি মিলার গান না বাজাইয়া য়ুরোপদেশীয় গান বাজান ...... আর দুঃসংবাদ হইলো, ''লাভগরু'' এবং অন্যান্য বঙ্গদেশীয় আড়জের মত তিনিও জীবন-প্রেম-ভালোবাসা নিয়া বিশদ জ্ঞান মুফতে বিতরন করেন !!) তাহার এই সেচ্ছামৃত্যুর বিপক্ষে সবাই সোচ্চার,আর তাহার কষ্ট অনুধাবন করিয়া তাহার বান্ধবী দেবযানী দত্ত ( সেরনাজ প্যাটেল ) তাহার পক্ষে ওকালতিতে নামিলেন,কেননা আদালত বলিয়াছেন মরিতে হইলেও আদালতের অনুমতি লাগিবে ( * শর্ত প্রযোজ্য জাতীয়..... এই আর কি ) !!!!!
কিন্তু সুফিয়া বানু ওরফে ঐশ্বরিয়া ১২ বছরের সার্ভিস দিয়া আসিতেছেন,হিন্দি সিনেমার নিয়মানুযায়ী তাহাকে মনে মনে প্রেম ধারন করিতে হইবেই হইবে....তিনি তাহা করিলেনও!! তাই স্বামীকে বিবাহ-বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠাইয়া চাতক-পক্ষীর মত বসিয়া আছেন,''মেরা নাম্বার কাব আয়েগা ''!! তিনি চান না জাদুকর সাহেব মরুক,তাই সেবিকা হইয়াও সবাইর সাথে ছেনালি-স্বরুপ আচরন করেন,কেন তারা জাদুকর সাহেবের এই খায়েশের পক্ষে (মায়ের চাইতে মাসীর দরদ আর কি ) ।
এরই মাঝে হঠাৎ কোকিলের বাসায় কাকের ছা , ঢাকা শহরের যাবতীয় জট -সদৃশ কেশ লইয়া এক তরুনের আবির্ভাব ।এমনই তার জটা,যে উকুনজাতীয় যাবতীয় কীট ঐ কেশ-জঙ্গলে চলিবার সময় নেভিগেশন /'জিপিএস ব্যবহার করিতে বাধ্য !! কোথায় ইহাকে যেন দেখিয়াছি ....হুমম অ্যাকশন রিপ্লে। তরুনের নাম ওমর সিদ্দিকি (আদিত্য রায় কাপুর ) ....উনার ''গুজারিশ'' ,উনি হৃত্তিকের কাছে জাদু শিখিয়া মস্ত জাদুকর হইবেন । কয়েকটা দৃশ্য দেখিয়া বড়ই তাজ্জব হইলাম , এই মেষ-সদৃস বালককে দেখা গেলো হৃত্তিক কে তুলিতে এমন বেগ পাইতে হইতেছে,যে আরেকটু হইলে পশ্চাৎদেশ হইতে বায়ু-গমন নিশ্চিত!! কিন্তু সেবিকা ঐশ্বরিয়া নাকি ১২ বছর ধরিয়া হৃত্তিক মশাইকে আছড়াইয়া-পিছড়াইয়া মানুষ করিতেছেন ( নির্ঘাত কোন একজন্মে ঐশ্বরিয়া এফডিসির নায়ক ছিলেন ....ময়ুরী উত্তোলনে বিশেষজ্ঞ ) । আর জাদুকর সাহেবেরও বলিহারি ..... যৌনতা ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা তিনি রসিকতা করিতে পারেন না ... ( তাইতো বলি,সেবিকার বক্ষদেশ কেন উন্মোচিত )। প্রথম দিকে দেখা গেল স্টিফেন হকিংএর মত স্বয়ংক্রিয় হুইলচেয়ারে তিনি বিচরন করিতেছেন,আর আদালতে দেখা গেলো,পুরান ঢাকার ঠেলাওয়ালার মত তাহাকে ঠেলিতেছেন সেবিকা মহোদয়া !! ( চার্জ শেষ হইয়া থাকতে পারে ) ।
আদালত বলিলেন,না,মার্সি কিলিং হইবে না ,তাই তিনি রেডিওতে ভোটের আয়োজন করিলেন ( বাহ !! গনতান্ত্রিক পন্থা !! ) বিশাল শোরগোল হইল, কাতারে কাতারে মানুষ অংশগ্রহন করিলো,তাই আদালত আবার বিচার করার জন্য জাদুকরের বাসায় শুনানি ধার্য করিলেন ( খালেদার আইনজীবিগুলা বেওকুফ....প্যারালাইজড সাজাইতে পারিলে তার গৃহেই আদালত বসিত !! ).... শুনানীতে জাদুকর সাহেব প্রসিকিউটর কে ৬০ সেকেন্ড বাক্সবন্দী করিয়া বুঝাইলেন, তিনি কত কস্টে ১৪ বছর ধরিয়া দিন গুজরান করিতেছেন , কিন্তু হায় ..... বেরসিক বিচারক তাহাকে মরিতে দিতে চাহিলেন না ..... ( আমার মাথায় ঢুকেনা , মরিতে হইলে এত্ত কাকুতি-মিনতির কি আছে, ধনী জাদুকর কি একখানা ছোরা-সমেত খুনী জোগার করিয়া তাহার সানডে-মানডে ক্লোজ করিতে পারিতেন না ??? ) .....
ইহার মাঝে প্রায়শই-স্বেচ্ছা-উন্মুক্ত-বক্ষা , অস্তগামী যৌবনাধিকারীনি,দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে ফ্লপাসুন্দরী ঐশ্বরিয়ার ততোধিক বানরসদৃশ কৃশকায় আমাজন-সোমালিয়াবাসী স্বামী দেবতা হাজির হইয়া ঐশ্বরিয়াকে কুক্কুরীন্যায় প্রহারপূর্বক নিজ আবাসস্থলে লইয়া গেলেন , প্যারালাইজড হৃত্তিক বসিয়া বসিয়া আবার দিন গুজরান করিতে থাকিলেন .......... !!!
অত্যাশ্চর্য হইলাম , যখন দেখিলাম....... বিশালাকায় ভিক্টোরিয়া-আমল সদৃশ ,হাজার কামরা বিশিষ্ট , লক্ষ পাওয়ারের ঝাড়বাতি সমৃদ্ধ (ডিজুসীয় ভাষায় চরম মাম্মা চরম !! ) গৃহের ছাদ ফুটা হইয়া টপাটপ করিয়া হৃত্তিকের মুখমন্ডলে বারিধারা পড়িতে শুরু করিয়াছে( বাইরে দিয়া ফিটফাট,ভিতর দিয়া গরুর হাট ),মোছার কেহই নাই.......কিন্ত না , ইহা হইতে পারেনা, কোথা হইতে ঐশ্বরিয়া তাহার স্বামীদেবতার কারামুক্ত হইয়া ছুটিয়া আসিয়া হৃত্তিকের চক্ষুনিমিদীত জল মোছাইয়া দিতে শুরু করিলেন ..... আর আবেগাপ্লুত হইয়া হৃত্তিককে বলিলেন , ''মহামহোদয়,আসেন আপনাকে মারি হাডাইলাই '' ......হৃত্তিকও বলিলেন, '' তথাস্তু, সোনাবন্ধু তুই আমারে ভোতা দা দিয়া কাইট্টা লা ......♪♪♫♪ থুক্কু, আমাকে মার্সি কিলিং করো,'' .....এই বলিয়া তাহার প্রেমনিবেদন পুর্বক বিবাহের খায়েশ প্রকাশ করিলেন । ( ম'লো ম'লো ...... মৃত্যুশয্যাও দন্ড উত্থিত কিভাবে হয় !! )
তারপর যা হইবার তাই ..... জাদুকর হৃতিক বিশাল পার্টির আয়োজন করিলেন , পানীয়র ফোয়ারা ছুটিল,বাদ্য বাজিল , আত্মীয়স্বজন হাস্যমুখে নর্তন প্রতিভা দেখাইলেন , মরিবার পূর্বে হৃত্তিক সবাইকে বিভিন্নভাবে ইন্ট্রোডিউস করাইলেন .....এমনকি কৌতুক বলিবার বিফল চেষ্টাও করিলেন !!! মৃত্যুশয্যায় এত্ত হাসিখুশি পরিবেশ কোথাও দেখা গিয়াছে কিনা জানা নাই , মরিবার ঘোষনা দিতেই সকল আত্মীয়স্বজন হাসিতে-খুশিতে তাহার উপরে এমনভাবে ঝাপাইয়া পড়িলেন যেন গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাইয়াছেন !!! অতঃপর জাদুগর সাহেব মরিয়া আমাকে পৌনে দুই ঘন্টার আজাব হইতে মুক্তি প্রদান করিলেন !!!!
বি.দ্র. সন্জয় লীলা বনশালী'র পরিচালিত ছবির তুলনায় নাচে-গানে-অন্তরঙ্গ অ্যাকশন সীনে ভরপুর '' দূর্ধর্ষ পামেলা''র পরিচালক অনেক বিজ্ঞ , তার ছবির ডায়ালগ দেশের অশিক্ষিতরাও বুঝে .... ছবি শেষের পর '' কিছুই বুঝলাম না '' বইলা মাথা থাবরায় না ...... তার ছবিতে নায়ক কিছুক্ষন পরপর কাইন্দা বুক ভাসায় না ( জনগন এগুলা পছন্দ করেনা )..... যার কাপড় খোলার কথা ,সেই কাপড় খুলে......যার পড়ার কথা সেই পড়ে .... তার পুরা ছবিতে আলো-আধাঁরী লইয়া বেহুদা এক্সপেরিমেন্ট করেনা ( যেই সীনে দরকার সেই সীনেই করে ) ...... বিদেশী ছবির কাহিনি নকল করলেও দেশি ফ্লেভার দিয়া চালায়া দেয়,অন্ততঃ দেশী জিনিশ দিয়া বিদেশি ফিলিম বানাইতে চেষ্টা কইরা প্রযোজকের হাতে হারিকেন আর ***** বাঁশ ধরায়া দেয় না ।
এই ব্যাডার এখন এফডিসিতে আইস্যা মানতাজুর রহমান আকবর+এফ আই মানিকের কাছে ছবি পরিচালনা শিখা উচিত , আর ঐশ্বরিয়ার একটা বাচ্চা পয়দা কইরা ঘরসংসারে মন দেওয়া দরকার..... বেচারা অভিষেক আর কত সংসার সামলাইবো !! আর হৃত্তিক....বাবা অনেক হইছে,এখন তুমি তোমার গোঁফ -দাড়ি পরিষ্কার করতে যাও,অভিনয় করতে কইলে আরেকটু কম অভিনয় কইরো ,আর ছবি সাইন করার আগে দেইখা নিয়ো.....হিন্দি না মেক্সিকান/ইংরেজী ছবি অভিনয় করতে যাইতাছো !!!
সতর্কীকরন : ছবি দেখা শুরুর পূর্বে আইইএলটিএস করা বাধ্যতা মূলক ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৪