'বের হবি?'
'হুম, তুই কোথায়?
'আমি বের হচ্ছি।' কণ্ঠে উত্তেজনার স্বর।
'ওকে, তুই বাবলুর দোকানে আয়, আমি এক্ষুনি বের হচ্ছি, দশ মিনিট।'
প্রতিবার বাসায় এসে যার সাথে আমার প্রথম দেখে হয় সে হলো রনি। ছোট থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি। আমার কাছে রনি বন্ধুর চেয়েও অনেক কিছু। গ্রীষ্মের সকাল খুব ক্ষণস্থায়ী। সূর্য ওঠার সাথে সাথেই কেমন দুপুর হয়ে যায়। ততক্ষনে সূর্য মাথার উপরে উঠে গেছে। অলস দিনে ঘুম থেকে উঠেই দেখি দুপুর হয়ে গেছে। গ্রীষ্ম কাঠখোট্টা ধরণের এক ঋতু। মানিব্যাগটা জিন্স প্যান্টের পকেটে কোনো রকম গুঁজেই বাইরে বের হয়ে গেলাম।
পিচ ঢালা পথ হেঁটে যখন পাথর-সুরকির ঢালাই রাস্তায় উঠলাম তখন যেন গা পুড়ে উঠলো প্রখর সূর্যের তাপে। একটুও বাতাস নেই। আজ যেন দুপুরটা একটু বেশিই রুক্ষ। উত্তপ্ত রোদে ইট-সুরকির ঢালাই রাস্তা, পিচ ঢালা রাস্তার চেয়ে একটু বেশিই উত্তপ্ত হয় মনে হয়। কিন্তু তা কেন হবে! পিচ ঢালা রাস্তা কৃষ্ণ কালো আর তার তুলনায় কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা তো গোলাপী মেমসাহেব! পদার্থবিদ্যা মতে, কালো রং তাপ শোষণ করে বেশি আর তাই পিচ ঢালা রাস্তা, কংক্রিটের গোলাপী-সাদা মোজাইক রাস্তার চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। আর এই সত্য সম্ভবত আমাদের চেয়ে আর বেশী কেও জানে না। শহরে একটিই মাত্র কংক্রিটের রাস্তা এখনো টিকে আছে। রাস্তাটি রেল স্টেশন থেকে সাপের মতো বেকিয়ে শেষ হয়েছে পৌরসভা গৌরস্থানে। ব্রিটিশ আমলের রাস্তা। ব্রিটিশরা লেজ গুঁটিয়ে চলে গেছে সেই কবে কিন্তু রাস্তাটি টিকে আছে আজও। রাস্তার চারপাশে গড়ে উঠা কাঁচা-পাকা বাড়িগুলিতে জন্ম নিয়েছে শত শত শিশু। তারা বড় হয়েছে এখানেই। সময়ের আবর্তে তারা মারাও গেছে। আর তাদের শবযাত্রা হয়েছে এই রাস্তাতেই। এই রাস্তা দিয়েই তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে পৌরসভার গৌরস্থানে। শ্মশানে যাওয়ারও এই একটাই পথ। অনেক জীবন অনেক মরণের সাক্ষী এই কংক্রিটের রাস্তা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিটুমিনের প্রলেপে অনেক রাস্তা হয়েছে কালো; কিন্তু আমাদের গোলাপী মেম আজও রয়ে গেছে গোলাপী। গ্রীষ্মের রোদ্রে সেইই তো হবে উত্তপ্ত। তারই তো সকল অধিকার। পদার্থ বিজ্ঞানের তত্ব সে থোড়াই কেয়ার করে!
'ফ্রেন্ড, হাউ আর ইউ?' আমি গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে জিগ্যেস করলাম।
'গুড গুড' তীক্ষ্ণ গলায় উত্তর এলো যথারীতি।
এলাকার আঞ্জুর আলী পাগল। সবার কমন ফ্রেইন্ড। ডানদিকে দূরে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আঞ্জুর আলীর হাঁটার স্টাইলটাই অমন। কিছুদূর হাঁটে তারপর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই লুঙ্গি বাঁধে। লুঙ্গি বাঁধার মাঝে আবার কিছুক্ষন থেমে থাকে। তারপর আবার লুঙ্গি বাঁধা শুরু করে। অ্যাটমিক ঘড়িতে সিজিয়াম অনু যেমন একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে কাঁপতে থাকে, কোনো অবস্থাতেই যার কম্পনের কোনো ব্যত্যয় হয় না। ঠিক তেমনি আঞ্জুর আলীর লুঙ্গি পড়ার ছন্দেরও কোনো ব্যত্যয় নেই! দুটোই যেন মহাজাগতিক ধ্রুব! আঞ্জুর আলীর তিনটা কাজ: সারা দিন হাঁটা, লুঙ্গি বাঁধা আর থুথু ফেলা। ভর দুপুরে আমাদের মতো অঞ্জুর আলীও বের হয়েছে। তবে ওর গন্তব্য বাস স্ট্যান্ডের চায়ের দোকান, আর আমাদের, বাবলুর দোকান।
আমি একটু পশ্চিম দিকে এগিয়ে দোকানের সামনে দাঁড়াতেই বাবলু ভাই সবগুলো দাঁত বের করে হো হো করে উঠলো।
'একি বাবলু ভাই আপনার দেখি বাম পাশের কর্তন দাঁতটাও পরে গেছে!'
'হ, পোকায় খাইসে। ডাইন পাশেরডা তো আগেই খাইসে, এইবার বাম পাশেরডাও খাইলো। তা, তুই কবে আসলি?'
'কাল রাতে'
'কয়দিন থাকপি?'
'চার দিন'
'বাবলু ভাই, বিড়ি আছে?'
'হ, গোল্লিপ আছে, খাবি?'
'কি যে করেন না আপনে বাবলু ভাই। ব্যানসন রাখতে পারেন না?'
'তোরা থাহিস না। ব্যানসন রাখলে সব বাকি যায়।'
'আচ্ছা, দেন, গোল্ডলিফই টানি।'
'হ, নে। এহনকার মতো টান। আমি বিকালে ব্যানসন আনায় রাকপানে।'
এই হলো আমাদের প্রিয় বাবলু ভাই। কথা বার্তায় কোনো রসকষ নাই, কিন্তু লোক ভালো। আমাদের জন্য ওনার দরদ আছে। এলাকার লোকদের বাকি নেয়া ঠেকাতে সে সবসময় কড়া গলায় কথা বলে, কিন্তু আমাদের জন্য তার বাকির খাতা সবসময় খোলা।
শাজাহান মিঞার রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমেই রনি বললো, 'বিড়ি দে, একটা টান দেই। গরমে গলাটা শুকায়ে গেছে।'
'কেমন আছিস?' রনি বললো।
'ভালো'
'কয়দিনের জন্য আসলি?'
'চার দিন।'
'মাত্র?' রনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।
'হুম', মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সামনের মাসের পনেরো তারিখে। আর দুই সপ্তাহ কোচিং চলবে। তারপর একবারে চলে আসবো।'
'গুড, চলে আয় তারাতারি।'
রনি বড়োলোকের ছেলে। ওকে ওর বাবা সিডনি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দিয়েছে। সেপটেম্বরে ও দেশ ছেড়ে চলে যাবে। আমরা ব্যাচের সবাই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছি কোচিং করতে। আর রনি বাসায়ই রয়ে গেছে। কোনো কোচিং নাই, পড়া নাই। আরামে সময় পার করছে।
আমি আর রনি দোকানের বেঞ্চিতে বসে কথা বলছি। এমন সময় একটা মোটর সাইকেল এসে থামলো দোকানের সামনে। দুজন ভদ্রলোক- দুজনই হেলমেট পড়া। হেলমেট খুলতে খেলতে দোকানে এসে বললো, 'ভাই সিগারেট আসে?'
দুজনই খুব ফর্সা। একজনের মুখে চাপ দাড়ি। একজনের হাতে বড় একটা কালো ব্যাগ। আগে কখনো ওদের কে এই এলাকায় দেখিনি। সম্ভবত: কারো বাসায় বেড়াতে এসেছে। দুজনই সমবয়সী। ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হবে হয়তো। চাপ দাড়িওয়ালা লোকটি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো, 'ভাই একটু বসতে পারি?'
'জি বসুন।' আমি বললাম।
'খুব গরম পড়েছে।' লোকটি বললো।
'আপনারা কি এখানে কারো বাসায় বেড়াতে এসেছেন?' আমি জানতে চাইলাম।
'ঠিক বেড়াতে না। তবে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি। দেখা করে আজিই চলে যাবো।'
পাশে রাখা বড়ো ব্যাগটির দিকে তাকিয়ে আমি বললাম, 'ব্যাগ দেখে মনে হলো আপনারা এখানে বেশ কয়েকদিন থাকতে এসেছেন।'
সিগারেট ধরিয়ে, দাড়িবিহীন লোকটি মানিব্যাগ থেকে একটা ফটো বের করে বাবলু ভাইকে দেখিয়ে বললো, 'দেখেন তো ভাই একে চিনেন কিনা?'
'না চিনি না। আর কিছু লাগবে? কোক, মোজো?'
'ঠান্ডা ফ্রিজের পানি আছে? থাকলে দুই বোতল দেন।'
লোকটি এবার আমার দিকে এসে ছবিটি দেখিয়ে বললো, 'দেখেনতো ভাই চিনেন কিনা?'
আমি ছবিটা হাতে নিয়ে দেখলাম। সুন্দর মতো একটা ছেলে। আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড়ো হবে হয়তো। তবে আমি আগে কখনো দেখিনি।
'না ভাই, আমি ওনাকে চিনি না। আগে কখনো দেখিও নি।'
'আমি চিনি! মানে, আমি দেখেছি ওনাকে কয়েকদিন আগে। এলাকায় নতুন এসেছে।' রনি ছবিটি হাতে নিয়ে বললো। 'আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোদের বাসার পাশেই থাকে। একা থাকে।'
এবার লোক দুটো আমার দিকে তাকিয়ে বললো, 'ভাই দেখে তো ভদ্রলোকই মনে হয়। তা' মিথ্যা কথা বলেন কেন?'
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম, 'কি বলেন আপনি? আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন?' আমি একে আগে কখনোও দেখি নি।'
রনি এবার বসা থেকে উঠে বললো, 'শোনেন ভাই, ও এখানে থাকে না। আজকেই এসেছে অনেকদিন পর। আর, যার ছবি আপনি দেখালেন, তাকে আমি প্রথম দেখেছি দুই দিন আগে এই দোকানের সামনেই। দোকানে চা খেতে এসেছিলো। বললো, সে এই এলাকায় নতুন এসেছে। এক রুম ভাড়া নিয়েছে রফিক সাহেবের মেছে। আমার বন্ধুর ওকে দেখার কথা না।'
'এই ব্যাটা, তুই মিথ্যা কথা বল্লি কেন?' চাপদাড়িওয়ালা লোকটি তেড়ে গিয়ে বাবলু ভাইকে শাঁসালো।
আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা ভালো লাগছিলো না। এই লোকগুলো কারা? তারা কেন আরেকজনকে খুঁজছে? তারা তাহলে এখানে বেড়াতে আসেনি। নতুন জায়গায় বেড়াতে আসলে মানুষ ঠিকানা নিয়ে আসে। ওরা এসেছে ছবি নিয়ে। তার মানে যার কাছে এসেছে, তার ঠিকানা ওরা জানে। কিন্তু তাকে ওরা চিনে না? যাকে ওরা চিনে না তাকে ওরা কেন খুঁজছে?
দাড়িবিহীন লোকটা এবার আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বললে, 'স্যরি ভাই ওর ব্যবহারে কিছু মনে নিয়েন না। ছবির যে ছেলেটিকে দেখলেন ও ওর ছোট ভাই। অনেকদিন ধরে নিখোঁজ। আজই আমরা জানতে পেরেছি ও এ এলাকাতেই এসেছে।'
ব্যাগটি সাথে নিয়ে লোক দুটো মোটর সাইকেলে চড়ে বসলো। ব্যাগটা দেখে বেশ ভারী মনে হচ্ছে। মোটর সাইকেল স্টার্ট দিয়ে ওরা চলে গেলো। আমি তাকিয়ে থাকলাম ওদের দিকে। কিন্তু ওরা আমাদের বাসার রাস্তার দিকে না গিয়ে সোজা শহরের দিকে চলে গেলো।
'রনি, ঘটনা কি? ওরা এতদিন পর নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধান পেয়ে তার কাছে না গিয়ে শহরে চলে গেলো কেন?'
'জানিনা! ভাললাগছে না। ক্ষুধা লাগছে। চল বাসায় যাই। বিকেলে আবার দেখা হবে।'
'হুম, চল। আমারও ক্ষুধা লাগছে।'
'বাবলু ভাই, বিকেলে কিন্তু অবশ্যই ব্যানসন এনে রাখবেন। এখন যাই।'
গম্ভীর মুখে বাবলু ভাই থাকিয়ে আছে। তার পোকায় খাওয়া ফোকলা দাঁত দুটো আর দেখা যাচ্ছে না।
বাসায় ফেরার পথে আমি রফিক সাহেবের মেছের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম ছবির ওই ছেলেটাকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু না। মেছে শুনশান নীরবতা। কেউ নাই বোধ হয়। আমি বাসায় চলে এলাম।
অনেক্ষন ধরে গোসল করছি। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে খুব ভালো লাগছিলো। কিন্তু আম্মার ডাকা ডাকিতে বেশিক্ষন আর বাথরুমে থাকতে পারলাম না। সেই কখন থেকে খাওয়ার জন্য ডাকছে। এতো খাবার মানুষ একসাথে কিভাবে খায়? তারপরও খেতে হবে।
আমি খাওয়া শেষ করে হাতে হুমায়ুন আহমেদের দেবী বইটা নিয়ে বিছানায় কাত হয়েছি। ওমনি চিৎকার। বিকট চিৎকার। কান ফাটানো চিৎকার। বাঁচাও বাঁচাও। চিৎকার, আর্তনাদ আর বাড়ির শব্দ আসছে আমাদের বাসার পেছন থেকেই। বাসার পেছনে একটা ছোট খাঁদ, ঔ খাঁদে বুনো কঁচু বাগান। ওই বাগান থেকেই শব্দটা আসছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি দুজন লোক বড় রাম দা দিয়ে কচু গাছের মধ্যে কাকে যেন এলোপাথাড়ি কোপাচ্ছে। এটা দেখে আমার বুক ধড়ফড় করে উঠলো। আমার মনে হলো আমার হৃদপিন্ড বুকের খাঁচা ভেঙে এক্ষুনি বের হয়ে যাবে। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমার কানে তখন আর কোনো শব্দই আসছিলো না। আমি কোনো আর্তনাদ বা চিৎকার শুনতে পারছিলাম না। শুধু দেখছিলাম ওই লোক দুটিকে, যারা দোকানে এসেছিলো, ওরা রাম দা হাতে কাকে যেন কোপাচ্ছে। আমার কাছে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছিলো। হঠাৎ যেন সময় থমকে দাঁড়ালো।
যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন চারদিক নীরব। কচু বাগান থেকে আর কোনো শব্দ আসছে না। আম্মার এখনও জ্ঞান ফেরেনি। আমি সাহস করে আবার জানালা দিয়ে তাকালাম। লন্ডভন্ড কচু বাগান। কেউ নেই। লাল রক্ত কচু পাতায় কালো হয়ে আছে। একটু পরে আম্মার জ্ঞান ফিরলো। মানুষ মানুষকে কিভাবে রাম দা দিয়ে কোপায় তা আম্মা কখনো দেখেনি, কখনো চিন্তাও করেনি। কি বীভৎস! মানুষের আর্তনাদ এতো বীভৎস হতে পারে! তখনও চারদিক নীরব। কতটা সময় পার হয়ে গেছে বুঝতে পারছি না। চারদিক এতো নীরব কেন বুঝতে পারছি না।
হঠাৎ চাপা আর্তনাদ। চাপা কান্না। 'বাঁচাও....... আমাকে ওরা মেরে ফেলছে। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও।' কচু বাগান থেকে আবার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। কচু বাগান থেকে আসা আর্তনাদ ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ঠিক তখনই মনে হলো কারা যেন কচু বাগানে কথা বলছে। রাস্তার ওপারের বস্তি থেকে কয়েকজন ছুটে এসেছে মানুষটিকে বাঁচানোর জন্য। তারা কচু বাগানে খণ্ডিত পায়ের আরেক অংশ খুঁজছে। ছেলেটির বাঁ পা হাঁটু থেকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। ওরা ওটা খুঁজে পেয়েছে। তবে ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল খুঁজে পাচ্ছিলো না। ওরা যখন ছেলেটিকে ধরাধরি করে ভ্যানে তুলছিলো, তখন ছেলেটির মুখটা আমার চোখে পড়লো। ও ওই ছবির ছেলেটিই। রক্ত ক্ষরণে আরো ফর্সা লাগছিলো। আমি জানালায় দাঁড়িয়ে সব দেখছিলম। আমি দেখছিলাম মানুষ কিভাবে মানুষকে মারে। আমি দেখছিলাম, মানুষ কিভাবে মানুষকে বাঁচায়। আমি প্রথমে ভয়ে এবং পরে লজ্জায় বাইরে বের হতে পারছিলাম না।
দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল হলো। চারদিক যখন মানুষের কোলাহলে আবার স্বাভাবিক হলো, আমি তখন বাসা থেকে বের হলাম। একপা দুপা হেঁটে বাবলুর দোকানের দিকে গেলাম। পিচ ঢালা পথ ছেড়ে যখন গোলাপি কংক্রিটের রাস্তায় উঠলাম, দেখতে পেলাম রক্তের ছোপ। ওই পথেই ওরা ভ্যানে করে ছেলেটিকে নিয়ে গেছে হাসপাতালে। ইট-সুরকির ঢালাইয়ের রাস্তাটি সাক্ষী হয়ে আছে। আমি এই বীভৎসতার সাক্ষী হতে চাই না। কেউ চায় না করুন আর্তনাদের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে। কিন্তু এই কংক্রিটের রাস্তা, সে বেঁচে থাকে কাল থেকে কালে। আমাদের সকল কৃতকর্মের স্মৃতি হয়ে সে বেঁচে থাকে যুগ থেকে যুগে। দোকানে যেতেই বাবলু ভাই আমাকে ব্যানসন সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দেয়।
খোন্দকার মেহেদী আকরাম
১১ জানুয়ারী ২০১৭
লন্ডন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২২