পণ করেছিলাম ব্লগ ফ্লগ লেখা থেকে দূরে থাকব কিছুদিন। গোটা সময়টা আপন পেশায় ব্যয় করব। দ্রুত দু'একটি গবেষণা পেপার লিখব, নিজের কারিকুলাম ভাইটিকে কিছুটা উজ্জ্বলতা দিব। কিন্তু পণ রক্ষা করতে আর পারলাম না! চারদিকে রংধনুর উজ্জ্বলতার হাতছানি থেকে নিজেকে আর নিবৃত রাখতে পারলাম না।
সমকামীতা ইস্যুতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের সমাজে একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায় সমকামী। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) এর তথ্যানুযায়ী সমাজে শতকরা ৯৬.৬ ভাগ নরমাল বা হেটারোসেক্চুয়াল বা স্ট্রেইট, ১.৬ ভাগ সমকামী এবং ০.৭ ভাগ বাইসেক্চুয়াল (The Washing Post, July 15, 2014)। সমকামীর প্রবণতা অথবা এর বিস্তৃতি সম্পূর্ণই 'ন্যাচারাল' বা প্রকৃতিক। মানুষসহ অনেক প্রাণীকূলেই এই সমকামীদের বিস্তৃতি রয়েছে। তবে সমকামীদের 'নরমাল' বা ‘স্বাভাবিক’ বলা যাবে কিনা সেই বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। একজন 'প্রকৃত' সমকামী (গে অথবা লেসবিয়ান) জন্মগত ভাবেই তার সমকামী যৌনতা নিয়ে জন্মায়। কিন্তু, শিশু বয়সে এমন একজনকে কোনো ভাবেই সমকামী হিসেবে চিন্হিত করা যায় না; অথবা, শিশু বয়সে একজন সমকামী নিজেও বুঝতে পারে না যে সে সমকামী। তবে বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে সে বুঝতে পারে যে সে অন্যদের চেয়ে আলাদা। সে বুঝতে পারে যে সে সমলিঙ্গের (same sex) প্রতি যৌনাকর্ষণ বোধ করছে। আর যখন সে তার এই আকাঙ্খাকে জনসমুক্ষে প্রকাশ করে, তাকে আমরা সমকামী বলে চিন্হিত করি।
শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে সমকামীরা আর দশটা মানুষের মতই স্বাভাবিক, তবে মানুষিক দিক দিয়ে তারা আলাদা। এর মানে আবার এই নয় যে সমকামীরা মানুষিক রুগী। আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞান মতে সমকামীতা কোনো মানুষিক রোগ নয়। একজন সমকামী একজন অসমকামী বা স্ট্রেইট মানুষের মতোই স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে। সমকামীদের কর্মদক্ষতা এবং গড় আইকিউও অসমকামী বা স্ট্রেইটদের চেয়ে কম নয়। সমকামী এবং অসমকামীদের মধ্যে একটাই তফাত, তা হলো সমকামীরা যৌনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় সমলিঙ্গের সাথীকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক স্ট্রেইট পুরুষ যৌনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় একজন বিপরীত লিঙ্গের স্ত্রীকে। প্রাণী জগতের অন্যতম প্রধান একটি কাজ হচ্ছে বংশ বিস্তার। আর এই বংশ বিস্তার শুধু মাত্র সম্ভব স্ত্রী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমেই। পুরুষ-পুরুষ অথবা স্ত্রী-স্ত্রী মিলনে বংশ বিস্তার সম্ভব নয় (দয়া করে কেও আবার বিজ্ঞান নিয়ে আসবেন না)। সমলিঙ্গের যৌন মিলন জৈবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রুটিপূর্ণ এবং অস্ভাবাবিক। আর এ কারনেই সমকামীতা 'ন্যাচারাল' হলেও 'নরমাল' নয়, সমকামীতা অস্বাভাবিক।
সমকামীতা ন্যাচারাল হলেও এটা একধরনের অস্বাভাবিকতা। সমকামীতা নিয়ে উচ্ছাসের কিছু নেই। সমকামীতাকে রংধনুর সাত রঙ্গে রাঙানোরও কিছু নেই। রংধনু হচ্ছে প্রকৃতির সুন্দরতম বৈচিত্রতার মধ্যে অন্যতম একটি। সমকামীতা হচ্ছে প্রাণীজগতের এক ত্রুতিপুর্ণতা। প্রকৃতির ত্রুতিপুর্ণতাকে উজ্জাপন করার জন্য রংধনুর সাত রঙের ব্যবহার 'অমানানসই' এবং 'হাস্যকর'। রংধনুর সাতটি রং অসমকামী বা ষ্টেইটদের কেই মানায়, সমকামীদেরকে নয়। সমকামীদের জন্য আমাদের সহানুভুতি থাকা বাঞ্চনীয়। তবে সমকামীতাকে নিয়ে 'প্রাউড' ফিল করার কিছু নেই। আপনি কি আপনার অটিস্টিক বাচ্চাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করবেন বা গর্বিত হবেন বা উচ্ছাস প্রকাশ করবেন? অটিজমও প্রাকৃতিক একটি ঘটনা। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর তথ্যানুযায়ী সমাজে শতকরা ১.৫ ভাগ শিশু অটিজম নিয়ে জন্মায়। অটিস্টিক শিশুরা অনেক সময়ই খুব মেধাবী হয় তবে তারা সমাজের সাথে অন্যান্য সুস্থ্য শিশুদের মত সম্পর্ক স্থাপন করে না বা করতে পারে না। জেনেটিক এবং জৈব ত্রুটির কারণেই এমনটি হয়। অটিজম প্রাণী জগতের একটি ত্রুতিপুর্ণতা। আমরা অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সহানুভুতিশীল। তবে কোনভাবেই আমরা অটিজম নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করতে পারি না। আমরা যেটা পারি তা হলো চিকিত্সা বিজ্ঞানার উন্নতি ঘটিয়ে অটিজম কে চিরতরে বিদেয় করা। একদিন হয়ত চিকিত্সা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে সমাজ থেকে সমকীতাকেও দূর করা যাবে।
বাঙালি হুজুগে জাতি। জুকারবার্গ সাহেব ফেইসবুক প্রফাইলে সমকামীদের বিয়ের বৈধতা সমর্থনে রংধনু লেপনের ব্যবস্থা করলেন। আর আমরা বুঝে না না বুঝে (অথবা নিজেকে এলিট বোঝাতে!) ওই রংধনু নিজেদের মুখে লেপন করলাম। মজার ব্যাপার হলো সমকামীদের রংধনুও সমকামীদের মত 'জৈবিক ত্রুটিপূর্ণ'! সমকামীদের রঙধনুতে আসমানী (বা স্কাই ব্লু) রংটি নেই। কি সুচতুর ভাবেই না 'সমকামী রংধনুকে' অপ্রাকৃতিক (unnatural) করে রাখা হয়েছে!
প্রকৃতি মানব শরীর এমন ভাবে তৈরী করেছে যে পুরুষ এবং নারী খুব সহজেই যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হতে পারে এবং বংশ বিস্তার করতে পারে। একজন স্ট্রেইট পুরুষ খুব সহজেই তার পুরুষাঙ্গ একজন নারীর যোনিপথে প্রবেশ করাতে পারে। নারীর যোনিপথ এমন ভাবে তৈরী যাতে করে খুব সহজেই একজন নারী একজন পুরুষকে গ্রহণ করতে পারে। সঙ্গমের সময় যোনিপথের পিচ্ছিল নিঃসরণ এই সঙ্গমকে সহজ এবং বেদনাহীন করে। সমকামীদের পক্ষ্যে এই ধরনের ন্যাচারাল বা সহজ যৌনক্রিয়া কখনোই সম্ভব নয়।
একজন গে পুরুষ সঙ্গমের জন্য তার পুরুষ সঙ্গীর যে ছিদ্রপথ বেছে নেয়, প্রকৃতি তা তৈরী করেছে পয়:নিস্কাষনের জন্য; শিশ্ন গ্রহনের জন্য পায়ুপথ কোনভাবেই উপযুক্ত নয়। পায়ুপথে রয়েছে স্ফিংটার যা পায়ুপথকে খুব শক্ত ভাবে বন্ধ করে রাখে। পায়ুপথ থেকে যোনিপথের মত কোনো পিচ্ছিল নিঃসরণও হয় না। চিকিত্সা পেশায় জড়িত থাকার কারণে জেনেছি পায়ুপথে একটি আঙ্গুল প্রবেশ করানো কতটা জটিল। পুরুষের প্রস্টেট পরীক্ষা করার জন্য আমাদের নিয়মিত পায়ুপথে আঙ্গুল প্রবেশ করাতে হয়ে। অনেক প্রস্তুতি এবং অধিক মাত্রায় জেসকেইন জেলি (এক ধরনের অবশকারী পিচ্ছিল জেলি) ব্যবহারের পরেও লক্ষ্য করেছি রোগীরা খুব ব্যথা অনুভব করে। তাহলে, একজন গে পুরুষ যখন তার পাঁচ আঙ্গুলের চেয়েও অধিক ব্যাসের কোনকিছু তার পুরুষ সঙ্গীটির ভেতরে প্রবেশ করায় তা খুবই বেদনাদায়ক হওয়ার কথা। রংধনু কি বেদনার রং? নাকি আনন্দের? পর্ন ছবি দেখে হয়ত অনেকেই ভাববে পায়ুসঙ্গম কতইনা আনন্দের! আসলে তা নিতান্তই ভ্রান্ত। ব্রিটিশ চ্যানেলে প্রচারিত হওয়া সেক্স বিষয়ক অনুষ্ঠানে পায়ু পথে সঙ্গমের ক্ষত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। যেমন: অপরিহার্য ভাবে কনডম ব্যবহার এবং অধিক মাত্রায় লুব (বা পিচ্ছিল কারক জেলি)। প্রকৃতপক্ষে, পায়ুপথ সঙ্গম শারীরিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, অনিরাপদ এবং বেদনাদায়ক।
বিবাহবন্ধন নারী এবং পুরুষের মধ্যে একটি পবিত্র বন্ধন, একটি আইনি বন্ধন, একটি সামাজিক বন্ধন। এতদিন এ বন্ধনে কেবল আবদ্ধ হতে পারত সমাজের শতকরা ৯৬.৬ ভাগ অসমকামী স্ট্রেইট নারী এবং পুরুষ। দু’দিন আগে আমেরিকাতে এই বিয়ের অধিকার দেয়া হলো সমাজের অন্য ১.৬ ভাগ সমকামীকেও। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে মত ছিল ৫ জন বিচারপতির আর রায়টিতে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ৪ জন বিচারপতি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে আজ থেকে দুইজন গে পুরুষ বৈধভাবে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর সংসার করতে পারবে।
বিয়ে পুরুষ এবং নারীর অধিকার বা রাইট। সমকামীদের ও এই বিয়ের রাইট দিতে হবে, কেননা তারাও মানুষ। কিন্তু সমকামীরা কি আসলেই বিয়ের জন্য প্রিভিলেইজড? একজন অন্ধকে তো গাড়ি চালানোর অধিকার দেয়া হয়না। একজন পঙ্গুকে কি ক্রিকেট দলে নেয়া হয়? অটিস্টিক শিশুদের জন্য তাহলে আলাদা ইস্কুল বা শিক্ষা ব্যবস্থা কেন?
সুস্থ স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের জন্য যে বৈধ লাইসেন্স দেয়া হয় তা হলো 'বিয়ে'। তাহলে ওই একই লাইসেন্স অসুস্থ, অপ্রাকৃতিক যৌন সম্পর্কের জন্য দেয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
শেফিল্ড,
৩০ জুন ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬