নারীদের দেখলে পুরুষেরা তাদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। আবার নারীদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করলেই কিন্তু পুরুষেরা প্রাকৃতিক ক্ষুধা মেটানোর জন্য তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বেনা- এটা নৈতিকতা। নৈতিকতাই মানুষকে অন্য সব বন্য প্রাণী থেকে করেছে স্বতন্ত্র। সম্প্রতি পহেলা বৈশাখ উজ্জাপনের সময় টিএসসিতে যে কতিপয় পুরুষরুপি নরপিশাচ নারীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল, তাদের বস্ত্র হরণ করলো, তাদেরকে দল বেঁধে যৌন নির্যাতন করলো- তা সবই পুরুষ সমাজের নৈতিকতার অবক্ষয়ের ফল; এর জন্য মহিলাদের পর্দা না করা অথবা নাভির নিচে শাড়ি পড়ার অজুহাত সম্পূর্ণই ভ্রান্ত।
কতিপয় পুরুষের নারীদের উপর এধরনের আগ্রাসনের মূল কারণ হচ্ছে নারীদের প্রতি তাদের মূল্যবোধের অভাব। নারীদের প্রতি এধরনের বিবেক বিবর্জিত পুরুষ সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত তাদের জৈবিক তাড়নার মধ্য দিয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এধরনের পুরুষ নিস্ক্রিয় থাকলেও, সুযোগ পেলেই এরা পশুবৃত্তিতে অবতীর্ণ হয়। নৈতিকতা বিবর্জিত জৈবিক তাড়নায় তাড়িত এই পুরুষেরা প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের মানুষিক রুগী, যারা সেক্স অফেন্স এ জড়িয়ে পড়ার জন্য ভয়ঙ্কর ভাবে প্রস্তুত।
নারীদেহের সামান্যতম অনাবৃত অংশ চোখে পরলেও এদের বিবেকহীন কামতাড়না প্যান্টের জিপার খুলে বের হয়ে আসে অবলীলায়। আমাদের সমাজে নারী পুরুষ কাঁধেকাঁধ লাগিয়ে কাজ করছে, ঘুরছে ফিরছে,- কিন্তু কই, সব পুরুষ তো এভাবে নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেনা, অথবা করছেনা কোনো যৌন হয়রানি? কারণ আমরা যে সমাজে বসবাস করি সেখানে সিংহভাগ পুরুষই চালিত হয় নৈতিকতা দিয়ে, তারা জানে সামাজিকতা, তাদের রয়েছে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধ্যা। নারীর সংস্পর্শে যে প্রাকৃতিক পৌরুষীক উদ্দীপনার সঞ্চার হয় তা তারা দমন করে তাদের বিবেক এবং নৈতিকতা দিয়ে।
আবার, যে সমাজ শিক্ষা দেয় যে নারীরা হচ্ছে 'তেঁতুল', এদের দেখলে পুরুষদের জিভে পানি আসতেই হবে; আর জিভে পানি আসার ফলে ওই পুরুষটি যদি নারীটিকে চেঁটে দেয় তাতে পুরুষের কোনো দোষ নেই, দোষ সব ওই নারীর। অথবা যে সমাজে বোরকা বিহীন নারীদের তুলনা করা হয় খোসাছাড়া কোনো ফলের সাথে যেখানে মাছিরুপি পুরুষ ঘোরাঘুরি করবে এবং ইচ্ছে হলে ফলটির গায়ে উগরে দেবে বমি অথবা বীর্য; এতে ওই মাছিরুপি পুরুষটির কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওই বোরকা বিহীন নারীর! আবার যে সমাজ বলে যে নারী দেখে বা সংস্পর্শে এসে যে পুরুষটির জিহব্বায় পানি আসেনা, কিংবা যে পুরুষটি মাছি হয়ে নারীটিকে ঘিরে ধরেনা সে পুরুষটি নপুংশক! নৈতিকতায় দীক্ষিত যে পুরুষটি আগলে রেখেছে তার প্যান্টের জিপার, জিভকে করেছে সংযত, নারীকে বিচার করেছে মানুষ হিসেবে, সহপাঠি অথবা সহকর্মী হিসেবে, এই সমাজের দৃষ্টিতে সেই পুরুষটিই নপুংশক!
এই সমাজে এই 'নপুংশক' পুরুষদের মাঝেই থরেথরে জন্ম নিচ্ছে বীর্যবান পুরুষ মাছির পাল। শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে বিতাড়িত করা যাবে না এই মাছি সম্প্রদায়। অথবা শুধু পর্দায় ঢেকেও নারীদের নিরাপদ রাখা যাবে না এই কাম-তাড়িত পুরুষাঙ্গগুলোর হাত থেকে। যৌন নির্যাতন থেকে নারীদের মুক্তির একটাই উপায়, আর তা হলো সমাজের মাঝে যে ছোটো ছোটো ‘তেঁতুল’ বা ‘মাছি’ সমাজ তৈরী হয়েছে তা সমূলে উচ্ছেদ করা। মাছি নিধনে কঠোর আইন তৈরী এবং তা দ্রুত প্রয়োগ করা। বিবেক বর্জিত যত উত্থিত পুরুষাঙ্গ আছে তা গোড়া থেকে কর্তন করা। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস, ইউ টিউবে 'কনডম' অথবা 'চুলের কাঁটা' জাতীয় ভিডিও আপলোড, কয়েকটি মিছিল বা রালি করে সমাজ থেকে এইসব নিকৃষ্ট নরপশু নির্মূল করা যাবে না। ক্লক ইজ টিকিং!
খোন্দকার মেহেদী আকরাম
শেফিল্ড, ইউকে
২০ এপ্রিল ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৪৩