বিখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী এবং পদার্থবিদ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রফেসর স্যার ফ্রেড হয়েলি (Sir Fred Hoyle), -যিনি প্রথম ব্যাখ্যা করেন কিভাবে তারা বা সূর্যের অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে হালকা পদার্থ (Hydrogen or Helium) থেকে ভারী পদার্থের (Carbon) সৃষ্টি হয়,- তিনি তার জীবদ্দশায় বিগ ব্যাং তত্ব মেনে নেন নি। বরং তিনি ছিলেন 'স্টিডি স্টেট' থিওরির (Steady State Theory) সমর্থক এবং জনক। 'স্টিডি স্টেট' থিওরি মতে এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডের কোনো শুরুও নেই এবং শেষও নেই, এই মহাবিশ্ব পূর্বে যেমন ছিল ভবিষ্যতেও তেমনি থাকবে- অপরিবর্তনীয় এক 'স্টিডি স্টেট ' অবস্থায়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই 'স্টিডি স্টেট ' থিওরি ছিল বেশ শক্তিশালী অবস্থানে।
মহা বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও 'স্টিডি স্টেট' থিওরিতে বিশ্বাসী বা সমর্থক ছিলেন, আর এ কারণেই তিনি তার বিখ্যাত 'জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি'র গাণিতিক সূত্রে ইচ্ছাকৃত ভাবেই একটা কনস্টান্ট (Cosmological constant) বসিয়েছিলেন! এই কনস্টান্ট বসানোর কারণ হচ্ছে তার 'জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি' এর গানিতিক সূত্র পরিষ্কার ভাবে নির্দেশ করছিল যে এই মহাবিশ্ব সদা সম্প্রসারিত হচ্ছে! একটা অদৃশ্য শক্তি বা বল (ফোর্স) মহাবিশ্বকে বাইরের দিকে ঠেলে সম্প্রসারিত করছে! - যা কিনা 'স্টিডি স্টেট' থিওরির পরিপন্থী। যেহেতু আইনস্টাইন মহাবিশ্ব সম্প্রসারণে বিশ্বাসী ছিলেন না তাই তিনি তার গাণিতিক সূত্রে একটা কনস্ট্যান্ট মান বসিয়ে দিলেন যাতে করে তার সূত্রটি মহা বিশ্বকে গাণিতিক ভাবে স্টিডি স্টেট বা অসম্প্রসারনশীল অবস্থায় রাখে। পরবর্তিতে অবশ্য যখন বিজ্ঞানী এডুইন হাবল (Edwin Hubble) প্রমান করলেন যে মহাবিশ্ব প্রকৃত অর্থেই সম্প্রসারনশীল, তখন আইনস্টাইন আফসোস করে বলেছিলেন 'কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট' তার জীবনে একটা বড় ভুল!
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতার এই আবিস্কার বিগ ব্যাং থিওরি কে অনেকটাই লাইম লাইট এ নিয়ে আসলো। তখন বিজ্ঞানীদের কাছে একটাই প্রশ্ন, এই মহাবিশ্ব যদি সম্প্রসারনশীলই হয়ে থাকে তাহলে এর শুরু হয়েছে কখন এবং কিভাবে? বিগ ব্যাং থিওরি মতে একটা প্রচন্ড বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে অতি-ঘনত্ব সম্পন্ন, অতি-ক্ষুদ্র আকৃতির, এক অতি-উত্তপ্ত বস্তু বা অবস্থা থেকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। আর এই বিগ ব্যং এর পর থেকে এখন পর্যন্ত মহাবিশ্ব সদা সম্প্রসারিত হয়ে চলছে। মজার ব্যাপার হলো, ফ্রেড হয়েলিই প্রথম বিগ ব্যাং শব্দটির অবতারণা করেন, কিন্তু বিগ ব্যাং তত্বটাকে তিনি কোনদিন ও যথাযথ তত্ব হিসেবে গ্রহণ করেন নি; বরং বিগ ব্যাং তত্বকে তিনি বলতেন 'সিউডো সাইন্স' বা 'ভ্রান্ত বিজ্ঞান'। কিন্তু কেন? ফ্রেড হয়েলি’র ভাষ্য মতে, যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে বিগ ব্যাং থিওরি সত্য হয় তাহলে বিগ ব্যাং এর এর পূর্বে কি ছিল? তিনি বলেন, বিগ ব্যাং এর পূর্বে কোনো স্পেস, বস্তু বা ম্যাটার বা সময় এর অস্তিত্ব ছিল না; এবং এ কারণে কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র বিগ ব্যাং পূর্ব অবস্থার ব্যাখ্যা করতে পারে না। ফ্রেড হয়েলি’র মতে এই বিগ ব্যাং-পূর্ব অবস্থা ধর্ম বিশ্বাসীদের কে আরো উস্কে দিবে এই মর্মে যে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর ছিল বিগ ব্যাং পূর্ব সময়, এবং ঈশ্বরই সৃষ্টি করেছে এই বিশ্ব ব্রম্মান্ড। তার মতে সাইন্স এ সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর এর কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না। বস্তুত: এই কারনেই তিনি বিগ ব্যাং থিওরি কখনোই মেনে নিতে পারেননি। তবে তাতে কি? বিজ্ঞান চলে সত্যের ধারায়।
১৯৬৩ সালে তার ডিপার্টমেনটেই আগমন ঘটে আরেক বিখ্যাত পদার্থবিদ এবং কসমোলজিস্ট স্টিভেন হকিং এর! অক্সফোর্ড থকে আন্ডারগ্রজুএশোন শেষ করে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে ফ্রেড হয়েলি’র ডিপার্টমেন্ট এ পিএইচডি করতে আসলেন স্টিভেন হকিং। তিনি সেখানে তার পিএইচডি Advisor আরেক সনামধন্য বিজ্ঞানী স্যার রজার পেনরোজের 'স্পেস -টাইম সিঙ্গুলারিটি' এবং আইনস্টাইন এর 'জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি' সূত্রের সমন্নয় ঘটিয়ে উদঘাটন করলেন ব্ল্যাক হোল এবং বিগ ব্যাং তত্বের রহস্য। রজার পেনরোজ গাণিতিক ভাবে দেখালেন যে একটা তারা'র যখন মৃত্যু ঘটে তখন মৃত তারার অস্তিত্ব একটা বিন্দুতে গিয়ে পৌছে, যেখানে স্পেস এবং সময় সব মিলেমিশে একটি বিশেষ ভৌত অবস্থার তৈরী হয়: যাকে রজার পেনরোজ বলেন 'সিঙ্গুলারিটি'। অন্যদিকে স্টিভেন হকিং গাণিতিক ভাবে দেখালেন যে এই সিঙ্গুলারিটি অবস্থাকে বিপরীত দিকে চালিত বা ধাবিত করলে এক প্রচন্ড বিস্ফোরণের (ব্যাং) মাধ্যমে সূত্রপাত হয় এই মহাবিশ্বের! গত চার দশকে বিগ ব্যাং থিওরির অনেক উন্নতি স্বাধন হয়েছে। কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েসন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা প্রমান করে যে বিগ ব্যাং এর সময় এক প্রচন্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছিল। প্রচন্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণে যে উচ্চ তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়েছিল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েসন হচ্ছে তারই ফল।
এখন, সাদামাটা ভাবে উপরের আলোচনা থেকে আমরা যা জানতে পারলাম তা হলো:
১) সৃষ্টির শুরুতে এই মহাবিশ্ব ছিল একটি সিঙ্গেল এনটিটি: অর্থাত সমস্ত বস্তু, স্পেস এবং সময় সবই এক বিন্দুতে আবধ্য ছিল (joined together),
২) এক প্রচন্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণের বা বিগ ব্যাং এর মধ্যে দিয়ে এই মহা বিশ্বের উত্পত্তি, এবং
৩) বিগ ব্যাং এর পর সম্প্রসারণশীলতার মধ্যে দিয়ে এই মহাবিশ্ব রুপান্তরিত হয় এবং প্রাণী বসবাস যোগ্যে পরিনত হয়।
উপরের এই তিনটি ঘটনা মাথায় রেখে আমি এখন আলোচনা করব ১৪০০ বছর আগে আল-কোরানে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি প্রক্রিয়া সমন্ধে কি উল্লেখ করা হয়েছে?
নিচে আমি আল-কোরানের ২১ নাম্বার অধ্যের ৩০ নাম্বার আয়াত এর ইংরেজি অনুবাদ তুলে দিচ্ছি। অনুবাদটি নেয়া হয়েছে http://corpus.quran.com ওয়েব সাইট থেকে।
Verse 21:30. “Have those who disbelieved not known that the heavens and the earth were a joined entity, and We separated them and made from water every living thing? Then will they not believe?”
আয়াতটির বাংলা অনুবাদ করলে দাড়ায় এমন: "অবিশ্বাসীরা কি অবগত নয় যে পূর্বে পৃথিবী এবং সাত-আসমান সমূহ একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে এক অবিছেদ্য অবস্থায় ছিল, এবং আমি (আল্লাহ) তাদের কে একে অপর থেকে আলাদা করি এবং প্রত্যেকটি জীবিত বস্তুকে সৃষ্টি করি পানি থেকে? তাহলে তারা কি বিশ্বাস আনবে না?” এখন এই আয়াতটির অন্তর্নিহিত তাত্পর্য বোঝার জন্য আমি আয়াতটিতে উল্লেখিত মূল শব্দ সমূহের 'শাব্দিক' এবং 'প্রাসঙ্গিক' দিক নিয়ে নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমে আসা যাক 'the heaven' শব্দটা দিয়ে এখানে কি বোঝানো হয়েছে। Heaven বলতে আমরা সাধারণত: বেহেস্ত বুঝে থাকি; কিন্তু ‘heaven’ এর অর্থ হতে পারে একাধিক। উপরের আয়াতটিতে ‘السماوات’ এর ইংরেজি প্রতি শব্দ করা হয়েছে 'the heavens'. কোরানে 'السماوات ' শব্দটি এসেছে বহুবার। ইংরাজি সাহিত্যে 'heaven' শব্দটাও ‘বেহেস্ত’ ব্যতিত বিভিন্ন অর্থে ব্যাবহিত হয়। যেমন এখানে আমি রিচার্ড ডকিন্স এর 'The God Delusion' বই থেকে একটা লাইন হুবুহু তুলে দিচ্ছি:
“Indeed, exobiologists searching for evidence of extraterrestrial life are scanning the heavens, in practice, for sign of water (Dawkins 2007, Page-162).”
পরিস্কার অর্থেই এখানে উপরোল্লেখিত 'the heavens' ইংরেজি শব্দটি দিয়ে রিচার্ড ডকিন্স আমাদের পৃথিবীর বাইরের বিশ্বটাকে, অর্থাত অন্য কোনো মহাবিশ্ব বা গ্রহকে বোঝাচ্ছেন যেখানে প্রানের অস্তিত্ব থাকতে পারে। সুতরাং, সঙ্গত কারণেই এবং উপরোল্লেখিত আয়াতটির পটভূমি বিচারে এটা বলা যায় যে 'السماوات' দিয়ে এখানে মহাবিশ্বকেই বোঝানো হয়েছে। উপরন্তু 'السماوات ' এর পরে পৃথিবী শব্দটি ও এসেছে। সব মিলিয়ে বলা যায় যে এই আয়াতটির প্রথম অংশ পরিষ্কার ভাবে ইঙ্গিত করছে যে সৃষ্টির শুরুতে এই পৃথিবী, এই সৌর জগত, এই মহাবিশ্ব সব একত্রিত ছিল (a mass all sewn up)। পরে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় এদেরকে পৃথক করা হয়। সৃষ্টি হয় এই বিশ্বব্রম্মান্ড! বিগ ব্যাং! বিগ ব্যাং এর ঠিক পূর্ব মুহুর্তে বস্তু (matter), শক্তি (energy), স্পেস এবং সময় সব মিলে মিশে একাকার অবস্থায় ছিল: যেটাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'সিঙ্গুলারিটি'। কোরানে 'সিঙ্গুলারিটি' শব্দটি নেই; তার স্থলে যে শব্দটি এসেছে তা হলো 'رَتْقًا '- যার অর্থ ‘a joined entity’ or ‘a mass all sewn up’. বিশিষ্ট কোরানের তর্জমাকারী এবং স্বনামধন্য ইংলিশ কোরান ইন্টারপ্রিটার, প্রাক্তন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর Arabic Study Department এর প্রফেসর Arthur John Arberry 'رَتْقًا ' শব্দটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন ‘a mass all sewn up’ (Source: http://corpus.quran.com). সবচেয়ে আশ্চর্য জনক ব্যাপার হলো এই 'رَتْقًا ' শব্দটি কোরানে মাত্র 'একবারই' এসেছে! A single appearance! Technical দিকটা বাদ দিলে 'رَتْقًا’ এবং ‘Singularity’ এর অর্থ কিন্তু অনেকটা একই রকম দাড়ায়! তাহলে কোরান কি অনেক আগেই আমাদের 'বিগ ব্যাং' এবং 'সিঙ্গুলারিটির' ব্যপারে ইঙ্গিত বা আইডিয়া দেয় নি?
Verse 21:30
এখন মহা বিশ্বের ব্যাপকতার বিচারে এটা সহজেই অনুমেয় যে বিগ ব্যাং এবং তার পরবর্তী ধাপ কসমিক ইনফ্লেশন এবং সম্প্রসারণ এর সময় প্রচন্ড মাত্রার শক্তির প্রয়োজন পরে। আমাদের হাতে এ মুহুর্তে যে তথ্য আছে তাতে এই শক্তির ব্যাপ্তি সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়। একটা উদহারণ দেয়া যাক: বর্তমান মহাবিশ্বের তাপমাত্রা হলো ৩ কেলভিন আর বিগ ব্যাং এর সময় এই তাপমাত্রা ছিল, ১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ কেলভিন! এই পরিমান তাপমাত্রা তৈরী করতে কত শক্তির প্রয়োজন তা সম্ভবত আমাদের চিন্তারও উর্ধে। আমরা একটা ডিম সেদ্ধ করতে কত কেলভিন তাপ খরচ করি জানেন? ৩৭১ কেলভিন, যা কিনা ১০০ ডিগ্রী তাপমাত্রা'র সৃষ্টি করে। সে যাই হোক, ডিম সিদ্ধ করতে কত কেলভিন তাপের প্রয়েজন এটা নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যথা নেই। আমার সহধর্মিনীই এই কাজটি খুব দক্ষতার সাথেই করে ফেলে। কিন্তু বিগ ব্যাং এর মত এত বৃহত পরিসরের কাজটি কে করলো? আমি আল কোরানের ৫১ নাম্বার অধ্যের ৪৭ নাম্বার আয়াতের ইংরেজি অনুবাদ তুলে দিচ্ছি। অনুবাদটি নেয়া হয়েছে উপরোল্লেখিত একই উত্স্য থেকে।
Verse 51:47. “We have built the heaven with might, and We it is Who make the vast extent (thereof).”
আয়াতটি বিশ্লেষণের পূর্বে জেনে নেই 'might' এবং 'vast' শব্দ দুটির অর্থ। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায় 'might' এর ডেফিনেশন হলো: ‘Great and impressive power or strength, especially of a nation, large organization, or natural force’. আর 'vast' এর ডেফিনেশন হলো ‘Of very great extent or quantity; immense’. অর্থাত এই আয়াতটিতে বলা হচ্ছে, "আমি (আল্লাহ) এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছি প্রচন্ড এক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এবং আমিই একে দিই এক বিশাল ব্যাপ্তি।" আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা বলে তা হলো: এখানে কোরান পরিস্কার ভাবেই উল্লেখ করেছে যে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় প্রচন্ড মাত্রার শক্তি ব্যয়িত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানও তো সেই একই কথাই বলে, তবে একক হিসেবে বিজ্ঞানীগণ ব্যবহার করে ‘কেলভিন’ অথবা ‘গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট’ ইত্যাদি একক সমূহ। মূল কথা বা আইডিয়া কিন্তু ওই একই!
কোরান কোনো কোয়ান্টাম মেকানিক্স অথবা জীব বিদ্যার বই হিসেবে নাজিল হয় নি। আর এ কারণেই এই বই এ কোনো গাণিতিক সমীকরণ নেই, নেই কোনো ফসিল তত্ব বা জেনেটিক তত্ব। তবে রয়েছে অনেক অনেক বৈজ্ঞানিক আইডিয়া, অনেক অনেক সংকেত। এটা আমাদের ব্যর্থতা যে আমরা শুধু কোরান থেকে বেহেস্ত-দোজখ-হুর-জেনা-মুনকার-নাকির-হারাম-হালাল-গিলমান নিয়েই পরে আছি। একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি জানি যে 'আইডিয়া' ই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিগ আইডিয়া (Big Idea) বলে একটা কথা আছে বিজ্ঞানের জগতে। আইনস্টাইনের ছিল বিগ আইডিয়া, নিউটনের ছিল বিগ আইডিয়া, রিচার্ড ফাইনম্যানের ছিল বিগ আইডিয়া। এরাই বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেক দূর। আইডিয়া আসলে কি? খুব সাধারণ ভাবে বলা যায়, সুচিন্তিত অনুমানই আইডিয়া।
লিখাটা এখন শেষ করা প্রয়োজন! একটি কথা বলে শেষ করছি। আমরা জানি বর্তমানে জতির্বিজ্ঞানিগন ভিন্ন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে। একের পর এক মহাশূন্য যান পাঠাচ্ছে মহাকাশে প্রাণীর অস্তিত্বের খোজে। মহাশূন্য যানগুলো আসলে কিসের সন্ধান করছে? এগুলো কি খুঁজে বেড়াচ্ছে যে দূর কোনো গ্রহে কোনো প্রাণী হাটাহাটি করছে কিনা, অথবা কোনো এক মেষ পালক তার মেষের পাল মাঠে চড়াচ্ছে কিনা? সঙ্গত কারণেই এর উত্তর 'না'। মহাশূন্য যানগুলো আসলে সন্ধ্যান চালাচ্ছে অন্য কোনো গ্রহে 'পানি'র (water) অস্তিত্ব রয়েছে কিনা। বিজ্ঞানীরা জানেন যেখানে পানি সেখানেই প্রাণ! এখন আমি কোরানের ২১:৩০ আয়াতির অংশ বিশেষ আবার নিচে তুলে দিচ্ছি:
“……We separated them and made from water every living thing……”
অর্থাত, এখানে বলা হচ্ছে সকল জীবিত প্রাণীই সৃষ্টি হয়েছে 'পানি' (water) থেকে। কি বুঝলেন পাঠকগণ? ভবিষ্যতে সময় পেলে হয়ত লিখাটি আরেকটু প্রলম্বিত করে এই বিষয়টি আরেকটু ভালো ভাবে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করব। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকবেন সবাই।
ধন্যবাদ,
খোন্দকার মেহেদী আকরাম,
২৮ মে ২০১৪,
শেফিল্ড, ইউকে
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬