একবার রবীন্দ্রনাথ গুনগুন করে সুর বাঁধছিলেন , কথা বসাচ্ছিলেন এবং এমনিভাবে পায়চারী করতে করতে গান রচনা করছিলেন । গান শেষ হতেই ডাক পড়েছিল অমলা দাশের -"অমলা ও অমলা , শিগগির সে শিখে নাও , এক্ষুনি ভুলে যাব কিন্তু ।"
মৃনালিনী দেবী হেসে বললেন , "এমন মানুষ আর কখনো দেখেছ অমলা , নিজের দেওয়া সুর নিজে ভুলে যায় ।"
তৎক্ষণাৎ রবীন্দ্রনাথের সপ্রতিভ জবাব , "অসাধারণ মানুষদের সবই অসাধারণ হয় । ছোট বৌ চিনলে না তো ।"
*******************************************
সুধাকান্ত রায় চৌধুরী একবার নতুন চশমা পরে কবিগুরুকে দেখাতে এলেন । চশমার কাচটা একটু নিলাভ ছিল । তাই সুধাকান্ত বাবু বললেন , "সাদা কাঁচের চেয়ে রঙ্গিন কাঁচই নাকি আমার চোখের পক্ষে উপকারী " ।
সব শুনে গুরুদেব গম্ভীরভাবে বললেন -"যাক , এতদিনে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল । স্বয়ং ভগবান তোমাকে যে জিনিস দিতে পারেননি , এখন দেখছি ডাক্তারই তোমাকে সেটা দিলেন । "
******************************************
শরৎ চন্দ্র চট্রোপাধ্যায় জুতা চুরির ভয়ে কবিগুরুর সাহিত্য সভায় আসার সময় তার জুতা জুড়া কাগজে মুড়ে কোলে রাখতেন । প্রায়ই এ ঘটনা ঘটত । একদিন জনৈক সাহিত্য সভার সদস্য কবিগুরুকে চুপেচুপে ব্যাপারটি বলে দিলেন ।
কবিগুরু তখন জিজ্ঞেস করলেন , "শরৎ , তোমার কোলে কি পাদুকাপুরাণ " ।
*******************************************
এক সভা শেষে ফিরবার পথে কবিগুরু চারুচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়কে বললেন -"দেখলে চারু আমার প্রায়শ্চিত্য । আমি না হয় গোটা কয়েক গান কবিতা লিখে অপরাধ করেছি । তাই বলে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে এরকম যন্ত্রণা দেয়া কি ভদ্রতা সম্মত । গান হল কিন্তু দুজনে প্রাণপন শক্তিতে পাল্লা দিতে লাগলেন যে , কে কত বেতালা বাজাতে পারেন আর বেসুরা গাইতে পারেন । গান যায় যদি এ পথে তো বাজনা চলে তার উলটো পথে । গায়ক বাদকের এমন স্বাতন্ত্র্য রক্ষার চেষ্টা আমি আর কস্মিনকালেও দেখিনি । তারপর ঐ একরত্তি মেয়ে , তাকে দিয়ে নাকিসুরে আমাকে শুনিয়ে না দিলেও আমার জানা ছিল যে , তঁবু মঁরিতে হঁবে । " উল্লেখ্য , গানের প্রথম লাইন ছিল 'তবু মরিতে হবে '।
******************************************
আলাপনি সমিতির 'শ্রেয়সী'র জন্য গল্প লিখছেন কবিগুরুর নাতবৌ কমলা । কবিগুরুর সে কি উৎসাহ!
কেমন গল্প? গল্পের মধ্যে ক'টা বিয়ে আছে ? নেই ? বিয়ে ভাঙ্গাও নেই ?
কমলাকে বললেন , 'তুমি কোনো কর্মের না , একটা বিয়ে দিতে পারলে না ?'
********************************************
একবার ভান্ডারে নামে একটি ছেলে এল শান্তি নিকেতনে । সে রবীন্দ্রনাথকে চেনে না । রবীন্দ্রনাথকে দেখেই তার কাছে ছুটে গেল এবং জোর করে তার হাতে কি যেন একটা গুজে দিল ।
একটু দুরে সৈয়দ মুজতবা আলী সমস্ত ব্যাপারটিই লক্ষ করলেন । কাছে আসতেই তিনি ভান্ডারেকে জিজ্ঞেস করলেন ' গুরুদেবকে কি দিলি ?'
ভান্ডারে বিস্ময়ের সঙ্গে উত্তর দিল -'গুরুদেব আবার কে ? তিনি তো একজন ফকির । আমি ওকে একটা আধুলি দিয়েছি । মা বলেছেন সাধু সন্যাসীদের দান করতে ।"
ভান্ডারে দানশীল কিন্তু শান্ত স্বভাবের নয় । সবাই অতিষ্ঠ এমনকি হেডমাষ্টার পর্যন্ত । এক সময় ব্যাপারটি রবীন্দ্রনাথের নজরে আনা হল তিনি তো ভাল করেই জানতেন ভান্ডারেকে । তাই তিনি কৌতুক মিশিয়ে বললেন , "ভান্ডারে তুই সবচেয়ে ভাল ছেলে । তোর এই কান্ড । তুই একবার আমাকে একটা আধুলি পর্যন্ত দিয়েছিলি । অন্য কোন ছাত্র আমাকে কোনদিন একটা পয়সা পর্যন্ত দেয় না । সেই তুই কিনা গোলমাল করিস ।"
******************************************
একবার কালিদাস নাগ সস্ত্রীক বেড়াতে এলেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন করলেন :"শিশু নাগদের কোথায় রেখে এলে ।"
******************************************
কবিগুরুর প্রিয় চাকর বনমালি একদিন গল্প করে বলল , তাদের দেশে মনিবাবা নামে এক সাধু আছেন । তার নাম তিনবার নিলে সাপে কাটা মানুষও ভাল হয়ে যায় ।
কবিগুরু অনিল চন্দ্রকে ডেকে বললেন , "অনিল , একটা কেউটে সাপ এনে বনমালিকে কাটা , দেখা যাক মনিবাবুর মাহাত্ম্য । বনমালি বুঝল এটা রসিকতা । সেও হাসল ।"
******************************************
একদিন সন্ধেবেলা রবীন্দ্রনাথ 'হে মাধবী দ্বিধা কেন ' গানটি শেখাচ্ছিলেন । এমন সময় ভৃত্য বনমালি আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে ইতস্তত করছিল -আসবে কি আসবে না ?
রবীন্দ্রনাথ বনমালিকে দেখেই আবার গেয়ে উঠলেন : ' হে মাধবী দ্বিধা কেন ?'
*****************************************
শান্তিনিকেতনে খুব মশা ছিল । তাই কবি হাতে পায়ে একবার তেল ব্যবহার করতেন । কখনও কোন আগন্তক উপস্থিত হলে মজা করে বলতেন "ভেব না যে আমি বুড়ো মানুষ , বাত হয়েছে বলে পায়ে তেল মালিষ করছি । এ মশার ভয়ে । শান্তিনিকেতনের মশারা ভারি নম্র । তারা সারক্ষণই পদসেবা করে । "
******************************************
শান্তিনিকেতনেএকবার পরিচিত এক ভদ্রমহিলা কবির সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন । তাও দীর্ঘদিন পর । এসেই কবিকে জিজ্ঞেস করলেন -"আমাকে চিনতে পারছেন তো !"
কবি আগন্তক মহিলাকে চিনলেও তার স্বভাবসুলভ পরিহাসের সুরে বললেন-"আয়তনেই চিনেছি "।
********************************************
কবিগুরু কথা প্রসঙ্গে দিনবাবুকে (তার নাতি দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ) একবার বলেছিলেন , বুঝলি দিনু, সেদিন অমুক লোকটা আমার কাছ থেকে দশ টাকা ধার নিয়ে গদ গদ কণ্ঠে বললেন -'আপনার কাছে আমি চিরঋণী হয়ে রইলুম '। দিনবাবু আতকে উঠে বলল-তুমি দিলে ওকে টাকাটা ? ও তো একটা জোচ্চোর !
তা' মানি , কিন্তু লোকটার শত দোষ থাকলেও একটা গুণ ওর ছিল -কবিগুরু শান্তস্বরে বললেন । লোকটা সত্যভাষী । কথা রেখেছিল -চিরঋণী হয়েই রইল !
******************************************
একবার কবিগুরু -গান্ধিজী প্রাতঃরাশ খাচ্ছেন । গান্ধী লুচি পছন্দ করতেন না । তাই তাকে অন্য খাবার দেয়া হল । কবিগুরু খাচ্ছেন গরম গরম লুচি । তা দেখে গান্ধীজী বললেন -"গুরুদেব , তুমি জানো না, তুমি বিষ খাচ্ছ ।"
উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন -"বিষই হবে । তবে এর কাজ খুব ধীরে । কারণ আমি গত ষাট বছর ধরে এই বিষ খাচ্ছি ।"
******************************************
সাহিত্যিক বলাইচাদ মুখোপাধ্যায়ের(বনফুল) ছোট ভাই প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করে বিশ্বভারতীতে পড়ার জন্য একদিন শান্তিনিকেতনে এলেন ।শান্তিনিকেতনে এসে তিনি জানলেন কবিগুরু কানে কম শুনেন (!) । কথা বলার সময় যেন একটু জোরে বলেন ।
কবিগুরুর সাথে সাক্ষাতের সময় তার বড় ভাই (বনফুল) এর দেয়া পরিচয়পত্র দেখালেন । কবিগুরু জিজ্ঞেস করলেন -"কি হে তুমি কি বলাই এর ভাই কানাই নাকি ?"
উত্তরে বলাই এর ভাই চেচিয়ে জবাব দিলেন , " না, আমি অরবিন্দ।"
কবি হেসে হেসে বললেন -"না, কানাই নয় , এ যে দেখছি একেবারে সানাই ।"
******************************************
কবিগুরু একবার বিধু শেখর শাস্ত্রীকে ডেকে বললেন ,"মশাই , আপনাকে আমি দন্ড দিব ।"
গুরুদেবের এহেন কথায় শাস্ত্রী মশাই তো একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন । এমন কি অন্যায় তিনি করেছেন যার জন্য তার দন্ডপ্রাপ্য ?
তখন কবিগুরু একখানি লাঠি তাকে দিয়ে বললেন-"এই নিন দন্ড , ফেলে গিয়েছিলেন ।"
*******************************************
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কবিগুরু সক্রিয় ছিলেন। ঐ সময়ে একদিন নাটোরের মহারাজার মেয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন কবিগুরু। বিয়ের দিন সন্ধ্যায় দ্বারদেশে দাড়িয়ে নিমন্ত্রিতদের অভ্যর্থনা করছেন মহারাজা । হন্তদন্ত হয়ে কবিগুরু এসে উপস্থিত হলেন । আসতে দেরি হয়ে গেছে । মহারাজা অনুযোগ করে বললেন-"কবি -আমার কন্যাদায় , কোথায় আপনি সকাল সকাল আসবেন , তা' না , এলেন দেরিতে ।"
অপ্রতিভ কবি উত্তরে বললেন -"রাজন , আমারও মাতৃদায় , দু'জায়গায় সভা করে আসতে হলো ।
*******************************************
মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবী কবিগুরুকে বেশ কয়েকদিন ধরে নিরামিষ খাওয়াচ্ছিলেন । তো একদিন মৈত্রেয়ী দেবী কিছু খাবার নিয়ে এসে বললেন -"এটা একটু খাবেন ?রোজ রোজ আপনাকে কি নিরামিষ খাওয়াবো ভেবে পাইনা ।"
কবিগুরু বললেন -"ও পদার্থটা কি?"
মৈত্রেয়ী দেবীর উত্তর-ব্রেইন ।
তখন কবিগুরু বললেন-"এই দেখ কান্ড , এ তো প্রায় অপমানের শামিল । কি করে ধরে নিলে যে, ঐ পদার্থটার আমার প্রয়োজন আছে? আজকাল কি আর আমি ভাল লিখতে পারছিনে ?"
*******************************************
কবিগুরু এক সভায় হঠাত্ গম্ভীরভাবে বলে উঠলেন -"এই ঘরে একটা বাদর আছে ।"
সভাস্থ সকলে দারুন অস্বস্তিভরে যখন একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছেন ,তখন গুরুদেব মৃদু হেসে বললেন ,"ডানদিকে যেমন একটি দোর আছে , বা দিকেরও সেরকম আরেকটি দোর আছে ।" সকলে নিঃশ্বাস ছেড়ে বাচলেন।
*******************************************
একবার শান্তিনিকেতনে বৈশাখ মাসে বহু সাহিত্যিক জড়ো হয়েছিলেন । সকলকে নানারকম ফল ও মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হয়েছিল। সুকুমার রায় একেবারেই ফল খাচ্ছেন না দেখে রবীন্দ্রনাথ ঈষৎ তরল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন -'সুকুমার তুমি কি গীতার অনুশাসন পুরোপুরি মেনে চলছ ?'
সুকুমার রায় প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে গেলেন । তখন রবীন্দ্রনাথ গীতা উদ্ধৃত করে বললেন ,'মা , ফলেষু , কদাচন ।'
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ফলের আশা না করে কর্ম করা উচিত ।
*******************************************
সুধাকান্ত রায় চৌধুরীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ একবার বেড়াচ্ছিলেন । হঠাত্ গুরুদেবের গুরুদেবের অস্ফুট কাতরোক্তি শুনে সুধাকান্ত বাবু তার দিকে তাকাতেই রবীন্দ্রনাথ নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত সুরে বললেন , 'পা কে চরন কমল বা পাদ পদ্ম কেন বলে জানো ? '
প্রশ্ন শুনে সুধাকান্ত বাবুর চোখে বিস্ময় দেখে রবীন্দ্রনাথ পায়ের মোজা খুলতে খুলতে বললেন , 'তাই যদি না হয় , তাহলে শরীরের এত জায়গা থাকতে মোজা ভেদ করে মৌমাছিটা পায়ের একেবারে তলায় হুলটা বিধাল কেন ?
*******************************************
কবিগুরু নাকি বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে মেয়ের মা'কে পছন্দ করে এসেছিলেন । স্বয়ং কবির মুখেই শোনা যাক সেই কাহিনী :
"মেয়ের বাবা অনেক পয়সা কড়ির মালিক। বাসায় যাবার পর, দুটো অল্প বয়সী মেয়ে এসে উপস্থিত হলো । একটি মেয়ে নেহাত্ সাধাসিধে , জড়ভরতের মত এক কোনে বসে রইল এবং অন্যটি যেমন সুন্দরী তেমনি স্মার্ট । কোন জড়তা নেই । শুদ্ধ উচ্চারনে ইংরেজিতে কথা বলছে। ওর সঙ্গে কথা হল। আমাদের পিয়ানো বাজিয়ে শোনালো । আমি মুগ্ধ , বিস্মিত । মনে মনে ভাবছি , সত্যিই কি আমি ওকে পাবো । ভাবনায় ছেদ পরলো । বাড়ির কর্তা তখন ঘরে ঢুকলেন । ঘরে ঢুকেই তিনি মেয়েদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন । সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েটিকে দেখিয়ে তিনি বললেন , হেয়ার ইজ মাই ওয়াইফ । আর জড়ভরতটিকে দেখিয়ে বওলেন, হেয়ার ইজ মাই ডটার ।
আমি তো শুনে থ হয়ে গেলাম । যা হোক, বিয়ে হলে মন্দ হতো না। সাত লাখ টাকা পাওয়া যেতো । বিশ্বভারতীর কাজে ব্যয় করতে পারতাম। তবে শুনেছি, মেয়েটি নাকি বিয়ের দু'বছর পরই বিধবা হয় । যাক, বাঁচা গেছে । কারণ স্ত্রী বিধবা হলে আমার প্রাণ রাখা শক্ত হতো ।
*******************************************
একবার মৈত্রেয়ী দেবী কবিগুরুকে জিজ্ঞেস
করলেন ,'আপনার বিয়ের গল্প বলুন ।'
কবি জবাব দিলেন ," আমার কোনো বিয়ের গল্প নেই । বৌঠানরা বিয়ের জন্য জোরাজোরি শুরু করলে আমি বললাম ,তোমাদের যা ইচ্ছা কর । আমার কোন মতামত নেই । তারপর বোঠানরাই যশোরে গিয়েছিলেন । আমি বলেছি ' আমি কোথাও যেতে পারবো না। আমার বিয়ে জোড়াসাকোতেই হবে । '
মৈত্রেয়ী দেবী বললেন ," কেন আপনি বিয়ে করতেও যান নি ?"
কেন যাবো? আমার একটা মান সম্মান আছে না ? -রবীন্দ্রনাথের সাফ জবাব ।
*******************************************
একবার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে চীন ভ্রমনে গিয়েছিলেন শাস্ত্রী মশাই (ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রী )। সেটা আমের মরশুম । কবিগুরু আম ভালবাসেন যেনে চীন কর্তৃপক্ষ আম আনালেন বাংলাদেশ থেকে । তখন তো আর দ্রুত যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল না । আম যেন না পচে তাই রাসায়নিক মিশানো হয়েছিল । কিন্তু আম যখন চীনে পৌছল তখন সেগুলি শুকিয়ে চুপসে গিয়ে রপান্তরিত হয়েছিল এক অদ্ভুত বস্তুতে । খাবার টেবিলে দেয়া হলো রবীন্দ্রনাথ , তার ভাগ পেলেন শাস্ত্রী মশাইও। চীনের লোক তো আর আম চেনে না , কবিকে তার প্রিয় খাদ্য দিতে পেরে ভারি খুশি । তাদের মনোরঞ্জনের জন্য এত কষ্ট করে আনা আম গলধঃকরণ করলেন দু'জনেই মুখ বুজে ।
কবিকে শাস্ত্রী মশাই জিজ্ঞেস করলেন -"কেমন আম খেলেন গুরুদেব ? "
মৃদু হেসে জবাব দিলেন কবি-"আম খেতে খেতে মনে হচ্ছিল এক রবীন্দ্রনাথ আর এক রবীন্দ্রনাথের দাড়িতে তেতুল গুড় মেখে চুষছে ।"
*****************************************
একবার শান্তিনিকেতনে ওজনের একটি মেশিন ক্রয় করা হয় এবং এতে ছেলেমেয়েদের একে একে ওজন নেয়া হচ্ছিল । রবীন্দ্রনাথ দাড়িয়ে দাড়িয়ে তা লক্ষ করছিলেন ।
এক একজনের ওজন শেষ হলেই কবি তাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন -কিরে তুই কত হলি !
এর মধ্যে একটি স্থুলাঙ্গী মেয়ে বলল -দু'মন ।
এই মেয়েটির সে সময় বিয়ের আলাপ চলছিল এবং কবি তা জানতেন । তাই তিনি পরিহাস করে বললেন -"তুই এখনও দু'মন , এখনও এক মন হলি নে ?"
*******************************************
কবিগুরুকে এক ভদ্রলোক লেখেন -আপনি কি ভুতে বিশ্বাস করেন ?
কবি উত্তরে লিখলেন-বিশ্বাস করি বা না করি -তবে তাদের দৌরাত্ব মাঝে মাঝে টের পাই -সাহিত্যে , পলিটিক্সে সর্বত্রই একেক সময় তুমুল দাপাদাপি জুড়ে দেয় এরা । দেখেছি -দেখতে ঠিক মানুষের মত ।
দোহাই :
১। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় , রবীন্দ্র জীবন ও রবীন্দ্র সাহিত্য প্রবেশক
২। প্রমথনাথ বিশী , রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন
৩। মৈত্রেয়ী দেবী , মংপুতে রবীন্দ্রনাথ
৪। সত্য প্রসাদ সেনগুপ্ত , রবীন্দ্রনাথের গল্প
৫।মনোরমা, মে ১৯৯৪ , হিমানীষ গোস্বামীর ’রবীন্দ্রনাথের রস পত্রাবলী ’ দ্রষ্টব্য
৬। রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী, রবীন্দ্র ত্রু মুলে
৭। নিতাই বসু , অনন্য রবীন্দ্রনাথ
৮। উজ্জলকুমার মজুমদার , ঠাকুরবাড়ীর চোখে রবীন্দ্রনাথ
৯। চিত্রাদেব , ঠাকুর বাড়ীর অন্দর মহল
১০। রানী চন্দ , আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ
১১। নন্দ গোপাল সেনগুপ , কাছের মানুষ রবীন্দ্রনাথ
১২। সীতাদেবী , পুন্যষ্মৃতি
১৩। প্রতিমা ঠাকুর , নির্বাণ
১৪। শ্রী গোপাল চন্দ্র রায় , রবীন্দ্রনাথের হাস্য পরিহাস
১৫। তিতাস চৌধুরী ,রবীন্দ্রনাথের রঙ্গ ও হাস্যরস
১৬। নুরুজ্জামান মানিক , কবিগুরুর রসিকতা , দৈনিক জনকণ্ঠ , ৬ মে ২০০৫
১৭। নুরুজ্জামান মানিক , কবিগুরুর রসিকতা , দৈনিক জনকণ্ঠ , ৫ মে ২০০৬
১৮। অবসর ডট নেট
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:০৬