ছবিঃ ইন্টারনেট
ফ্রাই ডে মর্নিং। বেশ ফুর ফুরা মন নিয়েই ব্রেড বেক করছিলাম । আমার বাসার গৃহকর্মী বকুল খালা বিড়বিড় করে গান গাইছিল আর ঘর মুছতে ছিল । আমি চুলার সামনে গেলেই কি জানি খালি ভাবি । আর ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে যাই । আজকে ও হারিয়ে গিয়ে ছিলাম । হঠাৎ বকুল খালার চিৎকার । একদম কানের সামনে এসে । তিনি ভীষণ আপ্লুত । তার চোখে মুখে প্রেমময় মুগ্ধতা । আমি অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরালাম ।
--কি হয়েছে বকুল খালা ?"
--সেই রাম ! গানটা সেই রাম !"
--কোন গানটা ?"
--অই রুমে আপনার শ্বশুরের মোবাইলে চলতাছে! গানটা আমি মোবাইলে ভইরা নিয়া যাইতে চাই !"
আমার আসলে চোখে তখন ও ঘুমের ঘোর । গত দশ তারিখে আমার শ্বশুর শাশুড়ি আসছে । দুজনেই অনেক ক্লান্ত আর অসুস্থ । যাইহোক শ্বশুরের একটা ফেসবুক আছে । বেচারা ফেসবুকে লাইক কমেন্ট পুরোপুরি না বুঝলে ও তাঁর হোম পেজে কেউ কোন গানের ভিডিও দিলে সেটা ওপেন করবেই । তারপর আমাকে ডেকে বলবে ," আচ্ছা ফেসবুক খালি একটা গানই দিল আজকে । মাঝে মাঝে তো অনেক গান থাকে ,অনেক ভিডিও থাকে ।"
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বলি ," এটা ফেসবুক দেয় নাই । আপনার লিস্টে থাকা ফ্রেন্ডরা দিয়েছে । "
গত দু মাস সে ফেসবুকে ঢুকেনি । গতকাল শুয়ে শুয়ে বিরক্ত । নিউজ পেপার আর কতবার পড়বে । আমি উনার আই ফোনে ওয়াই ফাই কানেক্ট করে দিলাম । সে ফেস বুক করতে করতে ঘুমাইয়া পড়ে । আমি যখন আস্তে করে তার মোবাইল সরিয়ে দিতে যাই সে ঘুমের ঘোরে বলে অন্য গান দিয়া দাও ।এই হল প্রযুক্তির পৃথিবীর মানুষদের অবস্থা । প্রযুক্তি ছেলে বুড়ো সবাইকে অন্য এক জগতে নিয়ে যাচ্ছে ।
যাইহোক বকুল খালার চিৎকারে অতি আগ্রহে ছুটে গেলাম শ্বশুরের রুমে । সে এবং শাশুড়ি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । তখন সকাল আঁটটা । তারা দুজনেই খুব ভোরে উঠে ফজর নামাজ পড়ে ।তারপর হাল্কা নাস্তা খায় । তারপর আবার ঘুমায় । আজকে হয়তো দ্বিতীয় বার ঘুমানোর আগে আমার শ্বশুর ইউটিউবে সুরা শুনছিল । অটো প্লে থাকায় পুরনো দিনের গান চলে এসেছিল ," চুরি করেছ আমার মনটা ...।হায়রে হায় মিস লংকা ...।।"
আমি হাসতে হাসতে বললাম , " চুরির গান আপনার ভাল লাগল । শ্বশুরের মোবাইল থেকে গান চুরি করতে গেলে সংসার করা লাগবে না বকুল খালা ।"
--ওম্মা চুরি করবেন কেন ।ওই মোবাইল থেইকা এই মোবাইলে ট্রান্সফার কইরা দিবেন !!
আমি বললাম," কেমনে ট্রান্সফফার করব । শেয়ার ইট এপ আছে ?"
খালা বলে মেমরি কার্ডে ঢুকাইয়া দিবেন । আমার চাইর বছরের নাতিই তো আমার মোবাইলে সব গান ঢুকাইয়া দিছে ।
আমার অনাগ্রহ অপারগতায় বকুল খালা ভীষণ বিরক্ত । আমাকে হয়তো অশিক্ষিত ভেবেছে । ভাবতেই পারে । পৃথিবীর যাবতীয় শিক্ষা দীক্ষা এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে চলে গেছে । এক জীবন থেকে অন্য জীবনে চলে গেছে । এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের কাছে চলে গেছে । যে শিক্ষাটা যার কাছে থাকার কথা সে শিক্ষাটা তার কাছেই নেই ।
জগত বড়ই আনন্দময় । যে জীবনটাকে যেমন ভাবে নেয় !!!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৩