বিউটিফুল দ্বীপ শহর বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ । পদ্মা ,মেঘনা ,ধলেশ্বরী আর ইছামতী নদী ঘেরা ছোট্ট দ্বীপ বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ । কিংবদন্তী ইতিহাস ঐতিহ্য এবং গর্বিত ভূ খণ্ড আজকের এই মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর । সুপ্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কার এবং সংস্কৃতিতে ঘেরা এই বিচিত্র দ্বীপ বিক্রমপুর ।অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায় চন্দ্র রাজাদের তাম্র শাসনের অঞ্জলি থেকে শুরু করে পাল ,সেন ,মোঘল এবং বার ভুঁইয়াদের কৃতিত্বে সমৃদ্ধ এই ভূ ভাগ । আশ্চর্য সব ইতিহাস ,সংস্কৃতি আর কৃতিত্বে উজ্জল স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যের রাজধানী বিক্রমপুর কীর্তিময় অংশ যুগ যুগ ধরে বহন করে চলছে । অদ্ভুত সব লোককথা আর রহস্যময় ইতিহাস যেন এখনও মানুষের মনে আর মননে ছুঁয়ে দিয়ে যায় । পৃথিবীর শত কোটি রহস্য আর ইতিহাস এর কোন কোন চিহ্ন যেন বিক্রমপুরে নিভৃতে ঘুমিয়ে আছে । তাই স্বপ্ন ,প্রেম আর রহস্য আজও সহজ সরল মানুষের জীবনে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে । মুন্সিগঞ্জ তাই বাংলাদেশের জন্য গৌরবের ইতিহাস। সৌন্দর্যে ভরপুর এই ভূখণ্ড ৬টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা, ৬৭টি ইউনিয়ন আর ৯৫৭টি গ্রাম নিয়ে ৯৫৪.৯৬ বর্গকিলোমিটারের ঐতিহ্যমন্ডিত হয়েছে ।সময় আর ইতিহাসের পাতায় বিক্রমপুর একটি জ্ঞানী গুণী জনের মিলন কেন্দ্র। এখানে জন্মেছে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সাহিত্যিক সৈয়দ এমদাদ আলী, সরোজনী নাইডু, ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী ব্রজেন দাস, বৈজ্ঞানিক জগদিশ চন্দ্র বসু, অতীশ দিপঙ্করের মত জগৎ বিখ্যাত ব্যক্তি। আরও আছে বাবা আদম শহীদের মত ইসলামী ব্যক্তিত্বের পদচারণা। আর এমন সব ব্যক্তিদের প্রচেষ্টার ফসল আজ মুন্সিগঞ্জের ইসলাম বা মুসলমান এলাকা মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর। বর্তমানের অনেক মেধাবী পরিচিতি মুখ মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুরের সন্তান । প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ,ডঃ ফখরুদ্দিন আহমেদ ,প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দজা চৌধুরী ,এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ,কবি এবং বিজ্ঞানী ডঃ হুমায়ুন আজাদ ,কথা শিল্পী রাবেয়া খাতুন ,ইমদাদুল হক মিলন, চিত্র নায়ক অনন্ত জলিল ,সাংবাদিক মুন্নি সাহা সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ,হাবিব ওয়াহিদ ,এক সময়ের কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ সহ নতুন প্রজন্মের অনেক মুখ ।
তবে সুপ্রাচীন বাংলার এক গৌরবময় স্থান বিক্রমপুরের কোন অংশই আজকের এই মুন্সিগঞ্জ । তবে মুন্সিগঞ্জ সে সময়ে ছিল একটি গ্রাম যার পূর্ব নাম ছিল ইদ্রাকপুর। প্রচলিত আছে, মোঘল শাসন চলাকালীন সময়ে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুন্সী হায়দার হোসেন নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন। সেই সময়ে মুন্সি হায়দার মোঘল শাসকদের দ্বারা ফৌজদার নিযুক্ত হয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বজ্জল ও জ্ঞানহিতৈশী ব্যক্তি । গুণী এই ব্যক্তি মুন্সী হায়দার হোসেনের নামেই পরবর্তীতে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সিগঞ্জ। এরপর ১৯৪৫ সালে বৃটিশ ভারতের প্রশাসনিক কিছু সুবিধার্থে মুন্সিগঞ্জ থানা ও মহকুমা হিসেবে উন্নীত করা হয়। অতীতের সেই বিক্রমপুরই ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মুন্সিগঞ্জ জেলার নামকরনে রূপান্তরিত হয়।
প্রকৃত পক্ষে মুন্সিগঞ্জ সমতল এলাকা নয়। তবে জেলার কিছু কিছু অঞ্চল যথেষ্ট উচু। এই জেলায় কোন পাহাড়ের সন্ধান আজও কেউ দিতে পারেনি । এই অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা নিম্ন ভূমি যা বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায় ।তবে এই মুন্সিগঞ্জের জলবায়ু সমভাবাপন্ন। আদ্রতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানকার জলবায়ু ঋতু বিশেষ পরিবর্তনশীল। এই অঞ্চল বর্ষা প্রধান নিম্ন ভুমি এলাকা। গ্রীষ্মকালে কিছু কিছু স্থান পানি শুন্য হয়ে পড়ে। এখানে ঝড় বৃষ্টির প্রকোপও যথেষ্ট। শীতকালে শীতের তীব্রতা দেশের অন্যান্য স্থানের মত তত প্রবল নয়। এলাকাটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলভুক্ত।
এই মুন্সিগঞ্জ জেলা ২৩০২৯ মিনিট থেকে ২৩০৪৫মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০০১০ মিনিট থেকে ৯০০৪৩ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।এই অঞ্চলের পূর্বে রয়েছে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ও হোমনা উপজেলা,আর অন্যদিকে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলা যা কিনা মুন্সিগঞ্জের সাথে প্রবাহিত মেঘনা নদীর দ্বারা বিভাজিত হয়েছে । এর পশ্চিমে শরীয়তপুর ,মাদারীপুর কেরানীগঞ্জ দোহার উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলা। দক্ষিণে রয়েছে নয়নাভিরাম পদ্মা যার অপর পাশে শরীয়তপুর জেলা।
কাব্যময় নদী ঘেরা সুন্দর দ্বীপ শহর বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ । রাজধানী ঢাকা থেকে খুব কাছের যাত্রা বাড়ি পার হয়ে পোস্ত খোলা ব্রিজ ।তারপর গাড়ি চলবে পঞ্চবটির রাস্তা ধরে আর সেখান থেকে চর সৈয়দপুর আর মুক্তার পুরের পথে । ঠিক সেই মুক্তার পুর থেকে শুরু হয় হৃদয় ছুঁইয়ে যাওয়া সব রহস্য ইতিহাস ।নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ধলেশ্বরী সেতুকে ঘিরে কতো যে অদ্ভুত সব গল্প আর নদীর গভীর ঢেউ এর মায়াবী প্রেম দেখতে দেখতে কখন শহরে ঢুকে যাবেন টের পাওয়া যায় না ।
অদ্ভুত সব ইতিহাস আর প্রেমময় ঐতিহ্য সমাহারে ভরা গল্প নিয়ে আসছি পরবর্তী পর্বে ......।চলবে ।
ছবি গুলো সংগৃহীত হয়েছে আমার বিক্রমপুর ফেসবুক পেজ থেকে
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:২৭