ক্রোধ বা রাগ একটি অতি মাত্রার ক্ষতিকর উপসর্গ যা শারীরিক ও পারিবারিক এমন কী সামাজিক জীবনকেও বিষিয়ে তুলতে পারে। তবে রাগ নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত তাদের জন্য রয়েছে প্রশস্ত জান্নাত। এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অল্প কথায় কিছু নসিহত করুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, রাগ বর্জন করো। সাহাবি কয়েকবার বললেন, আরও নসিহত করুন। প্রত্যেকবারই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, রাগ বর্জন করো। -বোখারি শরীফ। সে যা হোক বিভিন্ন কারনে রাগ হতে পারে। যেমন গরমের কারণে মেজাজ ঠিক রাখা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে! সামান্যতেই অনেকে রেগে যায় এসময়। এই রাগ কিন্তু ডেকে আনতে পারে নানা শারীরিক বিপদও। এছাড়া রাগে অনেক সময় হিট স্ট্রোক হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। যখন তখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য রাগ মাথার ওপর চাপ ফেলে রক্তচাপ বাড়ায়। এর ফলে স্ট্রোকও হতে পারে। তাই এই গরমে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। রাগলেন তো হারলেন এই চির সত্য কথাটি আমরা সকলে জানলেও কার্যক্ষেত্রে এর ব্যবহার সীমিত। সম্প্রাতি ডেইলী মেইলের এক রিপোর্টে প্রকাশ, অপরাধ বিজ্ঞাণীও সামাজিক-বিজ্ঞানীরা অনেক দিন থেকেই বিশ্বাস করেন যে, যাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কম, তারা সুযোগ পেলে সহিংস অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পরেন। তাঁরা দেখেছেন যে, আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে না পারা ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের আগ্রাসী মনোভাব খুবই গভীরভাবে সম্পর্কিত। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কাউকে কিছু সময়ের জন্য নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাধ্য করলে পর তারা আরও আগ্রাসী চরণ করেন। রাগ প্রশমনের বেশ কিছু নিয়ম আছে তবে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বার্ড বুশম্যান রাগের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন চিনি রাগ উপশমে সাহায্য করে| সম্প্রতি তাঁর এ গবেষণার ফল এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে| তিনি বলেছেন, চিনি রক্তপ্রবাহকে ঠিক রেখে মসত্মিষ্কে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। আপনারা যদি এই মন্দ অভ্যাসটি ত্যাগ করতে চান তাহলে আপনাদের জন্য আমার পরামর্শ আপনারা রেগে গেলে মিষ্টি খাবার অভ্যাস করুন। হাতের কাছে রাখুন মিষ্টি নিদেন পক্ষে একমুঠো চিনি। তিনি যদি চিনি-গস্নুকোজ বা মিষ্টি কোন খাবার রাগের সময় খানিকটা খেয়ে নেন তাহলে দ্রুত সেই মিষ্টি তাঁর মেজাজ স্বাভাবিক করতে মস্তিস্কে সাহায্য করবে অর্থাৎ সেখানে শক্তি যোগাবে| রাগে অগ্নিশর্মাদের জন্য যে ভাল দাওয়াই পাওয়া গেছে এতে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই| রাগ হলে মেজাজ হয় গরম, সঙ্গে সঙ্গে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেলে মিষ্টি মিষ্টি হয়ে গলে যাবে মেজাজটাও, রাগ পালাবে, চমৎকার ওষুধ ! এছাড়াও এমন কিছু খাবার আছে যা আপনার গরমে আপনার মাথা ঠাণ্ডা রেখে রাগ কমাতে সক্ষম। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক সেই খাবারগুলো সম্পর্কেঃ
১। আইসক্রিমঃ আইসক্রিম থ্রমবোটনিন হরমোন ক্ষরণ করতে সাহায্য করে। এই হরমোন ক্ষরণে মন খুশি থাকে। ফলে আইসক্রিম মেজাজ ভালো রাখতে খুব সহায়ক।
২। চকোলেটঃ চকোলেট স্ট্রেস হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। ফলে মাথা শান্ত থাকে। তাই যারা চট করে রেগে যান তারা চকোলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকোলেট খেলে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়।
৩। কলাঃ কলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম থাকে। এই দুই উপাদান স্নায়ুকে শান্ত করে। ফলে চট করে রেগে যাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়।
৪। আপেলঃ আপেলে কার্বহাইড্রেট থাকে আর পিনাট বাটার ফ্যাটসমৃদ্ধ। এই দুই একসঙ্গে মিশে রাগ কমাতে সক্ষম। তাই রাগ কমাতে আপেলের সঙ্গে পিনাট বাটার মাখিয়ে খেতে পারেন।
৫। আলূঃ আলুতে কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন বি থাকে, যা রক্তচাপ ও স্ট্রেস কমায়। তাই রাগ কমাতে সেদ্ধ আলু খেতে পারেন।
৬। গ্রিন টিঃ মেজাজ খারাপ থাকার জন্য যদি কাজে মন না দিতে পারেন, তবে এক কাপ গ্রিন টি খেয়ে নিন। গ্রিন টি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
তবে রাগ নিয়্ন্ত্রনের জন্য সবচেেয়ে উত্তম পন্থা বাতলে দিয়েছে ইসলাম। রাগ হলে আলেমরা ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মুসলিম শরীফের এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে রাগের সময় নিজেকে সামলে নিতে পারে, সেই প্রকৃত বাহাদুর। আবু দাউদ শরীফের একটি হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘রাগ আসে শয়তানের কাছ থেকে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুন নেভাতে লাগে পানি। তাই যখন তোমরা রেগে যাবে, তখন অজু করে নেবে। অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন তোমাদের কারও রাগ আসে, তখন সে দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে। তাতে যদি রাগ দমে না যায়, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে। ’ -তিরমিজি।আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, রাগ দেখানোর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন পুরস্কৃত করবেন। রাগ নিয়ে ইসলামের এমন অবস্থানের পরও কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষোভকে সঠিক বলে রায় দিয়েছে। সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জুলুম ও বৈষম্য দূর করা এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধী ও জুলুমবাজদের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাগ বৈধ। জাতীয়, ধর্মীয় ও মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে রাগকে কাজে লাগাতে হবে। তবে অন্যায় দমন করতে যেয়ে অন্যায়কে যাতে প্রশ্রয় না দেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পবিয়্র এই রমজান মাসে আসুন আমরা সবাই সাধ্যমতো আমাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করি।
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:০১