ফলগাছ মানুষের সভ্যতা খাদ্যফসল ও ফলজ বৃক্ষের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। প্রথাগতভাবে বসতবাড়ির পিছনের আঙিনার ফসল হিসেবে পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য ফলজ উদ্ভিদ রোপণ করা হয়। উনিশ শতকের শুরুতে খ্রিস্টান মিশনারি ও ইউরোপীয় উপনিবেশিকগণ উপমহাদেশে ফল বাগানের সংগঠিত চাষাবাদে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। ফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের উষ্ণমন্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমন্ডলীয় ফল পাওয়া যায়। ফল উৎপাদনে বাংলাদেশে গত এক দশকে ব্যাপকভাবে এগিয়েছে এবং উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন ফল। বিগত ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ফলের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি এবং হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। বাংলাদেশ বর্তমানে আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ৪৫ প্রজাতির ফল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে মোট ১ কোটি টন ফল উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেড়েছে আমের উৎপাদন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদিত হয়েছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার টন। আর এ বছর তা বেড়ে ১৫ লাখ টন ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ হচ্ছে দেশীয় বৈচিত্র্যময় ফলের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার এবং প্রায় ৭০ প্রজাতির বিভিন্ন সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় ফল এদেশে জন্মে, যার ক্ষুদ্র একটি অংশ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত চার বছরে আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেয়ারা ও আনারসের মতো দেশি ফল উৎপাদন দ্রুত হারে বাড়ছে। সংস্থাটির ২০১৫ সালের প্রধান ফসলের পরিসংখ্যান-বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ১৮ প্রজাতির ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এবং উৎপাদন নিয়মিতভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে দেশের মোট ফল উৎপাদনের শতকরা ৫৪ ভাগই উৎপাদিত হয় ও বাজারজাত করা হয়। বাকি শতকরা ৪৬ ভাগ ফলের উৎপাদন হয় অবশিষ্ট ৮ মাসে্। অঞ্চলভিত্তিক কিছু কিছু ফল খুবই ভালো হয়; যেমন বরিশালে আমড়া, পেয়ারা, কাউয়া, সফেদা, বিলাতিগাব, কদবেল ইত্যাদি। এছাড়া অন্যান্য সব দেশী ফলও পাওয়া যায় বরিশালে। আমার স্বাদ নেওয়া বরিশালের কিছু ফলের পরিচিতি রয়েছে আমার এই পর্বে।
নারিকেলঃ
নারিকেল/নারকেল" শব্দটি পুরো নারকেল, বীজ বা ফলকে বোঝায়। নারিকেল বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মালেও দেশের দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে; প্রতিটি গাছে গড়ে ৭০-৮০টি ফল ধরে; সারা বছর ফল পাড়া যায়। নারিকেলের শক্ত শাঁস দুধের মতো সাদা এবং বেশ সুস্বাদু। ডাব গ্রীষ্মের একটি জনপ্রিয় পানীয়; পরিপক্ক ফলের শাঁস (এন্ডোস্পার্ম) বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরিতে, মিষ্টি, বিস্কুট, চকোলেট ও বিবিধ রান্নায় ব্যবহার্য। শুকনো নারিকেলের শাঁস থেকে তৈরি উদ্ভিজ্জ তৈল মাথায় ব্যবহার ছাড়াও রান্নায়, সাবান, শ্যাম্পু এবং অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহূত হয়। বাংলাদেশে যে সব নারিকেলের চাষ করা হয় সেগুলি হচ্ছে টিপিকা সবুজ, টিপিকা বাদামি ও দুধে। জাতভেদে বছরে প্রতি গাছে ২০০ বা ততোধিক নারিকেল পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক দিক থেকে নারিকেল গুরুত্বপূর্ণ ফল। সম্প্রতি এই অঞ্চলের কোন কোন শহরের পথতরু হিসেবেও নারিকেল রোপিত হচ্ছে।
আমঃ
আম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদে জন্মানো এক ধরনের সুস্বাদু ফল। কাঁচা অবস্থায় আমের রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাওয়ার জন্যই এই ফল চাষ করা হয়। আদি ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন উষ্ণমন্ডলীয় ফলগুলির একটি হলো আম যা চাষ করা হচ্ছে প্রায় ৬,০০০ বছর ধরে। দেশের সবচেয়ে পরিচিত ফলজ বৃক্ষ আমের চাষাধীন ও বন্য মিলে প্রায় ৩,০০০ জাত রয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহে আমের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতগুলি জন্মে।
কালোজামঃ
কালো রঙের ছোট ফলটির সঙ্গে আমাদের সবারই পরিচয় রয়েছে। অত্যন্ত সাধারণ ও জনপ্রিয় অপ্রধান ফলের মধ্যে রয়েছে কালোজাম। এটি গ্রীষ্মকালীন ফল। স্বাদে কোনটি মিষ্টি আবার কোনটি টক-মিষ্টি।কালোজাম গ্রীষ্মকালের একটি জনপ্রিয় ফল। জাম বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। জাম খাওয়াও খুব সহজ কারণ এর খোসা ছারাতে হয়না। এর মিষ্টি রসালো স্বাদ ছোটদের খুব প্রিয়। জামগাছ বড় আকারের বৃক্ষ; পরিপক্ক ফল কালো, লম্বাটে, ফলের অর্ধেকটাই বীজ; ফল পাকে জুলাই মাসে।অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল কম। এর পুষ্টিগুণ অনেক। এছাড়া জামে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এবং সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যাও। জামে পাওয়া গেছে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী। ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এ অ্যালার্জিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।ফলটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের সর্বত্র কম-বেশি পাওয়া যায়।
কাঁঠালঃ
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল এর বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus। এটি উদ্ভিদজগতের সর্ববৃহৎ ফলের একটি যা ৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। কাঁঠাল গাছ গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নভূমিতে ভাল উপযোগী এবং বিশ্বের ক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এর উৎস দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ঘাট এবং মালয়েশিয়ার রেইন ফরেস্টের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। কাঁঠাল স্বাস্থ্যকর খাবার। পাকা ও কাঁচা, কাঁঠাল দুইভাবেই খাওয়া যায়। অনেকেই কাঁঠালের এচোড় (কচি কাঁঠাল) ফ্রিজে জমিয়ে রেখে কয়েক মাস ধরে খেতে ভালোবাসেন। নানা ভাবে তরকারি হেসেবে খাওয়া হয় কাঁঠাল। কাঁচা কাঁঠাল স্বাদে আর গুণে কম যায় না। অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ। এমনকি কাঁঠালের বিচিতেও আছে শর্করা। এটি চাইলে খেতে পারবেন তরকারি, হালুয়া বা ভর্তা হিসেবে। তবে এতে থাকে আঁশ, তাই বেশি খেলে হজমে গোলযোগ হতে পারে।’বাঁঠাল বর্তমানে বরিশালসহ সারাদেশে জন্মে।
খেজুরঃ
খেজুর এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। চারটি খেজুরের বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।একেবারে আদিকালে সর্বপ্রথম নির্বাচিত ফলজ বৃক্ষ হিসেবে খেজুর চাষ হতো বলে । ধারণা করা হয় মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বছর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে।
পেঁপেঃ
পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ একটি ফল। স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ধরে। পেঁপে গাছ প্রায় সার বছরই ফল দিয়ে থাকে। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে। কান্ডের খুব নিচ থেকেই ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি ফলের ওজন ৮৫০-৯৫০ গ্রাম। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে, ফুল আসার ৩-৪ মাস পর পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। পাকা পেঁপে ফল হিসেবে এবং কাঁচা পেপে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে।
কলাঃ
কলা এক প্রকারের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল। দামে সস্তা আর পুষ্টিগুণে ভরপুর কলার উপকারিতা জানলে চোখ কপালে উঠবে আপনার! মুহূর্তের মধ্যে এনার্জি পেতে কলার জুরি মেলা ভার। কলায় থাকা মিনারেল, ভিটামিন আর ফাইবার শরীরের জন্য খুব উপকারী। তাই খুব বেশি ওজন কমে গেলে বা শরীর দূর্বল হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় শক্ত রাখে। পেট পরিস্কার রাখার পাশাপাশি হজমেও সাহায্য করে কলা। একটি কলায় থাকে ৩ গ্রাম ফাইবার। যা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশসমূহে কলা ভাল জন্মায়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই কলার উৎপত্তিস্থল হিসাবে পরিগণিত। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বহু দেশে কলা অন্যতম প্রধান ফল।
আনারসঃ
আমকে যদি ফলের রাজা বলা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে আনারস ফলের রানী। কেননা মাথায় মুকুট পরে কাঁটার আসনে বসে গাম্ভীর্যের সাথে আনারস গর্বিতভাবে জীবন যাপন করে। আনুমানিক ১৫৪৮ সালের দিকে আমাদের এ অঞ্চলে আনরস এসেছে। গবেষকদের ধারণা আনারসের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিলে। আনারস উৎপাদনে লিডিং দেশগুলোর মধ্যে আছে কোস্টারিকা, ব্রাজিল, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া। পাকা আনারসের অম্ল মধুর রসালো মিষ্টি গন্ধ হৃদয় ছুঁয়ে যায়, খাওয়ার প্রতি লোভ বাড়িয়ে দেয়। আনারসের জুস, স্লাইস, এসিড, স্কোয়াশ, সিরাপ, জ্যাম, জেলি, আনারসসত্ত্ব, ভিনেগার, সাইট্রিক এসিড, ক্যালসিয়াম সাইট্রেট, অ্যালকোহল বিশ্বনন্দিত। কুশকুশে কাশি জ্বরে আনারস মহৌষধ। তাছাড়া আনারসের পাতা থেকে মোম ও সুতা তৈরি হয়। টিনে সংরক্ষণ করার পরও আনারসে কিছু পরিমাণ ভিটামিন থাকে। পাকা আনারসে গড়ে শতকরা ১০ ভাগ চিনি ১ ভাগ সাইট্রিক এসিড থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আগস্ট মাসে আনারস পাকে। কিছু কিছু জাত আছে সারা বছর আনারস দেয়।
জাম্বুরাঃ
জাম্বুরা প্রকার লেবু জাতীয় টক-মিষ্টি ফল। বিভিন্ন ভাষায় এটি পমেলো, জাবং, শ্যাডক ইত্যাদি নামে পরিচিত। বরিশালে এটা ছলম নামে পরিচিত। কাঁচা জাম্বুরা ফলের বাইরের দিকটা সবুজ এবং পাকলে হালকা সবুজ বা হলুদ রঙের হয়। এর ভেতরের কোয়াগুলো সাদা বা গোলাপী রঙের। এর খোসা বেশ পুরু এবং খোসার ভিতর দিকটা ফোম এর মত নরম । লেবু জাতীয় ফলের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড়; যা ১৫-২৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট হয়ে থাকে। জাম্বুরার টক মিষ্টি স্বাদ আর গন্ধ যেমন সবাইকে আকর্ষণ করে তেমনি রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য জাম্বুরায় খাদ্যশক্তি ৩৮ কিলোক্যালরি। প্রোটিন ০.৫ গ্রাম। স্নেহ ০.৩ গ্রাম। শর্করা ৮.৫ গ্রাম। খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম। থায়ামিন ০.০৩৪ মিলি গ্রাম। খনিজ লবণ ০.২০ গ্রাম। রিবোফ্লেভিন ০.০২৭ মিলি গ্রাম। নিয়াসিন ০.২২ মিলি গ্রাম। ভিটামিন বি২ ০.০৪ মিলি গ্রাম। ভিটামিন বি৬ ০.০৩৬ মিলি গ্রাম। ভিটামিন সি ১০৫ মিলি গ্রাম। ক্যারোটিন ১২০ মাইক্রো গ্রাম। আয়রন ০.২ মিলি গ্রাম। ক্যালসিয়াম ৩৭ মিলি গ্রাম। ম্যাগনেসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম। ম্যাংগানিজ ০.০১৭ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম। পটাশিয়াম ২১৬ মিলিগ্রাম। সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ জাম্বুরা নানান রোগের প্রতিকারক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। দৈনিক এক গ্লাস জাম্বুরার রস গ্রহণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যারা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভোগেন তারা প্রতিদিন জাম্বুরা খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
লিচুঃ
লিচু বা লেচু হল সোপবেরি পরিবার, সেপিন্ডাসিয়ার লিচি গণের একমাত্র সদস্য। এটি দক্ষিণ-পূর্ব চীনের কুয়াংতুং এবং ফুচিয়েন প্রদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। সেখানে ১১শ শতক থেকে এর চাষাবাদ হওয়ার কথা লিপিবদ্ধ আছে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে চীন থেকে ভারতবর্ষে লিচুর প্রবর্তন হয়। অধিক শাখাযুক্ত চিরসবুজ এ বৃক্ষ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র ভালভাবে জন্মায়। এ রসাল ফলে রয়েছে প্রচুর মিনারেল। এর বাইরে এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে খুব অল্প পরিমাণে। ফ্যাট না থাকয় সবার জন্য উপকারি একটি ফল। লিচুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম থাকে। এ ছাড়া এতে থাকা অন্য খনিজ উপাদানগুলো হচ্ছে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম; যা লিচুতে যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। এ কারণে দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা মেটাতে লিচু অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। তাই মৌসুমি ফলগুলো যতটা সম্ভব, আমাদের জন্য খাওয়াটা খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু খেলে ওজন বৃদ্ধি, সুগার লেভেল বাড়ার পাশাপাশি পেট খারাপও হতে পারে। কারও কারও লিচুতে অ্যালার্জি থাকে, এমন ব্যক্তিদের ফলটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তাই নিয়ম মেনে পরিমাণমতো মৌসুমি ফল খাওয়া উচিত। তবে যারা ডায়াবেটিস রোগী, তাদের জন্য এই ফল কিছুটা কম খাওয়াই ভালো।
তালঃ
তাল একটি সুস্বাদু এশিয়া ও আফ্রিকার গ্রীষ্মকালীন ফল।সুস্বাদু এই তালের ফল ও বীজ দুটোইই খাওয়া হয়। তালের বীজ লেপা বা "তালশাঁস" নামে পরিচিত ।তাল গাছের কাণ্ড থেকেও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, তাড়ি (একপ্রকার চোলাই মদ) ইত্যাদি তৈরি হয়। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক খনিজ উপাদান। তালের ঘন নির্যাস দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। তালের বীজ তালশাঁস নামে পরিচিত। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক খনিজ উপাদান। এর সাথে আরো আছে অ্যান্টি অক্সিজেন ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। তালে রয়েছে অনেক উপকারিতা। পেটের জ্বালাপোড়া দূর করতে সবচেয়ে উপকারী কার্যকরী প্রতিকার হচ্ছে তালের রস। গরমে হাইট্রেড থাকতে ভালো কাজ করে তাল। এসিডিটির সমস্যা দূর করতে তালের রস খুবই উপকারী। ত্বকের যত্নেও তালের ব্যবহার ও অনেক। গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে তাল অনেক ভালো কাজ করে।
এ রকম আরাে কিছু রাাসালো ফলের পিরিচিতি থাকবে আমার ২য় পর্বে
সূত্রঃ বরিশাল পিডিয়া
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:০৫