somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন পেশা ছাড়তে চান মেধাবী সাংবাদিক?

০৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেধাবীরা কেন সাংবাদিকতা ছাড়ছেন? একটা সময় তরুণ-তরুণীদের স্বপ্নের পেশা ছিল সাংবাদিকতা। সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকেই বেছে নিতেন তারা। এখন বোধহয় সময় এসেছে কথাটি বদলানোর। দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনার হার বাড়ছে। কিন্তু পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতায় আসার হার বাড়ছে না। আবার যারা এসেছেন, তাদের অনেকেই এই পেশা ছেড়েছেন, আর যারা আছেন, তাদের কেউ কেউ ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন। বাংলাদেশের ৪২.৯% সাংবাদিক তাদের পেশা নিয়ে বিষণ্ণতায় ভুগছেন। এ ছাড়া কম বেতন ও কাজের চাপে পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন ৭১.৭% সাংবাদিক। সুযোগ পেলেই অন্য কোনও চাকরিতে চলে যাচ্ছেন তারা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে “অ্যান ইনভেস্টিগেশন ইনটু রিস্ক টু মেন্টাল হেলথ অব বাংলাদেশি জার্নালিস্টস” শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষক দলে একই বিভাগের শিক্ষক ড. সরকার বারবাক কারমাল ও সাবেক শিক্ষার্থী আপন দাস গবেষণা দলের সদস্য ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা আইজিআই গ্লোবালের “হ্যান্ডবুক অব রিসার্চ ইন ডিসক্রিমিনেশন, জেন্ডার ডিসপ্যারিটি অ্যান্ড সেইফটি রিস্ক ইন জার্নালিজম” শীর্ষক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৪২.৯% সাংবাদিক তাদের পেশা নিয়ে বিষণ্ণতায় ভুগছেন। বিষণ্ণতায় ভোগা ৪২.৯% সাংবাদিকের মধ্যে ৪৮.৪৮% পুরুষ এবং ৪১.৭৭% নারী। আর পেশাগত হতাশার কারণেই সাংবাদিকতা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে চান ৭১.৭% সাংবাদিক। গবেষণায় বলা হয়, পেশাগত অনিশ্চয়তাই সাংবাদিকতা বিমুখতার প্রধান কারণ। কেননা, প্রায় ৮৫% সাংবাদিকই চাকরির অনিশ্চয়তায় ভোগেন। হতাশার আরও কারণের মধ্যে রয়েছে, সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়া, কম বেতন পাওয়া এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ। গবেষণায় আরও উঠে আসে, নানামুখী হতাশার কারণে অনেক মেধাবী কিছুদিন সাংবাদিকতা করার পর পেশা পরিবর্তন করেন।


এদিকে, সাব-এডিটর বা কপি এডিটরদের তুলনায় বেশি বিষণ্ণতায় ভুগছেন রিপোর্টাররা। বিষণ্নতার হার রিপোর্টার ৪৪.৩২%, কপি এডিটরের ৩৪% এবং নিউজ এডিটরের বিষণ্নতার হার ২৮.৫৭%। সম্প্রতি দেশের সংবাদপত্র, স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। দেশের সংবাদপত্র, স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে কর্মরত ১৯১ জন সাংবাদিকের ওপর গবেষণা চালিয়ে জানা যায় বাংলাদেশের ৪২.৯% সাংবাদিক তাদের পেশা নিয়ে বিষণ্ণতায় ভুগছেন। এ ছাড়া যারা এখনও পেশায় আছেন, তারাই বা কেন হতাশ, অনুশোচনায় ভুগছেন? একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের পেশা ছেড়ে দেওয়ার এই প্রবণতা এটাই ইঙ্গিত বহন করে যে, এদেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না বা করছে না। পুরো গণমাধ্যমই এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংসদে দেওয়া তথ্যমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন দৈনিক পত্রিকা রয়েছে এক হাজার ২৪৮টি, এর মধ্যে ঢাকায় ৫০২টি এবং সারাদেশে ৭৪৬টি। টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে ৩২টি। এছাড়া সারাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকা রয়েছে এক হাজার ১৯২টি, মাসিক ৪১৪টি। এর বাইরে ২ হাজার ২১৭টি অনলাইন মিডিয়া রয়েছে। আরও আছে, অনলাইন পত্রিকা, অনলাইন টেলিভিশন ও রেডিও। অথচ হিসাব নিলে দেখা যাবে, হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নিয়মিত বেতনভাতা পরিশোধ করছে। চাকরির অনিশ্চয়তা, পেশাদারিত্বের অভাবের কারণে অনেক মেধাবী সাংবাদিক এখন আর এই পেশায় থাকছেন না। মুখে যতই বলি না কেন এদেশে সাংবাদিকতা এখনও পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই পেশা অনিশ্চয়তায় ভরা। কাজের স্থায়িত্ব বা নিশ্চয়তা নেই। তাই ক্যারিয়ার হিসেবে তরুণরা সাংবাদিকতাকে আর বেছে নিতে পারছেন না। অনেকেই হয়তো আপদকালীন হিসেবে সাংবাদিকতায় আসছেন কিন্তু পরে সুযোগ বুঝে ছেড়ে দিচ্ছেন এই পেশা। কেউবা পার্টটাইম করছেন, তাও শখের বসে। মিডিয়া সেক্টরে পেশাদারিত্ব নেই বলেই পেশার প্রতি আগ্রহ বা ঝোঁকও নেই।


সাংবাদিকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও পেশাগত সন্তুষ্টি নিয়ে (ইউল্যাব) জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক দলের প্রধান আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সাংবাদিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ নিয়ে দেশে সচেতনতার মাত্রা খুবই কম। সাংবাদিকতা পেশা ও সাংবাদিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রশ্নে কর্মক্ষেত্রে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অবশ্যই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। দুখের বিষয় যারা মিডিয়ার মালিক, যারা মিডিয়া চালান তারা অনেকেই মিডিয়াকে দেখেন তাদের অন্য ব্যবসা রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে। এতে নিজেরা বা তাদের প্রতি ভক্তিতে গদগদ থাকা কিছু সাংবাদিক লাভবান হলেও ক্ষতিতে থাকে বিশাল একটি অংশ। যারা নিয়মনীতি কিছুটা মানেন, তাদেরও ভাবটা এমন, ‘অন্যরা তো দিচ্ছে না, আমরা তাও দিচ্ছি’। এসব কারণে হলফ করে বলা যাবে, সংবাদকর্মীদের বেশিরভাগই আজ অসুখী। প্রতিনিয়ত তাদের মাঝে টেনশন কাজ করে। এই বুঝি চাকরি হারাতে হলো। এছাড়া হরহামেশাই কর্মী ছাঁটাই তো চলছেই। যারা পারছেন পেশা বদল করছেন, বিদেশ যাচ্ছেন আর যারা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না, তারা অনেকে ঢাকা শহর থেকে পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘নিয়মিত বেতন পেলে একজন সাংবাদিক মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন। এ ছাড়া নিউজ প্রকাশ হওয়ার পর বাইরে থেকে সাংবাদিকের ওপর কোনো চাপ আসতে পারে। তখন সমপাদক ও সহকর্মীরা পাশে থাকলে তিনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন। সাংবাদিকের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাংবাদিক ইউনিয়ন ও মিডিয়া হাউসের সম্মিলিত চেষ্টা থাকা দরকার।’এই পেশায় যে অঢেল অর্থ নেই সেটি সংবাদকর্মী মাত্রই জানেন। সেটিকে কেয়ার না করাই একজন সাংবাদিকের শক্তি। এরপরও পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু মালিকদের অতিলোভ, চাটুকার প্রবৃত্তি সেই প্রচেষ্টাকে আবারও নষ্ট করে ফেললো। অনেকেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হয়তো নিজেকে বদলে নিয়েছেন। কিন্তু যারা নীতি আর বেঁচে থাকার সঙ্গে আপস করতে পারেননি, তারা পেশা বদল করেছেন বা পেশা ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে দেশে সচেতনতার মাত্রা খুবই কম।
সূত্রঃ অ্যান ইনভেস্টিগেশন ইনটু রিস্ক টু মেন্টাল হেলথ অব বাংলাদেশি জার্নালিস্টস

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
nuru.etv.news@gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ২:৫৪
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাত্রদের রাজনৈতিক দল কি জামায়াতের গণতান্ত্রিক শাখা হিসাবে আত্নপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:১৬


জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজপথে ইসলামিক ছাত্রশিবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইহা আমার কথা নয়। সারজিস আলমের। আমরা যারা জুলাই অভ্যুত্থানে বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন দেশে ছাত্ররা পুর্ণাংগ রাজনৈতক দল গঠন করতে শুনেছেন?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১১



আপনার জীবনে, কোন দেশে ছাত্ররা রাজনৈতক দল গঠন করতে শুনেছেন? পাকি জল্লাদেরা দেশের মানুষকে ইডিয়টে পরিণত করে জংগী সংগঠন গড়ছে আমাদের চোখের সামনে?

ছাত্ররা যেই দলটি করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গিলা-কলিজা বা লটপটি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০০



এক সময় আমরা খুব গিলা কলিজা ভুনা পরাটা দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে খেতাম । ঈশ্বর বিরক্ত হয়ে বাধা দিলেন । প্রেসার বাড়িয়ে হাইপারটেনশন চড়িয়ে দিলেন । ব্যাস গেলো ২৫... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংবাদ শিরোনাম......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১১



মাত্র ২০ টি
সংবাদ শিরোনাম....সিলেক্ট করেছিলাম। আপলোড হয়েছে ১০ টা। অবশিষ্ট দুর্নীতির শিরোনাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামীন ব্যাংক কোথায় নিচ্ছে ‼️ নোবেল বিজয়ী ড.ইউনুস⁉️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫





সুযোগের অভাবে সততার পরিচয় দেওয়া এক প্রকার ভন্ড সুশীল এরা! গ্রামীন ব্যাংক নিয়ে তার নতুন চক্রান্ত শুরু করে দিয়েছেন।অর্থনীতির সংস্কার করতে গিয়ে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন প্রয়োগ করা হচ্ছে ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×