চাঁদপুর ভ্রমন
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার চাঁদপুর গিয়ে ছিলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটা প্যাকেজ ট্যুরে। Xotic Traveler নামের ব্যানারে সকাল ৯টায় সদর ঘাট থেকে এমভি আব এ জমজম লঞ্চে যাত্রা শুরু করে ১২টায় চাদঁপুরের তিন নদীর মোহনা ভ্রমন। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মিলনস্থল কে চাঁদপুর মোহনা বলা হয়ে থাকে। এই জায়গাটি চাঁদপুর জেলার সদরের দর্শনীয় পর্যটন স্পট গুলোর এটি। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ার মিলনস্থল চাঁদপুর বড় স্টেশনের মোলহেডে বধ্যভূমিতে অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ’রক্তধারা’ । স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তরুণ প্রজন্মের দাবিতে প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১১ সালে নির্মিত হয় ‘রক্তধারা’। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চাঁদপুর জেলার পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় টর্চার শেল তৈরি করে মানুষদের কে টর্চার করে জীবিত হাত পা বেধে নদীর স্রোতে ফেলে দিত। ধারণা করা হয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে আনা প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষকে এখানে হত্যা করে মেঘনা নদী মোহনায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরের ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীর মিলনস্থলে ঘূর্ণির গভীরতা প্রায় নয়শত ফুট। পাথর বেঁধে মৃত দেহগুলো ফেলে দিলে তা মুহূর্তেই ২০-২৫ মাইল দূরে চলে যায়।
রক্তধারা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সৌধটি আজো একাত্তরের বিভীষিকাময় স্মৃতিকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে আপনি একজায়গায় বসে তিন নদীর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। চাঁদপুর মোহনায় দর্শনার্থীদের জন্য ছোট একটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। নাগরদোলা, চরকি এবং বসার জন্য রয়েছে ছোট ছোট আসন। জেলা ব্র্যান্ডিং পর্যটন কেন্দ্র যেটা চাঁদপুর পৌরসভার সহযোগিতা এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসন এর ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এই স্থানকে বড় স্টেশন মোলহেডও বলা হয়ে থাকে।
(চাঁদপুর,বড় স্টেশন মোলহেড ) জেলা ব্র্যান্ডিং পর্যটন কেন্দ্রে একটি ইলিশ ভাস্কর্য রয়েছে। ইলিশ ভাস্কর্য এর চারপাশটা গ্রিল দিয়ে বেষ্টিত।
জনশ্রুতি আছে, এই মোহনা এক ছেলের অভিশাপে সৃষ্টি হয়েছে। শত বছর আগের কথা। তখন মোহনাস্থলে কোনো নদী ছিল না। ছিল ছোটখাটো বাজার, হোটেল আর দোকানপাট। নদী ছিল কয়েক কিলোমিটার দূরে। একদিন বিকেলে ছোট এক দ্ররিদ্র ছেলে শিশু একটি হোটেলে গিয়ে খাবার চায়। হোটেলের মালিক তাকে তাড়িয়ে দেয়। ছেলেটি পুনরায় খাবার চাইতে গেলে তাকে আবারো তাড়িয়ে দেয়া হয়।
ছেলেটি আবারও ওই হোটেলে যায়। এবার হোটেলের মালিক রেগেমেগে তার গায়ে গরম তেল ছুড়ে মারে। অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাদঁতে কাঁদতে ছেলেটি চলে যায়। ওই রাতেই হোটেল অবধি কয়েক কিলোমিটার জায়গা নদীর ভাঙনে পানির অতলে হারিয়ে যায়। তৈরি হয় মোহনা। ওই ঘটনার বহু বছর পর ওই ঘূর্ণিপাকে পড়ে একটি লঞ্চ ডুবে যায়। তখন ডুবুরিরা লঞ্চের সন্ধানে নদীর তলদেশে গিয়ে দেখে একটি ছোট ছেলে চেয়ারে বসে আছে। ঘটনাগুলো আদৌ সত্যি কি-না তা বলা কঠিন।
চাঁদপুর মোহনার ঠিক মাঝেই একটি বিপদজনক স্থান রয়েছে। নদি যখন অশান্ত হয়ে উঠে তখন এখানে একটি ঘূর্ণয়নের সৃষ্টি হয়। ফলে চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনালে যাওয়ার জন্য কোন লঞ্চই এই পথ দিয়ে যেতে পারে না। লঞ্চ গুলো কে অনে দূর দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। তবে মোহনাতে আপনি সবসময় বাতাস পাবেন।এই মোহনার পাশ দিয়েই বরিশাল, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের লঞ্চ চলাচল করে। তিন নদীর এ সঙ্গমস্থল চাঁদপুর জেলা সদরের অন্যতম একটি পর্যটন স্পট। প্রতিদিনই এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
চাঁদপুরের স্থানীয় এক মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে
ইলসা বাড়িতে (একটি হোটেলের নাম) ইলিশ ভাজা দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে ২:৫০ মিনিটে ইঞিন চালিত নৌকা যোগে তিন নদীর মোহনা থেকে মিনি কক্সবাজার খ্যাত হাইম চরের উদ্দেশ্যে রওনা করি।
মিনি কক্সবাজার বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত একটি পর্যটনকেন্দ্র। চাঁদপুর জেলা শহরের প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে পদ্মা ও মেঘনার মাঝে গত বছর জেগে উঠেছে একটি চর। এর পশ্চিমে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা। চারদিকই পদ্মা ও মেঘনার জলবেষ্টিত। চরটি কারও কাছে মোহনার চর, কারও কাছে চাঁদপুরের সৈকত, আবার কারও কাছে ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এটি নদীকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এর চারদিকে নদী হওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো দেখায় তাই পর্যটকরা এর নাম দিয়েছেন মিনি কক্সবাজার।
বিকেল পাঁচটার দিকে মিনি কক্সবাজার ভ্রমণ শেষে আবার তিন নদীর মোহনায় প্রত্যাবর্তন। পরে ঢাকার উদ্যেশে যাত্রা শুরুর আগে চাঁদপুরের বিখ্যাত ওয়ান মিনিট আইসক্রিমের স্বাদ নিতে ভুললাম না। বিদ্যুতের সাহায্যে মাত্র এক মিনিটেই তৈরি হয় বলে এ নামেই নামকরণ করা হয়। চাঁদপুর সদরের নতুন বাজার প্রেসক্লাব রোডে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠান।
যা হোক সুন্দর ভ্রমণ শেষে রাত ৭টার এমভি ইমাম হাসান-২ লঞ্চে ঢাকার উদ্যেশে যাত্রা করে রাত ১০টায় সদর ঘাটের লালকুঠি। লালকুঠি ঘাট থেকে বাসায় ফিরতে রাত ১১:৪৫!
সূত্রঃ এমভি জমজম ও এমভি ইমাম হাসান-২
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
nuru.etv.news@gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৪০