‘যেতে নাহি দিব। যেতে নাহি দিব। '
সবে কহে ‘ যেতে নাহি দিব '। তৃণ ক্ষুদ্র অতি
তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী
কহিছেন প্রাণপণে ‘যেতে নাহি দিব '।
আয়ুক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব-নিব,
আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে
কহিতেছে শত বার ' যেতে দিব না রে '।
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে
গভীর ক্রন্দন — ‘যেতে নাহি দিব '। হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
চলিতেছে এমনি অনাদি কাল হতে।
শাপলা ফুলের স্বর্গরাজ্য সাতলা
কবি গুরুতে শুরু আর তারই মাঝে শেষ হলো আমার এক মাসের জন্মভূমের সফর। গত নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ শুক্রবারে শীতের রাতে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্লোবাল নামক এক যাত্রী বাহী বাসে সওয়ার হয়ে নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে ভোর ৩টা ৪৫ মিঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পয়সার হাটে অবতরণ। অভিষ্ঠ লক্ষ্য বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শাপলা ফুলের স্বর্গরাজ্য্ আমার জন্মভূমি সাতলা।
/Barishal বরিশালের উজিরপুরে বিলাঞ্চলে অসংখ্য লাল, সাদা আর নীল রংয়ের শাপলা
অনেক দিন যাওয়া হয়না সেখানে। প্রায় ৬ বছর পরে ফিরে এলাম মা ও মাটির টানে। এত দিন থাকার ইচ্ছা বা প্রস্তুতি কিছুই ছিলোনা। ভেবে ছিলাম সপ্তাহ খানেক থাকবো। কিন্ত মানুষের সকল চাওয়া পাওয়ার নিস্পতির এখতিয়ারতো সৃষ্টিকর্তার! তাই দিনে দিনে সপ্তাহ এবং মাসও কেটে কেলো স্বজনদের আন্তরিক আতিথিয়তা ও ভালোবাসায়।
আমাদের সাতলার সাপ্তাহিক বাজার
(গ্রামেও লেগেছে শহরের ছোঁয়া)
নিজের বাড়ি. মামা বাড়ি, খালা বাড়ি. বোনের বাড়িতে স্বগীয় স্বাদ লাগা পিঠে পায়েস আর নদীর তাজা মাছ উদর পূর্তি করে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে উড়তে পার হয়ে গেল পুরো একটি মাস।
তার পরেও স্বজনদের আবদার আর কটা দিন থাকুন না।
প্রলয়সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে
প্রসারিত-ব্যগ্র-বাহু জ্বলন্ত-আঁখিতে
দিব না দিব না যেতে ' ডাকিতে ডাকিতে
হু হু করে তীব্রবেগে চলে যায় সবে
পূর্ণ করি বিশ্বতট আর্ত কলরবে।
যেতে নাহি দিব হায়/তবু যেতে দিতে হয়/তবু চলে যায়'_ জীবনের এই কঠিন সত্যটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন অনেক আগেই। তবুও মায়ার বাঁধন ছিঁড়তে চায় না মানুষ। প্রিয়জনকে ছেড়ে থাকতে চায় না একটি মুহূর্তও। ছোট ছোট নাতি নাতনি আর ভাতিজাদের বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা যেতে নাহি দিবো! 'শত বাধা ছিন্ন করে অবশেষে আমার বিদায় লগ্ন ঘনিয়ে এলো। গত ২৭ ডিসেম্বর আমার এক ছোঁট ভাইয়ের চার চাক্কার বাহনে করে ফিরতে হলো হৃদয়হীন সেই ইট পাথরের শহরে জীবনের প্রয়োজনে। পথে শিমুলিয়া ফেরী ঘাট হয়ে মাওয়া প্রান্তে আসলাম পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে। ভাঙ্গা থেকে শিমুলিয়া এবং মাওয়া থেকে বুড়গঙ্গা পর্যন্ত রাস্তা ছিলো বাংলাদেশের গর্ব করার মতো সড়ক। সাতলা বিল সর্ম্পকে বিস্তারিত জানুন
জানি আপনারা আমার জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন! কেউ কেউ অশুভ চিন্তাও করে ছিলেন। তবে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে আমি বহাল তবিয়তে ছিলাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি জাদিদ ভাইয়ের কাছে। তিনি আমার খোঁজ নিয়ে ছিলেন। সবাই ভালো থাকুন। করোনা থেকে সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২১