গল্প পড়ে আমরা অনেক আনন্দ ও অনেক কিছু শিখতে পারি। তবে গল্পের মধ্যে যে গল্প গুলো থেকে আমরা নৈতিকতার বিষয়ে শিখে থাকি তাই শিক্ষনীয় গল্প। এ গল্প গুলির মাধ্যমে আমরা আমাদের নৈতিক চরিত্রকে সুন্দর করতে পারি। এসব গল্পের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - প্রতিটা গল্পেই শিক্ষনীয় কিছু মেসেজ থাকে। আর গল্পের আকারও বেশ ছোট, যাতে অল্প সময়েই বলে ফেলা যায়। সেই রকম কিছু শিক্ষণীয় গল্প নিয়ে সাজানো আমার শিক্ষামূলক গল্প সিরিজ। শিক্ষামূলক গল্পের আগের পর্বঃ
১। মা-বাবাকে ভালো বাসুনঃ শিক্ষনীয় গল্প-১
২। মিথ্যার কাছে পরাভূত সত্য (শিক্ষণীয় গল্প-২)
৩। পর্দার উপকারিতাঃ শিক্ষামূলক গল্প-৩
৪। ধার্মিক মাছঃ শিক্ষামূলক গল্প সিরিজের ৪র্থ গল্প
৫। এক ধার্মিক স্বর্ণকারঃ শিক্ষামূলক গল্প -৫ঃ
৬। রুপকথার রাজা এবং মূর্খ বাঁদরের বাঁদরামীঃ নীতি কথার গল্প-৬
আজ এই সিরিজের ৭ম গল্পঃ নাস্তিক নাপিত ও আস্তিক খদ্দেরঃ
সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী এক লোক চুল কাটতে গেলো পাড়ার এক সেলুনে। চুল কাটার সময় সাধারনত যেমনটি হয়! তেমনি নরসুন্দরের সাথে লোকটির গল্প জমে গেলো। এ গল্প থেকে সে গল্প, এমন করে স্রষ্টা আছেন কি নাই এমন আলোচনায় চলে গেলো তারা।
গল্পের এক পর্যায়ে নরসুন্দর বলে উঠলো, "আমি স্রষ্টা আছেন তা বিশ্বাস করিনা। আমার বিশ্বাস স্রষ্টা বলে কেউ নেই"।
লোকটি তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি এমনটি বললে কেন?"
নরসুন্দর লোকটি বললো, "তুমি অন্ধ নাকি? শুধু এখান থেকে রাস্তায় গিয়ে দেখো, দেখবে স্রষ্টা বলে কেউ নেই। যদি এমন কেউ থাকতোই তবে এতো মানুষ অনাহারে কষ্ট পেতো না। আমাকে বল, স্রষ্টা বলে যদি আসলেই কেউ থাকতো তবে কি এতো মানুষ অসুখে কষ্ট পেতো? এমনকি দুধের শিশুও বাদ যায় না। যদি স্রষ্টা বলে আসলেই কেউ থাকতো, তবে কেউ কষ্টে থাকতো না। কষ্ট পেতো না। আমি বুঝি না, যদি স্রষ্টা বলে কেউ থাকতোই তবে নিজের সৃষ্টিকে এমন কষ্ট কেউ দিতে পারে কি করে?"
চুল কাটাতে আসা লোকটি একটু ভাবলো এবং চুপ করে থাকলো। সে কোন যুক্তি তর্কে যেতে চাইলো না। চুল কাটা শেষ হলে লোকটি দোকানের বাহিরে আসলো।
বাহিরে আসার পর উস্কোখুস্কো লম্বা জট পাকানো ময়লা চুল ও দাড়ির এক লোককে দেখতে পেলো রাস্তায় দাড়িয়ে।
দোকানে ফিরে লোকটি নরসুন্দরকে বললো, "তুমি জানো কি এ এলাকায় কোন নাপিত নেই"।
নরসুন্দর অবাক হয়ে বললো, "কি সব বাজে বকছো? এ এলাকায় নরসুন্দর থাকবে না কেন? এই মাত্রই তো আমি তোমার চুল কেটে দিয়েছি"।
এবার লোকটি বাহিরের লম্বা জট পাকানো লোকটিকে দেখিয়ে বললো, "তাহলে নরসুন্দর থাকার পরও কিভাবে এমন নোংরা লম্বা জট পাকানো চুল নিয়ে এ এলাকায় কেউ থাকে?"
নরসুন্দর লোকটি জবাব দিলো, "তাকে তো আমার কাছে আসতে হবে চুল কাটতে, নাকি?"
"হুম । তাতে অবশ্যই। "- লোকটি জবাব দিলো।
"এটাই আসল পয়েন্ট। স্রষ্টাও আছেন, কিন্তু তাঁর কি দোষ! মানুষ যদি তার কাছে না যায়? যদি তাঁর কাছে না চায়? মানুষের নিজের জন্যই তো তাঁর কাছে যেতে হবে, চাইতে হবে, নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে। নাকি........?" তিনি সবার সমস্যার সমাধান দিতে চান যদি মানুষ তার সমাধান চায়। সৃষ্টিকর্তার আদেশ নির্দেশ না মেনেই আমরা অযথাই তার দোষারোপ করি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭