গল্প পড়ে আমরা অনেক আনন্দ ও অনেক কিছু শিখতে পারি। তবে গল্পের মধ্যে যে গল্প গুলো থেকে আমরা নৈতিকতার বিষয়ে শিখে থাকি তাই শিক্ষনীয় গল্প। এ গল্প গুলির মাধ্যমে আমরা আমাদের নৈতিক চরিত্রকে সুন্দর করতে পারি। এসব গল্পের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - প্রতিটা গল্পেই শিক্ষনীয় কিছু মেসেজ থাকে। আর গল্পের আকারও বেশ ছোট, যাতে অল্প সময়েই বলে ফেলা যায়। সেই রকম কিছু শিক্ষণীয় গল্প নিয়ে সাজানো আমার শিক্ষামূলক গল্প সিরিজ। শিক্ষামূলক গল্পের আগের পর্বঃ
১। মা-বাবাকে ভালো বাসুনঃ শিক্ষনীয় গল্প-১
২। মিথ্যার কাছে পরাভূত সত্য (শিক্ষণীয় গল্প-২)
৩। পর্দার উপকারিতাঃ শিক্ষামূলক গল্প-৩
৪। ধার্মিক মাছঃ শিক্ষামূলক গল্প সিরিজের ৪র্থ গল্প
৫। এক ধার্মিক স্বর্ণকারঃ শিক্ষামূলক গল্প -৫ঃ
আজ এই সিরিজের ৬ষ্ঠ গল্পঃ রুপকথার রাজা এবং মূর্খ বাঁদরের বাঁদরামীঃ
একদা রুপ কথার কোন এক রাজ্যে এক প্রজাবৎসল দয়ালু রাজা ছিলেন। তার মহানুভবতার কথা দশ বিশ রাজ্যের মানুষ জানতেন। বিপদে আপদে তার নিজ প্রজাদের যেমন সাহায্য করতেন তেমনি পাশের রাজ্যের প্রজারাও তার বদান্যতা পরশ পেতে ছুটে আসতেন দূর দুরান্ত থেকে। এই রাজার একটি পোষা বানর ছিল। বানরটি তার সিংহাসনের পাশেই বাধা থাকতো। রাজা যখন সভায় আসতেন এসেই হাতের ছড়ি দিয়ে ঐ বানরকে একটা পিটুনি দিতেন। আবার যখন সভা ছেড়ে যেতেন তখনও একটা পিটুনি দিতেন। একবার এক বিদেশী অতিথী এলেন রাজার দরবারে। আসার পথে তিনি জনগণের কাছ থেকে রাজার বেশ প্রশংসাই শুনে এলেন। কিন্তু দরবারে এসে দেখলেন একি! বাইরে যার প্রশংসা শুনে এলেন সেই ন্যায়পরায়ন রাজাই কিনা ভেতরে ভেতরে এত নির্দয়!! একপর্যায়ে মেহমান রাজাকে বিনয়ের সুরে বললেন , মহামান্য রাজা বেআদবি মাফ করিবেন, আপনি এত মহান, দয়ালু, প্রজাবতৎসল তার পরেও কেন একটি নিরীহ প্রভূভক্ত বাদরকে কেন সকাল বিকাল প্রহার করেন? রাজা মুচকি হেসে তাকে বললেন এর উত্তর পেতে আপনাকে আমার দরবারে টানা এক সপ্তাহ আসতে হবে। মেহমান রাজি হলেন। রাজা তথাস্ত বলে রাজসভা শেষ করলেন। পরদিন রাজা রাজসভায় এসে আগের মতো বানরকে কোন পিটুনি দিলেন না। বানরও স্বাভাবিক। এ দেখে মেহমান বেশ উচ্ছসিত। দ্বিতীয় দিন রাজা এলেন। আলাপ আলোচনার মধ্যে সবাই খেয়াল করলেন যে, বানরটি রাজার সিংহাসনের কিছুটা কাছাকাছি এসে বসলো। তৃতীয় দিন বানরটি আরও কাছে এলো। পরের দিন বানরটি সিংহাসনের হাতলের ওপরই উঠে বসলো। পঞ্চম দিন বানরটি রাজার কাঁধে উঠে বসলো। পরের দিন বানরটি রাহজার কাধে উঠে বসলো। পরের দিন বানরটি রীতিমত সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজার মাথার মুকুটের ওপরে উঠে বসলো। আর সপ্তমদিন বানরটি রাজার কাধে উঠে তার দুই কান আচ্ছামতো মুচড়ে দিতে লাগলো। এ দৃশ্য দেখে সভাসদরা হই চই করে উঠলো। তারা এগিয়ে এল, কিন্তু রাজা তাদের নিবৃত করলেন। মেহমানও কিছুটা লজ্জিত হলো। এবার রাজা মেহমানকে বললেন - “আপনি কি আপনার জিজ্ঞাসার জবাব পেয়েছেন?” মেহমান বিনয়ের সাথে বললেন- “আলবৎ পেয়েছি”...রাজা বললেন কি শিক্ষা পেলেন, মেহমান বলনেন বাঁদরকে লাই দিলে মাথায় চড়ে বসে !! তাই বাদরকে কখনো লাই দিতে নেই। এতো গেল বাঁদরের বাদরামীর কথা। এবার জানুন তার র্মূর্খতার কথা।
ছোটবেলায় পড়া এক রাজা ও তার মুর্খ বাঁদরের গল্প।
একসময় রপকথার রাজ্যে এমন একজন রাজা ছিলেন যিনি বানরক পোষা প্রাণী হিসাবে সর্বদা তার পাশে পাশে রাখতেন। কানরটিকে রাজা নিজ হাতে খাওয়াতেন। বাদরটিও রাজার আদর যত্ন পেয়ে তার সাধ্য মতো রাজার সেবা করতো। বাগান থেকে প্রতিদিন ফুল ফল এনে রাজাকে উপহার দিতো। রাজা খুব খুশি হতেন। রাজ পরিবারে সবার কাছে সে আদর যত্ন পেতে কারণ সে রাজার পোষা প্রাণী। এক উত্তপ্ত দিনে রাজা দুপুরের আহারের পরে দিবা নিদ্রা দিচ্ছিলেন। বানরটি ঘুমন্ত রাজাকে তাল পাতার পাখায় হাওয়া দিচ্ছিলো। এমন সময় এক দুষ্ট মাছি বারে বারে রাজার মুখে/বুকে বসে তার নিদ্রাের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিেলো। বানরটি গভীর মনোযোগে মাছিটির অপকর্ম লক্ষ্য করছিলো এবং এটি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। মাছি মুহুর্তের জন্য চলে যেত এবং আবার ফিরে আসত রাজার বুকে বসে রাজার ঘুমে ব্যঘাত সৃষ্টি করেই যাচ্ছিলো। বানরের সহ্য হলোনা মাছির বেয়াদবী! উপায় খুঁজতে লাগলো বেয়াদব মাছিকে সায়েস্তা করবার। রাজা ঘুমালেও তার পাশে থাকতো নাঙ্গা তলোয়ার। বিশ্বস্ত বাঁদর হাতে তুলে নিলো তলোয়ার। কিছুতেই আর সে রাজার গায়ে মাছ বসতে দেবে না। কিন্তু মাছি থোড়াই কেয়ার করে বানরকে!! তার কাছে রাজা প্রজা, হাতি ঘোড়া ময় বাঘ সিংহ এক কাতারে। তািিই সমান তালে চলছিলো মাছিঁর ওড়া উড়ি!! মূর্খ বা্নর স্থির করতে পারছিলোনা কোথায় হানবে তার বজ্র নিনাদ! একসময় মাছি রাজার মুখে বসলো তবে ঘুমের ঘোরে রাজার তাড়া খেয়ে রাজার বুকে বসলো। আর যায় কোথায় !! বা্নর তলোয়ার তুলে কোপ বসায় রাজার বুকে। সব শেষ, সুনসান নীরবতা। প্রভুভক্ত মুর্খ বানরের হাতে প্রাণ গেল রাজার। মুর্খ বন্ধুর নির্বুদ্ধিতায় পিপন্ন হতে পারে জীবন। শিক্ষা কি পেলাম। মুর্খের সাথে বন্ধুত্ব সব সময় পরিত্যজ্য।কারন মূর্খ বন্ধুর চেয়ে জ্ঞানী শত্রু শ্রেয়।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:১৮