somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধার্মিক মাছঃ শিক্ষামূলক গল্প সিরিজের ৪র্থ গল্প

১০ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্প পড়ে আমরা অনেক আনন্দ ও অনেক কিছু শিখতে পারি। তবে গল্পের মধ্যে যে গল্প গুলো থেকে আমরা নৈতিকতার বিষয়ে শিখে থাকি তাই শিক্ষনীয় গল্প। এ গল্প গুলির মাধ্যমে আমরা আমাদের নৈতিক চরিত্রকে সুন্দর করতে পারি। এসব গল্পের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - প্রতিটা গল্পেই শিক্ষনীয় কিছু মেসেজ থাকে। আর গল্পের আকারও বেশ ছোট, যাতে অল্প সময়েই বলে ফেলা যায়। সেই রকম কিছু শিক্ষণীয় গল্প নিয়ে সাজানো আমার শিক্ষামূলক গল্প সিরিজ। শিক্ষামূলক গল্পের আগের পর্বঃ
১। মা-বাবাকে ভালো বাসুনঃ শিক্ষনীয় গল্প-১
২। মিথ্যার কাছে পরাভূত সত্য (শিক্ষণীয় গল্প-২)
৩। পর্দার উপকারিতাঃ শিক্ষামূলক গল্প-৩
আজ এই সিরিজের ৪র্থ গল্পঃ ধার্মিক মাছ।


একটি ছোট জলাশয়ে দুটি মাগুর মাছ বাস করতো । এদের একটি মাছ ধার্মিক এবং আরেকটি অধার্মিক । ধার্মিক মাছটি সবসময় আল্লাহর নাম জপ করতো , আর অধার্মিক মাছটি কে বলতো -- ওরে আল্লাহকে স্মরণ কর , তা হলে পরম পুণ্য্যের অধিকারী হবি । অধার্মিক মাছটি বলত -- তুই ওসব কর গিয়ে , আমার ভালো লাগে না , আমার এই জীবন টা কে আমি উপভোগ করতে চাই। ধার্মিক মাছটি তবুও সবসময় অধার্মিক মাছটি কে বোঝাতো ।

একদিন কিছুটা অনিচ্ছা স্বত্বেও অধার্মিক মাছটি বললো -- ঠিক আছে তুই যখন এত করে বলছিস কাল থেকে আমিও তোর সাথে আল্লাহর নাম জপ করবো । বেশ কিছুদিন পর গ্রামের জেলেরা ওই জলাশয়ে মাছ ধরতে আসলো । ওই দুটো মাগুরমাছও ধরা পড়লো জালে । অধার্মিক মাগুরমাছটি কাঁদতে কাঁদতে ধার্মিক মাগুর মাছটিকে বললো -- এর আগেও কতবার জেলেরা মাছ ধরতে এসেছে কিন্তু আমরা কোনদিন ধরা পড়িনি । আর , আজ আমরা দুজনেই একসাথে ধরা পড়লাম । কি হলো তোর আল্লাহর নাম-জপ করে ! বরং মৃত্যু মুখে পতিত হলাম। ধর্ম করে লাভ নেই , ওতে কিচ্ছু হয় না।

ধার্মিক মাছটি কিন্তু অবিচল , সে শান্তভাবে অত্যন্ত জোরের সাথে অধার্মিক মাছটি কে বললো -- ওরে , আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন , ভরসা রাখ আর তাঁর নাম কর , তিনি দয়াময় , অদ্ভুত তাঁর লীলা , অনন্ত তাঁর দয়া । আমরা ক্ষুদ্র হতে পারি কিন্তু তুচ্ছ নই তাঁর কাছে । ধার্মিক মাছটির কথা শুনে অধার্মিক মাছটি কিছুটা আশ্বস্ত হলো ।

এদিকে জেলেরা মাছ নিয়ে যে যার ঘরে ফিরে গেল । এক জেলে তার বউকে ডেকে বললো -- এই দেখ বউ , আজ দুটো মাগুরমাছ ধরেছি , এ দুটোকে ভালো করে রান্না কর , আমি বাজার থেকে ঘুরে আসি । এই কথা শুনে অধার্মিক মাছটি তো উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলো। ধার্মিক মাছটি কে তিরস্কার করতে লাগলো , তোর কথা শুনে আজ আমার এই দুর্গতি । কেন যে আল্লাহর নাম করতে গেলাম ! দিব্যি হেসে খেলে জীবন কাটছিলো , আর ওই আল্লাহর নাম করে আজ প্রাণ সংশয় । কিচ্ছু নেই ওই নামে ৷

এদিকে জেলে বউ বঁটি নিয়ে বসে সবার প্রথম ওই অধার্মিক মাছটিকেই খপ করে ধরে ভালো করে ছাই মাখাতে লাগলো। আর অধার্মিক মাছটি কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল - তুই আমার এত সর্বনাশ করলি ! ধার্মিক মাছটি বললো -- ওরে মরতে তো হবেই , একদিন আগে আর পরে । তুই কান্না কাটি বন্ধ করে আল্লাহকে ডাক , তাঁর নাম কর । তাঁর দয়ার অন্ত নেই । মৃত্যতো দোর গোড়ায় , না হয় নাম করতে করতেই মর ।

তখন অধার্মিক মাছটি উচ্চস্বরে আকুল হয়ে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো । জেলে বউ মাছটি কাটতে যাবে এমন সময় জেলে হন্তদন্ত হয়ে এসে বউকে বললো -- ও বউ মাছ দুটো কি কেটে ফেলেছিস ? জেলে বউ বললো - এখনো কাটিনি , এই ছাই মাখাচ্ছিলাম কাটবো বলে। তুমি এমন হাঁপাতে হাঁপাতে এলে কেন, কি হয়েছে ?

তখন জেলে বললো -- আরে , হাটে গিয়ে শুনলাম এই রাজ্যের রাজা পুকুর কেটেছেন , কাল তার উদ্বোধন হবে । একজোড়া মাগুরমাছ চাই , রাজা পুকুরে ছাড়বেন । আর যে দুটো মাগুরমাছ নিয়ে দিতে পারবে রাজা তাকে অনেক পুরস্কার দেবেন । তুই তাড়াতাড়ি মাছ দুটো কে পরিষ্কার করে দে , আমি রাজার কাছে দিয়ে আসি ।

এতক্ষনে অধার্মিক মাছটির প্রাণে শান্তি এলো । ধার্মিক মাছটি বললো -- দেখেছিস আমার আল্লাহর কত দয়া । অধার্মিক মাছটি কথা বলতে পারলো না , কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ন হয়ে গেল তার অন্তঃকরণ । মনে মনে ভাবলো -- ওগো দয়াময় মহান আল্লাহ , আমার মতো তুচ্ছাতি তুচ্ছ জীবের প্রতিও তোমার এত্ত দয়া !

পরেরদিন প্রতিষ্ঠিত হল পুকুর । দুধে মাখিয়ে স্বর্ণ অলংকার পরিয়ে মাছ দুটি কে ছাড়া হলো পুকুরে । রাজা হুকুম দিলেন - এই মাছ দুটির যেন ঠিক মতো পরিচর্যা হয় , আর এদের যেন কখনও ধরা না হয় । মাছ দুটি পরম সুখে সেই পুকুরে জীবন অতিবাহিত করতে লাগলো । আর দ্বন্দ্ব রইলো না অধার্মিক মাছটির মনেও । আল্লাহর দয়ার কথা আর অস্বীকার করতে পারলো না সে! আল্লাহর দয়া ও ভালোবাসার প্রতি পূর্ণ ঈমান থাকলে আল্লাহ তাকে বিপদে রক্ষা করেন। আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান কোথা সে মুসলমান !!

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৯
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×