somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নারী!!

২৩ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নারী মানে সহজ-সরল এমনটায় ধারণা সবার। একটু কোমল, শান্ত হবে নারীদের ব্যবহার এমনটাই ভাবে প্রায় সবাই। নারীদের বলা হয়ে থাকে কোমলতা, ভালবাস ও শান্তির প্রতীক। প্রকৃতিই তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়েছে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও কম নেই। নারী যদি হয়ে উঠে হিংস্র বা কুখ্যাত কোন খুনি, তাহলে স্বভাবতই আমাদের মনে সেগুলো ভয়াবহ চিত্র হিসেবেই দাগ কাটবে। এই পৃথিবীতে এমন নারী রয়েছেন যাদের নৃশংসতা ও হিংস্রতা হার মানিয়েছে সবকিছুকে। তাদের গল্প কেড়ে নেয় রাতের ঘুম। যারা কুখ্যাত নারী হিসেবেই বিশ্বে পরিচিত। এমন পনের জন নারীর কথা তুলে ধরা হলো ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নারীরা শিরোনামে।


১। ক্যাথরিন নাইটঃ
বিশ্বের ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম একজন নারী হিসেবেই গণ্য করা হয় অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণকারী নারী ক্যাথরিন নাইটকে, যাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় মৃত্যুর বিধান না থাকায়। তার বাবাও ছিলেন একজন মদ্যপ। প্রকাশ্য তিনি তার স্ত্রীকে দিনে ১০ বার পর্যন্ত ধর্ষণ করেছিলেন। বাবার মতো অন্যায়ের পথে মেয়েও নেমেছিলেন। ক্যাথরিন তার প্রথম স্বামীর দাঁত উপড়ে ফেলার পর তার হিংস্রতার প্রমাণ আসতে শুরু করে। যখন দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় তখন তিনি তার স্বামীর আট সপ্তাহ বয়সী একটি কুকুরের জিহ্বা কেটে নেন এবং পরে কুকুরের চোখ তুলে ফেলেন। কয়েক মাস পরে জন চার্লস প্রাইস নামে একজনের সঙ্গে তার গোপন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রাইস অনেক ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন। ক্যাথরিনের হিংস্রতা সম্বন্ধে আগে থেকেই প্রাইস অবহিত ছিলেন। প্রাইসের সঙ্গে সম্পর্কের কিছু দিনের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এই ক্যাথরিন। একপর্যায়ে ক্যাথরিন ৩৭ বার ছুরিকাঘাতে প্রাইসকে হত্যা করে। এরপর প্রাইসের মৃতদেহের চামড়া ছাড়িয়ে বেডরুমের দরজার পেছনের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, প্রাইসের মৃতদেহ থেকে মাথা কেটে নিয়ে সেটা দিয়ে স্যুপ রান্না করে বাচ্চাদের জন্য রেখে বাইরে চলে যান ক্যাথরিন। কিন্তু বাচ্চারা বাড়ি ফেরার আগেই পুলিশ এসে হতভাগ্য প্রাইসের মরদেহ উদ্ধার করে। তখন মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় তাকে প্যারল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

২। ওয়ানেতা হোইয়াটঃ
নিউইয়র্কের এই মা বেঁচেছিলেন ১৯৪৬-১৯৯৮ পর্যন্ত। ১৯৬৫-১৯৭১ সালের মধ্যে তিনি নিজের ৫ সন্তানকে হত্যা করেন। প্রথমদিকে এই শিশুদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘সাডেন ডেথ সিনড্রোম’ মনে করা হয়। কিন্তু ১৯৯২ সালে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এই নারীর অশুভ মনের খবর পান। পরে ১৯৯৪ সালে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি অপরাধ স্বীকার করেন।

৩। বেল গানেসঃ
টাকা আর সম্পত্তির লোভে খুন করতেন বেল গানেস। নরওয়ের বেল গানেসের জন্ম ১৮৫৯ সালে, মৃত্যু ১৯০৮ সালে৷ ইতিহাসে ইনি ‘ব্ল্যাক উইডো’ নামে পরিচিত৷ নরওয়ের এই নারী জীবনে ৪০ জনের মতো মানুষকে হত্যা করেছেন৷ নিহতদের মধ্যে তাঁর স্বামী, পানিপ্রার্থী, বোন, এমনকি সন্তানও ছিল বলে ধারণা করা হয়৷ মূলত জীবন বিমার টাকা এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার জন্যই খুন করতেন তিনি৷ খুনের সাক্ষী না রাখতে গিয়ে অনেক জনকে হত্যা করতে হয়েছে তাঁকে৷


৪। মারিয়া সোয়ানেনবার্গঃ
এই ডাচ সিরিয়াল কিলারের জীবনকাল ছিল ১৮৩৯-১৯১৫ পর্যন্ত। নিজের পরিবারের সদস্যসহ কয়েক ডজন খুন করে গেছেন তিনি। ধারণা করা হয়, তার হাতে খুন হয় ৬০ জনের বেশি মানুষ। ১৮৮০ এর দশকে বিষাক্ত আর্সেনিকের প্রয়োগে একের পর এক মানুষ মারতে থাকেন তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়েন ১০২ জন। মারা যান ২৭ জন। নিজের মাকেও মেরে ফেলেছিলেন আর্সেনিকের প্রয়োগে।


৫। ইলসে কোচঃ
পরিচিত বুচেনউডের ডাইনি হিসেবে। আসল নাম ইলসে কোচ। ১৯০৬ সালে জার্মানিতে এক কারখানা শ্রমিকের ঘরে জন্ম নেয়া ইলসে কোচের মৃত্যু হয় ১৯৬৭ সালে। ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম নারী হিসেবে কোচের অবস্থানও শীর্ষে। বুচেনউডের কনসানট্রেশন ক্যাম্পের কমানড্যান্ট কার্ল কোচের স্ত্রী ছিলেন এই ইলসে কোচ। স্বামীর ক্ষমতা ছাড়াও কোচ নিজে ক্যাম্পের সুপারভাইজরের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর এই সুবিধা নিয়েই নিজের ভয়ঙ্কর ও বিকৃত ইচ্ছা চরিতার্থ করা শুরু করেন কোচ। প্রথমে বন্দিদের মধ্য থেকে বাছাই করে বিভিন্নজনের গায়ে ট্যাটু আঁকা হতো। আর যাদের শরীরে ট্যাটু আঁকা থাকত তাদের হত্যা করে ট্যাটুটি চামড়াসহ কেটে সংরক্ষণ করতেন কোচ। সেই সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গও সংগ্রহ করতেন। তবে কোচের সবচেয়ে প্রিয় ও বিকৃত শখ ছিল সুন্দর চামড়াওয়ালা বন্দিদের হত্যা করে তাদের শরীরের চামড়া দিয়ে কুশন কভার, সাইড ল্যাম্প, বালিশের কভারসহ বিভিন্ন জিনিস বানানো। ভয়ঙ্কর এই নারীকে ১৯৪৩ সালে গ্রেপ্তার করা হলেও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে জায়গা পরিবর্তন করলেও দুই বছর পর আবারও আমেরিকান সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার কুকীর্তি এক এক করে প্রমাণ হয়। ১৯৪৭ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এর ২০ বছর পর জেলে থাকা অবস্থাতেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বুচেনউডের ডাইনি ইলসে কোচ।


৬। জেন টপানঃ
১৯০১ সালে জেন টপান স্বীকার করেন যে তিনি ৩১টি খুনের জন্য দায়ী। তিনি ছিলেন প্রশিক্ষিত একজন নার্স যিনি রোগীদের অজান্তে তাদের ওপর বিভিন্ন বিপদজনক পরীক্ষানিরীক্ষা করতেন। তিনি অবৈধভাবে রোগীদের মরফিন এবং অ্যাট্রোপিন দিয়ে তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে এভাবে রোগীদের মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যেতে দেখে তিনি এক ধরণের উত্তেজনা অনুভব করতেন। হাসপাতাল থেকে ছাঁটাই হয়ে যাবার পরে আসলে তিনি খুন করা শুরু করেন। বিষ প্রয়োগে প্রথমে নিজের বাড়িওয়ালাকে খুন করেন, এরপর নিজের পালক বোনকে। বোনের স্বামীকে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে তাকেও বিষ প্রয়োগ করেন এবং তারপর তাকে সারিয়ে তোলার চেস্তা করেন। একজন বৃদ্ধ রোগীকে বিষ দেবার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি সব স্বীকার করেন। তাকে অপ্রকৃতিস্থ রায় দেওয়া হয় এবং মানসিক রোগের এক প্রতিষ্ঠানে তিনি বাকি জীবন কাটিয়ে দেন।


৭। লিওনার্দা চিয়ানচিউলিঃ
ইটালির এই নারী মাত্র তিনজনকে হত্যা করেই বিশ্বকুখ্যাত৷সন্তানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেতে হবে শুনে ভাবনায় পড়ে যান লিওনার্দা৷ সন্তানকে যুদ্ধ থেকে দূরে রেখে বাঁচানোর একটা উপায়ই এলো মাথায়৷ লিওনার্দা ভাবলেন, সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে অন্যের প্রাণ উৎসর্গ করলে ছেলেকে বাঁচানো যাবে৷ তারপর একে একে তিনজন মধ্যবয়সি নারীকে হত্যা করলেন লিওনার্দা৷


৮। হুয়ানা বারাথাঃ
মেক্সিকোর হুয়ানা বারাথা৷ জন্ম ১৯৫৭ সালে৷ ছিলেন পেশাদার কুস্তিগির৷ তবে মানুষ হত্যায় নেমে সেই পরিচয় প্রায় ভুলিয়ে দিয়েছেন৷ হুয়ানাকে এখন ঠান্ডা মাথার সিরিয়াল কিলার হিসেবেই চেনে সবাই৷ কমপক্ষে ১১ জনকে খুন করেছেন৷ আরো ৪৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনেও তাঁর হাত আছে বলে সন্দেহ করা হয়৷ ১১ জনকে খুন করার জন্য ৭৫৯ বছরের জেল হয়েছে হুয়ানার৷ এখনো জেলেই আছেন হুয়ানা৷


৯। গেসচে গটফ্রাইডঃ
এই জার্মান সিরিয়াল কিলার নারী বিষ প্রয়োগে তার সন্তানদের, বাবা-মাকে, তার দুই স্বামী এবং এক বন্ধুকে হত্যা করেন। তিনি সেবিকা হিসেবে খুবই ভালো ছিলেন। তার এই হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশের আগে সবাই তাকে ‘ব্রিমেনের দেবদূত’ বলে ডাকতেন। যাদের সেবা করতেন তাদের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মারতেন গেসচে। ১৮৩১ সালে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় গেসচে গটফ্রাইডের।


১০। অ্যামেলিয়া ডাইয়েরঃ
শিশু হত্যার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত ছিলেন অ্যামেলিয়া ডাইয়ের, যাকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম নারী সিরিয়াল কিলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি শিশু হাসপাতালে কাজ করার সুবাদে প্রতিদিন অনেক শিশুদের কাছে পেতেন এই নারী। ১৮৯৬ সালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ শিশুকে হত্যা করে এই নারী। কি্ন্তু ব্রিটেনের এই নারীকে একটি খুনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।১৮৯৬ সালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।


১১। রোজমেরি পাউলিন রোজ ওয়েস্টঃ
১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া একজন বৃটিশ সিরিয়াল কিলার, যিনি রোজ নামে পরিচিত। রোজের বাবা ছিলেন একজন সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত। রোজের বয়স যখন ১৬ তখন থেকে বাবা তার ওপর চরমভাবে এবং প্রতিনিয়তই যৌন নির্যাতন চালাত। অন্যদিকে রোজের হিংস্রতাও ছিল মাত্রাতিরিক্ত। তার নৃশংসতার হাত থেকে নিজের কন্যা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। তার ভয়ঙ্কর কীর্তিকলাপের জন্য ব্রিটেনের ২৫ গ্লুচেস্টার ক্রওয়েলের বাড়িটি হাউস অব হরর নামে পরিচিত। এই সিরিয়াল কিলার মহিলার স্বামীও তাকে কিলিংয়ের কাজে সহযোগিতা করতো। দুজনকেই পরবর্তীতে মানসিকভাবে বিকৃত হিসেবে অভিহিত করা হয়। রাতের অন্ধকারে শিকারের সন্ধানে বের হতেন রোজ। তারপর সুন্দর স্বাস্থ্যবান কোন ছেলেকে ধরে বাসায় নিয়ে আসতেন। প্রথমে ছেলেটি যৌন নিপীড়নের শিকার হতো রোজ এবং তার স্বামীর হাতে। এরপর ছেলেটিকে খুন করত তারা। ধারণা করা হয়, মানসিক বিকারগ্রস্ত রোজের হাতে ১২টিরও বেশি খুন হয়েছে।


১২। আয়েলিন ক্যারল ওয়ারনোসঃ
যুক্তরাষ্ট্রের আয়েলিন ক্যারল ওয়ারনোস ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে সাতজনকে খুন করেছিলেন৷ আয়েলিনের দাবি, ওই সাতজন পতিতা হিসেবে কাজ করার সময় তাঁকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিল, আত্মরক্ষার্থে হত্যা করতে হয় তাদের৷এ দাবির সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ফ্লোরিডার আদালত৷ তাঁর জীবনকাহিনী নিয়ে টিভি সিরিয়াল, পূর্ণ দৈর্ঘ ছবিও হয়েছে৷ ‘মনস্টার’ ছবিতে আয়েলিনের চরিত্র রূপায়ন করে অস্কার জেতেন শার্লিজ থেরন৷


১৩। দারিয়া সাল্টিকোভাঃ
দারিয়া সাল্টিকোভা রাশিয়ার সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক বিকৃত মস্তিষ্কের নারী। এই নারী বেঁচে ছিলেন ১৭৩০-১৮০১ সাল পর্যন্ত। তিনি শতাধিক দাস-দাসীকে হত্যা করেন। তাকে প্রায় সময় হাঙ্গেরির ‘ব্লাড কাউন্টেস’ এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। তার নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাদ যায়নি দুধের শিশুটিও। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হত ছোট্ট সেই শিশুকে। ক্ষমতার অপব্যবহার করেই মজা লুটতেন বর্বরতম এই নারী। রানী হয়েও রাজ্যবাসীর রক্ষক না হয়ে তিনি ছিলেন ভক্ষক। তার ভয়ে কাঁপত গোটা মস্কোবাসী। আজো ইতিহাসে এক সিরিয়াল কিলার হিসেবে তার পরিচিতি। যিনি মানুষকে হত্যা করে বড়ই আনন্দ পেতেন। মৃত্যু যন্ত্রণায় যখন সবাই কাতরাতো এই নারী তখন আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতেন। ক্রীতদাসদের কাউকে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ছেড়ে দিতেন আবার কাউকে গরম পানিতে। রাশিয়ার এক উচ্চ বংশীয় নারী ছিলেন তিনি। নিজের অন্তরের জ্বালা মেটাতে তিনি সুন্দরী নারী কিংবা কিশোরীদেরকে এভাবেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতেন। কারণ তিনি ব্যক্তিজীবনে সুখী ছিলেন না। অতীতে তিনিও একজন প্রেমপিয়াসী রমণী ছিলেন। অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারিণী ছিলেন। সাল্টিকোভার সেই কোমল মনকে কঠিন করে দিয়েছিল তারই প্রেমিক!


১৪। এলিজাবেথ বাথোরিঃ
এই নারী ইতিহাসে ‘ব্লাড কাউন্টেস’ নামে কুখ্যাতি পায়। অভিজাত বংশের এই নারী ১৩৮টিরও বেশি খুনের পেছনে রয়েছেন।এলিজাবেথ বিটোরিকে ধরা হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। যদিও তার খুনের সংখ্যা সঠিক ভাবে জানা যায়নি, তবু ইতিহাসে এলিজাবেথকে রক্তপিপাসু পিশাচিনী বলা হয়। তিনি ব্লাড কাউন্টেস নামেও অধিক পরিচিত। এলিজাবেথ বিটোরি ছিলেন একজন হাঙ্গেরিয়ান নারী। জন্ম ১৫৬০ সালের ৭ আগস্ট হাঙ্গেরির বিটোরি পরিবারে। পিতা জর্জ বিটোরি। তিনি ছিলেন স্টিফেন বিটোরির ভাই। এই স্টিফেন বিটোরি ছিলেন একাধারে একজন নবেল লরিয়েট, কিং অব পোল্যান্ড এবং ডিউক অব ট্রান্সেলভানি। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও কৃতকর্মের কারণে ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত রমণী হিসেবে ঘৃণার চোখে দেখা হয় এলিজাবেথকে। ফ্রান্স নোডিজডের সঙ্গে ১৫৭৫ সালের ৮ই মে এই এলিজাবেথ বিটোরির বিয়ে হয়। এলিজাবেথের স্বামী ১৫৭৮ সালে হাঙ্গেরির সেনাপতি নিযুক্ত হন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ব্যবসা ও শাসন কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন এলিজাবেথ। তখন থেকেই চড়া বেতনে এলিজাবেথের ওখানে কাজ করত কুমারী গৃহকর্মী। ধারণা করা হয়, এলিজাবেথ খুন করেছেন ৬৪০-এরও বেশি কুমারীকে। যেসব কুমারী মেয়ে এলিজাবেথের ওখানে কাজ করতে যেত তারা আর ফিরে আসতে পারতো না বলেই জানা গেছে। এমনটাও শোনা যেত, এলিজাবেথ কুমারী ওইসব নারীকে হত্যা করতো, তাদের রক্তে গোসল করতো। তাদের চিৎকারে এলিজাবেথ উল্লাস করতো। অবশেষে সামাজিক অবস্থানের জন্য তার বিচার না হলেও বাকি জীবন গৃহবন্দি করে রাখা হয় এলিজাবেথকে। ১৬১৪ সালে চার বছরের গৃহবন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।


১৫। ফুলন দেবীঃ
তার পরিচিতি দস্যুরানী হিসেবে। কুখ্যাত খুনির তালিকায় তার নামটা না এলেও পারত। কারণ প্রথম জীবনের বঞ্চনা এবং পরের জীবনের বিদ্রোহ তার প্রতি মানুষের একটা সহমর্মিতা তৈরি করেছে। এরপরও কেবল প্রতিশোধের নেশায় একের পর এক মানুষ হত্যা দস্যুরানী ফুলন দেবীকে ইতিহাসের অন্যতম খুনি হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তার জন্ম ১৯৬৩ সালে ভারতের এক নিচু পরিবারে। দারিদ্র্য এবং সামাজিক কারণে জীবনের শুরু থেকেই সংগ্রামের মুখোমুখি হয় ফুলন। মাত্র এগারো বছর বয়সে বাবার বয়সী এক লোকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ফুলনের গ্রাম এবং আশপাশের একাধিক গ্রামে ঠাকুর বংশের জমিদারী ছিল। আর জমিদারের লোকরা প্রায়ই গ্রামের দরিদ্র গ্রামবাসীর কাছ থেকে ফসল নিয়ে নিত এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালাত। ফুলন এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে দখলকারীদের নেতা মায়াদীনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঠাকুররা তাকে ধরে নিয়ে যায় বেমাই নামে প্রত্যন্ত এক গ্রামে। এরপর তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে ঠাকুর ও তার লোকরা ফুলনকে গণধর্ষণ করে। প্রতি রাতেই ফুলন জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত চলত এ পাশবিকতা। ১৬ দিনের মাথায় এক রাতে নির্যাতন শেষে তারা ফুলনকে মৃত মনে করে ফেলে রাখে। আর প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী ফুলন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তখন ফুলনের বয়স ছিল মাত্র সতেরো। পালিয়েও রক্ষা পেলেন না ফুলন। আরেকবার ধরা পড়লেন এক দস্যুদলের হাতে। দস্যুদের নেতা বাবুর নজর পড়ে ফুলনের ওপর। সে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ফুলনের ওপর। কিন্তু আরেক দস্যু এতে বাধা হয়ে দাঁড়াল। বাবুকে খুন করে ফুলনকে রক্ষা করে সে। এরপর ফুলনের সঙ্গে বিক্রমের বিয়ে হয় এবং শুরু হয় ফুলনের নতুন জীবন। রাইফেল চালানো শিখে পুরোদস্তুর দস্যু হয়ে ওঠে। ফুলন তার আলাদা বাহিনী নিয়ে প্রথম হামলা চালায় তার সাবেক স্বামীর গ্রামে। নিজ হাতে ছুরিকাঘাতে তার স্বামীকে খুন করে রাস্তায় ফেলে রাখে।

পরবর্তী পর্বঃ পৃথিবীর ইতিহাসের পনেরজন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×