সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট এই পৃথিবীটা আসলেই অদ্ভুত এবং রহস্যে ঘেরা। আমাদের রহস্যময় পৃথিবীতে (প্রাকৃতিক বা অ-প্রাকৃতিক) রহস্যের সীমা নেই। আজব সব ঘটনার কারণে যুগ যুগ ধরে মানুষের কাছে হাজারো রহস্যে ঘেরা এ পৃথিবী। এর মধ্যে আবার কিছু স্থান বা বিষয় রয়েছে যা অতি-প্রাকৃতিক। যা আশ্চর্য হওয়ার মতো। আর এ কারনেই এগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের কাছে হাজারো রহস্যে ঘেরা। বিজ্ঞানীরাও এর রহস্যের কূলকিনারা করতে পারেননি। তাই এগুলোকে অতি-প্রাকৃতিক স্থান বলে অভিহিত করেছেন তারা। মানুষ আজকাল চাদে আর মঙ্গল গ্রহে ঘুরাঘুরি করার চেষ্টায় থাকলেও আমাদের এই পৃথিবীর অনেক রহস্যই উদঘাটিত হয়নি। যেমন বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল। আজ পর্যন্ত এই রহস্যের কুল কিনারা হয়নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের মত এমন আর অজস্র রহস্যঘেরা জায়গা আছে পৃথিবীতে যা হয়তো আমরা জানিই না তবে এগুলো বাস্তব। আমাদের পৃথিবীরই একটি অংশ কিন্ত আমরা আজও এসব জায়গার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারি নি। এমন কুড়িটি স্থান নিয়ে আমার আজকের পর্ব পৃথিবীর কয়েকটি রহস্য ঘেরা স্থানঃ
১। এরিয়া ৫১ঃ এটি এমন একটি স্থান যা সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা নেই। যা নিয়ে মানুষের কৌতুহলেরও শেষ নেই। সাধারণ কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত এই স্থানে প্রবেশ করেছে বলে দাবি করেনি। কেউ যদি প্রবেশ করে থাকে তাহলে সে সেখান থেকে আর ফিরে আসার কথা না। এরিয়া ৫১ খুবই রহস্যময় একটি এলাকা এবং এটা নিয়ে গুজবেরও শেষ নেই। যেমন অনেকে এই এলাকার আশেপাশে ভিন গ্রহের প্রাণী বা ভিন গ্রহে যান এবং দেখার দাবী করেছেন। যা হোক, চলুন জেনে নেই, এরিয়া ৫১ নিয়ে কেন এতো রহস্য বা গুজব। এরিয়া ৫১ মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি সামরিক ঘাঁটি। যার আয়তন ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে এবং লাস ভেগাস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম রেকেল গ্রামের কাছে অবস্থিত। খুবই গোপনীয় এই সামরিক বিমান ঘাঁটি গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এরিয়া ৫১ নামের এই সামরিক ঘাঁটি এতটাই গোপনীয় যে, ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর অস্তিত্ব কখনোই স্বীকার করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সবসময়ই প্রভাবশালী দেশ। আর তাদের এই প্রভাব টিকিয়ে রাখতে হলে সামরিক খাতে এগিয়ে থাকতেই হবে। আর যতটা গোপনীয়তা বজায় রাখা যায় ততই ভালো। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটল তখনই যখন রাশিয়া এরিয়া ৫১ নিয়ে প্রশ্ন তুলল। শুরু হল জল্পনা কল্পনা আর রহস্য। ২০১৩ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো আমেরিকার সরকার স্বীকার করে নেয় যে, এরিয়া ৫১ এর অস্তিত্ব আছে। তারা স্বীকার করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেশটির এক গোপন সামরিক পরীক্ষার স্থান হিসেবে ‘এরিয়া ৫১’ নামক জায়গাটি ব্যবহার করে।
২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার এতটাই কঠোর যে, এর সীমানায় প্রবেশকারী বহিরাগত যে কাউকে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ রয়েছে। যদিও এখন তা কিঞ্চিত শিথিল হয়েছে। সুরক্ষিত এই এলাকা দেয়াল ঘেরা না হলেও প্রবেশ পথে সাইনবোর্ডে কঠোরভাবে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি লেখা রয়েছে। এরিয়া ৫১ এ ঢোকার জন্য কোনো পিচের রাস্তা নেই। মূল গেট ঘাঁটি থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত। এখানে কর্মরতদের পরিচয় সম্পর্কে বাইরে কেউ কিছু জানে না। এই এলাকার চতুর্দিকে সিসি ক্যামেরা, মোশন ডিটেক্টর, লেজার ডিটেক্টর, সাউন্ড ডিটেক্টর অত্যাধুনিক নানা প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে এলাকার নিরাপত্তায়। আকাশ পথ দেখার জন্য রয়েছে রাডার। ঘ্রাণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আশেপাশে থাকা যেকোনো মানুষ বা বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কেউ কোনো ভাবে এলাকায় ঢুকে পড়লে তার অস্তিত্ব ধরা পড়বে সেন্সরে। মুহূর্তে চলে আসবে সুরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী।
সুরক্ষায় যারা থাকে তারা শুধুমাত্র এরিয়া ৫১ এর সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত। কেউ যদি সব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলেও রয়েছে বড় সমস্যা। কেননা এই এলাকাটি মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত। প্রকৃতির সঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী লড়াই করে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। তাই প্রাকৃতিকভাবেও এরিয়া ৫১ অনেক সুরক্ষিত। এই এলাকা সম্পর্কে মানুষ তেমন কোনো খবর জানে না। এছাড়াও এরিয়া ৫১ এর ভিতরে যে সব স্থাপনা আছে তারও তেমন ভালো কোনো ছবি পাওয়া যেত না, যে সব ছবি পাওয়া গেছে সেগুলো সব স্যাটেলাইট থেকে তোলা। মার্কিন সরকারের অবাধ তথ্য অধিকারের সুযোগ নিয়ে ১৯৬০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা উপগ্রহ ‘করোনা’র সাহায্যে এরিয়া ৫১ এর ছবি তোলে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার সেই ছবি মুছে ফেলে। পরবর্তীতে নাসার ল্যান্ডস্যাট ৭ উপগ্রহের সাহায্যে ৫১ এর ছবি তোলা হয়, এই ছবিটিই সরকারিভাবে প্রকাশিত এরিয়া ৫১ এর ছবি। গোয়েন্দা উপগ্রহ ইকনস ও রাশিয়ার বেসামরিক উপগ্রহ আমেরিকা রাশিয়ার ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এই এরিয়া ৫১ এর ভেতরের উচ্চ রেজ্যুলেশনের ছবি তোলে। প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় যে, এরিয়া ৫১ এর ভিতরে সাতটি রানওয়ে আছে। ছবিতে আরো দেখা যায় বড় বড় গুদাম ঘর, আবাসিক এলাকা, ফায়ার স্টেশন, বিশাল আকারের পানির ট্যাংকি, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার, খেলাধুলা করার জন্য টেনিস এবং বেসবল কোর্ট। আরো আছে যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট ডিশ। ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রকাশিত নথিতে জানানো হয়, বিমানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১৯৫৫ সালে নেভাদার জনশূন্য মরুভূমিতে ‘এরিয়া ৫১’ -এর বর্তমান জায়গাটি বেছে নেয়া হয়। সুতরাং মানুষজন এলাকাটিতে নানা সময়ে যে ভিন গ্রহের যান দেখার দাবী করে এসেছেন, তা আসলে হয়তো অত্যাধুনিক কোনো যুদ্ধ বিমান।
২। চুম্বক পাহাড়ঃ
নিউ ব্রান্সউইকে অবস্থিত ম্যাগনেট বা চুম্বক পাহাড়। পাহাড়ের মতো উঁচু স্থান থেকে একটি বল বা গাড়ি যা-ই ছেড়ে দেওয়া হোক, তা নিচের দিকে নেমে যাওয়ার কথা। উল্টোটি ঘটলে আশ্চর্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রথমে যে প্রশ্নটি মাথায় জাগে, তা হলোÑপাহাড়ে মনে হয় চুম্বক আছে। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এর আকর্ষণ বেশ জোরালো ছিল, রহস্যময় কারণে তা কমে যায় এরপর। জনশ্রুতি রয়েছে, ঘোড়ার গাড়িও ওপরের দিকে টেনে নিত এ পাহাড়। এ পাহাড়টি এখন একটি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটে পরিণত হয়েছে।
৩। কুসংস্কারের পর্বতমালাঃ
এই পর্বতমালা আমেরিকার ফিনিক্সে-এর পূবর্ দিকে অবস্থিত। আর নামেই বুঝা যাচ্ছে এই পর্বতের বৈশিষ্ট্য। স্থানীয় নাম Superstition Mountain। স্থানীয় ইতিহাসে ১৮০০ শতাব্দীতে জ্যাকব ওয়াল্ট্জ নামের এক লোক একটি অনেক বড় স্বর্নের খনি আবিস্কার করেন এই পর্বতমালায়। সে থেকে এই পর্বতের একটা নামকরন হয় Lost Dutchman’s Goldmine. সে তার মৃত্যশয্যা পর্যন্ত এই সোনাল খনির কথা গোপন রেখেছিল। এরপরে যখন এই ব্যাপারটা জানাজানি হয়েছিল তখন অনেক মানুষ ওখানে সোনার খনির সন্ধানে গিয়ে মারা পড়েছে। সে থেকে শোনা যায় এসব নিহত হওয়া মানুষদের আত্মা নাকি এখনও ঘুরে বেড়ায় এই পর্বত শ্রেনীতে। অনেকেই বলেন, এই সোনার খনিকে পাহাড়া দেয় Tuar-Tums নামের এক ধরনের প্রানী যারা বসবাস করে সেই পর্বতের নীচে থাকা অজস্র টানেলে। এপাচি গোত্রের লোকজনরা বলেন এই পাহাড়শ্রেনী নাকি দোযখের মুল দরজা।
৪। আঞ্জিকুনি লেকঃ
১৯৩০ সালে এই লেকের পাশের একটা গ্রাম থেকে সব মানুষ উধাও হয়ে গিয়েছিল? একেবারে কর্পুরের মত হাওয়া – যেন বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল সবাই। ইতিহাস বলে এই গ্রামে কম করে হলেও ২০০০ লোক বসবাস করত। গ্রামে অনেক দোকান-পাট, রাইফেল বা অস্ত্র-সস্ত্র এবং ঘরবাড়ি ছিল – কিন্তু কোন গ্রামবাসীকে কখনও খুজে পাওয়া যায়নি। লাবাল্লি নামের এক ভদ্রলোক এই ঘটনার তদন্তের জন্য কতৃপক্ষকে অবহিত করার পর একটা তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে ঐ গ্রামের যে কবসস্থান ছিল তার কবরগুলোর মধ্যে অন্ত্ত একটি কবরস্থান খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। এবং এটাও নিশ্চিত করা হয় যে কোন প্রানী এটি খুড়েনি বা প্রাকৃতিক ভাবেও খুলে যায়নি। গ্রামের ৩০০ ফিট দুরত্বে অনেক পোষা কুকুরের মৃতদেহও পাওয়া যায় যারা অদ্ভুত কোন কারনে মরে গিয়েছিল। অন্ত্ত না খেয়ে মরে নি কারন ঐ গ্রামের মুদির দোকানে খাবারের অভাব ছিল না আর দোকানটি খোলা অবস্থায় পরেছিল অনেকদিন। অনেকেই বলছে এলিয়েন, ভুত বা প্রেতাত্মার কারনে হয়েছিল। তদন্ত কর্মকতর্ারা যদিও এসব হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল কিন্তু তারা কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি। কিন্তু স্থানীয়ভাবে আশে পাশের গ্রামের লোকজন মনে প্রানে বিশ্বাস করে যে এই ঘটনা ভ্যাম্পায়ার রা ঘটিয়েছে।
৫। পুতুলের দ্বীপঃ
মেক্সিকো শহরের দক্ষিণে একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে যাকে পুতুলের দ্বীপ বলা হয়। দ্বীপটির পেছনে রয়েছে একটি বেদনাদায়ক কাহিনী যার কারনে এটি কখনো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। দ্বীপটি উৎসর্গ করা হয়েছে একটি অভাগী মেয়েকে যে কিনা খুব অল্প বয়সে অদ্ভুতভাবে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিলো। মেক্সিকো শহরের দক্ষিণে হাজার লোকের বাস থাকলেও অই ছোট্ট দ্বীপটিতে রয়েছে শত শত ভয়ঙ্কর পুতুলের বাস। পুতুলগুলোর কোনটির মাথা নেই, হাত-পা নেই, দেহ নেই, শুধু চোখ রয়েছে এমন সব অদ্ভুত পুতুল দ্বীপ জুড়ে গাছে ঝোলানো দেখতে পাওয়া যায়। পুতুলগুলো দিনের আলোতে দেখতেই ভয়ঙ্কর, আর রাতের আঁধারে তো কথাই নেই।
কথিত আছে যে অনেক বছর আগে ভাগ্যাহত মেয়েটিকে রহস্যময় ভাবে পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং পুতুলগুলো তার আত্মা হতে তৈরি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, পুতুলগুলো হাত-পা নাড়ে এমনকি চোখ খোলে ও বন্ধ করে। অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, পুতুলগুলো নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলে। অনেকে নাকি দ্বীপের পাশ দিয়ে নৌকা নিয়ে যাবার সময় দেখেছে পুতুলগুলো তাদের দ্বীপে যাবার জন্য ডাকছে। সত্যি হল দ্বীপটি আসলেই রহস্যময় ও ভূতুড়ে যে কারনে সাধারন দর্শনার্থী এখানে যায়না।
৬। শয়তানের সমুদ্রঃ
Devil’S Sea বা শয়তানের সমুদ্র। এর কাজ-কারবার অনেকটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের মত। জাপানের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত এই আজীব জায়গায় হাজার হাজার ঘটনা রেকডর্ করা হয় যার কোন ব্যাখ্যা নাই। এই জায়গায় জাহাজ, প্লেন এমনকি মানুষও নাকি হাওয়ায় গায়েব হয়ে গিয়েছে অনেকবার। জাপানিজ ফিশিং অথরিটি এই জায়গাকে বিপজ্জনক ঘোষনা করেছিল অনেক আগেই। ১৯৫২ সালে জাপানি সরকার ৩১ জন গবেষক সহ একটি জাহাজ পাঠিয়েছিল এই জায়গায় – আর বলাবাহুল্য সেই জাহাজ আর মানুষগুলোকে আর কখনো খুজে পাওয়া যায়নি। এই জায়গাকে সবাই ভিনগ্রহবাসীর আস্তানা” বলে। আবার অনেকেই বলে আটলান্টিসের হারানো সভ্যতা।
৭। রক্তের জলপ্রপাতঃ
একদল গবেষক অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গিয়ে রক্তের জলপ্রপাত দেখতে পান। তারা ধারণা করেন, কোনো অণুজীবের ফলে এমনটা ঘটছে। যদিও শূন্যের অনেক নিচে হিম-শীতল আবহাওয়ায় টিকে থাকা অসম্ভব। তবে অনেকে মনে করেন, এখানকার মাটিতে থাকা আয়রন ও সালফারের কারণে পানির রঙ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তবে এ পানি কেন জমে লাল রঙের আইসক্রিমের মতো হলো না, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তারা। আজও গবেষকরা এর কোনো উত্তর খুঁজে পাননি।
৮। পয়েন্ট প্লেজেন্টঃ
১৯৬৬ – ১৯৬৭ পর্যন্ত এই জায়গাটি অদ্ভুদ একটা প্রানী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল – এটাই মুলত এই জায়গার মিথ। পয়েন্ট প্লেজেন্ট জায়গাটি আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অবস্থিত। আর এখানে যে প্রানীর গুজবের কথা বলা হচ্ছে তার নাম মথ্ম্যান (Mothman). প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে এই প্রানীটি ৭ ফিট লম্বা, অনেক বড় পাজরের জল্জলে চোখের একটা মানুষের মত দেখতে প্রানী যার ১০ ফিট লম্বা ডানা আছে। এটাকে আসলে গুজবই বলা চলে। কিন্তু… এখানে একটা ছোট্ট কিন্তু আছে। যাহা রটে তার কিছুটা হলেও ঘটে। ঐ এলাকায় মথম্যান নিয়ে অনেক ধরনের গল্প-কাহিনী এবং লিজেন্ড প্রচলিত আছে। এই মথম্যান নিয়ে হলিউডে বানানো হয়ে ফিল্ম। ১৫ ডিসেম্বব ১৯৬৭ সালে এই এলাকার সিলভার ব্রীজ নামের একটা ব্রীজ পুরোপুরি ধ্বসে পড়ে আর সেই সাথে ৪৫ জন মানুষের প্রানহানি ঘটে। আর এই কাজ নাকি মথ্ম্যানের কাজ। কারন তদন্তে সেই ব্রীজের ভেঙ্গে যাওয়ার কোন কারন বের হয়ে আসেনি। আর কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য মতে তারা নাকি দেখেছিল এক বিশাল পাখাওয়ালা এক মানুষ এসে ব্রিজটা ফেলে দিল।
৯। বারমুড়া ট্রায়াঙ্গালঃ
এটি আমেরিকার ম্যাসাচুসটেস রাজ্য থেকে ২০০ কিমি দক্ষিন-পশ্চিমে, বোস্টনের দক্ষিনে অবস্থিত। আর এই জায়গাঅটা হলো সুপার ন্যাচারাল কাজ কারবারের ভান্ডার! বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল শয়তানের ত্রিভুজ নামেও পরিচিত। আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল এটি। ১৭৬০ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত এই জায়গায় ঘটেনি এমন অদ্ভুত ঘট্না খুব কমই আছে।এখানে সমুদ্রগামী বেশ কয়েকটি জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার কথা শোনা যায়। অনেকে মনে করেন, ওইসব অন্তর্ধানের কারণ নিছক দুর্ঘটনা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতায় নিখোঁজ হতে পারে। অনেকে মনে করেন, এসবের পেছনে অতিপ্রাকৃতিক কোনো শক্তি দায়ী। ১৯৭০ সাল থেকে এই জায়গা দেখা যায়নি এমন আজব জিনিষের সংখ্যা মনে হয় খুব কমই আছে। যেমন বড় লোম আর লম্বা পা-ওয়ালা মানুষ-আর বানরের মত দেখতে কিছু প্রানী, থান্ডারবাডর্ নামের বিশাল আকারের কিছু পাখি, আর নানা রকম হিংস্র জন্ত জানোয়ার। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই জায়গাটি হলো UFO দেখা যাবার গুজবের কারখানা। মানে, এই জায়গায় UFO দেখা যাওয়ার গুজব সবচেয়ে বেশী শোনা যায়।
১০। অরচার্ড পার্কঃ
আগুন নেভানোর সবচেয়ে সহজ উপকরণ পানি হলেও পানির পাশে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির অরচার্ড পার্কে রয়েছে সুন্দর একটি জলপ্রপাত। এ জলপ্রপাতের নিচেই দেখা মিলবে অসীম আগুনের খেলা। এখানে সব সময় আগুন জ্বলে। কোনো একসময় হঠাৎ নিভে গেলেও আবার নিজে থেকেই জ্বলে ওঠে।
১১।শয়তানের ক্যাটেলঃ
যুক্তরাষ্ট্রের Judge C. R. Magney State Park এর অন্যতম একটি আকর্ষণ হল এই পার্কটির ভেতর অবস্থিত একটি রহস্যময় জলপ্রপাত; যাকে সবাই বলে ‘The Devil’s Kettle’ (শয়তানের ক্যাটেল)। তবে আসল ব্যাপারটি হল এই জলপ্রপাত টির দুইটি ধারা রয়েছে, ডান দিকে একটি এবং অন্যটি বাম দিকে। এর বাম দিকের ধারাটি সরাসরি পার্ক এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত একটি নদীতে গিয়ে মিশেছে; তবে এর ডান দিকের ধারাটি পরেছে পাহারের পাথর ঘেরা এক রহস্যময় গর্তের ভেতর। আর এই বিশাল জলের উৎস এই পাথরের ভেতর অজানা গর্তে প্রবেশ করে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে তা আজ পর্যন্ত কেউ আবিস্কার করতে পারেনি, কেউ আজ পর্যন্ত গবেষণা করেও জানতে পারেনি এই The Devil’s Kettle এর পানি আদৌ কোথায় গড়িয়ে যাচ্ছে এবং কোন উৎসে গিয়ে পরছে। গবেষকরা এই গর্তের ভেতর নানাভাবে এর গভীরতা এর শেষ কোথায় ইত্যাদি জানার জন্য পরীক্ষা চালিয়েছেন; তবে কোন প্রকৃত ফলাফল পাননি। আর এই কারনে এটি বিজ্ঞানের অন্যতম একটি অমিমাংসিত রহস্য।
১২। ম্যাকমার্ডো ড্রাই ভ্যালিঃ
অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত এ ম্যাকমার্ডো ড্রাই ভ্যালি। জনমানবহীন উপত্যকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমির একটি। অ্যান্টার্কটিকার বরফ ও তুষারের মধ্যে এর অবস্থান হলেও প্রতিবছর এখানে মাত্র চার ইঞ্চি বৃষ্টি হয়। স্থানটি মেরু অঞ্চলের বরফে ঢাকা থাকার কথা থাকলেও এটি সম্পূর্ণ বরফশূন্য ও খালি। এখানে কিছু শৈবাল দেখা গেলেও কোনো গাছপালা নেই। গবেষকদের মতে, এ স্থানটির সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশের মিল রয়েছে।
১৩। বিগোলো রেঞ্চঃ
এটি ৪৮০ একরের একটি প্রাইভেট প্রপার্টি। আমেরিকার ইউটাহ রাজ্যের উত্তরে। এই জায়গার নামে অসংখ্য রিপোটর্ আছে যে এখানে অনেক UFO ভা ভিনগ্রহের যান, অদ্ভুত সম প্রানী আর সুপারন্যাচারাল সব ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। যদিও ১৯৫০ সাল থেকেই এই জায়গাতে সব আজীব ঘটনা ঘটতে শুরু করে, কিন্তু সব্চেয়ে রহস্যময়ী ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৪ সালে। প্রথমদিন, যেদিন টেরি এবং গেইন এই জায়গায় মুভ করে কেনার পরে। ঐ দিন তারা এক বিশাল ভাল্লুক দেখতে পায়। প্রথমে তারা সেই ভাল্লুককে পোষ মানাতে চেয়েছিল দেখার পরে। কিন্তু ভাল্লুক মামা অবেক বেশী রাগী আর আক্রমনাত্মক ছিল। যখন টেরি তার বন্দুক দিয়ে ভাল্লুকটিকে গুলি করেছিল, ভাল্লুকের কোন খবরই হয়নি। অনেকটা সেই বন্দুকের গুলি ভাল্লুকের গায়ে কোন ক্ষতিই করতে পারেনি! কিন্তু পরে ভাল্লুকটি সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যায়। পয়েন্ট ব্ল্যাং রেঞ্জ থেকে শটগান ত্দিয়ে গুলি করে একটা ভাল্লুকের শরীরে কোন ধরনের দাগ পর্যন্ত ফেলতে পারেনি টেরি। এটি কেমন প্রজাতির ভাল্লুক ছিল?
১৪। মগুইচেংঃ
চীনের ঝিনজিয়াং অঞ্চলের একটি মরুভূমি মগুইচেং। এর আক্ষরিক অর্থ ‘শয়তানের নগরী’। স্থানটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত ও জনশূন্য। অনেক অদ্ভুত ঘটনা এখানে ঘটে বলে আশেপাশের লোকজন বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। দর্শনার্থীরা এ স্থানে রহস্যময় আওয়াজ, বিষন্ন সুর, গিটারের মৃদু ধ্বনি, শিশুদের কান্না ও বাঘের গর্জন শুনতে পান। এসব শব্দের কোনো উৎসের সন্ধান গবেষকরা আজও খুঁজে পাননি।
১৫। অউকিগাহারা-জাপানঃ
অউকিগাহারা জাপানের ফুজি পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত প্রায় ৩৫ কিঃমিঃ দীর্ঘ একটি সুনসান নীরব বন যা কিনা গাছের সমুদ্র নামেও পরিচিত। জাপানি পুরান মতে, এটি আত্মহত্যা করার জায়গা এবং এখানে মৃতদের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। এই জঙ্গলটি জাপানীদের কাছে আত্মহত্যা করার জায়গা হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় শখানেক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জাপানি নথিপত্রের হিসাব অনুযায়ী ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এখানে গড়ে প্রতি বছর একশত লাশ পাওয়া গিয়েছে। ১৯৯৮ সালে ৭৪ টি, ২০০২ সালে ৭৮ টি লাশ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে এই সংখ্যা ১০০ তে গিয়ে পৌছায়। পরবর্তীতে ২০০৪সালে ১০৮ জন ব্যক্তি নিজেদেরকে এখানে হত্যা করে। ২০১০ সালে প্রায় ২৪৭ জন ব্যক্তি আত্মহত্যার উদ্যগ নিলেও মাত্র ৫৪ জন সফল হয়েছিলো। বর্তমানে দেশটির স্থানীয় সরকার এই হিসাব প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
১৬। নাগা ফায়ারবলসঃ
থাইল্যান্ডের খং নদীতে নাগা ফায়ারবলস হয়। প্রতিবছর মে ও অক্টোবর মাসে নদী থেকে বাস্কেটবলের ওজনের সমান আগুনের গােলা বের হয়। যা ১৫০-২০০ মিটার পর আকাশে ফেটে যায়। প্রতি রাতে এর সংখ্যা ৩-১৫০০ পর্যন্ত। ধারণা করা হয় ড্রাগন আগুন ছুঁড়ছে কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন মিথেল গ্যাসের কারণে এটি হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর সুষ্ঠু প্রমাণ দিতে পারেননি।
১৭। স্পটেড লেকঃ
স্পটেড লেক এটি কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অসইউস শহরে অবস্থিত একটি বিশেষ লেক যা দেখতে সারা পৃথিবী হতে পর্যটকরা ভিড় করে থাকে। লেকটি সারা বছর সাধারন লেকের মত থাকলেও শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে এর বিশেষত্ব দেখা যায়। লেকটির পানিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, ক্যালসিয়াম এবং সোডিয়াম সালফেট থাকায় গ্রীষ্মকালে এর পানি বাস্পায়িত হতে থাকার ফলে লেকের পানির উপরিস্তরে খনিজ লবণগুলোর নানান রকম নকশা বা দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এই নকশা দেখতেই পর্যটকরা এখানে এসে থাকে।
১৮। কঙ্কালের হ্রদঃ
কঙ্কালের হ্রদ নামটার ভেতরই লুকিয়ে আছে এর এক রহস্য; কেনই বা একটি লেক বা হ্রদ এর নাম স্কেলেটন লেক তথা কঙ্কালের হ্রদ! এই কঙ্কালের হ্রদ এর আঞ্চলিক নাম হল রূপকুণ্ড ; আর এর অবস্থান ভারতের উত্তরাখন্ডে হিমালয় পর্বতমালার মাঝে। হিমালয় দর্শনার্থীদের কাছে এই স্কেলেটন লেক বা কঙ্কালের হ্রদ একটি অন্যতম আকর্ষণ; কেননা যখন হিমালয়ের স্বচ্ছ বরফগলা পানি এই হ্রদে জমা হয়, ঠিক তখন এই হ্রদের তলায় বহু মানব কঙ্কালের দেখা পাওয়া যায়। প্রথম এটি আবিস্কার হয়েছিল ১৯৪২ সালে; আর এর ভেতর যেসব কঙ্কাল রয়েছে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে সেগুলো আরও শত বছর আগের। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটার উপর উচুতে অবস্থিত এই হ্রদে এতসব মানুষের কঙ্কাল এর বাস্তবিক অর্থে আসল রহস্যটা কি এবং কেন তাদের কঙ্কাল এই হ্রদের ভেতর শত বছর ধরে আছে তা অনেক বড় রহস্য এবং যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান এখনও দিতে পারেনি।
১৯। ডান্সিং ফরেস্টঃ
রাশিয়ায় অবস্থিত রহস্যময় তদুপরি মানুষের নিকট অন্যতম আকর্ষণীয় একটি বন হল ‘ডান্সিং ফরেস্ট’; মূলত এটি হল সাধারন পাইন ফরেস্ট। তবে এর বিশেষ নামটি দেয়ার কারন এই বনের একেকটি গাছগুলোর অদ্ভুৎ সব আকার আকৃতি। এই বনটিতে একেকটি গাছের রিং,হার্ট ইত্যাদি আকৃতিতে মোচড়ানো অবস্থা সত্যিই অবাক করার মত; আর এই কারনে এটি পৃথিবীর অন্যতম অদ্ভুৎ স্থানও বটে। সেখান কার স্থানীয় মানুষদের দাবি যে সেখানে নানারকম পজিটিভ এবং নেগেটিভ এনার্জি এর কারনে পাইন গাছগুলোর এমন অদ্ভুততম অবস্থা।
২০। লেক মিসিগান ট্রাই-অ্যাঙ্গেলঃ
বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এর মত নানা রহস্যময় বিষয় কেবল যে শুধু সমুদ্র পটেই থাকবে এর কোন মানে নেই। ঠিক এমনি জাহাজ এবং উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার রহস্য বহনকারী আরেকটি ট্রাই-অ্যাঙ্গেল রয়েছে আর এর নাম হচ্ছে ‘লেক মিসিগান ট্রাই-অ্যাঙ্গেল’ । বারমুডা ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এবং ডেভিলস সি এর মত এই লেক মিসিগান ট্রাই-অ্যাঙ্গেল এরও রয়েছে অদ্ভুত খ্যাতি। এই লেক মিসিগান নিয়ে রহস্যের সূচনা ঘটে ১৮৯১ সালে। টমাস হিউম নামে এক ব্যাবসায়ি তার সাথে ৭-৮ জন নাবিক নিয়ে কাঠ আনার উদ্দেশে এই লেক মিসিগানের ভেতর যাত্রা শুরু করে। তবে এক রাতেই এক তীব্র বায়ু প্রবাহের পর থেকে টমাস হিউম এবং তার জাহাজসহ নাবিক দল বলতে গেলে একদম গায়েব হয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে ব্যাপক অনুসন্ধানের পরেও আশ্চর্যজনক ভাবে সেই জাহাজের একটি কাঠের টুকরাও পাওয়া যায়নি ; টমাস হিউম এবং তার দলের কথা দূরে থাক! -তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত।
পরবর্তী পর্বঃ পৃথিবীর অমীমাংসিত ১৫টি রহস্যময় ঘটনাঃ আজও যার জট খোলেনি
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২২