সাজানো গোছানো পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করতে একটি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড়ই যথেষ্ট। এমন একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে মিশে থাকে হাজারো ধ্বংস, প্রাণক্ষয় আর আর্থিক লোকসান। তাই এ দুর্যোগ কারও কাম্য হতে পারে না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রায়ই নানা নামের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। সঠিক পূর্বাভাস ও পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমানো সম্ভব হয়। তবু ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা গুঁড়িয়ে দেয় অনেক কিছুই। ধনী দেশগুলোর পক্ষে এমন ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সহজ হলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়ে ভয়াবহ। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতির চেয়ে ঝড় পরবর্তী ক্ষতি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। ঘটে যায় অসংখ্য প্রাণক্ষয়, রাস্তাঘাট-ফসল-বসতবাড়ি ধ্বংস, গবাদিপশুর মৃত্যু, গাছপালা ধ্বংসসহ কোটি টাকার ক্ষতি। বেশির ভাগ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় নারীর নামে। যেমন- নার্গিস, বিজলী, রেশমী, ক্যাটরিনা। মনে হতেই পারে, তাণ্ডবলীলা কি শুধু মেয়েরা ঘটায়? নাকি যত ক্ষতির দায় সব মেয়েদের নামে চাপানোর চেষ্টা? ১৯ শতকের মাঝামাঝি এই প্রবণতা বেশি দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিদদের মাঝে। তারা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম শুধু মেয়েদের নামে দিচ্ছিলেন। তখন নারীবাদীরা তুমুল সমালোচনা শুরু করেন। পরিস্থিতি সামলাতে তারা বর্ণমালার ক্রমিক অনুযায়ী ঝড়ের নাম দেওয়া শুরু করেন। এরপর ১৯ শতকের শেষের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধের আবহাওয়াবিদরা পুরুষের নাম দেওয়া শুরু করেন। এ ছাড়াও ইতিহাস বলে আমাদের অঞ্চলে প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছিল প্রায় ৩০০ বছর আগে শ্রীলংকার মহাপরাক্রমশালী রাজা মহাসেনের নামে। এরপরে ঝড়ের নাম হিসেবে নারীদের নামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে আবারও পুরুষের নাম সংযোজিত হতে থাকে। অবশ্য বর্তমানে বস্তু বা অন্য বিষয়ের নাম অবস্থাভেদে টেনে আনা হয়েছে। যেমন- সিডর, মেঘ, বায়ু, সাগর ইত্যাদি। উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দেওয়া নামগুলো হলোঃ অনিল, অগ্নি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, ফণী। এদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে। সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ছিল ১৯৭০ এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়। এরপরে সাইক্লোন সিডরের কথা উল্লেখ করা হয়। সিডরের পর তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া একেরপর এক ঝড়ের নামকরণ হয়- আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, মোরা, নার্গিস, ফণী ও বুলবুল ইত্যাদি। এসব ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে অনেকেরই গা শিহরে উঠে। স্বজন আর সম্পদের কথা মনে পড়ে। ইতিহাসের পাতা থেকে এবার তুলে আনা হলো বাংলাদেশের স্মরণকালের কয়েকটি ঘুর্ণিঝড়।
১। বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড়ঃ (১৮৭৬)
প্রাণহানি ও ভয়ংকরের দিক থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাসে ষষ্ঠ স্থান দখল করে আছে বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড়। ১৮৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় ‘দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ ১৮৭৬’ নামেও পরিচিত। ঘূর্ণিঝড়ে বাকেরগঞ্জের নিম্নাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত হয়ে যায়। আনুমানিক ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এই ঘূর্ণিঝড়ে। পরবর্তী সময়ে আরও বেশি মানুষ মারা যায় দুর্যোগপরবর্তী মহামারী এবং দুর্ভিক্ষে। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তৎকালীন উপকূলীয় এলাকায় প্রায় দশ ফুট থেকে পঁয়তাল্লিশ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল,আর এত মানুষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে এই জলোচ্ছ্বাসকেই দায়ী করেন আবহাওয়াবিদরা।
২। ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড়ঃ
১৯৬০ সালে অক্টোবরে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী ও পূর্ব মেঘনা মোহনায়৷ ঝড়ের প্রভাবে ৫ থেকে ৬ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়৷ এতে মারা পড়েন প্রায় ১০ হাজার মানুষ৷
পরের বছর ১৯৬১ সালের ৯ মে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে৷ বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬১ কিলোমিটার৷ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা যান ওই ঝড়ে৷এর পর ১৯৬২ সালে ২৬ অক্টোবর ফেনীতে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় হাজারখানেক মানুষের মৃত্যু হয়৷ ১৯৬৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চল৷ এই ঝড়ে প্রাণ হারান ১১ হাজার ৫২০ জন৷
৩। ১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ঃ
১৯৬৫ সালের ১২ মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বারিশাল ও বাকেরগঞ্জে প্রাণ হারান ১৯ হাজার ২৭৯ জন৷ সে বছর ডিসেম্বরে আরেক ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারে মৃত্যু হয় ৮৭৩ জনের৷ পরের বছর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সন্দ্বীপ, বাকেরগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লায়৷ এতে মারা যান ৮৫০ জন৷
৪। গ্রেট ভোলা সাইক্লোনঃ ১৯৭০
১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী ‘গ্রেট ভোলা সাইক্লোন'৷ এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২২ কিলোমিটার এবং এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ১০-৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, ভোলার চর বোরহানুদ্দিনের উত্তর পাশ ও চর তজুমুদ্দিন এবং নোয়াখালীর মাইজদি ও হরিণঘাটার দক্ষিণপাশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷এই ঝড়ে প্রাণ হারায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ৷ চার লাখের মতো বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অসংখ্য গবাদি পশু এবং ঘরবাড়ি ডুবে যায়।
৫। উরিরচরের ঘূর্ণিঝড়ঃ ১৯৮৫
উরিরচরের ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত এই সাইক্লোনটি যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫৪ কিলোমিটার। এটা অল্প জায়গায় হয়েছে ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিলনা।
৬। ১৯৮৮ এর ঘূর্ণিঝড়ঃ
১৯৮৮ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায় যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায়৷ বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার৷ এই ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারান৷
৭। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ঃ
১৯৯১ সালের ২৯-৩০শে এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যা দেয়া হয় 'শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়' হিসেবে । ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলে দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত হানে লাখো প্রাণঘাতী এক ঘূর্ণিঝড়। ১২-২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার। এই ঘূর্ণিঝড়ে কেড়ে নেয় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের জীবন। যদিও বেসরকারি সংগঠনের দাবি অনেক মাছধরার ট্রলার সাগরে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন আরও অনেকে। এ ছাড়া প্রায় ১ কোটি মানুষ সর্বস্ব হারায়। সে সময় প্রায় ১০ লাখ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধারণা করা হয় এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়।
৮। ১৯৯৭ এর ঘূর্ণিঝড়ঃ
১৯৯৭ সালের ১৯ মে বাংলাদেশের সীতাকুণ্ড ও এর আশেপাশের এলাকায় আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে৷ ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার বেগের বাতাসের সঙ্গে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়৷ এরপর আরো কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল৷ তবে সেগুলো বাতাসের গতিবেগ ছিল কম৷
৯। ঘূর্ণিঝড় সিডরঃ ২০০৭
বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়ালতম প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলা ঘটে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। এদিন সিডর নামের ঘূর্ণিঝড়টি দেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩০টি জেলায় ১৫-২০ ফুট উচ্চতার প্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২৩ কিলোমিটার যাতে অবকাঠামোগত অনেক ক্ষতি হয়েছে, বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বেসরকারি মতে প্রায় ২০ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। রেডক্রসের হিসেবে সিডরে ১০ হাজার মারা গেছে বলা হলেও সরকারিভাবে ৩ হাজার ১৯৯ জনের মৃত্যু ও ১ হাজার ৭২৬ জনের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানানো হয়। ধারণা করা হয় সিডরে বয়ে আনা জ্বলোচ্ছ্বাসে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সৌভাজ্ঞক্রমে সিডর জোয়ারের সময় হয়নি বলে প্লাবন কম হয়েছে, ফলে তুলনামূলক মানুষ কম মারা গেছে।
১০। ঘূর্ণিঝড় আইলাঃ ২০০৯
২০০৯ সালের ২৫শে মে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় আইলা, যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এতে ভোলার ৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, জ্বলোচ্ছ্বাস হয় ৬-৭ফুট উচ্চতায়, কয়েকশ’ মাছের ঘের ভেসে যায়, কয়েক হাজার হেক্টর ফসল নষ্ট হয়, প্রাণ হারান ১৮ জন মানুষ। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ জনপদ।
১১। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনঃ ২০১৩
২০১৩ সালের মে মাসের শুরুর দিকে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাংশে নিম্নচাপজনিত কারণে উৎপত্তি ঘটে মহাসেনের। ১৪ মে এটি উত্তর-পূর্বাংশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কার্যত জনজীবন অচল হয়ে পড়ে।'
১২। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুঃ ২০১৬
রোয়ানু একটি ছোট ঘূর্নিঝড় যা ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এবং ভারতে আংশিক আঘাত হানে। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু এর উৎপত্তিস্থল। ধারনা করা হয় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ব্যাপ্তি ছিল দুটি বাংলাদেশের সমান আকৃতির। ঘূর্ণিঝড়টির প্রাক্কালে এটি চট্টগ্রাম তটরেখা বরাবর আঘাত হানার সম্ভবনা ছিল।আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দে স্থানান্তর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘূর্নিঝড় এর ফলে অনেক বড় বড় ঢেউ উঠে। সরকারি হিসাবে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে অধিকাংশ উপকূলীয় জেলার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এখনো ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
১৩। ঘূর্ণিঝড় মোরাঃ ২০১৭
কক্সবাজার উপকূল বিধ্বস্ত হয় ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে। ২০১৭ সালের ৩০ মে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে ৫৪ হাজার ৪৮৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মারা যায় ৮জন, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়া, গাছপালা উপড়ে পড়া, খেতখামার নষ্ট হওয়া, বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হওয়াসহ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কয়েক কোটি টাকায়।
১৪। ঘূর্ণিঝড় তিতলিঃ ২০১৮
২০১৮ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড় তিতলি। তিতলির অর্থ প্রজাপতি। ক্রান্তিয় সাইক্লোন তিতলির নাম দিয়েছে পাকিস্তান। ঘূর্ণিঝড়টি জন্ম নেয় ৬ থেকে ৯ অক্টোবর ভারতের কলকাতা থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এটি আঘাত হানে ১১ অক্টোবর ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে। তিতলির গতিবেগ ছিল ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত। অন্ধ্রপ্রদেশে প্রলয়কাণ্ড চালিয়ে উত্তরের দিকে এসে ওড়িশার গানজাম জেলায় আছড়ে পড়ার পর এর তীব্রতা কিছুটা কমে যায়। তখন এর গতিবেগ ছিল ১০২ কিলোমিটার। অন্ধের শ্রীকাকুলাম ভিজিয়ানাগারাম জেলায় ঘূর্ণিঝড় তিতলির আঘাতে ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও প্রদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট বন্যায় ভেসে গেছে এক পরিবারের চার সদস্য। নিখোঁজ হন আরও অনেকে। ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বেশ কয়েকটি জেলায় দুর্যোগকালীন প্রস্তুতি রাখা হয়। কক্সবাজার শাহ পরীর দ্বীপে ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়। দ্বীপের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে যায়। এই ঝড়ে বিনষ্ট হয় আমন ফসল ও শীতকালীন সবজির আবাদ। শক্তিশালী এই ঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশ জুড়ে বৃষ্টিপাত হয়। নদীবন্দরে রাখা হয় তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত।
১৫। ঘূর্ণিঝড় ফণীঃ ২০১৯
২০১৯ সালের ৩ মে বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বাংলাদেশে নয় জনের মৃত্যু হয়৷ তবে প্রাণহানি কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিল অনেক বেশি৷ সরকারি হিসাব মতে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে ঘরবাড়ি, বাঁধ, সড়ক ও কৃষিতে ৫৩৬ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়৷
১৬। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলঃ ২০১৯
বার বার দিক বদল করে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানার পর স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে আসায় ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়৷ ঝড়ে মারা যায় ২৪ জন৷ ৭২ হাজার ২১২ টন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার আর্থিক মূল্য ২৬৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা৷ ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনেরও৷
সুপার ঘুর্ণিঝড় আম্পানঃ ২০২০
২০২০ সালের ২০ মে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পান সম্পর্কে বলা হচ্ছিল, এটি শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, যার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে। তবে দিক পরিবর্তন করে দূর্বল হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানায় এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ এগারোজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদেরমধ্যে পটুয়াখালীতে শিশুসহ দু’জন, ভোলায় এক বৃদ্ধসহ দু’জন, পিরোজপুর দু’জন, যশোরে মা-মেয়ে, সাতক্ষীরায় এক নারী, বরিশালে এক কিশোর ও বরগুনায় একজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। দেশে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের এক কোটি ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। ক্রান্তীয় অঞ্চলের ৮টি দেশ মিলে ১৬ বছর আগে যে তালিকা প্রস্তুত করে সেই তালিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার ১৩টি দেশ মিলিয়ে ১৬৯টি নামের নতুন তালিকা প্রস্তুত করেছে। আম্পান শেষে পরবর্তী সাইক্লোনের নাম ওই তালিকা দিয়েই শুরু হবে।
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
nuru.etv.news@gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:০৮