ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবেনা বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার মরার স্বাধীনতা!
এই লাইন দুটো জানেন না এমন পাঠক বিরল কিনতু এই লাইনদুটো আবু সালেহ-এর রচনা সেটা জানেন এমন পাঠক আরও বিরল। লাইন দুটো ষাট এবং সত্তর দশকের নামকরা সাংবাদিক ও ছড়াকার আবু সালেহ্'তার পল্টনের ছড়া থেকে নেওয়া। সে যাই হোক বর্তমানে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চলছে লকডাউন। এই লকডাউন উপেক্ষা করেই অর্ধলক্ষাধিক মুসল্লি যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের সিনিয়র নায়েবে মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী নামাজে জানাযায়। দেশ এবং জেলার শীর্ষ আলেমরা ছাড়াও মাদরাসাছাত্র এবং সাধারণ মানুষ যোগ দেন জানযায়। জানাযার সারি মাদরাসার প্রান্তর ছাড়িয়ে দীর্ঘ হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও জনসমাগম কমাতে পারেনি। বর্তমানে সরকারের নির্দেশে মসজিদে ওয়াক্তিয়া নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচ জন এবং জুম্মার নামাজে সর্বাধিক দশজন মুসল্লির জামাত অনুমোদিত। জানাযার নামাজ পড়া ফরযে কেফায়া বা সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব। বিশেষ কারণে এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন এক কঠিন সময় পার করছে। সুতরাং ইচ্ছা করলে এই সামাজিক মেলবন্ধনটা হ্রাস করা যেতো। কিন্তু তা হয়নি। সে যাই হোক। মানুষের ধর্মই হলো ভালো কাজের প্রসংশা ও মন্দ কাজের সমালোচনা করা। বাক স্বাধী'না মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রয়োজনে উপদেশ দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা ধর্মীয় কর্তব্যের অংশ। সত্যের প্রতি আহ্বান, সৎ কাজে উৎসাহদান, মন্দ কাজের নিন্দা করা ইমানি দায়িত্ব। সত্যের পক্ষে কথা বলা ইমানদারের অপরিহার্য কর্তব্য। শুধু তাই নয় নীরবতা যদি সমাজের ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী নামাজে জানাযায় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে ৫০,০০০ মানুষের জমায়েত কি সঠিক হয়েছে নাকি ক্ষতির কারণ হতে পারে? ইসলামিক ফা্উন্ডেশন ও বিজ্ঞ আলেম ওলামারা যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন তখন কোন যুক্তিতে এত মানুষ জমায়েত হলেন! এখন এর বিরুদ্ধে কেউ যদি কোন নিন্দা বা সমালোচনা করেন তা কি তার ঈমানী দ্বায়িত্ব নয়? সেই দ্বায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কেউ যদি কটাক্ষ করেই থাকেন তা হলে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে হবে? আপনারা যারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় থাকেন আর সমালোচনা যদি নিজের উপর নিয়ে ঝগড়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হন তা হলে বুঝতে হবে আপনারা বাংলাদেশীয় নন, আপনারা বিচ্ছিন্ন কোন এক জনপদের মানুষ। যেখানে শুধু আপনাদের নিয়ম নীতির মধ্যে চলবে আর কোন জেলার মানুষ সেখানের ব্যাপারে নাক গলাতে পারবেনা !! তবে দুঃখের বিষয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোন বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নয়। এটা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশেরই একটা জেলা। এটা বাংলাদেশের সম্পত্তি। সুতরাং একজন বাংলাদেশী হিসেবে নাগরিক দ্বায়িত্ব মন্দ কাজের বাধা দেওয়া নিদেন পক্ষে তিরস্কার করা। এই তিরস্কারে কারো যদি আঁতে ঘা লাগে তবে তিনি তাকে বাংলাদেশের বাইরের কেউ ভাবতে পারেন। কারণ ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আমরা কাউকে লিজ দেই নাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯টি উপজেলা, ৯টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ১০০টি ইউনিয়ন, ৯৯৩টি মৌজা, ১৩৩১টি গ্রাম বাংলােদেশের। বাংলাদশের অন্যান্য জেলার মতো এর উন্নয়নের আমরাও গর্বিত অংশিদার। এ জেলার উন্নতিতে আমাদে গর্ব. আর দূর্যোগে আমরা ব্যথিত হই। ঢাকা শুধু ঢাকাইয়াদের নয়। ঢাকা আপনাদের আমাদের সবার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে বা প্রাকৃতিক দূযোগে বাংলাদেশের সবাই একযোগে তা প্রতিহত করবে। সতরাং অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে বা হৃদয়ে ধারণ করতে গিয়ে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। ৬৪ জেলার সব মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের স্বজন, আমরা বাঙ্গালী, আমরা র্বাংলাদেশী। 'আপদে বিপদে সবাই আছি একসাথে।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৩