বলতে পারেন পৃথিবী কবে ধ্বংস হবে? এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। করেছেন বাবা ভ্যাঙ্গাও। বলেছেন, ৩৭৯৭ সাল নাগাদ পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু, ততদিনে মানুষ এক নক্ষত্রলোকের সন্ধান পাবে। সেই স্থানেই গড়ে উঠবে পৃথিবীর উপনিবেশ। শুধু পৃথিবীর ধ্বংসের মতো জনপ্রিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেই ক্ষ্যান্ত দেননি তিনি। বরং চীনের উত্থান, আমেরিকার পতন, টুইন টাওয়ার হামলাসহ নানা বিষয়ে নাকি অদ্ভুতভাবে মিলে যাওয়া সব অনুমান করে গেছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে কে এই বাবা ভ্যাঙ্গা?
৩৭৯৭ সাল নাগাদ পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য। ভবিষ্যদ্বাণী ভ্যাঙ্গেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভার। ভ্যাঙ্গেলিয়া স্বয়ং জানিয়েছিলেন, ঝড় তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাকে পাওয়া যায়। চেতনা ফেরার পর তিনি টের পান, তার চোখে কোনো সমস্যা হয়েছে। ক্রমে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারান। ১৯২৫ সালে ভ্যাঙ্গা দৃষ্টিহীনদের জন্য এক বিশেষ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাবা ভ্যাঙ্গা। সেখানে পিয়ানো বাজানো, রান্না করা, উল বোনা ইত্যাদিও শেখেন। এই সময় থেকেই তার মধ্যে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার উদয় দেখা দেয়া বলে অনেকে মনে করেন। তিনি ভবিষ্যতে ঘটবে এমন ঘটনার কথা অবলীলায় বলতে থাকেন। খ্যাতি পান ‘বলকানের নস্ত্রাদামুস’ হিসেবে।ধীরে ধীরে বাবা ভাঙ্গার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির বেশ কয়েকজন নেতার উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন তিনি। অবশ্য বাবা ভ্যাঙ্গার বিরুদ্ধে অভিযোগেরও কমতি নেই। অভিযোগ ওঠে, বুলগেরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন গোপন তথ্য সংগ্রহ করে তা দিয়ে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতেন ভ্যাঙ্গা। ১৯৯৬ সালে মারা যান ভ্যাঙ্গা। তখন তার বয়স ৮৫ বছর।
৫০ বছরের পেশাজীবনে শতাধিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বাবা ভ্যাঙ্গা। তিনি বলেন, একধরনের অদৃশ্য প্রাণীর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারেন তিনি। আর এই প্রাণীরাই মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয়। যেটিকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেছেন অনেকে।
বাবা ভ্যাঙ্গা অনুসারীরা জানান, বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে সুনামির আগে তিনি বলেছিলেন, ঠাণ্ডা অঞ্চল উষ্ণ হয়ে উঠবে এবং আগ্নেয়গিরি জাগ্রত হবে।
এমনকি নাইন-ইলেভেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলার বিষয়েও ভবিষ্যদ্বাণী ছিল বাবা ভ্যাঙ্গা। তিনি বলেন, ভয়, ভয়! লোহার পাখির আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইয়েরা ভেঙে পড়বে। দুটি নেকড়ের গর্জনে নিরীহদের রক্ত ঝরবে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট যে একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হবেন সেটিও আগে থেকেই বলেছিলেন তিনি।
তার কিছু ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরা হলঃ
২০১৯ সাল নিয়ে ভ্যাঙ্গা বাবা কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
১। ২০১৯ সালে পৃথিবীতে এক মহা সুনামির আশঙ্কা রয়েছে। যে সুনামি ২০০৪ সালের সুনামির মতোই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে সেটি।
২। আগামী বছর রাশিয়ায় এক বিরাট উল্কাপতন ঘটতে পারে।
৩। যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন, ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মস্তিষ্কের অসুৃখে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
৪। ২০১৯ সালটি রাশিয়ার উত্থানের বছর বলে চিহ্নিত করেছিলেন। বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উঠে আসতে পারে।
এছাড়াও ২০১৮ সাল থেকে পৃথিবীর নানা বিষয় নিয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। সবশেষ ৩৭৯৭ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো হচ্ছেঃ
১। ২০১৮ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংকটের মধ্যে পড়বে।
২। ২০২৮ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দেবে।
৩। ২০১৬ সাল থেকে ইউরোপের অবলোপ ঘটবে। (ব্রেক্সিটের কথা মাথায় রাখলে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না।)
৪। ইসলামি শক্তির দ্বারা ইউরোপ বিপন্ন হয়ে পড়বে। সিরিয়ায় ইসলামি শক্তিগুলো বিপুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
৫। ২০৪৩ নাগাদ রোম একটি মুসলিম নগরীতে পরিণতি পাবে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে খিলাফতের শাসন।
৬। ২১৩০ সাল নাগাদ মানুষ পানির তলায় বসবাসের বন্দোবস্ত করে ফেলবে।
৭। ২০৪৫ সাল নাগাদ বিশাল হিমশৈলগুলো গলতে শুরু করবে। পৃথিবীর অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে তখন।
৮। ২০৭৬ সাল নাগাদ ইউরোপে কমিউনিজম আবার মাথাচাড়া দেবে এবং তার প্রভাব পড়বে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।
৯। ৩৭৯৭ সাল নাগাদ পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য। কিন্তু তত দিনে মানুষ এক নক্ষত্রলোকের সন্ধান পাবে। সেই স্থানেই গড়ে উঠবে পৃথিবীর উপনিবেশ। সেই সঙ্গে
১০। ৩০০৫ সালে মঙ্গল গ্রহে একটি যুদ্ধ হবে বলেও বাণী দিয়েছেন তিনি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল

nuru.etv.news@gmail.com