বান্দার সীমাহীন পাপের শাস্তি আল্লাহর গজব (১ম পর্ব))
RECAP "হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (সূরা বাকারা আয়াত নং ১৫৩) মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। যার প্রমাণ বিগত আটশত বছরের ইতিহাসঃ প্রতি শতাব্দীর ২০শে পৃথিবীকে আক্রমন করে মহামারী। যুগে যুগে মহামারির প্রাদুর্ভাব, বিশেষ করে অজ্ঞাত কোনও ভয়াল সংক্রমণ ব্যাধির প্রাদুর্ভাবে ‘মৃত্যুর কালোছায়া’ ঘনিয়ে আসার মতো ঘটনাগুলো মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক একটি বীভৎস, অমানবিক ও কালো ইতিহাস বহন করছে। পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়া এসব মহামারি নানা সময় যেমন বিপর্যস্ত করেছে মানব সভ্যতা তেমন কোথাও কোথাও আবার নিঃশেষ করে দিয়েছে বহু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। আধুনিকতার চরম উৎকর্ষেরকালেও এমন মহামারির আগ্রাসনে সম্প্রতি আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পৃথিবী। চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস নামের এক অজ্ঞাত গুপ্তহন্তকের কড়ালগ্রাসে নিপতিত আজকের মানব সভ্যতা। কারও কারও মতে, পাপাচারের পরিণতি স্থিরকারী স্রষ্টার অভিশাপ এমন সব মহামারি। কেউ বলছেন জলবায়ু বিপর্যয় আর পরিবেশ বিনষ্টের প্রতিক্রিয়া। কারও কারও ভাষ্য মতে, হাত ফসকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে আসা মানবসৃষ্ট কোনও জীবাণু অস্ত্রের রসদ এই ভাইরাস। শক্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তি বলছে, যেভাবে বা যে পন্থাতেই হোক গড়ে প্রতি একশ বছরে এমন অন্তত একটি মহামারির প্রলয় কাঁপন উঠেছে পৃথিবীর বুকে। কখনওবা একাধিক কিংবা ততোধিক। যার লক্ষণগুলো বলছে, সভ্যতা আর আধুনিকতার চরম সাধ্য অর্জনে যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত খুবলে নিচ্ছে প্রকৃতিকে। সেখানে ধারাবাহিক এমন শতবর্ষী এক একটি প্রলয়ে নিজের সহ্যের সীমা অতিক্রমেরই প্রতিক্রিয়া জানান দিয়ে আসছে প্রকৃতি। যার প্রতিটির মাঝে রয়েছে গনা একশ বছরের আশ্চর্য সময়ের ব্যবধান। প্রতি বছরের ২০ সাল যেন অভিশপ্ত হয়ে উঠছে। এ যেন এক সুনির্দিষ্ট ও ধারাবাহিক বাস্তুসংস্থান চক্রের মতো। যেখানে বার বার মানুষ-প্রকৃতির মিতালীর একেবারে ভিন্ন রূপটিই আবর্তিত হয় চরম বৈরিতায়।
১। ১৩২০ সালের দ্য ব্ল্যাক ডেথ অব বুবোনিক প্লেগঃ
১৩২০ সালে সারা বিশ্বব্যাপী এক ভয়াল প্লেগের প্রাদুর্ভাবের ফলে শুধু ইউরেশিয়া অঞ্চলেই মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ২০০ মিলিয়ন মানুষের। যার নাম ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ অব বুবোনিক প্লেগ’। ১৩২০ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্লেগের প্রাদুর্ভাব ক্রমে মহামারি রূপ ধারণ করে প্রকট হয়ে ওঠে। আর এর প্রভাবে ১৩৪৬-১৩৫৩ সালের মধ্যে ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের (ইউরেশিয়া) ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ‘কালো মৃত্যু’র কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। ২০১০ এবং ২০১১ সালে বিশেষজ্ঞরা এই মহামারির শিকার হওয়া উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের অধিবাসীদের ডিএনএন বিশ্লেষণ প্রকাশ করেন। এতে ইয়েরসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটেরিয়া’র (প্লেগ রোগ বিশেষ) জন্য রোগ সংক্রামক জীবাণু প্যাথোজেন’কে দায়ী করা হয়। মধ্য এশিয়ার সমভূমিতে এই রোগের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। এরপর এটি সিল্ক রোড হয়ে ১৩৪৩ সালের দিকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত পৌঁছায়। মূলত বণিকদের জাহাজে বসবাস করা ‘কালো ইঁদুর’ ও ‘ইঁদুর মাছি’ নামক দু’টি প্রজাতির প্রাণির মাধ্যমে এটি ভূমধ্যসাগর এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৩০-৬০ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই মহামারির কবলে পড়ে ১৪০০ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে। ১৭০০ শতক পর্যন্ত প্লেগ পরবর্তী সময়েও এই সংখ্যা আর পুনরুদ্ধার হয়নি। এমনকি ১৯ শতকেও এটি ইউরোপের কিছু কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছিল। এই মহামারি ইউরোপের ইতিহাসে ব্যাপক ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল।
২। ১৪২০ সালের দ্য এওইডেমিক অব ব্ল্যাক ডেথ প্লেগ (দ্বিতীয় প্লেগ প্রলয়)
বুবোনিক প্লেগের প্রকোপ ক্রমে এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যার প্রভাব প্রথম প্রলয়ের প্রায় একশ বছর পর পর্যন্ত ভোগায় পৃথিবীর মানুষকে। এই প্লেগের দ্বিতীয় প্রলয় আঘাত আসে ১৪২০ সাল নাগাদ। এই মহামারির কবলে পড়ে ১৪শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে। মানুষের প্রাচীনতম ফসিল, সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী দেয় বিভিন্ন রোগ কীভাবে পাল্টে দিয়েছে পৃথিবীর গল্প। মহামারি কয়েক মাসে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে জনপদ। এ যেন অভিশাপ- ভেবে পালিয়ে যাচ্ছিল নগরবাসী। কিন্তু মৃত্যু পিছু ছাড়েনি। ১৫ বছরের ব্যবধানে রোম রীতিমতো ভুতুড়ে শহর হয়ে ওঠে। ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে এই প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে গ্রিসে। এথেন্স তখন গ্রিসের ফুসফুস। প্লেগ এসে তছনছ করে দেয় এথেন্সকে। এক লাখ মানুষ মারা যায় সে সময়। একশ বছর পর ইউরোপ, মিসর ও পশ্চিম এশিয়ায় প্লেগের ছোবল লাগে। গোটা পৃথিবীর ৪০ শতাংশ মানুষ সে সময় মারা গিয়েছিল। মানুষ ঘর ছেড়ে বের হতো না। সেই শতাব্দীতে এটি সুসভ্য রোমান সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে তা ‘প্লেগ অব শ্যারো’ নামে ছড়িয়ে পড়েছিল বর্তমান ইরানে। মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে মাত্র এক বছরে এক লাখ মানুষের মৃত্যুর কথা ধারণা করা হয় এই মহামারির প্রভাবে। কেউ রোগাক্রান্ত হলে ছুটে পালাত তার সঙ্গী-স্বজনরা। পার্সিয়ার অর্ধেক মানুষই মারা যায় তখন।
৩। ১৫২০ সালের গুটি বসন্ত ও প্লেগ মহামারিঃ
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে, ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জে স্প্যানিশ বণিকরা নিয়ে আসে ভয়ঙ্কর স্মলপক্স, বিউবোনিক প্লেগ ও হামের মত জীবাণু। ইউরোপিয়ানরা এইসব রোগ প্রতিরোধী হলেও ক্যারিবিয়ানের মানুষের শরীরে এই রোগের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ছিল না। এর ফলে প্রায় ৯০ ভাগ আদিবাসী জনগোষ্ঠী এইসব রোগে মৃত্যুবরণ করেন। ১৫১৯ সালে বর্তমান মেক্সিকোতে স্মলপক্স ছড়িয়ে পড়লে দুই বছরে মারা যায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষ।১৫২০ সালে ইউরোপিয়ানদের সাথে আসা একজন আফ্রিকান দাস স্মলপক্স নিয়ে আসলে গোটা এজটেক সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি। উপনিবেশিক শক্তি গোটা আমেরিকা মহাদেশে শুধু তরবারি দিয়েই হত্যা করেনি। রোগ-বালাই নিয়ে এসেও মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানদের বয়ে আনা জীবাণুর কারণে আমেরিকা মহাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। আদিবাসীদের এই গণহারে মৃত্যু গোটা আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপিয়ানদের আধিপত্য করার সুযোগ করে দেয়।
৪। ১৬২০ সালের মহামারির প্রলয়ে মূর্চ্ছা যায় রক্তিম ‘মে ফ্লাওয়ারঃ
আনুমানিক ১৬২০ সাল নাগাদ লন্ডন দেখে মহামারির আসল রূপ। সে সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে কথিত আছে, মহামারির প্রলয় এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে, ‘ইউরোপের তুষারাচ্ছন্ন পর্বতের প্রতিটি প্রান্তে ফোটার আগেই মূর্চ্ছা যেতে থাকে প্রতিটি রক্তিম মে ফ্লাওয়ার।
স্মল পক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফাস— এমন অজানা আরও একাধিক ভাইরাস জ্বরে সে সময়ের লন্ডন মৃত্যুর মুখে পড়ে। ঘরে ঘরে অজানা রোগে মানুষ মরতে শুরু করে। মৃত্যুর এমন মিছিল লন্ডন এর আগে বা পরে কবে দেখেছিল কে জানে। লন্ডনের ৯০ শতাংশ মানুষই নানা অজানা রোগে আক্রান্ত হয়। পুরো লন্ডন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। অপরদিকে প্রায় সমসাময়িক একটি মহামারির কবলে পড়ে ইউরোপের আরেক দেশ ইতালি। ১৬২৯-১৬৩১ সাল নাগাদ ইতালিতে ছড়িয়ে পড়া প্লেগ রোগে আড়াই লাখ মানুষ মারা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৬৬৫ সালে গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন, গ্রেট প্লেগ অব অস্ট্রিয়া কয়েক লাখ প্রাণহানি ঘটিয়েছিল। ‘গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন’ এ লন্ডনের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের সাথে সাথে সৈনিকদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষ ছাড়াও স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, জার্মানি ও আমেরিকায় দেড়শ বছরের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কলেরায় মারা যায়।
৫। ১৭২০ সালের দ্য গ্রেট প্লেগ অব মার্শেইঃ
ইতিহাসের তথ্যমতে, সপ্তদশ শতকে দুনিয়াজুড়ে ২০ কোটি মানুষ শুধু প্লেগ রোগে মারা যায়। যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াল রূপটি ছিল ১৭২০ সালে ফ্রান্সের দ্য গ্রেট প্লেগ অব মার্শেই এর মহামারি আঘাতে। এটিই ছিল বিশেষ এক প্রকার বিউবোনিক প্লেগ। এই প্লেগে শুধু মার্শেই নগরীতে ৫০ হাজার আর পুরো ভলকান ও ফ্রান্সজুড়ে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ শতকে ভলকান অঞ্চলেও মহামারি আঘাত করে। এর মাঝে ৫০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল শুধু ১৭৩৮ সালের প্লেগেই। এ সময় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, মৃতদেহ কবর দিতে খোড়া হয় একের পর এক গণকবর। একই শতকে রাশিয়া ও পার্সিয়া ভয়ঙ্কর মহামারির মুখে পড়ে। দুই লাখ মানুষ মারা যাওয়ার পর পার্সিয়া অভিশপ্ত হিসেবে গণ্য হতো। ইউরোপ ও এশিয়ায় এক লাখ মানুষ কলেরায় মারা যায় ১০ বছরের ব্যবধানে। সে সময় কলেরা প্রতিরোধের কোনও উপায় খুঁজে পায়নি বিশ্ব। এছাড়া এ শতকে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় ইয়েলো ফিভার মহামারি আকার ধারণ করে। এতে নগরের ১০ ভাগের এক ভাগ, প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ মারা যায়।
৬। ১৮২০ সালের ভারতবর্ষে কলেরা, যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েলো ফিভার মহামারিঃ
১৭২০ সালের প্লেগ প্রলয়ের ১০০ বছর পর ১৮২০ সালে শুধু ভারত ও পূর্ব এশিয়ায় কলেরা রোগে মারা যায় কয়েক লাখ মানুষ। সময়ের সঙ্গে এই কলেরা মহামারি রূপ ধারণ করে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাংকক, মেনিলা, ইরান, বাগদাদ, সিরিয়া হয়ে জানজিবার পর্যন্ত। আর আফ্রিকা ইউরোপে বসন্ত রোগে মারা যায় প্রায় ৩৫ লাখ। তবে এই শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারিটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েলো ফিভার বা ইয়েলো প্লেগের প্রাদুর্ভাব। দেশটির ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে শুরু হওয়া ইয়েলো ফিভারের প্রাদুর্ভাব অল্প সময়ের মধ্যেই মহামারি রূপ ধারণ করে। এর প্রভাবে উচ্চ তামপাত্রাসহ সারা দেহে সৃষ্টি হতো প্রচণ্ড যন্ত্রণা। যার এক পর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ঘটতো ভয়াবহ মৃত্যু। ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো এক প্রকার মশা এই রোগের জীবাণু পরিবাহী।
৭। ১৯২০ সালের দ্য স্প্যানিশ ফ্লুঃ
১০০ বছর আগে ১৯১৬-১৯২০ সাল সময়সীমার মধ্যে ইউরোপের দেশ স্পেনের বুকে মহামারি রূপে প্রাদুর্ভাব বিস্তার করে ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ নামের এই মরণব্যাধি। স্প্যানিশ ফ্লু জিনগত ভাবে পরিবর্তন হতো যার ফলে ভাইরাসটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছিল। এইচ১এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট এই প্রাণঘাতি জ্বরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং বিশ্বের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো । ১৯২০ সালের মহামারীটি ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ছিল।
৮। ২০২০ সালের কোবিড-১৯ করোনা ভাইরাসঃ
বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ তথ্য বলছে, প্রতিটি মহামারির সঙ্গে পরবর্তী মহামারির শুধু এই ধারাবাহিক সময় চক্রের নয়, মিল রয়েছে সংক্রামিত ব্যাধির ক্ষেত্রেও। যার ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর পর জ্বরগ্রস্তের মতো আরও একটি ব্যাধি কোভিড-১৯ এর মহামারি প্রাদুর্ভাব ঘটলো ২০২০ সালে। আর এবারের সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ভাইরাসটি হচ্ছে ‘নোভেল করোনাভাইরাস’। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ এই ভাইরাসের সংক্রমণে অজ্ঞাত রোগের প্রাদুর্ভাব সৃষ্টির কথা প্রথম জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০২০ সালের শুরুতেই চীনের উহান শহর থেকে শুরু হয় নতুন ধরনের অজ্ঞাত এই প্রাণঘাতি ‘নোভেল করোনাভাইরাস’ এর প্রাদুর্ভাব। অজ্ঞাত এই ভাইরাস সম্পর্কে শুরুতে কোনও প্রকার তথ্য না জানা থাকায় এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্টভাবে এর প্রতিষেধক উদ্ভাবন সম্ভব হয়নি। মহামারি রূপ ধারণ করা এই ভাইরাসটি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৫৭টির মত দেশে বিস্তার লাভ করেছে। সারা বিশ্ব জুড়ে এখনও অবধি এই রোগে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। কবে এই রোগের থেকে মুক্তি পাবে বিশ্ব তার উত্তর এখনও এখনও অবধি কারও কাছে নেই।
প্রতি শতবর্ষের এই মহামারি কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিচ্ছে? আরেকটা বিষয়, গত কিছুদিন ধরে করোনার মহামারিতে ইতালি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। এই লকডাউনের ফলেভেনিসের নালার পানিগুলো পরিস্কার হতে শুরু করেছে। সেখানে মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। হাঁস সাঁতার কাটছে। কোস্টাল এরিয়াগুলোতে ডলফিনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যেখানে মানুষের আনাগোনা কমেছে, পরিবেশ দূষণও কমতে শুরু করেছে সেখানে। প্রকৃতি কি তাহলে তার ওপর আরোপিত অযাচিত দূষণ কমাতে নিজের পথ তৈরি করে নিয়েছে?
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:২৮