somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩ মার্চ ২০২০, ৭ম বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস আজঃ “পৃথিবীর অস্থিত্বের জন্য প্রাণীকূল বাঁচাই”

০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। বিশ্বের জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ দিবসটি পালন করা হয়। জীব বৈচিত্র্য মানে প্রাণের বৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্য বলতে সাধারণত উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংখ্যা, প্রজাতিভেদ এবং বৈসাদৃশ্যকে বুঝানো হয়ে থাকে। তবে ব্যাপক অর্থে পৃথিবীতে জীবনের উপস্থিতি অর্থাৎ Life on earth-ই জীববৈচিত্র্য। এক প্রাণগোষ্ঠী জীবনের তাগিদে অন্য কোন প্রাণগোষ্টীর উপর নির্ভরশীল। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও ঔষধ এই প্রধান তিনটি প্রয়োজনীয় উপাদান জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত। মানুষের জীবনে যত উপকরণও উপাদান প্রয়োজন, তা’সবই পৃথিবীর জীববৈচিত্রের মধ্যে নিহিত রয়েছে। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ- এই প্রধান তিনটি প্রয়োজনীয় উপাদান জীববৈচিত্র্য থেকে আসে। তাই বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সংরক্ষন ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের ৬৮ তম অধিবেশনে ৩ মার্চকে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০১৪ সালে প্রথম এ দিবসটি পালন করা হয়। বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিবার একটা প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়। “পৃথিবীর অস্থিত্বের জন্য প্রাণীকূল বাঁচাই”.এ প্রতিপাদ্য-নিয়ে এ বছর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে আয়োজনে আজ পালিত হবে ৭ম বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। প্রাণের প্রথম বিকাশ ঘটেছিল সমুদ্রে। স্থলের চেয়ে জলেই ছিল সবচেয়ে বেশি প্রাণের বিচরণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থলভাগে যত মূল্যবান ও সুন্দর বস্তু আছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লুকিয়ে আছে অথৈ জলরাশির গভীরে। এই যে আমাদের বাংলাদেশ, এ দেশও কিন্তু সমুদ্রের ঐশ্বর্যে লালিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমরা পেয়েছি জলজ ও খনিজসম্পদের স্বর্গরাজ্য ‘বঙ্গোপসাগর’। সর্ববৃহৎ প্রাণী নীল তিমি থেকে শুরু করে একেবারে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র্র ফাইটোপ্লাঙ্কটন এখানে তৈরি করেছে চমৎকার এক সামুদ্রিক প্রতিবেশ। কিন্তু বিভিন্নভাবে আমরা সমুদ্র দূষণ করে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যকেই ধ্বংস করছি না, নিজেদেরও অস্তিত্ব সংকটে ফেলছি। মাছ ধরার টুকরো উপাদান, কার্গো জাহাজগুলোর বাতিল অংশ, প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ, জাহাজের বর্জ্য ও তেল দূষিত করছে সমুদ্রের জলকে। হস্তশিল্প ও জুয়েলারি নির্মাণের জন্য ধ্বংস হচ্ছে প্রবাল কলোনি। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে সামুদ্রিক পরিবেশ।


বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ, বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে পৃথিবীর ৫৬০তম ও বাংলাদেশের প্রথম রামসার সাইট সুন্দরবন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হাকালুকি হাওড়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল, লাউয়াছড়া উদ্যান, শালবন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে উদ্বেগের বিষয় বাংলাদেশে বনভূমি ধ্বংস করছে কৃষিজমির বিস্তার ও নগরায়ন। এ কারণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে অনেক বন্যপ্রাণী। বনভূমি কমে যাওয়ায় দেশের সমগ্র জীববৈচিত্র্য সার্বিকভাবে সংকটের মুখে পড়েছে। বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের হিসাব অনুযায়ী, ১৯০০ সালে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ। ২০১৪ সালে তা কমে চার হাজারে নেমে আসে। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করার জরিপে বলা হয়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০। ২০১৪ সালে সর্বশেষ জরিপ করা হয় ক্যামেরায় ঝবি তুলে ও পায়ের ছাপ গুনে। ওই জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬। বন বিভাগের এক জরিপে বলা হয়, শুধু বনে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী হাতি এখন মাত্র ২৪০টি। শুধু হাতিই কমছে না, বাংলাদেশে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাস স্থল ধ্বংস, বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকির মুখে আছে ২১৯ প্রজাতির প্রাণী। বিলুপ্ত হয়ে গেছে এক শিঙা গন্ডার, বারশিঙা, রাজশকুন, মিঠা পানির কুমির সহ গোলাপি শির হাঁস। এ তালিকায় রয়েছে মাছ, উভচর সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। বন বিভাগের হিসাবে মিঠা ও লোনা পানির ৭০৮টি প্রজাতির মাছের মধ্যে বিপন্ন হয়ে পড়েছে ৫৮টি প্রজাতি। এ ছাড়া ৪২টি প্রজাতির উভচরের মধ্যে ৮টি, ১৫৭টি প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে ৬৩টি, ৭৩৬টি প্রজাতির পাখির মধ্যে ৪৭টি এবং ১২৪টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ৪৩টির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এশিয়ার প্রধান ভূমি থেকে একদম বিচ্ছিন্ন নয়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য তৈরি করে রেখেছে। তবে বিভিন্ন জরিপ থেকে ধারণা মেলে- সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো নয়।


ইউএনডিপির ব্যুরো ফর পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রাম নোট এবং জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাবডুলায়ে মার ডাইয়ে বলেন, ‘সমুদ্র আমাদের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে, শ্বাসকার্যে ব্যবহৃত মোট অক্সিজেনের অর্ধেক এখানেই উৎপন্ন হয়। ৩ বিলিয়ন এরও বেশি মানুষের জন্য পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। নির্গত মোট কার্বন ডাই অক্সাইডের ৩০ ভাগ শোষণ করে এবং বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত তাপের ৯০ ভাগ নিয়ন্ত্রিত করে। তাই প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানগুলো প্রয়োগ করার মাধ্যমে মহাসাগর ও সামুদ্রিক প্রজাতি সুরক্ষিত করতে হবে। এছাড়া এদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনসাধারণ, ব্যক্তিগত ও নাগরিক সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।’বন্যপ্রাণী দিবস উদযাপন এ বিষয়ে আমাদের সচেতন করে তুলতে পারে। তাই সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ ও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বাতাস, সূর্যরশ্মি, স্রোত ও ঢেউকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির চমৎকার উৎস হিসেবে কাজে লাগিয়েছে অনেক দেশ। বাংলাদেশেও এ ধরনের নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। শুধু তাই নয়, উৎপাদনভিত্তিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ এ দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে আরও উন্নত করতে পারে। আমরা এগিয়ে এলেই সফল হবে সমুদ্র এবং সামুদ্রিক প্রতিবেশকে রক্ষার আয়োজন। বাঁচবে বিপন্ন সামুদ্রিক প্রজাতি। নিয়ন্ত্রণে থাকবে আবহাওয়া ও জলবায়ু।আসুন আমরা বন্যপ্রাণী সম্পর্কে নিজেদের সচেতন করে তুলি। তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যত্নবান হই। পৃথিবীর অস্থিত্বের জন্য প্রাণীকূল বাঁচাই।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
nuru.etv.news@gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৩০ জন ব্লগারের ভাবনাচিন্তা থেকে আপনি জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে কি বার্তা পাচ্ছেন?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:১৩



ব্লগে এখন গড়ে ৩০ জন ব্লগার উপস্হিত থাকেন, লেখেন, পড়েন, মন্তব্য করেন; এদের এসব ভাবনাচিন্তা থেকে দেশের অবস্হা কি সঠিকভাবে বুঝা যাচ্ছে?

জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে ব্লগারেরা মোটামুটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান সরকারের দায়িত্বশীল মানুষজন কি ' হাসিনা সিন্ড্রোমে 'ভুগছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:১০


আপনি কি ধরণের কথা বলেন তার উপর আপনার ব্যক্তিত্ব অনেকটাই নির্ভর করে। পরিস্থিতি বুঝে কথা না বললে শ্রোতার মধ্যে বিরক্তি দেখা দেয়। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেখানে যাহারে জড়াইয়া ধরেছি- তারই কপাল পুড়েছে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৩৯

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে ফটোসেশন করে গণতান্ত্রিক বিশ্বের বৃটেনের ঋষি সুনাক ও আমেরিকার জো বাইডেন ডুবে যাবার পর ক্যানাডার জাস্টিন ট্রুডো লেটেস্ট ভিকটিম। পুতিনের সাথে ছবি তুলে টিউলিপ যায়যায় অবস্থা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই মলাট দেওয়ার সেই সময়গুলো ....

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৬



ছবি কার্টেসী Atick Arts

আজকে ফেসবুকে উপরের ছবিটা চোখে পড়ল আজকে। পুরোনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল। আগে আমাদের নতুন বছর শুরু হত ঠিক এই ভাবেই। স্কুল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ডানপন্হীরা ক্ষমতা দখল করেছে এবং আরো করবে!

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৭



বিশ্বব্যাপি ট্রাম্প সিন্ড্রোম দেখা দিয়েছে: আমেরিকা, ইতালী, ফ্রান্স, জার্মানী, দ: কোরিয়া ও পুরো ইউরোপে ডানপন্হীরা ক্ষমতা দখল করেছে, কিংবা করবে। শুধুমাত্র ভারত ভালো দিকে যাচ্ছে ক্রমশ, মোদীর দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×