বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক, টেলিভিশন উপস্থাপক আসাদ চৌধুরী। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর রয়েছে তার শৈল্পিক পদচারণা। কবিতা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী ইত্যাদি রচনা করেছেন। মনোগ্রাহী টেলিভিশন উপস্থাপনা ও চমৎকার আবৃত্তির জন্যও তিনি সমান জনপ্রিয়। কবি আসাদ চৌধুরী বেশ কয়েকটি অণুবাদকর্মও সম্পাদনা করেছেন। তিনি ষাটের দশকের সময় কবিতা লেখা শুরু করলেও তখন তিনি প্রতিষ্ঠা পেতে সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন। কারণ ষাটের দশকের বাংলা কবিতার পটভূমিতে কুসমাস্তীণর্ ছিল না। তবে হৃদয়বৃত্তির যে সংবেদনশীলতার থাকে তার ভেতর দিয়ে তিনি নিজেকে প্রকাশের এবং ক্রমবিকাশের পথে এগিয়েছেন নিরন্তর কাব্যসাধনা মধ্য দিয়ে। তিনি সত্যিকার অথের্ লেখালেখি শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধের পর। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর রচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। আজ কবি আসাদ চৌধুরীর ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে তিনি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী এবং মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম। আসাদ চৌধুরী আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন। এ বিভাগ থেকে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানীর বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কবি আসাদ চৌধুরীর বিখ্যাত কিছু কাব্যগ্রন্থ হলঃ
তবক দেওয়া পান (১৯৭৫); বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬); প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬); জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২); যে পারে পারুক (১৯৮৩); মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪); মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫); আমার কবিতা (১৯৮৫); ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫); প্রেমের কবিতা (১৯৮৫); দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭); নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২); টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭); বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮); বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮); কবিতা-সমগ্র (২০০২); কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩); ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)।
আসাদ চৌধুরীর কবিতা বিবৃতিময় না। তিনি অল্প কথায়, সীমিত শব্দের বন্ধনে ভাবকে মুক্তি দেন। তবে শব্দে, উপমায়, বণর্নায় জীবন উজ্জীবিত হওয়ার মতো উপাদান আছে। তার কবিতা দুবোর্ধ্য নয়, তিনি কঠিন শব্দ ব্যবহার করার বদলে শিল্প বিনিমাের্ণর দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এতে তার কবিতা সহজ ও সরল হয়ে পড়েনি। বরং এর ভেতর দিয়েই তিনি নিজের বলিষ্ঠ অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন। তার কবিতার ভাষা ও শব্দ পাঠককে বিব্রত করে না, কাছে টানে, আপন করে নেয়। বাংলা কাব্যভুবনে কিছু কিছু কবি আছেন, যাদের নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সৃষ্টিকমর্গুলোও উচ্চারিত হতে থাকে। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটু ব্যতিক্রম হলেও তার নাম উচ্চারিত হলে অবধারিতভাবে আমাদের মনের চোখে ভেসে উঠে ‘গীতাঞ্জলী’ ‘সোনার তরী’ মতো কাব্য, কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ তেমনি আসাদ চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হলে ‘তবক দেয়া পান’ মনে পড়বেই। শুধু তবক দেয়া পান নয়, তার আরও কিছু কাব্য আছে যা বহুল পঠিত। এসব কাব্য পড়ে পাঠক অনুভব করে প্রগাঢ় জীবনবোধ। আজ কবি আসাদ চৌধুরীর ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
nuru.etv.news@gmail.com