হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে আমারই পোশাক এবং গর্ব-অহঙ্কার হচ্ছে আমারই চাদর। তাই যে ব্যক্তি এ দুয়ের কোনোটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেবো।’ (সহিহ মুসলিম)।
মানুষ যখন দম্ভ দেখায় তখন তা আল্লাহর চরম বিরক্তি ও রাগের কারণ হয়। এতটাই রাগ যে, আল্লাহর এসব লোকদের প্রতি তাকাতে বা কথা বলতেও রুচি হবে না। এমনই হবে আল্লাহর মেজাজ, যা দাম্ভিক-অহঙ্কারীর মর্মন্তুদ বিপদ ডেকে আনবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেনঃ আহংকারীদের পিপীলিকার সমান অবয়বে কিয়ামতের দিন উঠানো হবে কিন্তু তাদের আকৃতি হবে মানুষের। অতপর তিনি বলেন, চতুর্দিক থেকে লাঞ্ছনা-গঞ্ছনা তাদেরকে ঘিরে ধরবে। তিনি আরও বলেন, তাদেরকে জাহান্নামের কারাগারের দিকে এভাবে হাঁটিয়ে নেয়া হবে। এ কারাগারের নাম ‘বেলিস’। তাদের উপর আগুন প্রজ্বলনকারী আগুন চড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে ‘তীনাতুল খাবাল’ অর্থাৎ জাহান্নামীদের শরীর নিঃসৃত পানীয় পান করানো হবে। (মিশকাত)
১। সময় ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। তৎকালিন বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারকে এক ব্যতিক্রমী হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, "সরকারকে ল্যাংড়া লুলা বানিয়ে ছেড়ে দেব"। দেখি তারা খুঁড়িয়ে কত দূর যেতে পারে।’ চাঁদপুর স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আজ তার সেই দম্ভ কোথায়? তার পরিণতি আমরা অবলোকন করছি।
২। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরঃ গোপাল গঞ্জের নাম মুছে দেবার হুমকি খালেদার। তৎকালিন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, "গোপালগঞ্জ বলে কিছু থাকবে না"। পুলিশি বাধায় ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে যেতে না পেরে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে এ হুমকি দেন তিনি। গুলশানের বাসা থেকে বের হতে না পেরে পুলিশ, সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় নেতা। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাড়ি কোথায়, গোপালগঞ্জ জেলায়? গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেবো। গোপালগঞ্জ বলে কিছু থাকবে না। এ সময় এক নারী পুলিশ কর্মকর্তাকেও ওই মহিলা কোথায় বলে কটূক্তি করেন খালেদা। তিনি বলেন, এতোক্ষণ কথা বলছিল, ওই মহিলা কোথায়? দেশ কোথায়? গোপালি? এতোক্ষণ তো অনেক কথা বলেছেন। মুখটা বন্ধ কেন এখন? গোপালগঞ্জের জেলার নামই বদলে যাবে। গোপালগঞ্জ আর থাকবে না।
আমরা যেন ইচ্ছাকৃতভাবে এমনকি নিজেদের অজান্তে ভুল করেও আল্লাহর চাদর নিয়ে টানাটানি না করি। এ হাদিসে সুস্পষ্ট যে, তিল পরিমাণ অহঙ্কারী হওয়ারও অনুমতি বা অধিকার আল্লাহ কোনো বান্দাকে দেননি। অথচ আমরা কত প্রকারের কত পরিমাণ অহঙ্কারে যে জড়িয়ে যাই, তা ভেবেও দেখি না। একটু-আধটু সম্মান ও সম্পদের কারণে তো বটেই, এমনকি আল্লাহর ইবাদত, ইলম, আমল নিয়েও অহঙ্কার করি।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাহ্যিক কিছু সুন্নতের ওপর আমল করেও আমরা কম-বেশি অহঙ্কারী হয়ে পড়ি। নিজেকে খুব আমলদার, পরহেজগার এবং সুন্নত পালনকারী ভেবে মনে মনে অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ববোধ করি। সেই আমিত্বের ভাব ও আচরণ নিয়ে সমাজে চলি। অথচ এই দম্ভ ও অহঙ্কারের ভাবটুকুই আমাদের যতটুকু ইলম, আমল বা সুন্নতের অন্তত বাহ্যিক পাবন্দি ছিল, সেগুলোকেও বেকার ও বরবাদ করে দেয় প্রতিনিয়ত।
হযরত সালামা ইবনে আকওয়া রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মানুষ যখন নিজেকে নিয়েই কেবল ব্যস্ত থাকে, তখন একপর্যায়ে তাকে দাম্ভিকের কাতারে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়। তারপর দাম্ভিকের প্রাপ্ত সাজা-শাস্তি সেও পেয়ে থাকে।’ (সুনানে তিরমিজি)।
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
nuru.etv.news@gmail.com
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৭