অনলাইনে ক্যাচাল করার সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন মাধ্য ফেসবুক, ব্লগ, ওয়েবসাইট। কারও কোনো কথা পছন্দ হলো না, অমনি শুরু হয়ে গেল। কারও কোনো যুক্তি নিজের আবেগ-বিশ্বাসে হানা দিল, শুরু হলো পাল্টা হামলা। কারও প্রমাণ নিজের পূর্বধারণার পরিপন্থী, ব্যাস শুরু হলো ক্যাচাল। আর একবার এই ক্যাচার শুরু হলে তা থামবার নাম নাই। ইসলামি জীবনব্যবস্থার শেষ নাবী মুহাম্মাদ(সঃ) কে তাঁর সময় থেকে শুরু করে আজও বিভিন্ন তকমা দেওয়া হচ্ছে। জাদুকর, কবি থেকে শুরু করে হাল আমলে তাঁর নাম বিকৃত করে বিভিন্ন তকমা দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে নিজেদের দাবি করেন, তারাও হরহামেশাই অন্যদেরকে বিভিন্ন তকমায় “ভূষিত” করেন। নিঃসন্দেহে এটা ভিন্নমত পোষণের সবচেয়ে নীচু ধরন যা দুঃখজনক। যখন কোনো মুসলিম যুক্তি ও প্রমাণের সাহায্যে স্রষ্টার অস্তিত্ব, একত্ব, নাবী ও প্রত্যাদেশের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরেন তখন তার সঙ্গে ক্যাচাল করার অন্যতম উপায় হচ্ছে প্রথমে তাকে মৌলবাদীর “তকমা” দেওয়া। তারপর ব্যক্তি আক্রমণ করা। ক্যাচাল করার অন্যতম আরেকটা কৌশল হচ্ছে মূল পয়েন্ট থেকে দূরে সরে গিয়ে পার্শ্ববিষয়ের উপর আলো ফেলে সেটা নিয়ে তর্ক করা। কী বলা হচ্ছে সেটা ভালো করে না-বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়া হয়। কোনো সন্দেহ নেই, মানুষের অহংবোধ, আগে থেকে লালিত বিশ্বাস এক্ষেত্রে যৌক্তিক ও ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা থেকে বিরত রেখে তাকে ক্যাচালে উদ্বুদ্ধ করে।
বেশ কয়েকদনি যাবৎ সামুর পাতা গরম হচ্ছে "ইসলামে গান বাজনা হারাম" কথাটা মিথ্যাতো নয়।ইসলাম ধর্মে গান-বাজনা শোনা হারাম। আর তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে লেশমাত্র সন্দেহ নেই। সলফে সালেহীন; সাহাবা ও তাবেঈন কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে যে, গান অন্তরে মুনাফিকী (কপটতা) উদগত করে। উপরন্ত গান শোনা-অসার বাক্য শোনা এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পর্যায়ভুক্ত। আর আল্লাহ তা’আলা বলেন, “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে যারা অজ্ঞতায় লোকেদেরকে আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসাড় বাক্য বেছে নেয় এবং আল্লাহ্র প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।” (সূরা লুকমান ৬ আয়াত) তবে গানবাজনা সম্পর্কে এই আয়াতে আরো ব্যাখ্যা আছে। ইসলামে গান-বাদ্য হারাম নয়, হারাম হচ্ছে অশ্লীলতা। অশ্লীলতাকে ইসলাম অবশ্যই হারাম ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোর’আনে রয়েছে, “আল্লাহ মন্দ কাজের আদেশ দেন না (সুরা আরাফ ২৮)।” তাহলে যে সকল গান সমূহের মাধ্যমে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো হয় সে সকল গান অবশ্যই হারাম। বর্তমানে আমরা একটি কঠিন সময় অতিবাহিত করছি। পুরো বিশ্ব আজ দাজ্জালীয় ‘সভ্যতা’র করতলগত। এখানে ন্যায়-অন্যায় বলে কিছু নেই। এখানে শক্তি ও অর্থই সব। অর্থই এখানে সম্মানিত হওয়ার একমাত্র মানদ-। মানুষের মধ্যকার মনুষ্যত্ব আজ ধ্বংসপ্রায়। তাহলে এই যুগসন্ধিক্ষণে এসে আমাদের করণীয় কী? আমাদের একমাত্র করণীয় হচ্ছে এই দাজ্জালীয় ‘সভ্যতা’কে ভেঙ্গে একটি নতুন সভ্যতার নির্মাণ করা। একটি পুরাতন জরাজীর্ণ অট্টালিকাকে ভেঙ্গে সেই জায়গায় নতুন একটি অট্টালিকা নির্মাণ চাট্টিখানি কথা নয়। অনেক সময় দেখা যায় লেখক লিখলেন এক জিনিস, কিন্তু আমাদের পূর্বধারণা, (prejudice), অসচেতনতা কিংবা পর্যালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে বুঝলাম আরেক জিনিস। ফলে আমাদের প্রতিক্রিয়া এক্ষেত্রে সঠিক হবে না। আমাদের ভিন্নমত মূল বিষয়কে পাশে ফেলে তুচ্ছ বা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তুলে ধরবে। কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন বিষয় নিয়ে ক্যাচাল শুরু হবে যার সঙ্গে মূল লেখার কোনো সম্পর্কই নেই। তাই যুক্তি ও প্রমাণের সাহায্যে কারও মতের বিরোধিতা করতে হলে নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। ভিন্নমত থাকলে এরপর শ্রদ্ধাপূর্ণ উপায়ে সেটা তুলে ধরুন। লেখককে সহযোগিতা করুন। আসুন ক্যাচাল করে পরিবেশ গরম করে বা সাময়িক তৃপ্তির ঢেঁকুর না-তুলে পরস্পরের প্রতি পর ধর্মের প্রতি সম্মানজনক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাব গ্রহণ করি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৫