সুস্থ্য জীবনের জন্য ঘুম একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া। ঘুম ছাড়া মানুষ অসম্পূর্ণ এবং অসুস্থ্য। নিষ্ক্রিয় জাগ্রত অবস্থার সাথে ঘুমন্ত অবস্থার পার্থক্য হল এ সময় উত্তেজনায় সাড়া দেবার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শীতনিদ্রা বা কোমার চেয়ে সহজেই জাগ্রত অবস্থায় ফেরত আসা যায়। সকল স্তন্যপায়ী ও পাখি এবং বহু সরীসৃপ, উভচর এবং মাছের মধ্যে ঘুমানোর প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী এবং অন্য বেশ কিছু প্রানীর (যেমন কিছু প্রজাতির মাছ, পাখি, পিঁপড়া এবং ফ্রুটফ্লাই) অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে নিয়মত ঘুম আবশ্যক। ঘুমানোর কারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি এবং তা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে। আর একটি ব্যপার। ঘুমন্ত মানুষের চেহারার কোন এক অজানা অতিরিক্ত আবেগ অনুভূতি কাজ করে। যা তার গোপন এক প্রাকৃতিক নিরাপত্তা দেয়।
ঘুম মানুষকে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এবং পরবর্তী দিনের জন্য তৈরী করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ঘুম হীন একটি রাতের ক্লান্তি দূর করতে অন্তত সাত রাতে তার মাসুল দিতে হয়। ঘুম রাজা-রানী, গরীব দুঃথী, চোর ডাকাত কিংবা সাধু দরবেশ কাউকেই ছাড় দেয়না। ঘুম যখন ভর করে তখন স্থান কাল পাত্র কিছুরই পরোয়া করেনা।
ঘুমের ব্যাঘাতের জন্য ক্লান্তি বোধ হয়।
নানাবিধ কারনে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে যেমন সংসার আর সন্তানদের ঝামেলা; অর্থনৈতিক কষ্ট, কাজ বন্ধ, বন্ধুত্বের ফাটল অথবা কোন কঠিন অসুখ ঘুমের নরম পেলবকে একেবারেই অসম্ভব করে তোলে।
কারো পক্ষেই হয়তো এই সকল ব্যাপারগুলোকে একেবারে হাতের মুঠোয় আনা সম্ভব না। কিন্তু একটু চেষ্টা করলে ঘুমের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় এবং কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে একটা শান্ত-বিশ্রামময় ঘুম আনতে সহায়তা করবে। শান্ত ও ক্লান্তিনাশক একটি ভাল ঘুমের জন্য নিচের কিছু উপায় সহায়ক হবে।
১। আজ থেকেই শুরু করুন একটা শিথিল ঘুমের রুটিন সময়।
২। একই কথা প্রতি রাতে আপনার মনকে শোনান এবং এখন সব বন্ধ করে আমি ঘুমাব।
৩। ঘুমের পূর্বপ্রস্তুতি হতে পারে একটা সুন্দর গোছল বা একটা বইপড়া বা কোন হাল্কা গান।
৪। যখনি ক্লান্ত এবং ঘুমে ভেঙে পড়ছেন তখনই আপনি আলো বন্ধ করুন এবং ঘুমাতে যান।
৫। যদি ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে তাহলে আবার কাজ করতে উঠে পড়ুন এবং ক্লান্ত হলে ঘুমাতে যান । ঘুম নিয়ে অযথা কোন দুশ্চিন্তা ঠিক না। ঘুমের দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘুমাতে দেবে না।
৬। ঘুম ঘরের আলোটাও হতে হবে বন্ধ কিংবা স্নিগ্ধ।
৭। প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করতে হবে। ৮। ছুটির দিনগুলোতে ঘুমের একই রুটিন বজায় রাখতে হবে।
৯। তরল খাদ্য সন্ধ্যার পর থেকে কমিয়ে দিতে হবে। তরল খাদ্যের আধিক্যে সারারাত আপনার ঘুম ভাঙবে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে।
১০। ঘুমের অন্তত ২ ঘণ্টা আগে ডিনার সেরে ফেলতে হবে।
১১। নিকোটিন, কফি ও এ্যাকোহল সন্ধ্যা বেলাতে পরিহার করুন : এসব উত্তেজক আপনাকে জাগত রাখে। কফি খেলেও ঘুমের ৮ ঘণ্টা আগে খেতে হবে। কারণ, কফি শরীর জমা করে রাখতে পারে না। খাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত শরীর থেকে কফি নিঃসরণ হয় এবং এর প্রভাব থাকে।
১২। ধূমপায়ীদের প্রায়শ রাতে সিগারেট না খাওয়ার জন্য পার্শ্বপ্রক্রিয়ার জন্য ঘুমের ব্যাঘাত হয়।
১৩। প্রচলিতভাবে মনে হলেও এ্যালকোহল কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
১৪। প্রতিদিন অল্পবিস্তর ব্যায়াম করুন : প্রতিদিনের হাল্কা অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনাকে একটা অচ্ছেদ্য ঘুম উপহার দিতে পারে।
১৫। সাধারণত রাতেই ঘুমান : দুপুরে ঘুম কিন্তু আপনার রাতের শান্ত বিশ্রামকে কেড়ে নিতে পারে। দুপুরের ভাতঘুম নিতে হয় তবে সেটি আধা ঘণ্টার বেশি নয়।
১৬। ঘুমের জন্য আরামদায়ক ম্যাট্রেস ও নরম বালিশ বেছে নিন।
১৭। যদি কেউ আপনার সাথে শোয় তবে দেখতে হবে দু’জনার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি-না।
১৮। বাচ্চা বা পোষা প্রাণির জন্য একই বিছানায় ঘুম কখনওবা আপনার ঘুমের ব্যাঘাতের মূল কারণ হয়ে থাকে।
১৯। ঘুমের ওষুধ শুধু শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শে শুধু ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন। আস্তে আস্তে সেটাও কমিয়ে দিন। সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
আশা করি উপরের টিপসগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে একটি সুন্দর ও ক্লান্তি হরণ ঘুম পেতে পারেন। মনে রাখবেন একটি নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম আপনাকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সকল মানবিক গুণাবলী প্রকাশে সহায়ক হবে। ঘুম হীন মানুষ যেকোন অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৪