গত ১৫ বছর এই সরকার যেভাবে দেশ চালিয়েছে, বিরোধীদেরকে যেভাবে কন্ট্রোলে রেখেছে এবার সেভাবে পারেনি। শেখ হাসিনার বিভিন্ন বক্তব্যে দেখা গিয়েছে উনি খুবই চিন্তিত ছিল এই আন্দোলন নিয়ে। একটি সাদামাটা আন্দোলন কিভাবে এত সহিংস হয়ে উঠেছে তা সবারই চোখের সামনে ঘটেছে। যেমনটি সবসময় হয়, ছাত্রদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আর ছাত্রদের কাছে থাকেনা। মেট্রোরেল, টোলপ্লাজা, সরকারি গাড়ি, বিটিভি সেন্টার এসব জায়গায় ব্যাপক অগ্নি সংযোগ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু কন্ট্রোলে নিতে সরকারকে কারফিউ দিতে হয়েছে, সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে হয়েছে, পাঁচ দিন ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে হয়েছে!
আমার ব্যক্তিগতভাবে একজন পুলিশ সদস্যের সাথে কথা হয়েছিল আন্দোলন চলাকালীন সময়ে। যার কথা থেকে বুঝতে পেরেছি অতীতের কোনো আন্দোলনে এত পরিমাণ পুলিশ সদস্য নিহত হয়নি, যতটা হয়েছে এই আন্দোলনে! আন্দোলনকারীদের সকল ক্রোধ, রাগ পুলিশ ও ছাত্রলীগের উপরে গিয়ে পড়েছে। এমনিতেও পুলিশ ও ছাত্রলীগের উপর বিএনপি জামাত ও বিরোধীদের সবচেয়ে বেশি আক্রোশ।
এ আন্দোলনে কিংবা অনুরূপ কোন আন্দোলনে যদি এই সরকারের পতন হয় তাহলে দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। বড় বড় নেতা কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকও জামাত, শিবিরের আক্রোশ থেকে বাঁচতে পারবে না। এরা এতটাই হিংস্র হয়ে আছে হাতের কাছে সুযোগ পেলেই জীবন নিয়ে নেবে। বিএনপিও এদেরকে কন্ট্রোল করতে পারবে না। সাধারণত দুই ভাবে মানুষ ব্রেনওয়াশ হলে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত ঘটে। তার মধ্যে একটি হলো সামরিক ব্রেনওয়াশ এবং আরেকটি হল ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ব্রেন ওয়াশ। তবে প্রথমটি অর্থাৎ সামরিক ব্রেনওয়াশড হলে ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপদস্থ নেতা ও সামরিক বাহিনীর নিজেদের মধ্যে রক্তপাত ঘটে। কিন্তু ধর্মীয়ভাবে ব্রেইনওয়াশড হলে সারা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে রক্তপাত ঘটার সম্ভাবনা থাকে! জামাত-শিবির অবশ্যই ধর্মীয়ভাবে ব্রেনওয়াশড, তাই সরকার পতন হলে এরা সারাদেশেই রক্তপাত ঘটাবে। অন্তত এই আন্দোলন থেকে তাদের আক্রোশের পরিমাণ কেমন সেটার একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গিয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের একটি মারাত্মক ভুল ছিল এ আন্দোলনটিকে জটিল হতে দেওয়া। ছাত্রদের এই আন্দোলনটি প্রথম দিনেই খুব সহজেই সমাধান করে দেওয়া যেতো। সম্ভবত শেখ হাসিনা দেখতে চেয়েছিলেন দেশে উনার অবস্থা কেমন এবং উনার দলীয় নেতাকর্মীরা বিপদে কিভাবে দলের জন্য কাজ করে। উনার যা দেখার দেখা হয়ে গেছে, গুলি উনার কানের পাশ দিয়ে গেছে!
এ আন্দোলনের মুখে উনার পতন হলে যেমনটি বলেছিলাম খুবই মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হতো দেশে। আগামীতেও এ ধরনের কিংবা তার চেয়েও জোরালো আন্দোলন হবে। উনি যদি আন্দাজ করতে পারেন আন্দোলনের কারণে উনার পতন হতে যাচ্ছে, তাহলে উনার উচিত হবে একটি আগাম নির্বাচন দিয়ে সরে যাওয়া অথবা সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটি কম্প্রোমাইজে চলে যাওয়া। অন্যথায় উনার দলীয় ক্যাডার বাহিনী দেশে যা করেছে তার জন্য উনার দলের সাধারণ সমর্থকদের রক্ত দিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৩:১৫