গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। উনার বক্তব্য শুনেছি, দরকারী তেমন কোনো কথা উনি বলেননি। এই দলটি বাঙ্গালীদের সবচেয়ে পুরানো ও জনপ্রিয় দল। দলটির সভানেত্রীর পদ উনি ৪৩ বছর নিজের কাছে রেখেছেন। আগামীর নেতৃত্বের সম্পর্কে উনার স্পষ্ট কোন বার্তা পাওয়া যায়নি। বুঝা যাচ্ছে উনি আমৃত্যু এই পদে থাকছেন। কিন্তু উনি যখন থাকবেন না তখন দলটির নেতৃত্ব কিভাবে নির্ধারিত হবে, কিংবা এই নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা সে আভাসও তিনি দেননি।
তিনি আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস বলেছেন যেগুলি শত সহস্রবার বলা হয়েছে, মানুষ ইহা জানে। এছাড়া উনি সরকারের সফলতা ও উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। সরকারের সফলতা ও উন্নয়ন নিয়ে উনি ও উনার দলের অনেকেই প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছে। দলীয় প্রধান হিসেবে উনি আমন্ত্রিত ছিলেন তাই ভাবছিলাম দল নিয়ে, দলের ভবিষ্যত নিয়ে উনি কথা বেশি বলবেন।
এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন করেছিল ৭০ নির্বাচনে। মানুষের সমর্থন পেয়েও সে সময় সরকার গঠন করতে পারেনি দলটি। এরপরে অনেক কিছুই জাতির ইতিহাসে ঘটে গেছে। শেখ হাসিনা এ দলটির সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন। মানুষ শেখের বেটি হিসেবে তাকে ভালোবেসেছে, তার কাছে অনেক আশা রেখেছিল, উনিও সেই পথে এগিয়েছিলেন। কিন্তু যখনই উনার মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ হয়েছে উনি তখন অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় বেশি নষ্ট করেছেন।ওয়ান ইলেভেন সরকারের পরে উনি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে নিজ দলে অনেক দুষ্ট লোকের সমাগম ঘটিয়েছেন। তার দলের অনেকেই জাতির বিপক্ষে কাজ করতে দেখেও উনি চুপ করে ছিলেন। এখন দলকে এরা এক প্রকার গিলে খাচ্ছে। সম্ভবত ইদানিং উনি একটু নাড়া দিয়ে দেখতে চাচ্ছেন, তবে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ঠগ বাঁচতেই গাঁ উজাড় হবার অবস্থা হচ্ছে!
১৯৪৯ সাল থেকে আজকের এই দিন পর্যন্ত এই দলটি বাংলাদেশের সকল বড় বড় কর্মযজ্ঞ ও ঘটনা প্রবাহের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাধারণ মানুষ এই দলটিকে সবসময় ভালবেসেছিল, মানুষ বিশ্বাস করতো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য এই দলটিকে দেশ শাসনের ভার দেওয়া দরকার। মানুষ সুযোগও দিয়েছিল, কিন্তু আশানুরূপ কোন ফল পাওয়া যায়নি। চার মেয়াদ ধরে টানা এই দলটি দেশ চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ যেভাবে হওয়ার কথা ছিল তার কন্যা দেশকে ঠিক সে পথে নিয়ে যেতে পারেনি। পারিপার্শ্বিক অনেক প্রতিকূলতা ছিল কিন্তু তিনি সেগুলিকে ম্যানেজ করতে গিয়ে অনেক অসৎ ও দুষ্ট লোকের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে। এখন উনি চাইলেও অনেক কিছু করতে পারবেন না। তাই উনার উচিত ছিল দল এবং সরকারের মধ্যে একটি লাইন তৈরি করা। বাঙ্গালীদের এই পুরনো দলটিকে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলা এবং সরকারকে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। উনি উনার প্রাইম টাইমে আছেন, সরকারে অনেক কিছু করতে না পারলেও দলের মধ্যে উনি অনেক কিছুই করতে পারবেন। আগামী নেতৃত্ব উনি যদি সঠিকভাবে ঠিক করে না দিয়ে যেতে পারেন, উনি যখন থাকবে না উনার বদনাম করবে সকলেই।যাইহোক ৭৫ বছরের পুরনো এই দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উনি যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে ন্যূনতম কোন সম্ভাবনা উঁকি দেয়নি।
তবে সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে ভালো দিক হলো এ দলটি এখনো তার সম্মেলন গুলি ঠিকভাবে করে আসছে। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ট্রাজেডির পরেও শেখ হাসিনা দেশে আসা পর্যন্ত তিনবার দলটির জাতীয় সম্মেলন করা হয়েছে। এমন দুর্দিনেও দলটির জাতীয় সম্মেলন করাটা সত্যিকার অর্থে একটি ভালো দিক। যারা বলছেন বিএনপির জাতীয় সম্মেলন করতে পারেনা সরকারের জন্য, তারা অন্তত ৭৫ এর পরে আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন গুলি হয়েছে সেগুলো নিয়ে রিসার্চ করতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১