বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সরকার গঠনের জন্য ভোট দিয়েছে। ৭৫ এর নৃশংসতার পরে এই দলটি তার কক্ষপথ থেকে হারিয়ে যায়। বহু চড়াই উৎরাই পার হয়ে শেখ সাহেবের কন্যা এই দলটির সভাপতি হয়েছে। সরকার গঠন করে শেখ সাহেব মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করার বেশি সময় পায়নি এই অজুহাতে শেখ সাহেবকে কিছুটা দায় মুক্তি দেওয়া যায়। কিন্তু উনার মেয়ে বাঙ্গালীদের এই বড় দলটির দায়িত্ব আজকে প্রায় ৪৩ বছর ধরে নিজের কাছে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী হয়েছে ২০ বছর! উনি সময় পাননি এমনটা তো বলা যায় না।
যে সময় উনি পেয়েছে এ সময় উনি অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিতে পারতেন, উনি তা করেননি। এই সময়টুকু উনার বাবা পেলে দেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতো। উনি বাঙ্গালীদের এই পুরনো দলটিকে শক্তিশালী করেননি, ভিতর থেকে দুর্বল করে দিয়েছেন। অনেক কিছুই উনার অজান্তে হয়েছে, আবার অনেক কিছুই উনি জেনে বুঝেই করেছেন।
দলে উনি উনার অবস্থানকে এমন জায়গা নিয়েছেন উনার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলার মত কেউই নেই! আওয়ামী লীগ বলতে এখন কোনো দল আছে বলে মনে হয় না! তবে শেখ হাসিনার নাম নিলে আওয়ামী লীগের নাম না নিলেও চলে। উনি নিজেই এখন একটি দল হয়ে গেছেন। উনার নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয় না। এত বড় দলে শুধুমাত্র একটি পদ, সেটা সভাপতির পদ! সহজভাবে বলতে গেলে উনি একটি কাল্ট তৈরি করেছেন, যেখানে সবাই উনার কথা মত উঠেবসে। ভালো মন্দ দেখিয়ে দেওয়ার মত সাহস কারো মধ্যে নেই।
দলীয় ও মন্ত্রিসভার বৈঠকগুলি যেগুলি মিডিয়াতে প্রচার হয় সেগুলিতে দেখা যায় উনি অনর্গল বলে যেতে থাকেন। উনার আশপাশ থেকে কারো কোন কথাই শোনা যায় না। উনার সামনে, আশেপাশে যারা থাকে তারা চিংড়ি মাছের মতোই নিশ্চুপভাবে বসে থাকে। এইসব বৈঠকে উনার কথাগুলি শুনলে মনে হয় একজন কাল্ট প্রধান তার বক্তব্য রাখছে, আর সবাই মুগ্ধ হয়ে সে কথাগুলি উপভোগ করছে!
বাঙ্গালীদের এই সর্ববৃহৎ দল থেকে উনি বদি, পাপুল, আনার, মানার এবং উহাদের বউকেও উনি সংসদে নিয়ে গেছেন। এসব লোক সংসদে গিয়ে জাতির জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন উনি ভালো বলতে পারবেন। সংসদে উনার ৩০০ এমপি কোন বিল আনতে পারছে না, বিল এনে সেটাকে আইনের রূপ দিতেও পারছে না। উনি এবং আমলারা মিলে সংসদে বিল আনেন। ঐসব বিলের বিরোধিতা করতেও কাউকে দেখা যায় না। দেশে জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক বিল আনার প্রয়োজন আছে, সেগুলি নিয়ে কেউ কথা বলছে না। সংসদেও উনার কথা সবাই মনমুগ্ধ হয়ে শুনেন, টেবিল চাপড়ান এবং নাস্তা, পানি খেয়ে বের হয়ে যায়।
উনার উপর যে আশা বাঙালিরা রেখেছিল সে আশা উনি সঠিকভাবে পূরণ করতে পারেনি। সম্ভবত উনার কাজ করার সময়ও আর নেই। বিশ্ব এমন কমপ্লেক্স অর্থনীতি ও টেকনোলজির দিকে প্রবেশ করছে সে তুলনায় উনার কোনো প্রস্তুতি নেই। উনি শুধু মাত্র জাতির পিতার হত্যা এবং বিএনপি জামাতকে থামাতে পেরেছেন। এই ভিন্ন উনার খুব বেশি আর সাফল্য নেই। জাতিকে উনি এমন এক জায়গায় রেখে যাচ্ছেন সে বৃত্ত থেকে আর বের হওয়ার উপায় নেই। উনি যখন থাকবে না, বাঙ্গালীদের এই সর্ববৃহৎ দলটি ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে পড়বে এবং উনার ভুলত্রুটিগুলি তখন আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২৪ রাত ১:২১