আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে, সে ধরনের পরিস্থিতি যদি বিএনপি ক্ষমতায় থেকে তৈরি করতো তবে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে নামাতে আওয়ামী লীগের পাঁচ মাসের বেশি সময় লাগতো না। কিন্তু বিএনপি কেনো পারছে না আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে! এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিএনপির দিক নির্দেশনা যে নেতা দিচ্ছে তার কোয়ালিটির জন্য। আরেকটি কারণ আছে, বিএনপি'র বেশিরভাগ কর্মী নিজ দলের সমালোচনা করতে পছন্দ করে না। বিশেষ করে নেতাদের ভুল সিদ্ধান্ত গুলিতে তারা কখনোই চ্যালেঞ্জ করে না। তাদের মধ্যে সব সময় এই ধারণা বিরাজ করে, নেতা যখন বলেছে তাহলে ঠিকই বলেছে। এই ধরনের ধারণা দলকে রাজনৈতিক ধারা থেকে কক্ষচ্যুত করে।
এ যেমন ধরুন, বিএনপি'র শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। রাস্তায় তাদের একজন নেতা নিজের গায়ের ইন্ডিয়ান চাদর খুলে পুড়িয়ে ফেলে সবাইকে সে আহবানে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য বলেছে। বলুন, এটা কি খুবই ছোট একটি বিষয়! একটি রাজনৈতিক দল তার বৃহৎ একটি প্রতিবেশী দেশ যে কিনা এ দেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব রাখে, তাদেরই পণ্য বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য এর একদিন পরেই নেতারা বলতে শুরু করেছে এটি দলীয় কোন সিদ্ধান্ত নয়। দেখুন এত বড় একটি সংবেদনশীল ডিসিশন সেটাও তারা সমন্বয় করে নিতে পারেনি। রাজনীতির ক্ষেত্রে এই ধরনের অপরিপক্কতা তাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
এরপর আসুন গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা জোর গলায় বলেছিল ভারত আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যা যা করার সব করছে। নির্বাচন শেষে আওয়ামী লীগ যখন জয় লাভ করে ক্ষমতায় বসে, তারা বলতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে যা করার দরকার ভারত সবকিছুই করেছে। এই যে স্টেটমেন্ট গুলি তারা দিচ্ছে এগুলো এত সরলীকরণ করে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? নির্বাচন থেকে যখন বিএনপি সরে দাঁড়িয়েছে তখন পাগল এবং শিশুও নিশ্চিত করে বলতে পারছে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। কারণ আপনি যখন মাঠ খালি করে দিয়ে দিচ্ছেন তখন অবশ্যই আপনার প্রতিপক্ষ আপনাকে গোল খাওয়াবেই। বিএনপি নিজেদেরকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার ফলেই আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ভাবে ক্ষমতায় বসতে পেরেছে, এখানে ভারতের আর কোন পদক্ষেপেরই দরকার হয়নি। এখন এটা বলা ঠিক হবে না যে, ভারত আওমীলীগকে নির্বাচনে জিতিয়ে সরকার গঠন করে দিয়েছে।
তবে এটা বলতে পারেন বিএনপিকে নির্বাচন থেকে সরানোর জন্যই হয়তো ভারত কোনো কৌশল অবলম্বন করেছে। ঠিক আছে এ ধরনের স্টেটমেন্ট যখন দিবেন তখন অবশ্যই সেই কৌশলটাও প্রকাশ করে দেওয়া উচিত, যা ভারত বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে নিয়েছিল। আজ পর্যন্ত বিএনপির কোন নেতার মুখে বা আলোচনায় শুনতে পাইনি ভারত ঠিক কি কৌশল করেছে যাতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি! অথবা অন্তত এইটুকু তারা বলতে পারে, যেই দুইবার বিএনপি দেশের ক্ষমতায় বসে ছিল সেসময় ভারত ঠিক কি কারণে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসায়নি?
আসলে দেশের ক্ষমতায় যেতে হলে সঠিক রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেই ক্ষমতায় যেতে হবে। মানুষের যৌক্তিক সমর্থন আদায় করে নিতে হবে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে নিজেদের কর্মপরিকল্পনার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। আর সর্বশেষ এই ধরনের কর্মযজ্ঞ করতে সঠিক ও চৌকস নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে। দিনশেষে নিজেদের রাজনীতি নিজেদেরই করতে হবে, অন্য দেশের ওপর ভর করে আশা করা যায় কিন্তু ক্ষমতায় বসা যায় না। গাড়ির চাকায় যদি ফুটো থাকে তাহলে বাহির থেকে যতই হাওয়া দিবেন গাড়ি চলবে না। গাড়ি চালাতে হলে চাকার ফুটো আগে সারাতে হবে।
বিএনপিকে দেশের ক্ষমতায় আসতে হলে আগে নিজেদের দলের জন্য সঠিক রাজনীতি করতে হবে। মানুষকে সঠিক স্বপ্ন দেখাতে হবে। বেগম জিয়াকে মুক্ত করা হবে, তারেক জিয়া বীরের বেশে দেশে ফিরবে, ক্ষমতায় আসলে জামাত শিবিরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে এ ধরনের স্বপ্ন মানুষ এখন আর দেখতে চাচ্ছে না। কারণ এই গুলো মানুষের কাছে এক সময় দুঃস্বপ্ন ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:০৩