মুরতাদ ইস্যুটি নিয়ে ২০১২-১৩ সালের দিকে খুব আলোচনা চলছিল এ দেশে। মুরতাদ তাদেরকেই বলা হয়, যারা একবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, পরে আবার ছেড়ে দিয়েছে। এই ধর্ম ছেড়ে দেওয়া মানুষদের আমাদের ধর্মে খুবই খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং এটাকে ধর্মের সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার জন্য এর শাস্তিও সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার শরিয়া আইন আছে। আর এই জন্যই এই মুরতাদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে শুধু বাংলাদেশে না সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় অনেককেই প্রাণ দিতে হয়েছে অথবা দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যেতে হয়েছে!
আমাদের দেশে যেহেতু শরিয়া আইন চালু নেই সেজন্য এই মুরতাদদের হত্যা করার জন্য অনেকেই নিজের হাতে আইন তুলে নেয়। আর এতে তারা কোন অপরাধবোধও অনুভব করে না, বরং উল্টো তারা মহান আল্লাহ থেকে পুরস্কৃত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু আমরা আজকে দেখব মুরতাদ হত্যা করার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে কোনো নির্দেশ দিয়েছেন কিনা।
প্রথমে মুরতাদ সম্পর্কে কোরআনের এই চারটি আয়াত পর পর দেখুন।
কিরূপে আল্লাহ সেই সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করবেন যারা বিশ্বাস স্থাপনের পর, রাসূলের সত্যতা বিষয়ে সাক্ষ্যদানের পর এবং তাদের নিকট প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ আসার পরও অবিশ্বাসী হয়েছে? আর আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেননা।
আল ইমরান(৮৬)
এরাই তারা, যাদের প্রতিদান হল, নিশ্চয় তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সকল মানুষের লা’নত।(৮৭)
তারা তাতে স্থায়ী হবে, তাদের থেকে আযাব শিথিল করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।(৮৮)
কিন্তু তারা ছাড়া যারা এরপরে তাওবা করেছে এবং শুধরে নিয়েছে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু(৮৯)
এখানে দেখুন আল্লাহকে অবিশ্বাস যারা করবে তাদেরকে আল্লাহ নিজেই শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ ইহকালে নয়, পরকালে তারা শাস্তির মুখোমুখি হবে। এরপর এখানের শেষের আয়াতটি দেখুন যেখানে বলেছে তারা ছাড়া, যারা এর পরে তওবা করেছে। অর্থাৎ এখান থেকে তওবা করে ফিরে আসার সুযোগ আছে।
এখন আপনি যদি তাকে হত্যাই করে ফেলেন মুরতাদ হওয়ার জন্য, তাহলে কিন্তু আপনি তাকে তওবা করে ফিরে আসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন। তার প্রতি ইনসাফ করতে পারেননি। এর জন্য তো আপনাকেই জবাবদিহি করতে হবে।
শুধু এটা না, আমি মনে করি শরিয়া আইন চালু থাকলেও কোরআনের আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ মুরতাদদের কতল করার নির্দেশ কোথাও দেননি।
এবার সূরা নিসার এই আয়াতটি দেখুন এখানে কি বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, অতঃপর অবিশ্বাসী হয়, পুনরায় বিশ্বাস স্থা্পন করে এবং আবার অবিশ্বাসী হয়, অনন্তর অবিশ্বাসে পরিবর্ধিত হয়, তাহলে আল্লাহ কখনই তাদেরকে ক্ষমা করবেননা এবং তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেননা।” সূরা নিসা(১৩৭)
খুবই স্পষ্টভাবে এখানে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহর উপর থেকে বিশ্বাস কেউ যদি সরিয়ে নেয়, আবার বিশ্বাস করার সুযোগ থাকে এবং আবারও সরিয়ে নিলে আবারও বিশ্বাস করার সুযোগ আছে। এখন আপনি যদি তাকে হত্যা করে ফেলেন তাহলে তার ফিরে আসার সুযোগ আপনি রাখছেন কোথায়? অর্থাৎ কোরআনে আল্লাহ আমাদেরকে যে ডিভাইন কমান্ড দিয়েছেন সেটাতে মুরতাদদের হত্যা করার জন্য কোন অবস্থাতেই নির্দেশ দেননি। তারপরেও অতি উৎসাহী একদল ধর্মান্ধ মুরতাদ হত্যা করতে পারলে বেহেশত কনফার্ম এমন ধারণা পোষণ করে।
যুগে যুগে আমরা কোরআন বুঝে না পড়ার কারণে শুধুমাত্র হাদিসের ভিত্তিতে ইসলাম চর্চা করতে গিয়ে বিপথগামী ও ধর্মান্ধ হচ্ছি। কোরআন অনুযায়ী যদি আপনি ধর্মচর্চা করেন ইসলাম ধর্মে আপনি সবচেয়ে ভালো কমফোর্ট ফিল করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৪:৫৪