সরকার পরিবর্তন হলে কিংবা সরকারের পতন হলে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতো তাহলে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক দেশ হতো পাকিস্তান। এ দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কোন সরকারই তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি! কিন্তু আমরা জানি সেখানে গণতন্ত্রের কি একটা অবস্থা। আসলে সরকারের পরিবর্তন কিংবা পতনের মধ্য দিয়ে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারের যে অর্গানগুলো আছে সেগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হয়। সেখানে যদি ম্যানিফুলেশন করা হয় তাহলে কখনোই গণতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করবে না। এ জায়গায় সকল দলগুলোকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। যারাই ক্ষমতায় আসুক এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার যে পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে চাচ্ছে এটাই সঠিক পদ্ধতি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনে সরকার হস্তক্ষেপ করে, যার জন্য পদ্ধতি সঠিক হলেও সেটা সঠিকভাবে কাজ করছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম, রিজভী সাহেব, তারেক জিয়া প্রতিদিনই গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার এসব নিয়ে চিল্লাপাল্লা করছে! মানুষের ভোট অধিকার ফিরিয়ে দিতে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে তারা খেয়ে না খেয়ে প্রতিদিন বিবৃতি, সভা, সেমিনার, পদযাত্রা ও মানববন্ধন করে যাচ্ছে! আপনার কি মনে হয়, তারা ক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে? তাদের বক্তৃতা শুনে তাদের সামনের যেসব নেতাকর্মী আছে তারা কি বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবকে কিংবা তারেক জিয়াকে জিজ্ঞেস করবে, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবধিকার, দুর্নীতি সম্পর্কে যেসব কথা বলছেন সেগুলোর এখন কি অবস্থা? আসলে তারা এগুলো কিছুই তখন জিজ্ঞেস করবেনা। তারা জিজ্ঞেস করবে, লিডার দুটি ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছিলাম কি অবস্থা সেগুলির! একটি টিভি চ্যানেল করার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়ে রেখেছিলাম একটু বলে দিন। অথবা পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা করার জন্য টেন্ডার জমা দিয়েছি, কাজটা যেনো পাই লিডার খেয়াল রাখবেন!
তাহলে কি গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, দুর্নীতি এসব শব্দ গুলি হারিয়ে যাবে! না, এগুলো হারাবে না, এগুলোর জন্য তখন আবার শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুরা চিল্লাপাল্লা করবে! সভা সমাবেশ করবে, মানববন্ধন করবে, রাস্তা অবরোধ করবে, আমেরিকায় ইউরোপ থেকে বিবৃতি নিয়ে আসবে!
আসলে একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বপ্রথম সে দেশের মানুষকে সুশিক্ষিত করতে হবে, এটি একটি প্রধান শর্ত। সুশিক্ষিত জাতি গঠন না করতে পারলে, গণতন্ত্রের সুফল কখনোই ভোগ করা যায়না। গণতন্ত্র হলো একটি তত্ত্ব, তত্ত্ব বাস্তবায়ন করতে হলে সে তত্ত্বের সূত্র মেনেই করতে হবে। সূত্র না মেনে কখনো তত্ত্ব বাস্তবায়ন করা যায়না।
ভোট দেওয়ার সিস্টেম চালু করেছেন, নেওয়ার প্রতিষ্ঠান করেছেন কিন্তু সেগুলোকে যদি আপনি সঠিকভাবে কাজ করতে না দেন, তাহলে ভোটাধিকার বলে কিছু থাকবে না। অপরাধ কমানোর জন্য, অপরাধী ধরার জন্য প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন, লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন কিন্তু তারা আপনার কথা মত কাজ করতে হয়, তাহলে আপনি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান করেছেন, ভালো বেতনে কর্মচারী/কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন কিন্তু তাদেরকে আপনি কন্ট্রোল করতে পারছেননা, তাহলে আপনি দুর্নীতিও বন্ধ করতে পারবেননা।
মূলকথা হচ্ছে, সরকারকে পরিবর্তন করে, ফেলে দিয়ে আপনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেননা। রাষ্ট্র পরিচালনার বেসিক কিছু বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাই যদি ঐক্যমতে পৌঁছতে না পারেন তাহলে এসব আন্দোলন, সংগ্রাম কোন কিছুই কাজে আসবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৬