আমাদের এলাকাটা জলের দেশ। একটু বেশী বৃষ্টি হলেই নীচু জায়গাগুলো পনিতে টইটুম্বুর হয়ে যায়। অথচ এবারের ঈদে গ্রামে গিয়ে হতাশ হলাম। যদিও একদিন বিকেলে কাজিনরা মিলে ডিঙি নৌকাতে ঘুরেছিলাম। কিন্তু, পান্তায় কি আর ক্ষীরের সাধ মেটে? নেটে কত পড়লাম, কত আশা করলাম: এবার নৌকাবাইচ হলে আমার প্ল্যানাকে কাজে লাগাবো। এখন সে সবে গুড়েবালি।
ছন্দে ছন্দে শোক, না হয় একটু হোক....
বর্ষাতে চৌত্রের রোদ, কোথা নাই জল,
কৃষকের ভরসা তাই নলকূপের নল।
সবারই মাথায় হাত, জেলেরা হতাশ,
মিটলো না হায় মোর নৌভ্রমনের আশ।
ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ নাহি আর হলো,
মনের কথা তাই মনেতেই রলো।
আইডিয়াগুলো লিখে রাখলাম। পরে সময়মত কাজে লাগানো যাবে....
নৌকাবাইচ সংক্রান্ত টিপসঃ
টিপসের আগে একটু ভেবে দেখি গতবার কেন আমরা জিততে পারিনি।
কেন জিতিনি?
- কারণ, অন্যরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল।
কেন?
- ওরা দ্রুত বৈঠা চালাচ্ছিল।
আমরা দ্রুত পারিনি কেন?
- আমাদের বেশীর ভাগ ছিল খোদার খাসি। মানে দেখতে হিরো কাজে জিরো। তাই, নৌ-দৌড় শুরুর কয়েক মিনিট পরে অনেকেই হাঁপিয়ে গিয়েছিল।(পাঁচ মিনিট জোরে দৌড় দিয়ে দেখুন। মুখটা কেমন হা হয়ে যায়!!)
- ছন্দ হারিয়ে এলোমেলো বৈঠা চালাচ্ছিল। (অনেকটা প্রথম ছবির মত)
- অভিজ্ঞতার অভাব ছিল।
নৌকা বাইচে আমার কিছু প্রস্তাবনাঃ
১. দল গঠনে তরুন ও যুবকদের(২০-৩৫ বছর) আগে রাখতে হবে। দলে থাকবে গ্রামের পরিশ্রমী, কর্মঠ লোকগুলো। জেলে ও মাঝিরা অগ্রাধিকার পাবে। কোন রকম স্বজন প্রীতি চলবে না। (আমার মত ম্যাওপ্যাওরা বাদ)
২. ধীরস্থির, বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ লোক নৌকার হাল ধরবে।(বয়স্ক(৩৫-৪৫) ও অভিজ্ঞ মাঝি।)
৩. নৌকা বাইচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, দুপাশের সবাই একসাথে বৈঠা চালানো। সেটা হবে একটা ঐকতানে। মানে একই তালে, একই ছন্দে। (অন্যথায় নৌকা একদিকে চলে যাবে/গতি কমে যাবে।)
৪. এই ছন্দের জন্য বাদ্য-বাজনা টনিকের কাজ করে। বাদ্য হিসেবে ড্রাম জাতীয় কিছু ব্যবহার করাই ভাল। (কুচকাওয়াজে যে কারণে এটা ব্যবহার করা হয়।)
- দক্ষ কেউ নৌকার সামনে থেকে বাদ্য বাজাবে(বসে থেকে, পেছনের দিকে মুখ করে) এবং সেটার তালে তালে বৈঠা চলবে। (অনেকটা ২য় ছবির মত)
- ১ম ছবির মত ঘন্টাও ব্যবহার করা যায়। তবে নৌকা দ্রুত চলায় দাঁড়িয়ে থেকে বাজাতে সমস্যা হয়, পড়ে যাবার ভয় থাকে, আবার শব্দটাও খুব একটা ভালোলাগে না।(আমাদের অবচেতন মনে একটা ধারণা আছে; ঘন্টা বাজলে ছুটি। মানে কাজ বাদ দিয়ে ঢিলেমী শুরু। ফলাফল, দৌড়ে পিছিয়ে পড়া।[এটাকে কিন্তু হাইপো থিসিস, অবজ্ঞা করবেন না।])
৫. নৌকার সামনের অংশটা পেছনের দিক হতে উঁচু রাখতে হবে। মানে, মাঝখান থেকে সামনের অংশে যত লোক থাকবে, পেছনের অংশে তার চেয়ে বেশী লোক থাকবেই। বিজ্ঞানের ছাত্রদের লন রোলারের কথা নিশ্চয় মনে আছে। (৩য় চিত্রের কথা আলাদা)
৬. বাইচ খেলা ডানহাতি বামহাতিদের একসাথে কাজে লাগানের দারুন জায়গা। নৌকার ডানপার্শে থাকবে ডানহাতিরা, বামপার্শে থাকবে বামহাতিরা। এতে ইফিসিয়েন্সি বাড়বে।
বামহাতিদের সাধারণত কম পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে-
- বামপার্শে দু-একজন বেশী রাখা যায়।(যদি প্রয়োজন হয়!)
- বাইচের যায়গাটায় নদী/বিল/হাওড়/বাওড় যদি বাম দিকে মোড় নেয়, তবে বামপাশ থেকে দৌড় শুরু করলে সুবিধা পাওয়া যাবে।
৭. সবার পোষাক এক কালারের(জার্সি/গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট) হলে ভালো হয়।
৮. নৌকায় মেয়ে মানুষ না নেয়াই ভালো। তবে খেলা দেখতে ও উৎসাহ দিতে তারা অবস্যই পাড়ে থাকবে।
৯. বাদ্য, মানে স্পেশাল কোন গান হবে? বা কোনটা হবে? বা হবে না, সেটা এলাকা ভিত্তক ঐতিহ্যে ঠিক হবে।
১০. আপনাদের কোন নতুন আইডিয়া??
৯. নৌকার আকার ও গঠনঃ
এটা বাইচের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেটাকে কোন মতেই হেলা করা যাবে না। বাইচের নৌকার প্রস্থের চেয়ে দৌর্ঘ বেশী থাকে।
তবে সত্যি বলতে কি, এই বিষয়ে আমার ধারণা কম। আরেকটু পড়াশোনা করতে হবে।(চিত্রঃ ৩, বাইচে ব্যবহৃত কেরালার ঐতিহ্যবাহী নৌকা। আমাদের বাইচে এই নৌকাটাকে আমি আগেই বাদ দিব। কেন বলুন তো?)
চলুন, কিছু নৌকা দেখে নেই...
সামুদ্রিক নৌকা। সমুদ্রের ঢেউ থেকে রক্ষার জন্য এই নৌকাগুলোর দুদিক উঁচু করা হয়। তারপরও আমার ভয় করে। সমুদ্রের অমন বড় বড় ঢেউয়ে কীভাবে যে এসব ভেসে থাকে! সত্যি, এতে চড়তে কলিজা লাগে।
নৌকা মার্কা পোস্টে অনেক জ্ঞানের কথা হল। এবার আমার পছন্দের একটা গান দিয়ে শেষ করি: (দৌড় শুরুর আগে গানবাজনা করে নিজেদের চাঙ্গা হয়ে নেবেন)
আমরা ক'জন নবীন মাঝি
হাল ধরেছি শক্ত করে রে,
তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে...
বি. দ্র.:
এলাকার নাম জানিতে চাহিয়া লজ্জা দেবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩২