দুই নোকার মাঝের পথ নেফার অতিক্রম করল এবং একটা তরুণ সিংহের ন্যায় একাসিয়া গাছের শাখা থেকে নামার ন্যায় ভূমিতে নামল ।সে মাধুর্যমন্ডিত ভাবে উঁচু তীরে পদার্পন করল যেখানে মিনটাকা দাঁড়িয়ে ছিল তার প্রায় এক হাতের মধ্যে ।সে সেখানে থামল এবং জানত সবার চোখ এখন তার উপর ।তখন তীরটা হঠাত্ নিচে ভেঙ্গে পড়ল ।ভঙ্গুর একখন্ড শুকনো কাঁদা যার উপর সে দাঁড়িয়ে ছিল তা তার পায়ের নিচে ভেঙ্গে গেল ।শেষ মুহূর্তে সে তার বাহু প্রসারিত করল ,ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করল তারপর ঝোপের মধ্যে নিচে পড়ে গেল ।
সবাই ভয়ে নিচে তার দিকে তাকাল।মিশরের রাজা কোমর পর্যন্ত ডোবানো নীল নদের আঠালো কালো কাঁদার মধ্যে হতভম্ব অভিব্যক্তি নিয়ে বসে আছে যা দেখে তারা আতংকিত হল ।দীর্ঘক্ষণ কেউ নড়ল না কিংবা কথা বলল না । তারপর হিকসস রাজকন্যা মিনটাকা হেসে উঠল ।মিনটাকা এমনটা করতে চায় নি কিন্তু বিষয়টা তার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার মত ছিল না ।এটা ছিল এমন একটা ছোঁয়াচে হাসি যে তার বান্ধবীদের কেউ নিজেকে ধরে রাখতে পারল না ।তারা হাসিতে ফেটে পড়ল যা শিকারী ও মাঝিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ল ।এমনকি টাইটাও যোগ দিল বাঁধাহীন অট্টহাসিতে ।
এক মুহূর্তের জন্য মনে হল নেফার কান্নায় ভেঙ্গে পড়বে কিন্তু তারপর তার রাগ যা অনেকক্ষণ আটকে ছিল তা ফেটে পড়ল ।সে একমুঠো কালো কাঁদা নিয়ে হাস্যরত রাজকন্যার দিকেছুঁড়ে মারল ।মিনটাকা আনন্দে এতটাই বিভোর ছিল যে ,সে মাথা নিচু করা কিংবা পাশ কাটানো কোনটাই করতে পারল না ।ফলে কাঁদা তার পুরো চেহারায় আঘাত করল ।তার হাসি থেমে গেল এবং চলন্ত কালো মুখোশের মধ্য দিয়ে সে নেফারের দিকে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইল ।
এবার নেফারের হাসির পালা ।ঝোপের মধ্যে বসে সে মাথাটা পিছনে হেলে তিরস্কার ভরা হাসি দিয়ে তার হতাশা ও অবমাননা দূরকরল । আর ফারাও হাসতেই পুরো দুনিয়া তার সাথে যোগ দিল ।দাসরা ,মাঝিরা ও শিকারীরা তাদের আনন্দের চিত্কার দ্বিগুণ করে দিল ।
মিনটাকা দ্রুত তার ধাক্কা সামলে উঠল এবং তারপর কোন সতর্কবাণী ছাড়াই সে আক্রমণ করার জন্য তীরে নেমে পড়ল ।সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে নেফারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ।নেফার এতটাই বিস্মিত হল যে সে একদম নিচে তলিয়ে যাওয়ার আগে কিছুই বুজতে পারল না ।সে পানিতে নাকানিচুবানি খেল,কাদাময় তলদেশে কিছু ধরার চেষ্টা করল ।কিন্তু মিনটাকা দুই হাত দিয়ে তার গলা চেপে আছে ।দুজনের চেহারার ফারাক মাত্র কয়েক ইঞ্চি ।মিনটাকার চুল তার চোখের উপর ঝুলে আছে এবং এখনো সে নেফারের দিকে চেয়ে দাঁত বের করে হাসছে ।নেফারও দাঁত বের করে হাসল এবং তারপর দুজনেই জোরে হেসে উঠল ।কিন্তু কেউই হারতে রাজি নয় এবং তারা যুদ্ধ করতেই থাকল।