somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘আঙ্কেল, এই নিয়ে চারটে মেসেজ করলাম, বাট এখনও তুমি আমাকে রেপ করলে না’?

৩১ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Maa ask korlo J, kaal 2mi maa k ph korlena keno’? আমার এক বন্ধুর মেয়ের পাঠান ই-চিঠি। ভাষাটা বাংলা, হরফটাইংরাজি। কয়েক দশকে বাঙালির কাছে এই একনব্য পণ্য। ই-মেলে, এসএমএসে, ফেসবুকে সর্বত্র নানা কিসিমের বিচিত্র বাকবিন্যাস। পড়তে গিয়ে পদে পদে বিপদেপড়ি। ‘hate’ লেখা দেখে ভাবি আমি কিএতই ঘৃণ্য? বুঝতে পারি না ওটা হল ‘হাতে’। এভাবেই ক্রমাগত শিখতে থাকি ই-ভাষা।


ফেসবুকে বিচিত্র সংক্ষিপ্তকরণের ছড়াছড়ি। শুরুতে o.m.g. দেখলে ভাবতাম বোধহয় লিখতে চাইছে ‘ও মাগো’, এখন বুঝেছি ওটা বিস্ময়যুক্ত ‘ও মাই গড’! সংক্ষেপে লেখার ইঁদুর মারা কল যে কী ভয়াবহ আবহ তৈরি করে, ভাবলে রোমাঞ্চহয়।


হাঁটুর বয়সী একটি মেয়ে সেদিনলিখেছে ‘আঙ্কেল, এই নিয়ে চারটে মেসেজ করলাম, বাট এখনও তুমি আমাকে রেপ করলে না’? যখনবুঝলাম ইংরাজি হরফে ‘rep’ হল ‘reply’-এর সংক্ষিপ্তকরণ, তখনঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। মনে মনেবললাম – মা, আমাকে বরং ‘ans’ করতে বোল।


কত সংক্ষেপে লেখা যায়, তার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ই-ভাষায়। শুধু ‘u’ অক্ষরটি দিলেই বুঝে নিতে হয় যে, ওটা আসলে ‘you’। বাংলার কয়েকটি শব্দ ইংরাজির একটি হরফের উচ্চারণেই মিলে যায়। যেমন J হল যে, K হল কে। এই রীতিতে লিখতে থাকলে কেসটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে ভেবেছেন? একটি নমুনা পেশ করিবরং।‘O-P-C-A-D-K-S-O’। কিছুবুঝলেন? এবার ওই ইংরাজি হরফগুলো উচ্চারণ করুন বাংলা বলছেন ভেবে, দেখুনআপনার শ্রবণে মধু বর্ষণ করে ই-ভাষাবলবে – ‘ও পিসি, এদিকে এস’।


ই-ভাষার মক্কা অধুনা ফেসবুক। রীতিমত গবেষণার অজস্র রসদ মজুত রয়েছে ফেসবুকিয়ানদের ওয়ালে। খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মদিনবা মৃত্যুদিন এলেই হল। ছবি পোস্ট করার ধুম লেগে যাবে হৃদকমলে। পোস্টটা যদি মৃত্যুদিনের হয়, তাহলেই গেড়ো। খালি কমেন্ট আসবে ‘RIP’। বিপ-বিপ ধ্বনির মতো এইরিপ-রিপ কী বস্তু, না বুঝলে আপনি যে ই-দুনিয়ায় আনাড়ি তা প্রমাণ হয়ে যাবে। এই রিপহল ‘রেস্ট ইন পিস’। শান্তিতে থাকার কী অশান্তিকর প্রার্থনা প্রয়াস।


শুধু কি ভাষার জটিলতা? ফেসবুকিয়ানরা এক-একজন একেক বস্তু। কেউ লাইক বিশেষজ্ঞ। এঁরা বেশি কথা না বলে পাইকারি হারে লাইক করে যান। কারও হয়ত বাবা মরেছে, সে বেচারি কাঁদোকাঁদো ভাষায় জানিয়েছে মৃত্যুসংবাদ। ব্যস, লাইক মাস্টার সেটিও দিলেন লাইক করে। কেউ খালি গান শুনিয়ে বেড়ান। দিবস রজনীতাঁরা যেন ব্রত নিয়েছেন ‘তোমায়গান শোনাব’। শতকরা কত ভাগ যে সেগুলি শোনেন বলাশক্ত, কেননা গান দিতে না দিতেই পটাপট আসতে থাকে মতামত। এত জলদি গান শোনাঅসম্ভব ব্যাপার। আসলে গান শোনার মতো অত সময় কোথায়, কিন্তু তাই বলে অমুক দাদা গান দিয়েছেন আর আমি সামান্য কান দেব না? সে তো অভদ্রতা। সুতরাং ফেসবুকের দেওয়ালে ঘুঁটে দেওয়ার মতো গান দেওয়া চলতে থাকেএবং তা শুকনোর আগেইমতামতের উনুনে গুঁজে দেওয়া হয়। ফলত যা নির্গতহয়, তা যে ধোঁয়া- এটা জেনেও গান দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য।


আর এক কিসিমের ফেসবুকিয়ান আছেন, যাঁদের বলা হয় স্ট্যাটাসটিয়ান। এঁরা পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর হেঁচকি তোলার মত স্ট্যাটাস দিতে থাকেন। এঁরা কারও উত্তর বা মতামতের ধার ধারেন না। এঁদেরস্ট্যাটাসে থাকে – ‘বড্ড মাথা ধরেছে’, পরমুহূর্তেই ‘উফ্ কী দিল!’ কে দিলেন, কাকে দিলেন, কী দিলেন- তা কেউ জানতেও চায় না; তবু তিনি শুধুস্ট্যাটাস দিয়ে যান।


ই-রাজ্যের আর এক বাসিন্দার নাম বলা যেতে পারে ট্যাগনেশিয়ান। এঁরা সারাদিনব্যক্তিগতফটো পোস্ট করেন আর সেগুলো যাঁকে খুশি ট্যাগ করতে থাকেন। তিনি বুঝতেও চাননা যে, তাঁর বাথরুমের জন্য কেনা নতুন মগের ছবি নিয়ে অন্যেরা কী করবে!


আর আছেন কমেন্ট মাস্টার। তিনি যেখানে পারেন, কমেন্ট দিয়ে বেড়ান। চেনা-অচেনার ধারধারেন না। হয়তো একটি বিমূর্ত ছবি নিয়ে কথা বলছেন দুজন শিল্পী বন্ধু। কমেন্ট মাস্টার এদের ভেতরে ঢুকে বলেআসেন – ‘থ্যাঙ্ক ইউ’! কাকে থ্যাঙ্ক ইউ, কেন থ্যাঙ্ক ইউ- ওসব প্রশ্নই ই-দেশে অপ্রাসঙ্গিক।


ই-দুনিয়ায় এখনও যাঁরা পা রাখেননি, তাঁরাজানেন না কী বিচিত্র এই দেশ। এখানে কারও ঘর ভাঙে, কেউ ঘর বাঁধে। এখানেতৈরি হয় নানা ধরনের গ্রুপ। সেই গ্রুপের সদস্যরা গেট টুগেদার করে, পিকনিকে যায়। দল বেঁধে যারা গেট টুগেদারে যায়, তাদেরই কেউ কেউ দলছুট হয়ে মিট করে কোনও মলে। বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়,জোড়াজোড়া নারী-পুরুষ ‘মলে মলে যোগ দিন’ স্লোগান তুলে দেখা করে। সেই ‘দেখা’ কারও কারও চোখে সর্ষেফুল দেখায়, প্রাণ এবং মান বাঁচাতে তথাকথিত ফ্রেন্ডশিপকে তারা কয়েক মাস এড়িয়ে চলে! তারপর যথারীতি গেয়েওঠে – ‘আহা E আনন্দ আকাশেবাতাসে...’।


eta copy kora hoyeche ekhan theke
http://amarbornomala.com/post14332.html/
৪৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×