মেসোপটেমিয়ার অবস্থান
মেসোপটেমিয়ায় কিছু প্রাচীন নগরের অবস্থান
মেসোপটেমিয়া হচ্ছে সেই সভ্যতা যেখান থেকে সভ্যতার সূত্রপাত(Cradle of civilization)।পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এই সভ্যতার সুত্রপাত ঘটে সুমেরিয়ানদের মাধম্যে।সুমেরিয়রা ছিল একদল যাযাবর যারা ৩৫০০ বি.সি. তে এ অঞ্চলে আসে আর বসতি গড়ে তোলে সুমের নামক স্থানে।
আপনি হয়তোবা জানেন মেসোপটেমিয়া তে তখন এখনকার মতোই উষ্ম ও শুষ্ক আবহাওয়া ছিল। গ্রীষ্মে (৪৩ ডিগ্রি সেঃ তবে কখনও কখনও ৫৮ ডিগ্রি সেঃ পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠত )। তবে শীতকাল ছিল আরামদায়ক (১১-২৯ ডিগ্রি সেঃ)।
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অভিজাত শ্রেণী,সে যুগের কোর্ট অফিশিয়াল আর সাধারণ মেসোপটেমিয়ান
সুমেরিয়দের জমি ছিল উর্বর কিন্তু খুব সামান্যই বৃষ্টি হত। আর তাই তাদের ফসল ফলানের রহস্য ছিল নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রন করা। ফলে তারা আর প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল থাকল না। ভাবুন তো এক সময় যারা যাযাবরের মত প্রতিনিয়ত খাদ্যের সন্ধানে ব্যস্ত ছিল তারাই এই স্থানে বসবাস শুরু করল , গড়ে তুলল নগর। আর তাই প্রথমবারে মতো মানুষ একত্রিত হল প্রত্যেকের আলাদা আলাদা প্রচেষ্টার সম্মিলিত প্রয়োগে সমাজ গঠনে আর যেহেতু অল্প সংখক মানুষ অধিকাংশ মানুষ এর ফসল ফলানের জন্য যথেষ্ট ছিল তাই কিছু মানুষ যুক্ত হয়ে গেল মুক্তচিন্তায়
চাকা আবিস্কারের কৃতিত্ব সুমেরীয়দের দেওয়া হয় যা পরিবহন আর কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে আসে।
শুধু চাকা না, লিখন পদ্ধতির আবিষ্কারকও তারা। তাদের লিখন পদ্ধতি ছিল পিক্টোগ্রাফিক যা চিত্রের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করত। আর তাই এই পৃথিবী নামক গ্রহের সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত গল্প লিখে সুমেরিয়রা আর তা হচ্ছে গিলগামেশ মহাকাব্য।
পাখির পিক্টোগ্রাফ থেকে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ক্রুনিফ্রম লেখার উদ্ভব
গিলগামেশের মহাকাব্য
গিলগামেশ ছিলেন ব্যাবিলনের উরুক শহরের একজন ঐতিহাসিক রাজা(২৭০০ বি.সি.)।তিনভাগের এক ভাগ মানুষ আর দুই ভাগ গড গিলগামেশ ছিল অতিমানবিক শক্তি আর ক্ষমতার অধিকারী ।
ইউনিভার্সিটি অফ সিডনী তে গিলগামেশের স্ট্যাচু
মেসোপটেমিয়ার রয়েছে প্রচুর যুদ্ধ আর বহিরাক্রমন এর ইতিহাস।পানি আর জমির চাহিদার পার্থ্যকের কারনে তাদের শহরগুলার মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ লাগত আর তারা নিরাপত্তার জন্য তাদের শহর গুলার চারিদিকে দেয়াল তুলতে লাগল।২৩০০ বি.সি তে সারগন ১ এর নেতৃতে উত্তর মেসোপটেমিয়ার একদল লোক সুমের আক্রমন করে আর গড়ে তোলে পৃথিবীর প্রথম রাজ্য। সারগন-১ ছিল এই গ্রহের প্রথম রাজা যার ছিল সার্বক্ষণিক সৈন্যবাহিনী আর সে পায় ৫০ বছর রাজত্ব করে ।আর এভাবেই গড়ে উঠে মেসোপটেমিয়ার আক্কেদিও সভ্যতা।
সারগন-১
প্রাচীন সুমেরীয় রাজত্ব
ও হ্যাঁ আমদের আধুনিক গনিত এবং বিজ্ঞানের সূচনা কিন্তু মেসোপটেমিয়াতে হয়।আর সবসময় যা হয় আরকি প্রয়োজন থেকে আবিষ্কার। বনিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিন্তা করার প্রয়োজন ছিল ফলে চাদের ঘূর্ণন আর বার মাসের ভিত্তিতে এল ক্যালেন্ডার।এল বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রির ভিত্তিতে সময় গণনা আর যোগ বিয়োগ আর গুন ভাগের ভিত্তিতে গণনা পদ্ধতি।
ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বের করার গাণিতিক সূত্র
মেসোপটেমিয়ানরা ছিল বহু ঈশ্বরবাদী। তারা বিশ্বাস করত দেবতারা পৃথিবী এবং এর মধ্যকার মানুষদের সৃষ্টি করেছেন। তারা ছিলেন অতিমানব, সমস্ত মানুষ সৃষ্টি করা হয়েসে তাদের সেবা করার জন্য। দেবদেবীরাও ঠিক সাধারণ মানুষের মতই খাওদাওয়া এবং চলা ফেরা করে। যদিও বিশ্বাস করা হত যে দেবতারা ছিলেন অমর তবুও তারা বিয়ে করতেন তাদের বাচ্চাও হত। দেবতাদের ছিল মানুষের মতই আবেগ যার ফলে তারাও রেগে যেতেন , যার ফলে দেখা দিত বন্যার মত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাদের দেবতারা আকাশে বাস করত আর বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষদের শাসন করত।
মেসপটেমিয়ানদের দেবতারা
এতক্ষণ ধরে এই ব্লগ দেখে মাথা নিচ্ছয় ভোঁ-ভোঁ করতাসে।যান আপনার জন্য উরুক এর দেবতা আনু এর একদিনের খাদ্য তালিকা দিয়ে দিলাম
১২ ভেসেল মদ
২ ভেসেল দুধ
১০৮ ভেসেল বিয়ার
১০৮ টুকরা বড়সড় আকারের রুটি
২৯ টা খেজুর
২১ টা ভেড়া
২ টা ষাঁড়
একটা এঁড়ে বাছুর
৮ টা মেষ শাবক
৬০ টা পাখি
৩ টা সারস
৭ টা হাঁস
৪ টা বন্য শূকর
৩ টা উট পাখির ডিম
৩ টা হাসের ডিম
এবার এক পলক চোখ বুলানোর জন্য মেসপটেমিয়ার সময়যান দিয়ে দিলাম। আরেকটা কথা, যদিও বিষয়টা অনেকের জানা (বি.সি. যা BCE অর্থাৎ “Before the Common Era”, “Before the Christian Era", অথবা "Before the Current Era এই তিন ভাবেই পরিচিত)
৫০০০ বি.সি. : প্রথম মাটির তৈরি দেয়াল দ্বারা নির্মিত বাড়ি-ঘর এর অস্তিত্ব প্রকাশ পায়।
৩৫০০ বি.সি. : সুমেরীয়রা উফেত্রিস নদীর তীরে বসতি গড়ে তোলে।
মাটির চাকতিতে কিয়ুনিফম হস্তলেখার উদ্ভব ঘটে।
৩০০০ বি.সি. : গৃহ সভার প্রধান থেকে রাজত্বের ধারণা ঘটে আর তারই ফলে জন্মলাভ করে রাজতন্ত্রের।
২৭৫০ বি.সি. : এটা হচ্ছে উরুক এর রাজা হিসেবে সুমেরীয় লিজেন্ড গিলগামেশ এর রাজত্বকাল ।
২৫০০ বি.সি. : এই সময়েই মহাকাব্যিক রূপকথা গিলগামেশ লেখা হয়।
আক্কাদ দের সারগন
২৩০০ বি.সি. : সারাগন-১ এর নেতৃতে আক্কাদিয়ানরা সুমেরীয় নগর জয় করে।
২১২৫ বি.সি. : উফেত্রিস এর চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সুমেরিয়ানরা আবার একত্রিত হয় এবং স্বাধীন হয়।
১৮০০ বি.সি. : সিরিয়ার মরুভূমি থেকে আমরিটরা মেসোপটেমিয়ায় মাইগ্রেট করে এবং শহর গড়ে তোলে।
হাম্মুরাবি ব্যাবিলনের সিংহাসনে আরোহণ করে।
১৭৯২-১৭৫০ বি.সি. :এই সময়কে বলা হয় ব্যাবিলনের স্বর্ণযুগ ।এই সময়ে সুমের এবং আক্কাদ সহ মেসোপটেমিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলহাম্মুরাবির নিয়ন্ত্রণে আসে।
হাম্মুরাবি ল-কোড প্রবতন করেন।
পাথর খণ্ডে খোদাই করা হাম্বুরাবির কোড
ও হ্যাঁ হাম্মুরাবি ল-কোড টা কিন্তু জটিল। ল টার ভিত্তি ছিল “চোখের বদলে চোখ এবং দাঁতের বদলে দাঁত” ।এই নিয়ে এক কাহিনী “একবার ব্যবিলনের এক গৃহ ধসে পড়ে আর বাড়ির মালিক মারা যায় ।আর এই অপরাধে সেই বাড়ির কারিগরকে দণ্ড হিসেবে দেওয়া হল মৃত্যু ”
আগের দিনের পুঁথি পাঠে একটা জিনিস ছিল কমন আর সেটা হচ্ছে দোষ ত্রুটি বা ক্ষমা মার্জনার অংশ। আর এই যুগে পুঁথির সুরে শব্দহীন জোছনা বলতে চায় দুষ ত্রুটি মোরে করিও মার্জন ।এ কথা বলার একটাই কারন সেটা হচ্ছে সেফ হবার পর এটা আমার প্রথম পোস্ট আর এই ব্লগ দেখার জন্য সবাইরে ধইন্যাপাতা।