আজই সংগ্রহ হলো এই পদত্যাগ পত্রটি। একজন বার্তা প্রধানের কাছে একজন জেলা প্রতিনিধির পদত্যাগপত্র। এটি খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই পদত্যাগপত্রের ভেতরে একজন মফস্বল সাংবাদিকের যে ঘামে জড়ানো কষ্টগাথা সেসব খানিকটা অনুভব করতেই এই নোটের সহায়তা নেয়া। স্যালুট মফস্বল সাংবাদিকদের।
জনাব শাইখ সিরাজ তারিখ ১৯ জুন ২০১১
পরিচালক ও বার্তা প্রধান
চ্যানেল আই
৪০, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্মরণী
তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা।
বিষয়: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাখ্যাসহ পদত্যাগ প্রসঙ্গে।
জনাব,
নিবেদন এই যে, চ্যানেল আই-এর যাত্রা শুরুর পর যে ১০ জনকে প্রথম ‘জেলা প্রতিনিধি’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী একজন। টানা ১০ বছর অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে এলেও যে পারিশ্রমিক ও সন্মানে সম্মানীত হওয়া উচিৎ ছিলো, তার বিন্দুমাত্র মূল্যায়ণ ও ১০ বছর থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ১ পয়সাও বেতন বৃদ্ধি না করায় নীচে উল্লিখিত ব্যাখ্যা মূল্যায়ণে সর্বপরি মানসিক তৃপ্তির স্বার্থে স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি। একই সাথে প্রত্যাশা করছি, দেশের মূল সংবাদের প্রাণ কেন্দ্রই যখন অবহেলিত গ্রামাঞ্চল, সেখানে সেই গ্রামাঞ্চলের প্রকৃত সাংবাদিকদের আর অবমূল্যায়ণ না করে এখন থেকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক, মূল্যায়ণ ও সম্মান প্রদর্শন করবেন। তা না হলে ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের ৬৩ জেলার প্রকৃত সাংবাদিকদের রক্তের আঁচড়ে গড়া আপনাদের নতুন অট্টালিকা নীরব কষ্টের দীর্ঘশ্বাসে একদিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
১) নিজেকে আপনি কি মনে করেন মিঃ সিরাজ? পুলিতজার বিজয়ী সাংবাদিক? জনপ্রিয় উপস্থাপক? কলামিষ্ট? আন্তর্জাতিক মানের ক্যামেরাম্যান? না, কোনটিই যথার্থ অর্থে আপনি নন। কেননা, বাংলাদেশের প্রকৃত সাংবাদিকদের যোগ্যতা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আপনার এবং আমার উপযুক্ত মূল্যায়ণ যদি করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, আপনার চেয়ে আমি বড় সাংবাদিক না হলেও কোন অংশে ছোট নই। যেমন ধরুন, ‘৮০-এর দশকে আপনি যখন বিটিভিতে ‘মাটি ও মানুষ’ করতেন, আমি তারও অনেক আগে থেকেই ওই একই প্রতিষ্ঠানে নাটক ও গান লিখতাম। অর্থাৎ ‘৭০ দশক থেকেই লেখালেখি শুরু করে অদ্যাবধি লিখছি। সে অর্থে আমি একজন প্রকৃত সাংবাদিক তো বটেই, একজন লেখকও। শুধু তাই-ই নয়, আমি বিটিভি ও রেডিও’র একজন তালিকাভুক্ত ‘এ’ গ্রেডের নাট্যকার, গীতিকার, পাণ্ডুলিপি রচয়িতা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও মঞ্চ অভিনেতা। আপনার কি মৌলিক কোন সৃষ্টি আছে মিঃ সিরাজ? যদিওবা আপনার নামে ২/৪টি লেখা দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং হয়ও কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে এই লেখাগুলোর প্রকৃত রচয়িতা আপনি নন, লিখে দেন আপনারই আশির্বাদপুষ্ট জনৈক সাংবাদিক। যা আমি নিজেও ওই সাংবাদিককে আপনার নামের সেই লেখা কম্পিউটারে কম্পোজ করতে দেখেছি। তাহলে আপনি কিসের লেখক?
এবার আসুন সাংবাদিকতা প্রসঙ্গে। চ্যানেল আই তার যাত্রা শুরুর ১০ বছর আগে থেকে আমি ১টি সাপ্তাহিক ও ১টি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। সাপ্তাহিক পত্রিকাটি ধারাবাহিক ভাবে ৯ বছর চালানোর পর দৈনিক পত্রিকাটির কার্যক্রম শুরু করি। স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশের কারণে ২টি পত্রিকাই ৩ বার ব্যান্ড হয়, মামলাও হয় ১৪টি, হুলিয়া হয় ২ বার, বাড়ী-ঘরের মালামাল ক্রোক হয় ৩ বার। যদিওবা দেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিয়ে ৩ বারই জয়লাভ করেছি এবং ধারাবাহিক প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছি। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এ লাইনে আপনি আসার অনেক আগে থেকেই আমি সাংবাদিক। কারো দালালী করলে নিশ্চয়ই এমনটি হতো না।
এবার আসুন ক্যামেরা প্রসঙ্গে। মফস্বল জেলা শহরে বসবাস করি জন্য ক্যামেরা সংক্রান্ত তেমন কোন ধারণা কিংবা প্রশিক্ষণ আমার নেই। কিন্তু তারপরও নিজে ক্যামেরা চালিয়ে চ্যানেল আই-এ রিপোর্ট করেছি, কখনোবা পিটিসি দেয়ার জন্য পথের মানুষ ধরে ১মিনিটে ক্যামেরা চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে পিটিসিও দিয়েছি। আর এভাবেই গত ১০ বছরে চ্যানেল আই’তে অনেক, অ-নে-ক রিপোর্ট করেছি। আপনিতো এসেছেন ক্যামেরা চালাতে চালাতেই। কোন প্রশিক্ষণ না থাকা স্বত্বেও ক্যামেরা চালিয়ে যখন রিপোর্ট করতে পেরেছি, তাহলে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কে যোগ্য? অথচ আপনার ভবন থেকে অনেকেই যখন অতিষ্ট হয়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন, তখন আপনি বিভিন্ন জনকে বলেছেন, আপনার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলে গেলেও আবারও তাকে ফিরে আসতে হবে। আমি চলে যাওয়ার পর হয়তো আমার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলবেন। কিন্তু না, এটা মোটেই সঠিক নয়। আপনি মাসিক এক লক্ষ টাকা বেতন দিলেও আমি অন্ততঃ আপনার অধীনে কোনদিনও ফিরে যাবনা। বলা ভাল, আমি আমার মেধার যোগ্যতায় কাজ শিখেছি। এখানে আপনার এক সেকেণ্ডেরও কোন ভূমিকা কিংবা সহযোগিতা নেই। তাহলে আপনি আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আর সে কারণেই এমন অযোগ্য ব্যক্তির অধীনে কাজ করা মোটেই যথার্থ নয় ভেবেই কিছুটা বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
২) মিঃ সিরাজ, আপনার চেয়ে আমার যোগ্যতা কম নয় এ কারণেই যে, বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সফর করে চ্যানেল আইতে অনেক সংবাদ করেছি। শুধু সংবাদই না, এক একটি জেলায় গিয়ে ৩ থেকে ৫ পর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিক প্রতিবেদনও করেছি অনেক। এখানে আপনার আর আমার মধ্যে শুধু পার্থক্য হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশ ঘোরেন চ্যানেল আই-কে ব্যবহার করে গ্রামীণ ফোন ও বাংলালিংকের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, আর আমি রিপোর্ট করেছি জনস্বার্থে আত্মতৃপ্তির জন্য। অথচ বিল হিসেবে একটি টাকাও কোনদিন দেননি, দেননি বিভিন্ন জেলায় ঘোরার কোন খরচও। সে কারণে বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
৩) চ্যানেল আই-এর নিয়ম অনুযায়ী কোন রিপোর্টারের রিপোর্ট ২ মিনিটের বেশি স্থায়ী হওয়া যায়না। যা আপনারই হুকুম। অর্থাৎ একটি রিপোর্ট প্রচার করতে হলে ২ মিনিটের ১ সেকেণ্ডও বেশি সময় কোন রিপোর্টারকে দেয়া হয়না। আর সে কারণেই অন্যান্য রিপোর্টারের মতো আমিও যতগুলো রিপোর্ট করেছি, তার প্রায় সবগুলোই দেড় থেকে ২ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়েছে। অথচ আপনি বার্তা প্রধানের দাম্ভিকতায় এক একটি রিপোর্ট তৈরী করেন সাড়ে ৩ মিনিট থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে। তাহলে বলুন, যে রিপোর্ট আমি ৩/৪জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে শেষ করছি, সেখানে আপনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ৮/১০ জনের। তাহলে যোগ্য রিপোর্টার কে? এমন দাম্ভিক ব্যক্তির অধীনে কাজ করা কি শোভনীয়? না, মোটেই শোভনীয় নয় ভেবেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
৪) চ্যানেল আই-এর ভাড়া করা ভবন থেকে নতুন অট্টালিকায় আসা পর্যন্ত মোট প্রায় ১০ বছরে আপনি এবং আপনার আশির্বাদপুষ্ট জনাব আদিত্য শাহীন বহুবার, ‘খুব শিঘ্রই আপনাদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে’ বলে মিথ্যে আশ্বাস দিলেও সেই আশ্বাসের বাণী আজও নীরবে কাঁদে। তাহলে এমন ব্যক্তির অধীনে কি কাজ করা যায়? যায়না বলেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
৫) আপনার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, বিশেষ করে রিপোর্টিং-এ, তাদের মাসিক বেতন কতো? আর আমাদের? ১০ বছর আগে ‘বেতন দিচ্ছি, দেবো’ করে দেড় বছর ফাঁকি দিয়ে দেড় হাজার টাকা মাসিক বেতন দেয়া শুরু করলেন। তাও আবার অনিয়মিত। প্রায় ২ বছর পর কারো কারো বেতন বাড়লো ৫’শ টাকা। অর্থাৎ কারো বেতন হল ২ হাজার, আবার কেউবা এখন পর্যন্ত সেই দেড় হাজারেই আছেন। এটা কি মিঃ সিরাজ? সেই থেকে এখন পর্যন্ত আর একটি পয়সাও কি বাড়ানো হয়েছে? না, হয়নি। তাহলে কাজ করবো কেন? আর সে কারণেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
৬) গত ১০ বছরে একমাত্র আমরা ছাড়া (জেলা প্রতিনিধি) যারা চ্যানেল আইতে কাজ করছেন, তাদের প্রতি বছর পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি ও বিশেষ দিবস উপলক্ষে বোনাস দেয়া হলেও আমাদের কি দিয়েছেন মিঃ সিরাজ? আপনার ঢাকার রিপোর্টাররা যে রিপোর্ট করেন, সেই রিপোর্ট আর আমাদের রিপোর্টের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? থাকলে কি কোনদিন তা প্রচারিত হতো? তাহলে তারা যদি হয় রিপোর্টার, আমরা কি? আপনার অবগতির জন্য বলি, ঢাকার রিপোর্টাররা ‘বিট’ ভাগ করে রিপোর্ট করেন। আর আমরা বিট ছাড়াই খুন, ধর্ষণ, হত্যা, খেলা-ধুলা, মারামারি, বাজার দর, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংবাদ ইত্যাদি সব ধরনের রিপোর্ট করে থাকি। তাহলে আমাদের এই অবমূল্যায়ণ কেন? যেহেতু বছরের পর বছর ধরে বিবেকহীনভাবে আমাদের মূল্যায়ণ করা হচ্ছে না, সে কারণেই বিবেকহীণ ব্যক্তির অধীনে কাজ করা মোটেই শোভনীয় নয়। আর সে জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
৭) গত প্রায় ২ বছর থেকে আপনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘কৃষি দিবানিশি’ নামে একটি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠান করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন। আমরা ৬৩ জেলার সাংবাদিকরা কি বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেউ? তাহলে আমরা কেন সেই অনুষ্ঠানে ফুটেজ কিংবা কারও সাক্ষাৎকার ধারণ করে আপনাকে পাঠাবো? অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বার্তা প্রধানের পদ ব্যবহার করে সেই অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বাধ্যতামূলক ভাবে আমাদের ব্যবহার করছেন। অথচ দিচ্ছেন না একটি পয়সাও। আপনার প্রয়োজনে বিভিন্ন জেলার জেলা প্রতিনিধিদের ফোন করে বিটিভি’র অনুষ্ঠানের জন্য ফুটেজ, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি ‘লোগোহীন’ চেয়ে নিচ্ছেন, আর প্রচার করছেন। এটা কি কোন কথা হলো? আর হলো না জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
৮) দেশে কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন এমন দাবি করে নিজের নামের আগে লেপ্টে নিয়েছেন ‘গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব’। প্রকৃত অর্থে কি এটা যথার্থ? চোখ বন্ধ করে একবার নিজেই নিজের আত্মসমালোচনা করে দেখুনতো। না, আপনি এমন ব্যক্তিত্ব নন। আপনি যা পারেন তা হল, মফস্বলের অসহায় এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের শ্রম আত্মসাৎকারী একজন বহুরূপী ব্যক্তিত্ব। টাকা দেবেন না, পয়সা দেবেন না, দেবেন শুধু হুকুম, এটা কি কোনদিন চলে? আর চলেনা জন্যই স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
৯) প্রকৃত অর্থে চাঁদাবাজ সাংবাদিক কে মিঃ সিরাজ? আমরা নাকি আপনি? তবে হ্যাঁ, একথা অস্বীকার করার কোন কারণ নেই যে, আমাদের মধ্যেও এমন কিছু চাঁদাবাজ আছেন, যারা বরং আপনারই দোসর। অতি সম্প্রতি যে ৭/৮ জনের পদোন্নতি দেয়া হলো তারা কেমন, তা কি জানেন? নাকি জানার চেষ্টা করেছেন? যেহেতু দীর্ঘদিন কাজ করার পর তারা পদোন্নতি পেলো, সেহেতু আর যাইহোক না কেন, বিষয়টি ভীষণ ভাল লেগেছে। যদিওবা এদের অনেকেরই প্রকৃত যোগ্যতা নেই, নেই শুদ্ধ উচ্চারণ, সুন্দর বাচন ভঙ্গী এবং পিটিসি দেয়ার উপযুক্ত সাবলিলতা। এক্ষেত্রে একথাও বলা প্রয়োজন যে, ৬৩ জেলার মধ্যে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ জনের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা থাকলেও আপনি এদের কাউকেই তা দেননি। দেননি এ কারণেই যে তারা আপনার দোসর নন। কিন্তু তারপরও বলবো, যাদের আপনি পছন্দের তালিকায় রেখেছেন, তারা ‘চ্যানেল আই'কে প্রতিদিন তাদের নিজ নিজ জেলায় কিভাবে বিক্রি করছেন? এরা যেকোন অনুষ্ঠানের ফুটেজ নেয়ার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন। অথচ এ বিষয়গুলো জানার পরও এদের প্রতিরোধ করার কোন উদ্যোগ আপনার নেই। আমার ধারণা, আপনার কারণেই এরা চাঁদাবাজ হতে বাধ্য হেেয়ছেন। আর এ জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১০) গত প্রায় ৫/৬ বছর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রতিনিধিদের আপনার দপ্তরে ডেকেছিলেন। সেই প্রতিনিধি সভায় আমারও যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে রাজশাহী প্রতিনিধি জনাব আবু সালেহ মোহাম্মদ ফাত্তাহ বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে আপনাকে অনুরোধ জানালে আপনি ক্ষিপ্ত হয়ে চ্যানেল আই থেকে তাকে বেড়িয়ে যাওয়ার হুংকার দিয়েছিলেন। আপনার হুংকার শোনার পর সেদিন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়েছিলো। আর সে কারণে দাঁড়িয়ে আপনার কথার প্রতিবাদ করেছিলাম এবং আপনাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানিয়েছিলাম। আপনিও সেদিন অজ্ঞাত কারণে সম্ভবত ভয় পেয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন ক্ষমা না চাইলে হয়তোবা সব প্রতিনিধি চ্যানেল আই ছেড়ে চলে যাবে। আর এ কারণেই সেদিন সবার সামনে মাফও চেয়েছিলেন। এখন আপনার বোঝা উচিৎ, সৎ সাহস না থাকলে কি সরাসরি আপনাকে এমন ক্ষমা চাওয়ার কথা বলতে পারতাম! বার্তা প্রধান হিসেবে সেই দিনই অথবা পরে হয়তো আমাকে ‘চ্যানেল আই’ থেকে বাদও দিতে পারতেন। কিন্তু দেননি। দেননি এ কারণেই যে, রিপোর্টার হিসেবে নিশ্চয়ই আমি অযোগ্য নই। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই রাজশাহী শহরে আপনি এলে জনাব ফাত্তাহ (ওর মুখ থেকে অনেকের সামনে শোনা) আপনাকে খাজা, গুড়, সিল্কের পাঞ্জাবির কাপড়, আম ইত্যাদি কিনে দেন, আর আপনিও এগুলোর কোন দাম না দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানীর সৌজন্যে পাওয়া এসি গাড়ীতে চড়ে ঢাকা ফিরে যান। এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে মিঃ সিরাজ? এটা কি চাঁদাবাজির ভাগ, নাকি অন্য কিছু? এমন ব্যক্তির অধীনে কাজ করলে কি সম্মান থাকবে? থাকবে না জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১১) মাসিক মাত্র ২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে আপনি মনে করেন আমরা আপনার গৃহপালিত ভৃত্য। আর এই দাম্ভিকতায় ৬৩ জেলার কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ জন ভাল রিপোর্টার কোন রিপোর্ট করে চ্যানেল আই'তে পাঠালে আপনি এরমধ্যে যে রিপোর্টগুলো ভাল ও ব্যতিক্রমী, সেগুলো প্রচার করতে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন এবং নিজেই ছুটে যান সেই জেলায়। পরে ওই জেলার জেলা প্রতিনিধিকে দিয়ে সার্কিট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়ে সেই রিপোর্টারের সেই রিপোর্টটি তারই সামনে নিজে তৈরী করেন। পরে ওই জেলায় আরো ২/১ দিন থেকে প্রতিনিধির খরচে ৩ বেলা খেয়ে ওই জেলা ত্যাগ করেন। সুযোগ পেলে অবশ্য উপঢৌকন নিতেও ভুল করেন না। আমি এই সুযোগ অবশ্য আপনাকে কোনদিন দেইনি। আর আপনি তো এই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় খুব একটা আসেনও না। এলেও আমাকে না জানিয়ে রাজশাহী থেকে জনাব ফাত্তাহকে সাথে নিয়েই আসেন। একদিকে মাথায় টুপি দিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন, আর এমন অন্যায় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, এটা কি শোভনীয়? উদাহরণ হিসেবে নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যেমন ধরুন, বৃক্ষ প্রেমিক কার্তিক পরামানিকের কথা। যিনি আমার সৃষ্টি। অথচ ওই দূর্লভ ব্যক্তিকে যখন কৃষি পদক দেয়া হল, তখন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আমাকে ১ সেকেণ্ডের জন্যও স্মরণ করা হয়নি কিংবা কোন কৃতিত্বও দেয়া হয়নি। বরং একজন অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির মতো ঢাকা শহরের বিভিন্ন মোড়ে কার্তিক পরামানিকের সাথে নিজের ছবি যুক্ত করে বিলবোর্ড ঝুলিয়ে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিজে গ্রহণ করলেন। এমন স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ মানুষের সাথে কি কাজ করা যায়? আর যায় না জন্যই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১২) অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, ভাড়া করা অফিসে তো বটেই, নতুন অট্টালিকায় উঠে আপনি নিজেসহ পিয়ন থেকে শুরু করে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য খাবারের ক্যান্টিন বানিয়েছেন। অথচ আমরা যাঁরা ৬৩ জেলার জেলা প্রতিনিধি তাদের জন্য কি ওই ক্যান্টিনে কোন সুযোগ রাখা হয়েছে? না, হয়নি। আমরা যাঁরা যে কোন মাসে একবার অথবা তিন মাসে দু’বার রিপোর্ট নিয়ে সেই রিপোর্ট বানানোর জন্য ওই ভবনে যাই, তাঁরা কোন খাবার সুযোগ পাইনা। পাইনা এ কারণেই যে, ওই ভবনের আশেপাশে যেমন কোন হোটেল নেই, তেমনি ক্যান্টিন তো আমাদের জন্য নিষিদ্ধই। অতএব, দূপুরের খাবার না খেয়েই রিপোর্ট তৈরী করে আসি, আর সেই রিপোর্ট বিক্রি করে আপনারা গড়েন অট্টালিকা। এও শুনেছি, পিয়ন থেকে শুরু করে যারা ওই ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খান, তারা প্রত্যেকে আপনার নির্দেশে হাত দিয়ে ভাত না খেয়ে চামুচ দিয়ে টুং টাং শব্দ বাজিয়ে খাবার খেতে বাধ্য হন। এটা কি মিঃ সিরাজ? আপনি একদিকে করবেন কৃষি বিপ্লব, আর অন্যদিকে বাঙালীকে বিলেতি বাবুদের মতো চামুচ দিয়ে ভাত খাওয়াতে বাধ্য করবেন, এটা কি স্ববিরোধী কর্মকান্ড নয়? এমন স্বৈরাচার ব্যক্তির অধীনে কি কাজ করা যায়? আর যায় না জন্যই স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৩) কুষ্টিয়া জেলা থেকে আগত আপনার প্রিয়ভাজন (পর্দার পেছনে আপনার কথিত ডানহাত) যে ‘চ্যানেল আই’ ভবন অলিখিতভাবে নিজের দখলে নিয়ে পরিবারতন্ত্রে পরিণত করেছেন, তা কি জানেন? হয়তোবা জানেনও। তারপরও বলবো, সাবধান! তার উপর পুরো ভর না করে নিজের কাজ নিজেই করার চেষ্টা করুন। তা না হলে একদিন দেখবেন, আপনার বার্তা প্রধানের এই পদটি ছিনতাই হয়ে গেছে। অথবা অন্য কোন নতুন চ্যানেলে (নিজে টিভি চ্যানেল খোলার স্বপ্নও দ্যাখেন) আপনার স্থানে তিনি বসেছেন এবং একই ধরনের অনুষ্ঠান তৈরী করছেন। তখন আপনি হয়তো সবার সামনে তৃপ্তির ঢেঁকূর তুলবেন, আর অন্তর জ্বালায় জ্বলবেন একান্ত গোপনে।
১৪) দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চ্যানেল আই আজ একটি প্রতিষ্ঠিত চ্যানেল। এই চ্যানেলের উপার্জন যদি যথেষ্ট না হতো, তাহলে কিছুটা কম বেতনে হলেও হয়তো কাজ করা যেতো কিন্তু এটাতো মোটেও সঠিক নয়। নতুন নতুন চ্যানেলগুলো যেখানে জেলা প্রতিনিধিদের ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিচ্ছে, সেখানে ‘চ্যানেল আই’ দেবেনা কেন? আর দেবে না কারণেই বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৫) আপনি ক’বার হজ্ব করেছেন মিঃ সিরাজ? ৩/৪ বার? পবিত্র হজ্ব করতে যাবার আগে প্রকৃত নিয়ম-কানুনগুলো কি জানেন? আমার ধারণা, জানেন না। আর জানেন না জন্যই আপনার অবগতির জন্য বলছি, পবিত্র ধর্মে ও বিশ্বের প্রচলিত আইনে আছে, শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাবার আগেই যেমন তাদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হয়। ঠিক তেমনি পবিত্র হজ্ব পালন করতে যাবার আগে সব ধরণের দেনা পরিশোধ করে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীর কাছে মাফ চেয়ে নিয়ে মনটা পবিত্র করে তারপর হজ্বে যেতে হয়। অথচ আপনি কি ৬৩ জেলার জেলা প্রতিনিধিদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক পরিশোধ করে পবিত্র হজ্ব পালন করেছেন? অবশ্য এ কথাও ঠিক, আপনার নামের আগে ‘গণমাধ্যম ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব’ জুড়ে নিলেও ‘আলহাজ্ব’ উপাধিটি যুক্ত করে নেননি। কারণ আপনি নিজেও জানেন, আমাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক না দেয়ায় আপনার হজ্ব পালন হয়নি। আর হয়নি জন্যই বিবেকের দংশনে এমন উপাধি যুক্ত করে নেননি। এমন ব্যক্তির অধীনে কি কাজ করা যায়। আর যায় না জন্যই অনেক বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৬) প্রথম আমাদের বেতন যখন দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, তখন আপনার আশির্বাদপুষ্ট মফস্বল জেলা থেকে আপনার দপ্তরে যোগ দেয়া সেই সাংবাদিক বন্ধুটির বেতন ছিল ৪ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বেতন যদি ৬০ হাজার টাকা হয়, তাহলে আমাদের বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য কেন মিঃ সিরাজ? এই বৈষম্যের কারণে বিলম্বে হলেও স্বেচ্ছায় ঘৃণা ভরে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করছি।
১৭) আরো বহুকিছু উল্লেখ করার বিষয় থাকলেও লেখা আর না বাড়ানোর স্বার্থেই সবশেষে একটি প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেই পদত্যাগপত্র শেষ করছি। আর তা হলো, চ্যানেল আই-এর ৭ জন সম্মানিত মালিকের মধ্যে আপনি হচ্ছেন সপ্তম জন। তারপরও আবার বার্তা প্রধান। আর এই বার্তা প্রধান হিসেবে আপনার নিশ্চয় জানার কথা, সংবাদপত্রে যাঁরা কাজ করেন, বিশেষ করে সাংবাদিকেরা বেতন-ভাতা পাওয়ার অধিকারী ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী। দেশে এখন কততম ওয়েজ বোর্ডের বাস্তবায়ন চলছে, তা কি জানেন? শেষ ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী একজন জুনিয়র রিপোর্টারের বেতন কতো? চ্যানেল আই থেকে পদত্যাগ করলেও সর্বকনিষ্ঠ একজন সাংবাদিক হিসেবে গত ১০ বছরের হিসেব যে কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করে নেয়া হবেনা কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে আপনাকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবেনা, তা না ভাবার কোন কারণ নেই।
আপনার অহংকারী মানসিকতা পবিত্র হোক, আমাদের মতো অবহেলিত সাংবাদিক শ্রমিকদের সম্মান, মূল্যায়ন ও বেতন বৃদ্ধি করতে আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের অর্থ ফাঁকি না দেয়ার সৎ চিন্তা আপনার হৃদয়ে জাগ্রত হোক, এমন প্রত্যাশা থাকলো মহান আল্লাহতাআলার উপর। একই সাথে এই পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ধন্য করবেন- এমন দাবীও জানালাম বিনীতভাবে।
ধন্যবাদান্তে,
(সৈয়দ নাজাত হোসেন)
‘সৈয়দ বাড়ী’
৭৮/২, বালুবাগান
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৬৩০০।
০১৭১১-০৬৬২৬০
ই-মেইল ঃ ংুবফহধুধঃযড়ংংধরহ@মসধরষ.পড়স
সদয় অবগতির জন্য অনুলিপি প্রেরণ করা হলো ঃ
১. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
২. জনাব মোঃ ওবাইদুল কাদের, সভাপতি, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ঢাকা।
৩. জনাব আবুল কালাম আজাদ, মাননীয় তথ্যমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
৪. সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
৫. বিচারপতি বি কে দাস, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, ঢাকা।
৬. ড. মিজানুর রহমান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, ঢাকা।
৭. মেজর জেনারেল (অবঃ) জিয়া আহমেদ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, ঢাকা।
৮. জনাব মোঃ হাফিজউদ্দীন খান, চেয়ারম্যান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ঢাকা।
৯. জনাব আবুল কালাম আজাদ, প্রেস সেক্রেটারী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
১০. জনাব ফরিদুর রেজা সাগর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা।
১১. জনাব আব্দুর রশিদ মজুমদার, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা।
১২. জনাব আব্দুল মুকিত মজুমদার বাবু, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা।
১৩. জনাব জহির উদ্দীন মাহমুদ মামুন, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা।
১৪. জনাব আব্দুল আল-মুক্তাদির, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা।
১৫. জনাব মোঃ রবিউল ইসলাম, পরিচালক, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা।
১৬. জেনারেল ম্যানেজার, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ, ঢাকা।
১৭. অফিস কপি।ফেইসবুক থেকে প্রাপ্ত