দেয়াল লিখন পড়তে আমার ভালো লাগে। পুরনো এই অভ্যাসের বয়স আমার সমান না হলেও কাছাকাছি। অভ্যাসটা এখনো আগের বছরে ক্লাসে পড়া বইয়ের মতোন গুরুত্ব হারিয়ে নিরর্থক হয়ে যায়নি। বিমান বাহিনী জাদুঘরের সাদা দেয়ালে লাল অক্ষরে লেখা “‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’ তোর ভাগ্যে কিছু নেই” লেখাটা আমি রোজ পড়ি। পড়ি মানে আসা যাওয়ার রাস্তায় চোখে পড়ে!
দেয়ালের লেখা পড়তে পড়তেই সুবোধ হয়ে ওঠে আমার পরিচিত, কাছের মানুষ। সুবোধ দেখতে কেমন, বয়স কত, কোন ঠিকানায় থাকে কিছুই আমার জানা নেই। তবুও প্রতিদিন দুইবার লেখা পড়ার সুবাদে সুবোধ আমার পরিচিতের গন্ডি ডিঙ্গিয়েছে সে বেশ কিছু দিন হলো।
সুবোধকে কেন পালিয়ে যেতে বলা হলো? সুবোধকে কেন পালিয়ে যেতে হয়? কারণ সুবোধ আমি নই, সুবোধ আপনি নন; সুবোধ সুবোধ-ই। সুবোধ এদেশে জন্মায়, বেড়ে ওঠে- বড় হয় তবু এদেশের হয় না। সুবোধ লেখাপড়া শিখে তবে চাকুরি পায় না। সুবোধ ঘরে থেকে তবে সিটিয়ে থাকে। সবার সম্মুখে সুবোধ মানবেতর জীবনযাপন করে।
রমেল চাকমাকে কেউ বলে নাই, “রমেল তুই পালিয়ে যা”! কেউ বলে নাই, কেউ না। তাই রমেল ভেবেছিল সে লেখাপড়া শিখবে। আমার আপনার কারো অস্বস্তি উদ্রেক না করে, সবার সুখ সুবিধার ব্যবস্থা করে রমেল লেখাপড়া শিখতে চেয়েছিল। সে আমলা হবার দুঃসাহস দেখাতো না। তবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। পাহাড় তো সবাইকে আশ্রয় দেয়, তবে পাহাড়ে বাস করা রমেলদের অস্বাভাবিক ভাবে মরতে হয় কেন?
রমেল আদিবাসি হয়ে জন্মাবার শোক পেয়েছিল, মানুষ হয়ে জন্মাবার মুক্তিটুকু পায়নি। তাই রমেল পাহাড়ে থেকেও বড় বেশি চোখের বালি। শুনলাম ছেলেটা মার খেয়ে মরেছে! তবুও কিছু খেয়ে মরেছে তো। মার-গালি-অপমান শব্দ গুলো অভিধান থেকে মুছে যেত যদি রমেল চাকমা’রা না থাকতো।
সভ্যতার প্রলেপটা অস্বাভাবিক মাত্রায় পাতলা। নিরবতার পর্দাটার আসল পাহারাদার অসভ্য, স্বার্থবুদ্ধিসম্পন্ন এই আমরা। যারা এখনো নিজেদের নির্লজ্জভাবে মানুষ বলে দাবী করি!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:০১