একটা প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে বেশি বার উচ্চারিত শব্দ হলো “ব্রেক আপ”। ফোন কল রিসিভ করলেন না ব্রেক আপ। অন্য কারো সাথে মিশলেন তো ব্রেক আপ, কল টাইমের পরে উপস্থিত হলেন তো ব্রেক আপ। শব্দ করে চা খান! ব্রেক আপ। রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, ব্রেক আপ। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় প্রথব যেদিন ডান দিকে মোড় নিয়েছিলেন সেই তারিখ আপনি মনে রাখতে পারন নাই! ব্রেক আপ। কংক্রিটের এই শহরে আসলেই সব কিছু ভেংগে পড়ে। পড়বেই বা না কেন! যে গাছ মাটিতে হয় তার শিকড় গভীরে যে্তে পারে। আর যে গাছ কংক্রিটের দেয়ালে হয় তার শিকড় কেবল উপরি ভাগে বিস্তৃত হয়।খুব সহজেই উপড়ে ফেলা যায়।
মোবাইল ফোনের প্রাদুর্ভাবে প্রেমের বিশ্বাসে ধস নামে। এবং ফেসবুক এসে তার কুলখানি টাও করে ফেলে। মানুষ এখন ঘোষনা দিয়ে দেয় In a relationship with **** অথবা Got engaged with ****। অভি্নন্দন জানানোর কিছু দিন পরেই আবার নোটিফিকেশন “Its Complicated”। সমবেদনা জানানো দেখানোর দুঃসাহস দেখানোর কোনো মানেই হয় না। কেননা মন বড় রহস্যময়। কখন মেঘ- কখন বৃষ্টি কে জানে! হয়তো ব্রেকের পর ফিরে আসবে নতুন কাউকে নিয়ে- অপেক্ষায় থাকি। যেভাবেই হো্ক, যার সাথেই থাকুক, বন্ধুরা ভালো থাকুক সেটাই এখন একমাত্র শুভ কামনা।
তথাকথিত “ব্রেক আপ” এর আগে কৈয়ফিয়ত চাওয়া হয়, কিন্তু উত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করা হয় না। কারন গ্রহনযোগ্য উত্তর তৈরি করতে যে সময় অপর জন নেন তাতে সত্যের চেয়েও নির্মিত গল্প বেশি থাকে।
একটা সম্পর্কের প্রতি ছেলেরা ততদিন মনোযোগী থাকে, যতদিন সেখানে আনন্দ থাকে। আর মেয়েরাও ঠিক ততদিন পর্যন্ত সম্পর্ককে উপভোগ করে যতদিন সেখানে তার গুরুত্ব থাকে। আমার কাছে সম্পর্কের সমীকরণ খুব সহজ। সম্পর্ক কখনো শেষ হয় না, কেবল চর্চা তার গতিপথ বদলায়। চাঁদ মেঘে ঢেকে গেলে তা অদৃশ্য হয়, বিলীন কী হয়?
জীবনে প্রথম প্রেম বলে যেমন কিছু নেই (কারন সব প্রেম-ই প্রথম প্রেম) তেমন-ই আবার শেষ প্রেম বলেও কিছু নেই (বলা যেতে পারে the second last chance)। মানুষ ভাবে তিনি সম্পর্ক কে নিয়ন্ত্রণ করেন।আসলে কি তাই? হবে হয়তো। কিন্তু আমার মনে হয়, কোথায় এবং কিভাবে যেন মানুষ নিজেই নিয়ন্ত্রিত এবং সম্পর্ক দ্বারা-ই নিয়ন্ত্রিত। ভাল সংগ এবং সংঘ-ই আমাদের কে আমি হয়ে উঠতে সাহায্য করে। চর্চিত সম্পর্ক গুলোই ধীরে ধীরে বদলে দেয় আমাদের দৃষ্টিভংগী, চিন্তাজগত আর জীবন যাপন।
কাউকে বোকা বানানোর আগে, তাকে একা বানাতে হয়। খুব সাধারণ সূত্র। বোধ করি অনেকেই জানেন। যারা জানেন না, তারা একা হওয়ার দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে বরবাদ হন। সমস্যার আলোচনা না করে সমাধান করা মানে আরো অনেক গুলো সমস্যা কে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা।
আজকাল অনেককেই দেখি ভালোবাসতে গিয়ে এক্কেবারে দিল উপুর করে ভালো্বেসে ফেলেন। এক হাতের বাইরের আর সবই মূল্যহীন। অপরিচিত পথে হাটতে হাটতে এতোটাই দুরে চলে যান যে ফিরতে গিয়ে কেবলই অচেনা পথ। প্রায়শই অন্ধকার- যেখানে কেবলই অস্পষ্টতা। প্রেম করতে হয় সময় দিয়ে, জীবন দিয়ে নয়।
ফিরে এসেও আশা করেন, যে বা যারা যেখানে যেমন ছিল, সেখানে সবকিছু অবিকল আগের মত-ই পাবেন। সময় গড়িছে, উত্তরের বাতাস গিয়েছে দক্ষিনে, পৃথিবীও নিজ অক্ষের উপর প্রতি চার মিনিটে এক বার ঘুরে যায়।তাই কোন কিছু-ই আর আগের মত থাকে না।যিনি ফিরে আসেন তাকে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হয়। কেউ পারেন কেউ পারে্ন না। একা হয়ে যাওয়ার আগে একটু ভাববেন- একা একা হয়ত বেচে থাকা যায় কিন্তু ভালো থাকা যায় না। সবাই ছাড়া জীবনটা অসম্ভব---
রিকশাতে যে মেয়েটি আজ আপনার হাত ধরে বসে আছে, কাল সে নাও থাকতে পারে।যে ছেলেটি আজ হাত ধরে রাস্তা পার করে দিচ্ছে, কাল সে নাও থাকতে পারে। এই না-থাকার মানে কিন্তু সব সময়-ই ছেড়ে যাওয়া নয়, কখনো কখনো হারিয়ে যাওয়া। দূরে থেকেও অস্তিত্ব জুরে থাকা যায়।
আমরা ভালোবেসে কারো অভ্যাস বদলের আগেই তাকে হুকুম করি, আমার সাথে থাকতে হলে তোমাকে এটা এটা ছাড়তে হবে। ভালোবাসা তো ইবাদত। সেখানে ফাঁকি চলে না। মানুষ তো নিজের জন্যই ভালোবাসে।
আমি আশেপাশে লক্ষ্য করে দেখেছি বিবাহিত’রা নিজেদের মধ্যে হাসেন না, গল্প করেন না। কোথায় জানি একটা দায়িত্ব পালন। কয়েক জন কে দেখে আমার রীতিমতো মনে হয়েছে তাদের একটা অদৃশ্য কিছু নজরদারি করছে। অনেক টা আম্মুর ভয়ে দুপুরের ভাত ঘুমে বিকেলের অপেক্ষা। তার থেকে প্রেমিক প্রেমিকারা ঢের বেশি কোয়ালিটি টাইম পাস করেন। হাসেন, কাঁদেন, ঝগড়া করেন।মান-অভিমানের মতো অনুভূতি গুলোর চর্চা করেন। প্লিজ, মন খুলে ভালোবাসুন। ভালোবাসা হচ্ছে সেই অনুভূতি যা কোন দিন কারো অনিষ্ট করতে পারে না। ভালোবাসলে মানবীয় গুলাবলী গুলো আরো বেশি বেগবান হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৭