কাছের মানুষকে নির্দ্বিধায় ভালোবাসেন সবথেকে বেশি। ক্লোজ ফ্রেন্ডের জন্য করতে পারেন সম্ভাব্য সবকিছু। কিন্তু কখনো কোনো অবসরে নিজের শরীরের সংবেদনশীল অংশের কাছের পোশাকটি নিয়ে কি ভেবেছেন। হ্যাঁ, আমি অন্তর্বাস এর কথাই বলছিলাম।
ব্রান্ডের পোশাক যেমন আপনার রুচির পরিচায়ক, ঠিক তেমন-ই আন্ডারওয়্যারও আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতার পরিচায়ক। মানব শরীরে রয়েছে আট কুঠুরি নয় দরজা। যে পথে আপনি ত্যাগ করেন সেই পথেই এমন কিছু প্রবেশ করছে নাতো যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন যার জীবনে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়নি। কিংবা বিবাহিত পুরুষের স্ত্রীর ‘হানিমুন সিকনেস’ এদেশের খুব কমন অসুস্থতা। কেন হয় এমনটা? খুব সহজ করে বললে, আপনার অপরিচ্ছনতা এবং অজ্ঞানতা। ভেবে দেখুন তো, অসাবধনতার সুযোগে জাঙ্গিয়া গুলো জঙ্গিবাদ এর মতো ক্ষতি করছে না তো আপনার?
আন্ডারওয়্যার স্বাস্থ্যবিধি তে আজ জেনে নিন প্রতিদিনকার জীবনযাপনের এক অজানা অধ্যায়।
আন্ডারওয়্যার শুধু আপনাকে ঘাম, কাম কিংবা ইউরেনাল ফ্লুইড থেকেই বাঁচায় না, আপনাকে সযত্নে রক্ষা করে গোপনাঙ্গে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামণ থেকেও। কাপড়ের নীচে পরেন বলেই, অনেকে হয়তো আপাত সস্তা আন্ডারওয়্যার টিকে বেছে নেন। শুধু এখানেই থেমে যান না। ছেলেদের গড়ে তিনটার বেশি আন্ডারওয়্যার থাকেনা বলেই জানা যায়। মরার উপর খাড়ার ঘাঁ এর মত কেউ কেউ আবার, নির্দ্বিধায় পরে ফেলছেন বন্ধুর/অন্যের ব্যবহৃত আন্ডারওয়্যার। বন্ধুর শার্ট পরতে পারলে আন্ডারওয়্যার কেন নয়?
সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে আকর্ষনীয় করে উপস্থাপন করতে ছুটে যাচ্ছেন কখনো ক্যাটস আই, কখনো ইয়ালো নিদেন পক্ষে জেন্টেল পার্ক এ। কিন্তু আন্ডারওয়্যার সেই পুরনো, ঢিলা, হলদেটে আর ফুঁটো হয়ে যাওয়া। এই ঐতিহাসিক কর্মটি করছেন কেবল মায়ার বশে নয়, করছেন উদাসীনতা কিংবা আলসেমির বশে।“নিজের টাকায় কেনা এটিই বোধহয় একমাত্র পোশাক, যেটা যত দ্রুত ফেলে দেয়া যায়, শরীরের জন্য ততই মঙ্গল”।
“দি সিক্রেট লাইফ অফ জার্ম”- এ ডাঃ ফিলিপ তিয়ার্নো বলেছেন, দিনের পর দিন না-ধোয়া আন্ডারওয়্যারের সাথে এক গ্রাম অব্দি বর্জ্য লেগে থাকা সম্ভব! "এক আন্ডারওয়্যার একবার পরে না-ধুয়ে তার ভিতর দ্বিতীয়বার নিজেকে পুরে দেয়ার অর্থ হলো, নিজেকে লাখ লাখ ব্যাক্টেরিয়ার হাতে সঁপে দেয়া"।
উপায়হীন হয়ে পড়বেন না, প্লিজ। এত দিনকার অভ্যাসের মায়া ত্যাগ করে বাজার থেকে আজই কিনে ফেলুন গোটা দশেক আন্ডারওয়্যার। কেনার আগে যাচাই করে নিন সেগুলো সুতি কিনা। কেননা চিকিৎসকদের পরাপর্শ হলো, কটন এর অন্তর্বাস সবথেকে স্বাস্থ্যসম্মত। যারা প্রচুর ঘামেন তাদের জন্য ‘ব্রিদেবল’ আন্ডারওয়্যার উপযুক্ত হতে পারে। এক আন্ডারওয়্যার পরে চব্বিশ ঘণ্টার বেশি কাটানো যে স্বাস্থ্যকর নয় সেটা বলাই বাহুল্য। ভুলেও সিন্থেটিক এর তৈরি অন্তর্বাসের দিকে হাত বাড়াবেন না। সেগুলো পাবলিক প্লেস কিংবা জনপরিসরে আপনাকে স্থান-কাল-পাত্র ভুলিয়ে শরীরের সংবেদনশীল অংশগুলোতে হাত দিতে বাধ্য করে। ছন্দপতন ঘটে আপনা্র আলাপচারি্তায়।ভীষণ্রকম অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে আশেপাশের সবাই কে।
মানহীন, সস্তা এবং অস্বাস্থ্যকর অন্তর্বাস এর কাপড়ের মান নিয়ে যেমন সংশয় আছে ঠিক তেমনি সেগুলো বাজে ফিটিংস এ তৈরি। যা অস্বস্তি ছাড়া আর তেমন কিছুই দিতে পারে না। তাই ফার্মগেট ওভারব্রিজের নীচ থেকে মূল্যবান এই পোশাকটি ক্রয় করার পুরনো নিয়ম এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে মানসম্মত জিনিস কিনুন। তাতে সাময়িক খরচ টা বেশি মনে হলেও, দীর্ঘ মেয়াদে আপনার স্বাস্থ্য এবং টাকা দুটোই বাঁচাবে নিশ্চিত। শুধু এই বিষয়ে একটু সচেতনতা এবং খরচের ইতিবাচক মনোভাব, আপনাকে ছয় মাস অন্তর চর্ম ও যৌনরোগ এর চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হওয়ার হাত থেকে দেবে নিষ্কৃতি।
মাঝে মাঝেই ভাল মানের, নতুন নতুন আন্ডারওয়্যার কেনার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সুস্থ থাকুন আপনি নিজে, সুস্থ থাকুক আপনার পরিবার।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৯