পরের পর্বঃ যুবতী ও অবিবাহিত তরুনীদের জন্য

জীবন থেকে নেয়াঃ মোখলেসের প্রথম বিবাহ...!
আর বেশিদিন নাই...তো কালে কালে বিবাহের মৌসুম চলিয়া আসিতেছে


আগাইয়া আসুন, আগে দেখি আপনার কী কী যোগ্যতা! হমম...আপনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ, ব্যবসায়ী, ইমিগ্রান্ট কিংবা ইন্টারপাশ, অশিক্ষিত, বেকার, কালা ভুনার মত দেখতে...যাহাই হউন না কেন, সমস্যা নাই; আপনার চাহিদা আমি বুঝিয়া ফেলিয়াছি।


সুন্দরী পাত্রীঃ এইটা তো হইতেই হইবে! বউ সুন্দরী না হইলে কেমনে কী? টিভির সুডৌল বক্ষের আর ভারী নিতম্বের উন্মুক্ত তরুণী আপনার সুন্দরের সংগা পাল্টাইয়া দিয়াছে! রাস্তাঘাটে বহু সুন্দরী দেখিয়া লোল ফেলাইয়াছেন; এইবার চাই নিজের মত করিয়া একখান ক্যাটরিনা। যাকে কোল বসাইয়া যখন তখন লুলায়িত হইবেন (এইবার অন্যেরা আপনার বউ দেখিয়া লোল ফেলাইবে নিশ্চত!)। আর আপনি হাসান মাসুদ কিংবা ফজলুর রহমান বাবু হইবার পরও একখান সুন্দরী বউ বগলদাবা করিবার গর্বে গড়াগড়ি খাইবেন। পাত্রীর আর কোন কিছু লাগিবে না, কেবল সুন্দরী হইলেই চলে! আপনি এড এজেন্সির মালিকও নন, পণ্যের ব্রান্ড এম্বাসেডরও খুঁজিতেছেন না। আপনি মডেলের মত বউ খুঁজিতেছেন! পাইবেন, তবে সে সাজুগুজু করিয়া পটের বিবি হইতে পারিবে এবং আপনাকে উহা মানিয়া লইতে হইবে! আর যদি তা মনিতে না পারেন তবে সুন্দরী পাত্রীর সন্ধান করা বাদ দিন। কারন, সুন্দরের শেষ নাই...যতই দিন যাইবে ততই আরও আরও সুন্দরীর সংষ্পর্শে আসিবেন। আর আপনি তো সুন্দরের পূজারী...দেবী আপনাকে মন্দিরে টানিবেই! এককালে অধম ঐশ্বরিয়ার জন্য পাগল থাকিলেও বর্তমানের বয়সের ভারে কুঞ্চিতচর্মের এ্যাশ তাকে আর টানে না! হলিউড বলিউডের চরম সুন্দরী-হ্যান্ডসামের সংসার টিকে না কারন তারা 'কেবলই' সুন্দর!! শেষ কথা, বাত্তি নিভাইলে সবই এক! মনে রাখিবেন "You can't judge a book by its cover!". তারপরও, আর যদি ইহাই আপনার একমাত্র মনোষ্কামনা হয় তবে আপনার বিবাহের সময় এখনো আসে নাই! আপনাকে আরও অপেক্ষা করিতে হইবে ম্যাচিউর হইবার জন্য!

শিক্ষিত পাত্রীঃ আপনি অন্য আর দশজনের মত লোভী পুরুষ নন। আপনি শিক্ষার মূল্যায়ন করেন। আপনার কাছে পাত্রীর রেজাল্ট অতীব এবং একমাত্র গুরত্বপূর্ণ বিষয়। যার রেজাল্ট যত ভাল আপনার কছে তার কদর তত বেশী; পিএইচডি হইলে তো আর কথাই নাই, সারা জীবন মাথায় তুলিয়া রাখিবেন। আর বাকীদের আপনি গোনাতেই ধরেন না, প্রাইভেট ইউনি তো বহুর দূর কি বাত! আপনার পছন্দের বহর দেখিয়া মনে হইতে পারে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য ক্যান্ডিডেট বাছিতেছেন! ভাবিতেছেন, বউয়ের রেজাল্টের সাথে সাংসারিক সুখ সমানুপাতিক অথবা বিবাহের পর যে সংসার নামক বিষয় আছে তা আপনি এখনও বুঝিতে পারেন নাই অথবা সংসার করিতে যে প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল খুব একটা কাজে দেয় না তা আপনার অজানা! ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট বিবাহ করিয়া ঘরে তুলিলে তাকে তার মত সময় দিতে হইবে, স্বাধীনতা দিতে হইবে। যদি আশায় থাকেন, সে বিবাহরে পর শরৎচন্দ্রের গিন্নিটি হইবেন আর আপনার ময়লা জাঙ্গিয়া ধুইয়া শুকাইয়া দিবে তবে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করেন। আপনার বিবাহের সময় এখনো আসে নাই! আপনাকে আরও অপেক্ষা করিতে হইবে ম্যাচিউর হইবার জন্য!

কর্মজীবী পাত্রীঃ বর্তমানে স্মার্ট (!), আধুনিক (!) পাত্রদের পছন্দের তালিকায় এইরুপ পাত্রী থাকে! তবে আপনার উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে এরুপ পাত্রীর সাথে আপনার বিবাহ পরবর্তী অবস্থা। যদি আপনার অবস্থা বাংলা ছবির নায়ক জসিমের মত হয়, যার কিনা ঘরে অসুস্থ বাবা, বৃদ্ধ মা, বিবাহযোগ্যা বোন, স্কুলগামী ছোট ছোট ভাইবোন আছে, ঈদের সময় সেমাই কিনিতে পারেন না তবে আপনার দরকার শাবানার মত স্ত্রী! কর্মজীবী স্ত্রীর ঘাড়ে যদি আপনার সংসারে হাল ধরাইয়া দেন তবে হিতে-বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা! আর আপনার পছন্দের পাত্রীরও যদি পারিবারিক অবস্থা আপনার সদৃশ হয় তবে শ্যাম আর কূলের দ্বন্দ্বে পড়িয়া যাইবেন! আর যদি সে তার বাবা-মার নিউক্লিয়াস ফ্যামিলিতে নিজের সাধ-আহ্বলাদ পূরণ করিবার নিমিত্তে চাকুরী করিয়া থাকে তবেও আপনার উদ্দেশ্য বিফল, পাত্রীর চাকুরীর দরুন খুব একটা সুবিধা লাভ করিতে পারিবেন না। মনে রাখিবেন, চাকুরীজীবী নারীরা দুই প্রকারের; কেউ সংসার সামলাইয়া চাকুরী করে আর কেউ চাকুরী সামলাইয়া সংসার করে। যদি কপালগুণে প্রথম প্রকার পাইয়া যান তবে আপনাকে কম্প্রোমাইজ, এডজাস্টমেন্ট ইত্যাদি শব্দগুলো বুঝিতে হইবে। আর যদি দ্বিতীয় প্রকারের চরম ক্যরিয়ারিস্টিক পাত্রী আপনার পছন্দ তবে কেবল স্যাক্রিফাইস শব্দ সম্পর্কে ধারণা থাকিলেই চলিবে



লম্বা পাত্রীঃ হমমম...পাত্রী লম্বা হইলে সুবিধা আছে! আর তা হইল, ছবিতে ভাল লাগিবে। লাখ টাকা দিয়া অপূর্বকে ভাড়া করিবেন ছবি তুলিতে, ভাল তো লাগিতেই হইবে! লোকে বলিবে, বাহ্ বাহ্ বউখান তো বেশ লম্বা! এর বেশী কিছু না। আর বিছানার কাজ (অধিকাংশ!) যেহেতু শুইয়াই করিবেন; উচ্চতার কারনে কোন সুবিধা পাইবেন বলিয়া মনে হয় না


ফর্সা পাত্রীঃ ফর্সা মানেই সুন্দর! ইহা একটি প্রাচীন এবং প্রচলিত কনসেপ্ট


বিত্তশালী পাত্রীঃ আপনার কাছে পাত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। বিত্তশালী ঘরের কোন পাত্রীকে বউ হিসাবে পাইতে চাইলে আপনারও বিত্তশালী হওয়াটা জরুরী। নতুবা সারাজীবন খোঁটা শুনিবেন! শ্বশুড়বাড়ীর দয়া/সাহায্যও লইতে হইতে পারে! যেরুপ প্রাচুর্য্যে পাত্রী বড় হইয়াছে সেরুপে তাকে রাখিতে না পারিলে দুই দিনও সংসার করিতে পারিবেন কি না সন্দেহ আছে! তারপরও যদি আপনার আপত্তি না থাকে তবে নিশ্চিত আপনি শ্বশুরের কাঁধে ভর করিয়া দাঁড়াইতে চান। যদি শালা-সম্মুন্ধী থাকে তবে সে আশা বাদ দিন। আর যদি রাজ্য সহ রাজার একমাত্র কন্যা পাইতে চান তবে আয়নায় ভাল করিয়া নিজেকে দেখিয়া লন! বিত্তশালী পরিবারের কন্যার হাজার খুঁত থাকিলেও ঠ্যালাও কম নহে!! তারপরও যদি আপনি পাত্রী নির্বাচনের জন্য বিত্তকে একমাত্র গুণ হিসাবে বিবেচনা করেন, যাহা না থাকিলে অন্যসব গুণাবলী নাল এন্ড ভয়েড তবে আপনার বিবাহের সময় এখনো আসে নাই! আপনাকে আরও অপেক্ষা করিতে হইবে ম্যাচিউর হইবার জন্য!

কচি পাত্রীঃ কচি শশা, কচি লাউ, কচি গরু খাইতে খাইতে বাঙ্গালী পুরুষের কচি জিনিষের প্রতি একটা লোভ কীভাবে যেন জন্মাইয়া যায়



ধার্মিক-ফ্যাশনেবল পাত্রীঃ মানে আপনি সবই চান। একটু আকটু ধর্মও করিবে আবার ফ্যাশনও বুঝিয়া চলিবে। লেগিংস পড়িয়া উরু দেখাইয়া হিজাব পড়িয়া মাথা ঢাকিবে টাইপ আর কি! কিন্তু কিছুদিন পরে আপনিই আবার খুঁতখুঁত করিবেন, এই দেখা যায় - ঐ দেখা যায় বলিয়া। এইরুপ পাত্রী বউ হিসাবে পাইতে চাইলে আপনাকে যথেষ্ট পরিমান ছাড় দিতে হইবে। আর যদি তা না পারেন তবে আপনার বিবাহের সময় এখনো আসে নাই! আপনাকে আরও একটু অপেক্ষা করিতে হইবে ম্যাচিউর হইবার জন্য!

সবশেষ আপনার আত্মীয়-স্বজনঃ আপনার বিবাহরে সবচাইতে বড় ক্যাটালিস্ট হইলো এনারা। মানে প্রভাবক আর কি, ঐ যে পড়েন নাই, যা বিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকে কিন্তু বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন না করিয়া বিক্রিয়ার গতি হ্রাস বা বৃদ্ধি করিয়া থাকে! আপনার আত্মীয়রা সেই জিনিষ। এদের কারণে আপনি বুঝিবারই সুযোগ পাইবেন না যে আপনি আসলে কী চান!



তো, এতক্ষণে নিশ্চই আপনি বুঝিয়া গিয়াছেন আপনার কিরুপ পাত্রী চাই এবং আপনার নির্দিষ্ট কিছু পছন্দের প্রস এন্ড কনস! শুরু করিয়া দিন সন্ধান। আপনি উল্লেখিত সকল শ্রেনীর পাত্রীই পাইবেন কিন্তু এক শ্রেনীর পাত্রী কখনই পাইবেন না। আর তা হইল ভাল মনের পাত্রী বা একজন ভাল মানুষ; কারণ আপনি কখনও তার সন্ধান করেনই নাই। একজন ভাল মানুষই পারে আপনাকে পরিপূর্ণ করিতে, বিবাহে তখনই পূর্ণতা আসে যখন তা একজন ভাল আত্মার সাথে হয়। তা না হইলে উপরে উল্লেখিত কোন পাত্রীই আপনার জন্য পারফেক্ট হইবে না। কেননা মানুষ ভাল না হইলে সে যতই গুণবতী হউক না কেন কম্পিটিবিলিটি ফ্যাক্টর খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর হইবে! কিন্তু আপনার তো তাহার প্রয়োজন নাই। আর তাই, আপনি ভাল মানুষ বাদ দিয়া ক্ষণস্থায়ী কিছু আবরণকে গুণবিচারে ব্যবহার করিতেছেন। পাইবেন, আপনি অবশ্যই পাইবেন আপনার পছন্দের পাত্রী, কারণ আপনার পছন্দ খুবই সস্তা, আর সস্তা জিনিষ বাজারে সবসময়ই সহজলভ্য! কিন্তু তার আগে আপনাকেই ঠিক করিতে হইবে আপনি কী চান?
পরের পর্বঃ যুবতী ও অবিবাহিত তরুনীদের জন্য

জীবন থেকে নেয়াঃ মোখলেসের প্রথম বিবাহ...!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪২